জিজ্ঞাসা-১৩১৭৪:
আসসালামু আলাইকুম। একটা মাসয়ালা জানার প্রয়োজন। কেউ যদি হজ্জের নিয়তে টাকা জমা করে। উক্ত টাকা হতে অন্য কোনো প্রয়োজন অথবা জমি কেনার কাজে খরচ করতে পারবে কি না?
তারিখ:২৯/০১/২৫ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা কামরুল হাসান যশোর থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপরই কেবল হজ ফরজ। সামর্থ্যবান বলতে হজের খরচ বহন করার ক্ষমতা এবং ঐ সময়কালীন পরিবারের খোরাকি থাকা। প্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিয়ে অতিরিক্ত অর্থ যখন থাকবে তখনও হজ ফরজ হবে। যেমন,
Surah Aal-e-Imran, Verse 97:
فِيهِ آيَاتٌ بَيِّنَاتٌ مَّقَامُ إِبْرَاهِيمَ وَمَن دَخَلَهُ كَانَ آمِنًا وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَي
আর এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছার। সূরা ইমরান-৯৭
দ্বিতীয় কথা হলো, খরচ দুই প্রকার। এক.প্রয়োজনীয়, দুই. উন্নয়নমূলক।
প্রয়োজনীয় খরচ করলে করতে অসুবিধা নেই, কিন্তু উন্নয়নমূলক খরচ করলে, সেটা অতিরিক্ত অর্থ হিসেবে গণ্য হবে। হজের জন্য (হজ করতে যে টাকা লাগে) নির্দিষ্ট টাকা অতিরিক্ত হলেও হজ ফরজ হবে।
আর হজ ফরজ হলে বিনা ওজরে দেরিতে আদায় করা জমহুরের নিকট গুনাহের কাজ। দলিল-
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، مُحَمَّدُ بْنُ خَازِمٍ عَنِ الأَعْمَشِ، عَنِ الْحَسَنِ بْنِ عَمْرٍو، عَنْ مِهْرَانَ أَبِي صَفْوَانَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ أَرَادَ الْحَجَّ فَلْيَتَعَجَّلْ " .
১৭৩২. মুসাদ্দাদ ...... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি হজ্জের ইচ্ছা করে সে যেন অবিলম্বে তা সম্পন্ন করে।
Narrated Abdullah ibn Abbas:
The Prophet (ﷺ) said: He who intends to perform hajj should hasten to do so.
—সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১৭৩২ (আন্তর্জাতিক নং ১৭৩২)
الحجُّ واجبٌ على الفَوْرِ عند تحقُّقِ شُروطِه، ويأثمُ المرءُ بتأخيرِه، وهو مَذْهَبُ الحَنابِلَة، وروايةٌ عن أبي حنيفةَ، وقولُ أبي يوسُفَ من أصحابِه، وقولُ بعضِ المُتَأخِّرينَ من المالِكِيَّة، ونُقِلَ عن مالكٍ، وهو قولُ داودَ الظَّاهريِّ، وذهب إليه أكثَرُ العلماءِ، واختاره الشَّوْكانيُّ، والشِّنْقيطيُّ، وابنُ باز، وابنُ عُثيمين الإنصاف)) للمرداوي (3/287)، ((كشاف القناع)) للبهوتي (2/377 ) ((السيل الجرار)) (1/304).
অর্থাৎ হজ্জ আদায়ের যাবতীয় শর্তাবলী পাওয়া যাওয়া মাত্রই তাৎক্ষণিকভাবেই হজ্জ আদায় করা আবশ্যক। তা আদায়ে বিলম্ব করলে ব্যক্তি গুনাগগার হবে। এটিই হলো হাম্বলী মাযহাব। ইমাম আবূ হানীফা ( রাহি.) হতেও এমন একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। এছাড়া তার শিষ্যবৃন্দের মধ্য হতে ইমাম আবু ইউসুফ (রাহি.) এই মতের প্রবক্তা। ইমাম মালেক, দাঊদ যাহেরী, শাওকানী, শিনকিতি সহ অধিকাংশ আলেমগণ এই মতকে গ্রহণ করেছেন। শায়েখ বিন বায ও বিন উসাইমিন (রাহি.) এর মতও এক্ষেত্রে অভিন্ন। সূত্র: কাশফুল কনা-২/৩৭৭;
সারকথা হলো, হজের জন্য গচ্ছিত টাকা প্রয়োজনে, প্রয়োজন বলতে সংসার পরিচালনা বাবদ, চিকিৎসা, ঋণ ইত্যাদির জন্য ব্যয় করতে অসুবিধা নেই।
তবে জমি কেনা দুই ধরনের হতে পারে। এক. থাকার/বাড়ি করার জন্য জমি কেনা, দুই. বাড়ি আছে, অতিরিক্ত বাড়ি বা জায়গায় কিনে পরবর্তীতে বেশি দামে বিক্রি করা।
তাহলে দ্বিতীয় সুরুতে হজের টাকা ব্যয় করা ঠিক হবে না।
والله اعلم بالصواب