আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৪০৮: সন্তানের প্রতি পিতার তিনটি হক সম্পর্কে হজরত ওমর রা. এর বর্ণনাটি কি সহিহ?

No Comments

 


জিজ্ঞাসা-১২৪০৮:

আসসালামু আলাইকুম।

একজন লোক হযরত মর ফারুক (রা.) এর কাছে একটি ছেলেকে সঙ্গে করে উপস্থিত হয়ে বলল: এটা আমার ছেলেকিন্তু আমার সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করেছে ।’ তখন হযরত মর (রা.) ছেলেটিকে এ বিষয় জিজ্ঞেস করলে,

ছেলেটি বলল হে আমীরুল মুমিনীন! পিতামাতার উপরও কি সন্তানের কোন হক আছেহযরত ওমর (রা.) বললেননিশ্চয়ই।’ তিনটি হক রয়েছে।  ছেলেটি বলল: আল্লাহর শপথআমার এ পিতা আমার এ হকগুলোর একটিও আদায় করেননি।

ই ঘটনা কি সহিহতারিখ: ০১/০১/ ঈসায়ি/ইংরেজি

মাওলানা মুবাশ্বির নীলফামারী থেকে।

 

জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  কথা হলো আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়টির আরবি পাঠ নিম্নরূপ:


جاء رجل إلى عمر بن الخطاب " رضي الله عنه" يشكو إليه عقوق ابنه ، فأحضر عمر الولد وأنَّبَه على عقوقه لأبيه ، ونسيانه لحقوقه ، فقال الولد : يا أمير المؤمنين أليس للولد حقوق على أبيه ؟ قال : بلى ، قال : فما هي يا أمير المؤمنين ؟ قال عمر : أن ينتقي أمه ، ويحسن أسمه ، ويعلمه الكتاب ( أي القرآن ) ، قال الولد : يا أمير المؤمنين إن أبي لم يفعل شيئاً من ذلك ، أما أمي فإنها ونجية كانت لمجوسي ، وقد سماني جُعلاً ( أي خنفساء ) ، ولم يعلمني من الكتاب حرفاً واحداً

فالتفت عمر إلى الرجل وقال له : جئت إليَّ تشكو عقوق ابنك ، وقد عققته قبل أن يعقك ، وأسأت إليه قبل أن يسيء إليك ؟! )

অর্থ:  এক ব্যক্তি ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.)-এর  কাছে এসেছিলেন তার কাছে তার ছেলের অবাধ্যতার অভিযোগ করেন।  অতঃপর তিনি   ছেলেটিকে উপস্থিত করলেন এবং পিতা-মাতাকে কষ্ট দেওয়া ও হক সম্পর্কে ভুলে যাওয়া  জিজ্ঞেস করলেন। অতঃপর ছেলেটি বললেন, হে আমিরুল মুমিনিন, ছেলের প্রতি কি কোন হক নেই বাবার? তিনি বললেন, হ্যাঁ অবশ্যই।  সে বলল, তা কি হে আমিরুল মুমিনিন? তিনি বললেন, (১) মায়ের দুধ পান করানো, (২) সুন্দর নাম রাখা এবং (৩)     কিতাব  (অর্থাৎ কুরআন) শিক্ষা দেওয়া।  ছেলেটি বলল এর কোনটিও আমাকে শিক্ষা দেয়নি।  


তারপর ওমর (রা.)  লোকটির দিকে ফিরে বললেন: আপনি আমার কাছে আপনার ছেলের অবাধ্যতার অভিযোগ করতে এসেছিলেন এবং সে তোমাকে শাস্তি দেওয়ার আগে তুমি তাকে শাস্তি দিয়েছআর সে তোমাকে গালি দেওয়ার আগে তুমি তাকে গালি দিয়েছ। সূত্র: তারবিয়াতুল আওলাদি ফিল ইসলাম- ১ম খণ্ড; ১২৭ পৃ.

