আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১৩১৭৩: কাফের-মুরতাদের সাথে বিবাহের হুকুম

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১৩১৭৩: 

আসসালামু আলাইকুম। একজন বোন জানতে চেয়েছেন:-

তার বিয়ে হয়েছে এমন একজনের সাথে যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে ঠিক কিন্তু দুই রাকাত করে।

আর ওজু করে কিন্তু পা ধৌত করে না।

এবং হায়েজ অবস্থায় নামায পড়া জায়েয মনে করে।

তাদের ফ্যামিলিতে মহিলারা নাপাক অবস্থায় নামায আদায় করে থাকে।

এখন ঐ বোনটির জানার বিষয় হলো তাদের বিবাহ শুদ্ধ হয়েছে কিনা?

কারণ অনেকেই বলছেন তাদের বিবাহ শুদ্ধ হয়নি।

তারিখ:২৮/০১/২৫ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা নাসরুল্লাহ নোয়াখালী থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নের উল্লেখিত ইসলামী বিধানগুলি কোরআন এবং সুন্নাহ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত। সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি তা অস্বীকার করে বা হারামকে হালাল মনে করে নিঃসন্দেহে এটা কুফুরি, সে কাফের হয়ে যায়। আর কাফের-মুরতাদের সাথে বিবাহ জায়েজ নেই। দলিল- 


পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের রাকাতের সংখ্যা হাদিসের মোতাওয়াতির এবং আমলে মোতাওয়াতের দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং হাদিসে মুতাওয়াতির অস্বীকার করলে কাফের হয়ে যাবে। 


وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى (3) إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى (4)

তিনি নিজের পক্ষ থেকে কোন কথা বলেন না, তিনি তা'ই বলেন, যা আল্লাহ তা'আলা অহী মারফত জানান। সুরা নাজম-৩-৪


ব্যাখ্যা:

وقال وقال السيوطي في كتابه: "مفتاح الجنة في الاحتجاج بالسنة": فاعلموا رحمكم الله أن من أنكر حديث النبي صلى الله عليه وسلم قولا كان أو فعلا بشرطه المعروف في الأصول حجة كفر ، وخرج عن دائرة الإسلام ، وحشر مع اليهود والنصارى أو من شاء من فرق الكفرة

অর্থাৎ আল্লামা সুয়ূতি স্বীয় রচিত " মিফতাহুল জান্নাহ ফিল ইহতিজাজ বিস সুন্নাহ" গ্রন্থে  বলেন, "জেনে রাখুন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বর্ণনাগত কিংবা কর্মগত যে হাদীসটি উসূলে হাদীসের দৃষ্টিকোণ থেকে পরিপূর্ণ মাত্রায় যাবতীয় শর্ত বিদ্যমান থাকায় শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে, সেই হাদীসকে কেউ অস্বীকার করলে তাকে কাফের বলা হবে, এবং সে ইসলের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যাবে। তার হাশর হবে, ইহুদী-নাসারা কিংবা অন্য কোন কাফের সম্প্রদায়ের সাথে।  (সুয়ূত্বী, মিফতাহুল জান্নাহ, পৃ ৬ ) ।


يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ 

হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাযের জন্যে উঠ, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, মাথা মুছেহ কর এবং পদযুগল গিটসহ। সূরা মায়েদা-০৬


Surah Al-Baqara, Verse 222:

وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ قُلْ هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِي الْمَحِيضِ وَلَا تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّىٰ يَطْهُرْنَ فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ

আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে হায়েয (ঋতু) সম্পর্কে। বলে দাও, এটা অশুচি। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রীগমন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হবে না, যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়। যখন উত্তম রূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে, তখন গমন কর তাদের কাছে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন। সূরা বাকারা-২২২


حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، قَالَ حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، قَالَ حَدَّثَنَا قَتَادَةُ، قَالَ حَدَّثَتْنِي مُعَاذَةُ، أَنَّ امْرَأَةً، قَالَتْ لِعَائِشَةَ أَتَجْزِي إِحْدَانَا صَلاَتَهَا إِذَا طَهُرَتْ فَقَالَتْ أَحَرُورِيَّةٌ أَنْتِ كُنَّا نَحِيضُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَلاَ يَأْمُرُنَا بِهِ‏.‏ أَوْ قَالَتْ فَلاَ نَفْعَلُهُ‏

