আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১৩১৬২: অমুসলিমদের টাকা বা অর্থ দ্বারা মসজিদ নির্মাণ করার বিধান কী

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১৩১৬২: 

আসসালামু আলাইকুম।  হযরত আশা করি ভাল আছেন। জানার বিষয় হলো বাইতুল্লাহ বিধর্মীদের অর্থের মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছে। এজন্য মসজিদ নির্মাণে অমুসলিমদের দান গ্রহণ করা যাবে। বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবে জাতি। আচ্ছালামু আলাইকুম।

তারিখ:০৫/০১/২৫ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা  সাইফুল ইসলাম ভোলা থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, মসজিদ নির্মাণে অমুসলিমদের কাছে সহযোগিতা কামনা করা মর্যাদার পরিপন্থী। তবে স্বেচ্ছায়  যদি কোন অমুসলিম ব্যক্তি মসজিদ নির্মাণে দান করে, তবে শর্তসাপেক্ষে জায়েজ আছে। যেমন,

এ বিষয়ে শায়েখ ইবনে বাজ রহ. কে জিজ্ঞেস করলে জবাবে তিনি বলেন,


إذا كان فيه شرط يخالف الشرع فلا أما التبرع المجرد فإنه ليس فيه شيء والنبي ﷺ قبل كثيْرًا من هدايا المشركيْن

‘অমুসলিমদের অনুদানের সঙ্গে শরী‘আত বিরোধী কোন শর্ত যুক্ত থাকলে তা গ্রহণ করা যাবে না। তবে নিঃশর্ত অনুদান গ্রহণ করাতে কোন সমস্যা নেই। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুশরিকদের দেয়া অসংখ্য উপহার গ্রহণ করেছেন’ (ইবনু বায, মাজমূঊ ফাতাওয়া, ২৮তম খণ্ড, পৃ. ২৩৭)


সৌদি আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটিকে প্রশ্ন করা হয় যে, ‘খ্রিষ্টান শাসক মুসলিমদের জন্য মসজিদ নির্মাণ করে দিলে তা গ্রহণ করা যাবে কি বা উক্ত মসজিদে ছালাত আদায় করা বৈধ হবে কি? উত্তরে তাঁরা বলেন,

عليكم أن تقبلوا ما أنشأته لكم من المساجد...وعليكم معشر المسلمين أن تتعاونوا فيما بينكم في إنشاء مرافق أخرى من مساجد ومدارس إسلامية وغير ذلك مما تحتاجون إليه

‘খ্রিষ্টান শাসক আপনাদের জন্য যে মসজিদ নির্মাণ করেছে, তা গ্রহণ করা আপনাদের জন্য অপরিহার্য। ...হে! মুসলিম ভাইয়েরা! আপনাদের উপর এটাও অপরিহার্য যে, আপনারা মসজিদ, মাদরাসা ও ইসলামী অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস নির্মাণে পরস্পরে সহযোগিতা করবেন’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমা, ৫ম খণ্ড, পৃ. ২৫৫-২৫৬, ফৎওয়া নং-২০১১২)


দ্বিতীয় কথা হলো, এছাড়াও নিম্নোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।

১- এরকম দান তাদের বিশ্বাস অনুপাতে পূণ্যের কাজ হতে হবে।

২- পরবর্তীতে অর্থ ফিরিয়ে নেয়ার জন্য চেষ্টা ফিকির করবে না এ নিশ্চয়তা থাকতে হবে।

৩- অর্থদানের পর মসজিদে নিজের কর্তৃত্ব স্থাপনের চেষ্টা না করার নিশ্চয়তা না করতে হবে।

৪- অর্থদানের পর মসজিদটি তার দানের টাকায় বলে মুসলমানদের ঠাট্টা-অপমান করার মানসিকতা না থাকতে হবে।

৫- টাকাটা হালাল হতে হতে, এ শর্ত মুসলিমদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।


উল্লেখিত শর্তসাপেক্ষে মসজিদ বা ঈদগাহে অমুসলিমের দানকৃত টাকা বা ওয়াকফকৃত সম্পদ নেয়া জায়েজ আছে।


সারকথা হলো, অমুসলিমের টাকায় মসজিদ নির্মাণ করা শর্ত সাপেক্ষে জায়েজ।

 আর অমুসলিমদের টাকা দ্বারা পবিত্র কাবা ঘর নির্মাণ হয়েছে, একথা সঠিক নয়। এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ বার কাবা পুনঃনির্মাণ বা সংস্কার হয়েছে। ইসলামের পূর্বে কুরাইশগণ (অমুসলিমগণ) কাবা পুনঃনির্মাণ করেন।

এর পূর্বে ও পরে কাবা পুনঃনির্মাণ হয়েছে। তাহলে তাদের নির্মাণ আসল এবং স্থায়ী নয়।

আদম সৃষ্টিরও আগে আল্লাহ তায়ালা ফিরিশতাদের বললেন, ‘যাও, যমিনে একটা ঘর নির্মাণ করো এবং সেটার তাওয়াফ করো।’ পরবর্তীতে আদম আলিইহিস সালামও সে ঘরের নির্মাণকাজ করেন।

 

 ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে পবিত্র এই গৃহ তিন তিনবার পুনঃনির্মিত হয়েছে। প্রথমবার আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.), দ্বিতীয়বার হাজ্জাজ বিন ইউসুফ আস সাকাফি এবং সবশেষে উসমানি খলিফা মুরাদ খানের আমলে (১০৩২-১০৫০ হিজরি) স্বল্প পরিসরে কাবার পুনঃনির্মাণের কথাও ঐতিহাসিকদের কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন।



  والله اعلم بالصواب