 

এ বর্ণনা সম্পর্কে শায়েখ আলি আল-হালাবি রহ. বলেন, এ সনদের কোন ভিত্তি নেই।

 

দ্বিতীয় কথা হলো, উক্ত বর্ণনায়  সন্তানের প্রতি তিনটি হক  যা  কুরআন-সুন্নাহ  দ্বারা সমর্থিত-প্রমাণিত। যেমন,

 আয়াত নং-০১

وَالْوَالِدَاتُ يُرْضِعْنَ أَوْلَادَهُنَّ حَوْلَيْنِ كَامِلَيْنِ لِمَنْ أَرَادَ أَن يُتِمَّ الرَّضَاعَةَ

আর সন্তানবতী নারীরা তাদের সন্তানদেরকে পূর্ন দুবছর দুধ খাওয়াবেযদি দুধ খাওয়াবার পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়। আর সন্তানের অধিকারী অর্থাৎপিতার উপর হলো সে সমস্ত নারীর খোর-পোষের দায়িত্ব প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী। সূরা বাকারা-২৩৩

 

হাদিস নং-০১

من حق الولد على الوالد أن يحسن اسمه ويحسن أدبه.

অর্থ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. ও  আয়েশা রা. থেকে বর্ণিতরাসূল () বলেছেন: সন্তানের সুন্দর নাম রাখা ও তার উত্তম তারবিয়াতের ব্যবস্থা করা বাবার উপর সন্তানের হক। তাখরিজ: মুসনাদে বাযযার (আলবাহরুয যাখখার)হাদীস ৮৫৪০


হাদিস নং-০২

عن أبي هريرة - رضي الله عنه – قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ( حق الولد على والده أن يحسن اسمه ، ويعلمه الكتاب ، ويزوجه إن أدرك ) ( ذكره الزبيدي في " إتحاف السادة المتقين " – 6 / 317 ، 318 ، والهندي في " كنز العمال " – برقم 45191 ، 45192 ، 45193 ، والقرطبي في تفسيره – 18 / 195 ، وأبو نعيم في " الحلية " – 1 / 184 ، وذكره

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) নবী করীম () থেকে এ সম্পর্কে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন : পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের হক হচ্ছে প্রথমত তিনটি: জন্মের পরপরই তার জন্য উত্তম একটি নাম রাখতে হবেজ্ঞান বুদ্ধি বাড়লে তাকে কুরআন শরীফ তথা ইসলাম শিক্ষা দিতে হবে। আর সে যখন পূর্ণবয়স্ক হবেতখন তার বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। কানযুল উম্মাল-৪৫১৯১,৪৫১৯২;  কুরতুবি-১৮/১৯৫; মুসনাদে আবু নাঈম-১/১৮৪

 

হাদিস নং-০৩

রাসূলুল্লাহ () ইরশাদ করেনযার সন্তান রয়েছে সে যেন তার সুন্দর নাম রাখে এবং তাকে উত্তম চরিত্র শেখায়। যখন সে বালেগ হবে তখন তার বিয়ে দেয়। বালেগ হওয়ার পরও যদি বিয়ে না দেয় আর সে কোনো গুনাহ করে ফেলে তবে তার এ গুনাহ তার পিতার উপর বর্তাবে। তাখরিজ: শুআবুল ঈমানবায়হাকী ৬/৪০১হাদীস ৮৬৬৬

 

হাদিস নং-০৪

كلُّ مولودٍ يولَدُ على الفطرةِ فأبواه يُهوِّدانِه أو يُنصِّرانِه أو يُمجِّسانِه

الراوي : أبو هريرة

প্রত্যেক শিশু (ইসলামের) ফিতরতের উপর জন্মলাভ করে। কিন্তু পিতা-মাতা তাকে ইহুদী  বানায়খৃষ্টান বানায়অগ্নিপূজক বানায়। তাখরিজ:  বুখারী ১/১৮৫হাদীস ১৩৮৫সহীহ মুসলিম ২/৩৩৬হাদীস ২৬৫৮

 

সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নে বর্ণিত আসারটির সনদ সহিহ নয়, তবে এর সারমর্ম সঠিক, অন্যান্য রেওয়ায়েত/বর্ণনা দ্বারা সমর্থিত-প্রমাণিত। 

 

والله اعلم بالصواب