✅নবজাতককে কেন্দ্র করে যে সব ভুলভ্রান্তি ঘটে থাকে: পর্ব ৫
🟢সন্তানের নাম নির্বাচনে ভ্রান্তি
সন্তানের নাম নির্বাচনে শরীয়তের নিদের্শনা কী তা যেন অধিকাংশ মা-বাবাই জানেন না। আজকাল ছেলে-মেয়েদের নাম শুনে তাই মনে হয়। কেউ তো বিধর্মীদের অনুকরণে নাম রাখে এবং এটাকে স্টাইল মনে করে। আবার কেউ কেউ সন্তানের নাম পটল, লেবু, ঝন্টু, লাল মিঞা, কালু মিঞা ইত্যাদি রাখে।
কেউ প্রিয় সন্তানের নাম বিশ্বের সেরাগায়ক ও মডেলদের সাথে মিল করে রাখে। যেখানে ইহুদি, খৃস্টান, এমনকি হিন্দুদেরকেও নামের বাঁধাধরা নিয়ম নীতি মেনে চলতে দেখা যায়, সেখানে মুসলমানদের এই অবনতি। এগুলো দেখলে যে কেউ মনে করে মুসলমানদের কাছে সন্তানের নামকরণের কোনো নীতি নেই। অথচ বাস্তবতা সম্পূর্ণ উল্টো। একমাত্র ইসলামই সন্তানের নাম রাখার ক্ষেত্রে উত্তম ও চমৎকার নীতিমালা দিয়েছে। এ ব্যাপারে অসংখ্য হাদীস রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি সুন্নত ছিল খারাপ নাম পরিবর্তন করে ভালো নাম রাখা। এজন্য হাদীস গ্রন্থগুলোতে এ বিষয়টিকে একটি স্বতন্ত্র অধ্যায় হিসাবেও বিন্যস্ত করতে দেখা যায়। নিুে হাদীস ও সুন্নতের আলোকে নির্ণিত কিছু নীতি পেশ করা হল।
১. ‘আব্দুল্লাহ’ ‘আব্দুর রহমান’ নাম রাখা। কেননা হাদীস শরীফে এসেছে,
’’ إِنَّ أَحَبَّ أَسْمَائِكُمْ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ عَبْدُ اللهِ وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ ‘‘
নিশ্চয় আল্লাহ তাআলার নিকটে সর্বাধিক পছন্দনীয় নাম ‘আব্দুল্লাহ’ ও ‘আব্দুর রহমান’। -সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদীস ২১৩২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৬২; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪১৭; তুহফা ৯৯
২. নবী, সাহাবা, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীন এবং পূর্ববর্তী অলি-বুজর্গদের নামে নাম রাখা। সহীহ মুসলিমে এ মর্মে একটি অধ্যায় রাখা হয়েছে, যার শিরোনাম হচ্ছে, ’’باب التسمى بأسماء الأنبياء والصالحين‘‘ ‘নবী এবং সালেহীনের নামে নাম রাখা প্রসঙ্গ’ -সহীহ মুসলিম হাদিস ২১৩৫; তুহফা ১১০; রদ্দুল মুখতার ৬/৪১৭
৩. ভালো অর্থবোধক নাম রাখা। হাদীস শরীফে এসেছে, রসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
إِنَّكُمْ تُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِأَسْمَائِكُمْ وَأَسْمَاءِ آبَائِكُمْ، فَأَحْسِنُوا أَسْمَاءَكُمْ
‘নিশ্চয় কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের নাম ও তোমাদের পিতার নাম ধরে ডাকা হবে। অতএব তোমাদের নাম সুন্দর কর।’ -সুনানে আবুদাউদ হাদীস ৪৯৪৮
এছাড়া ভালো অর্থবোধক নাম রাখা এ কারণেও অত্যাবশ্যকীয় যে, নামের প্রভাব ব্যক্তির মাঝে পড়ে থাকে। এটি হাদীস ও আসারে সাহাবা দ্বারা প্রমাণিত। -তুহফা ১২২-১২৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৪১৮
৪. আল্লাহ তাআলার জন্য নির্ধারিত গুণবাচক নামসমূহের মধ্যে কোনোটি না রাখা।
যেমন- রব, খালেক, সামাদ, জাব্বার, মুতাকাব্বির ইত্যাদি। তবে এগুলোর পূর্বে ‘আব্দ’ সংযোজন করে আব্দুর রব, আব্দুল খালেক, আব্দুস সামাদ ইত্যাদি নাম রাখা যাবে; বরং হাদীস শরীফে এরূপ ‘আব্দ’ যোগে নাম রাখার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আজকাল আব্দ ছাড়া শুধু খালেক, মালেক, রহমান, সামাদ-এভাবে ডাকার প্রচলন রয়েছে। এটি একটি নিন্দিত ও গর্হিত কাজ। এ থেকে বেঁচে থাকা অপরিহার্য। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৬২; তুহফা ১০৮
৫. আব্দে আলী, আব্দুল কাবা, আব্দুন্নবী ইত্যাদি নাম না রাখা। শুধু আল্লাহ তাআলার নামের শুরুতেই ‘আব্দ’ শব্দ সংযোজন করে নাম রাখা যায়। অন্য কোনো শব্দের শুরুতে ‘আব্দ’ যোগ করে কারও নাম রাখা যায় না। -তুহফা ১০০-১০৩
৬. যে সব নাম শুনলে অমুসলিমদের নাম মনে হয় এ ধরনের নাম না রাখা। শাহান শাহ, সায়্যিদুল বাসার বা এজাতীয় অর্থবোধক নাম না রাখা। -তুহফা ১০১
৭. ফেরআউন, কারূন, হামান এবং অভিশপ্ত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর নাম না রাখা। -তুহফা ১০৪
৮. খারাপ অর্থবোধক নাম না রাখা। -তুহফা ১০৫
৯. নবী, রাসূল, ফেরেশতা-এ ধরনের বিশেষ পারিভাষিক শব্দ দ্বারা নাম না রাখা।