৩২১। মু’আযাহ (রহ.) থেকে বর্ণিত জনৈকা মহিলা ’আয়িশা (রা.) কে বললেন: হায়েযকালীন কাযা সালাত পবিত্র হওয়ার পর আদায় করলে আমাদের জন্য চলবে কি-না? ’আয়িশা (রা.) বললেন, তুমি কি হারূরিয়্যাহ? (খারিজীদের একদল) আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময়ে ঋতুবতী হতাম কিন্তু তিনি আমাদের সালাত কাযার নির্দেশ দিতেন না। অথবা তিনি (’আয়িশা (রা.) বলেন, আমরা তা কাযা করতাম না। (মুসলিম ৩/১৫, হা. ৩৩৫, আহমাদ ২৪৭১৪)


দ্বিতীয় কথা হলো, কাফের-মুরতাদের সাথে বিবাহ হারাম। দলিল- 


Surah Al-Baqara, Verse 221:

وَلَا تَنكِحُوا الْمُشْرِكَاتِ حَتَّىٰ يُؤْمِنَّ وَلَأَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِّن مُّشْرِكَةٍ وَلَوْ أَعْجَبَتْكُمْ وَلَا تُنكِحُوا الْمُشْرِكِينَ حَتَّىٰ يُؤْمِنُوا وَلَعَبْدٌ مُّؤْمِنٌ خَيْرٌ مِّن مُّشْرِكٍ و

আর তোমরা মুশরেক নারীদেরকে বিয়ে করোনা, যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ করে। অবশ্য মুসলমান ক্রীতদাসী মুশরেক নারী অপেক্ষা উত্তম, যদিও তাদেরকে তোমাদের কাছে ভালো লাগে। এবং তোমরা (নারীরা) কোন মুশরেকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ো না, যে পর্যন্ত সে ঈমান না আনে। সূরা বাকারা-২২১


ومنها إسلام الرجل إذا كانت المرأة مسلمة، فلا يجوز إنكاح المؤمنة للكافر، لقوله تعالى: ولا تنكحوا المشركين حتى يؤمنوا (بدائع الصنائع، كتاب النكاح، اسلام الرجل إذا كانت المرأة مسلمة، زكريا-2/

অর্থাৎ,  বিবাহ শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো, স্ত্রী মুসলিম হলে স্বামীকেও ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের হতে হবে। সুতরাং মূমিন নারীকে কাফিরের সাথে বিবাহ দেয়া বৈধ নয়। কারণ মহান আল্লাহ তায়লার বাণী: মুশরিকরা ঈমান না আনা পর্যন্ত তাদের সাথে তোমাদের কোন মুসলিম নারীকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করবেনা। ( বাদায়েউস সানায়ে, কিতাবুন নিকাহ, ২/৫


قَوْله تَعَالَى { وَمَنْ يَكْفُرْ بِالْإِيمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ وَهُوَ فِي الْآَخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ ‏سورة المائدة-5) ‏

আল্লাহ তায়ালা বলেন-ঈমান আনার পর যে ব্যক্তি কুফরী করে তার সকল আমল বাতিল হয়ে যায়। আর সে ‎আখেরাতে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা মায়িদা-৫)‎


ولا يجوز للمرتد أن يتزوج مرتدة ولا مسلمة ولا كافرة أصلية وكذلك لا يجوز ‏نكاح المرتدة مع أحد كذا في المبسوط(الفتاوى الهندية-1/282)‏

মৌলিকভাবে মুরতাদের জন্য মুরতাদকে, কোন মুসলিমকে, এবং কোন কাফেরকেও বিবাহ করা জায়েজ নয়। ‎‎(ফাতওয়ায়ে আলমগীরী০১/২৭২


সারকথা হলো,  আপনার প্রশ্নে বর্ণিত ব্যক্তি/পরিবার যদি নামাজকে দুরাকাত, পা ধোয়া ফরজ মনে না করে এবং পিরিয়ড অবস্থাকে অপবিত্র মনে না করে, তাহলে তারা মুরতাদ (কাফের), তার সাথে বিবাহ শুদ্ধ হয়নি।


পরামর্শ: তাদেরকে উল্লেখিত আমলের কারণ বা তাদের আকিদা জিজ্ঞেস করে, বিজ্ঞ মুফতি কেরাম থেকে জেনে আমল করা জরুরি।



  والله اعلم بالصواب