জিজ্ঞাসা-১২৩৯১:
বাড়ির মালিককে ভাড়া না দিয়ে এককালীন (মালিক-ভাড়াটিয়ার ঐক্যমতে) নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে মেয়াদ শেষে টাকা ফেরত নেয়ার শর্তে ভাড়া থাকা জায়েজ আছে কি না? তারিখ: ২২/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা রফিকুল ইসলাম সাভার থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, বন্ধক পদ্ধতির বৈধতা সম্পর্কে ফিকহি হানাফির অন্যতম ফকিহ ইবনে আবেদীন শামী রহ. বলেন,
[ كِتَابُ الرَّهْنِ] هُوَ مَشْرُوعٌ، لِقَوْلِهِ تَعَالَى - {فَرِهَانٌ مَقْبُوضَةٌ} [ البقرة: 283] - وَبِمَا رُوِيَ «أَنَّهُ - عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ - اشْتَرَى مِنْ يَهُودِيٍّ طَعَامًا وَرَهَنَهُ بِهِ دِرْعَهُ» وَانْعَقَدَ عَلَيْهِ الْإِجْمَاعُ.
অর্থাৎ- বন্ধক পদ্ধতি কোরআনে কারীমের সূরা বাকারার ২৮৮নং আয়ত দ্বারা প্রমাণিত এবং নবীজী (ﷺ) কর্তৃক নিজ বর্মকে বন্ধক রাখা দ্বারাও প্রমাণিত হয়।সর্বোপরি বৈধতার উপর উলমায়ে কেরামদের ইজমা বা ঐক্যমত ও রয়েছে। সূত্র: রদ্দুল মুহতার-৬/৪৭৭
দ্বিতীয় কথা হলো, বন্ধককৃত বস্তু বন্ধকগ্রহীতার কাছে আমানতস্বরূপ। বন্ধকি বাড়ি/জমি/বস্তু থেকে বন্ধকগ্রহীতার কোনো ফায়দা হাসিল করা নাজায়েজ ও হারাম। এমনকি বন্ধকদাতা এর অনুমতি দিলেও পারবে না। কারণ বন্ধকি বাড়ি/জমি থেকে বন্ধকগ্রহীতা কোনো ধরনের ফায়দা উপভোগ করা সুদের অন্তর্ভুক্ত, যা হারাম। সূত্র: বাদায়েউস সানায়ে : ৬/১৪৬ দলিল:
হাদিস/আসার নং-০১
ফাযালাহ ইবুন উবাইদ (রা.) বলেন,
كُلُّ قَرْضٍ جَرَّ مَنْفَعَةً فَهُوَ وَجْهٌ مِنْ وُجُوهِ الرِّبَا
‘যে ঋণ থেকে ঋণদাতা উপকৃত হয় তা সুদের একটি প্রকার।’তাখরিজ: সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদিস: ১১২৫২
হাদিস/আসার নং-০২
اسْتَقْرَضَ رَجُلٌ مِنْ رَجُلٍ خَمْسَمِائَةِ دِينَارٍ عَلَى أَنْ يُفْقِرَهُ ظَهْرَ فَرَسِهِ فَقَالَ ابْنُ مَسْعُودٍ : مَا أَصَبْتَ مِنْ ظَهْرِ فَرَسِهِ فَهُوَ رِبًا
ইবনে সিরিন (রহ.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক লোক সাহাবি ইবনে মাসউদ (রা.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করল, এক ব্যক্তি আমার কাছে একটি ঘোড়া বন্ধক রেখেছে, তা আমি আরোহণের কাজে ব্যবহার করেছি। ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, তুমি আরোহণের মাধ্যমে এর থেকে যে উপকার লাভ করেছ তা সুদ হিসেবে গণ্য হবে। তাখরিজ: মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ১৫০৭১
হাদিস/আসার নং-০৩
إذا أقرض أحدكم قرضاً فأهدى إليه أو حمله على الدابة فلا يركبه ولا يقبلها إلا أن يكون جرى بينه وبينه قبل ذلك.
অর্থাৎ প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, যখন তোমাদের মধ্যে কেউ (কাউকে) ঋণ দেয়। অতঃপর (ঋণগ্রহীতার তরফ থেকে) তাকে কোন উপঢৌকন দেওয়া হয় অথবা তাকে (ঋণগ্রহীতা নিজের গাড়ি বা) সওয়ারীতে চড়িয়ে কোথাও পৌঁছিয়ে দিতে চায়, তবে সে যেন তার সওয়ারীতে না চড়ে এবং তার উপঢৌকনও গ্রহণ না করে। তবে হ্যাঁ, যদি এরূপ সদ্ব্যবহার (উপঢৌকন আদান-প্রদান ঋণ দেওয়ার) পূর্ব থেকেই জারী থাকে তবে (তার পরে) অনুরূপ কিছু গ্রহণ করায় দোষ নেই।’’ মুসনাদে আহমদ ১/৩৯৫, ৪২৪, ইবনে মাজাহ ২২৭৯, বাইহাকী, মিশকাত ২৮২৭ নং
হাদিস/আসার নং-০৪
বিখ্যাত তাবেয়ি ইমাম কাজি শুরাইহ (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, সুদ পান করা কিভাবে হয়ে থাকে? তিনি বলেন, বন্ধকগ্রহীতা বন্ধকি গাভির দুধ পান করা সুদ পানের অন্তর্ভুক্ত। মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ১৫০৬৯,
সারকথা কথা হলো, বাড়ির মালিককে ভাড়া না দিয়ে এককালীন (মালিক-ভাড়াটিয়ার ঐক্যমতে) নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে মেয়াদ শেষে টাকা ফেরত নেয়ার শর্তে ভাড়া থাকা আমাদের দেশে প্রচলিত জমি কটের/বন্ধকের মত।
ঋণদাতার জন্য বন্ধকি মাল/বস্তু/জমি/বাড়ি ফায়দা নেওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েয। এটি মূলত ঋণ প্রদান করে বিনিময়ে সুদ গ্রহণেরই একটি প্রকার। সুতরাং প্রশ্নোল্লেখিত পদ্ধতিটি জায়েজ হবে না।
তবে বিকল্প পদ্ধতি রয়েছে এ সম্পর্কে আল-বুরহানের জিজ্ঞাসা-২৩৮ এবং বন্ধক সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা-২৩৭,১০৪ শিরোনামে আলোচিত হয়েছে সার্চ অপশনে তালাশ করলে পেয়ে যাবেন ইনশাল্লাহ।
والله اعلم بالصواب