📍মাহরাম= যাদের সাথে বিয়ে হারাম।
📍গায়রে মাহরাম= যাদের সাথে বিয়ে জায়েজ।
জরুরী কাজে ঘরের বাহিরে গেলে যে পর্দা করতে হয় তা যিনি পর্দা করেন না তিনিও জানেন। অথচ বুরকা পড়েন, নিক্বাবও করেন এমন অনেক মা বোনদের খুঁজলে পাওয়া যাবে উনারা মাহরাম কী, গায়রে মাহরাম কী তা জানেন না। শুধুমাত্র বাহিরে গেলে “পর্দা করতে হবে” এই ধারণা নিয়ে পড়ে আছেন।
আমরা পুরুষরাও এই ব্যাপারে সম্পূর্ণ বেখেয়াল।
অথচ একজন পুরুষের জন্য যেমন ঘরের বাহিরের পরনারীকে দেখা হারাম, ঠিক তেমনি নিজের আত্মীয়স্বজনদের মধ্যকার গায়রে মাহরামদের দেখাও হারাম। যেমনঃ চাচি, মামি, ভাবি, শালি, মেয়ে কাজিন ইত্যাদি। একজন নারীর জন্যও পর্দার একই হুকুম। যেমনঃ খালু, ফুফা, দুলাভাই, ভাসুর, দেবর, চাচা শ্বশুর, মামা শ্বশুর, ফুফা শ্বশুর, ছেলে কাজিন ইত্যাদি।
অনুরূপভাবে একজন নারীর জন্য যেমন বাইরের পুরুষদের দৃষ্টি থেকে নিজেকে ঢেকে রাখা ফরজ, আত্মীয়দের মধ্যকার নন মাহরামদের সামনে দেখা দেয়াও তাদের জন্য হারাম।
অথচ একজন পুরুষ তার চাচাত,মামাত,ফুফাতো বোনদের সাথে বসে আড্ডা দেয়, ৩২ দাঁত বের করে হাসাহাসি করে, মামি, চাচিদের মায়ের মতো মনে করে, ভাবির সাথে গল্পগুজব করে, হাসে। অথচ তাদের সাথে পর্দা আর বাইরের একজন নারীর সাথে পর্দার হুকুম একই।
একজন নারী দেবরকে ভাই মনে করে, জামাইয়ের চাচা,ফুফা,খালু,দুলাভাই অমুখ তমুখের সামনে বসে কথাবার্তা বলে। অথচ তাদের সাথে পর্দা আর বাইরের একজন পুরুষের সাথে পর্দার হুকুম একই।
অনেকে মনে করেন বয়সে আমার চেয়ে ছোট বলে তার সামনে পর্দা করা জরুরী নয়। অথচ এটি সম্পূর্ণ ভুল। একজন নারী বালেগ হলে তার যেমন পর্দা করা ফরজ হয়ে যায় ঠিক তেমনি একজন পুরুষ বালেগ হলে তার সামনে একজন নারীর বয়স চল্লিশ হলেও পর্দা করা ফরজ হয়ে যায়। এটি সম্পূর্ণ খোঁড়া যুক্তি যে একজন ১৪/১৫ বয়সের ছেলের সামনে আবার পর্দা কিসের।
তথাকথিত সামাজিকতার দোহাই দিয়ে ইসলামের হুকুমকে লঙ্ঘন করলে আল্লাহ্র বা আল্লাহ্র রাসূল(স) এর কিছুই আসবে যাবে না, ক্ষতি যা হওয়ার আমাদেরই হবে, যা বুঝে আসবে হাশরের ময়দানে। তখন বুঝে কোন লাভই হবে না। সময় থাকতেই সংশোধিত হয়ে আল্লাহ্র পথে ফিরে আসা দরকার। মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে পর্দার হুকুম যথাযথভাবে মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।
ইসলামিক শরীয়াহর পরিভাষায় "মাহরাম" বলতে বুঝায় যাদেরকে বিয়ে করা হারাম এবং যাদের সাথে দেখা করা বা দেখা দেওয়া জায়েয। ছেলেদের ও মেয়েদের উভয়ের মাহরাম ব্যক্তিদের সংখ্যা ১৪ জন।
📍ছেলেদের জন্য ১৪ জন মাহরাম হলেনঃ
মায়ের মতো(৫ জন)-
(১) মা
(২) খালা
(৩) ফুফু
(৪) শাশুড়ী
(৫) দুধ-সম্পর্কীয় মা
বোনের মতো (৫ জন)-
(৬) আপন বোন
(৭) দাদী
(৮) নানী
(৯) নাতনী
(১০) দুধ-সম্পর্কীয় বোন
মেয়ের মতো (৪ জন)-
(১১) মেয়ে
(১২) ভাই এর মেয়ে
(১৩) বোনের মেয়ে
(১৪) ছেলের বউ
📍মেয়েদের জন্য ১৪ জন মাহরাম হলেনঃ
বাবার মতো (৫ জন)
(১) বাবা
(২) চাচা
(৩) মামা
(৪) শ্বশুর
(৫) দুধ-সম্পর্কীয় বাবা
ভাইয়ের মতো (৫ জন)
(৬) আপন ভাই
(৭) দাদা
(৮) নানা
(৯) নাতী
(১০) দুধ-সম্পর্কীয় ভাই
ছেলের মতো (৪ জন)
(১১) ছেলে
(১২) ভাই এর ছেলে
(১৩) বোনের ছেলে
(১৪) মেয়ের জামাই
[সূত্রঃ সুরা আল-বাক্বারাঃ ১৩৩, সুরা আন-নিসাঃ ২৩, সুরা আন-নূরঃ ৩১]
মাহরাম আর গায়রে মাহরাম এর প্র্যাক্টিক্যাল সংজ্ঞা এর চেয়ে সহজভাবে বুঝানো সম্ভব নয়। যারা আমল করবে নিজের জন্যই করবে, যারা জেনে বুঝেও আল্লাহর বিধানকে অগ্রাহ্য করবে তাদের আমলের ফায়সালা তাদের মালিকের সাথেই কাল হাশরের ময়দানে হবে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে যথাযথ পর্দা করে চলার তাওফিক দান করুন।
আমিন।
~সংগৃহীত