আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১৩১৬৯: জমি বর্গা বা ইজারা দেওয়ার শর্তাবলী

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১৩১৬৯:  

আসসালামু আলাইকুম। সম্মানিত মুফতি সাহেবের নিকট আমার জিজ্ঞাসা মসজিদের জমি ইজারা বা বর্গা দেয়ার পদ্ধতি জানাবেন প্লিজ। 

তারিখ:১৮/০১/২৫ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা  মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ দিনাজপুর থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, জমি বর্গা বা ইজারা একটি পুরাতন পদ্ধতি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও জমি বর্গা দিয়েছিলেন। দলিল-

2331 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مُقَاتِلٍ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ، أَخْبَرَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا «أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَعْطَى خَيْبَرَ اليَهُودَ، عَلَى أَنْ يَعْمَلُوهَا وَيَزْرَعُوهَا، وَلَهُمْ شَطْرُ مَا خَرَجَ مِنْهَا»

২১৮০। মুহাম্মাদ ইবনে মুকাতিল (রাহঃ) ....ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) খায়বরের জমি ইয়াহুদীদেরকে এ শর্তে বর্গা দিয়েছিলেন যে, তারা তাতে পরিশ্রম করে কৃষি কাজ করবে এবং উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক তারা পাবে।

Narrated Ibn `Umar:

Allah’s Messenger (ﷺ) gave the land of Khaibar to the Jew’s on the condition that they work on it and cultivate it, and be given half of its yield.

—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২১৮০ (আন্তর্জাতিক নং ২৩৩১)

দ্বিতীয় কথা হলো, ওলামায়ে কেরাম নিম্ন বর্ণিত শর্ত সাপেক্ষে বর্গাচাষকে জায়েজ বলেছেন,


এক. জমি চাষাবাদোপযোগী হওয়া। যদি জমি অনুর্বর হয় কিংবা এত নোনা যে সেখানে ফসল ফলানো সম্ভব নয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে বর্গা চুক্তি শুদ্ধ হবে না। কেননা এর দ্বারা উদ্দেশ্য হাসিল হবে না।


দুই. ভূমি মালিক এবং চাষি উভয়ই চুক্তি সম্পাদন করার যোগ্য হতে হবে। সুতরাং পাগল, জ্ঞানহীন ও অবুঝ শিশুর সঙ্গে চুক্তি শুদ্ধ হবে না। এ শর্তটি বর্গাচাষের সঙ্গে খাস নয়, যেকোনো চুক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কেননা চুক্তি বিষয়টি সম্পাদনকারী যোগ্য না হলে কোনো চুক্তিই সহিহ হবে না।


তিন. বর্গাচাষের সময়সীমা উল্লেখ থাকতে হবে। কেননা এটি ভূমির মুনাফা অথবা চাষির মুনাফার ওপর একটি চুক্তি। আর সময়সীমা হলো সেই মুনাফার মাপকাঠি, যার দ্বারা নির্ধারিত মুনাফা সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়।


চার. বীজ কে দেবে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। বীজ কী হবে। তা কোন জাতের হবে। তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। কারণ বীজের নানাবিধ প্রকার রয়েছে। নিম্নমানের বীজের ফসল এক রকম আর উন্নত বীজের ফসল ভিন্ন হবে তা অনুমেয়। সে জন্য পূর্ব থেকেই তা উভয়ের মধ্যে স্পষ্ট হতে হবে, যাতে পরবর্তী সময়ে কোনোরূপ ঝগড়া না হয়।


পাঁচ. যার পক্ষ থেকে বীজ সরবরাহ করা হবে না, তার অংশ কী পরিমাণ হবে, তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করতে হবে। কেননা সে তো শর্তের কারণেই তার অংশের হকদার হয়ে থাকে। তাই তার অংশটি জানা থাকা আবশ্যক।


ছয়. চাষির জন্য ভূমি মালিক কর্তৃক ভূমি সম্পূর্ণরূপে অবমুক্ত করে দেওয়া। তার পক্ষ থেকে কোনোরূপ প্রতিবন্ধকতা না থাকা। সুুতরাং যদি ভূমিতে মালিকের কর্মের শর্ত আরোপ করা হয়, তাহলে ভূমি অবমুক্ত না হওয়ার কারণে চুক্তি ফাসিদ হয়ে যাবে।


সাত. ফসল উৎপাদনের পর উৎপাদিত ফসলে উভয়ের শরিকানা থাকতে হবে। কেননা বর্গাচাষ হচ্ছে একটি অংশীদারি চুক্তি। কাজেই যে শর্তের কারণে ওই অংশীদারত্ব শেষ হয়ে যায়, তা অবশ্যই চুক্তিকে বিনষ্ট করে দেবে। যদি ভূমির মালিক ও চাষি উভয়ে মিলে কোনো একজনের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণের শর্তে বর্গাচাষ চুক্তি করে, তবে তা শুদ্ধ হবে না। কারণ এভাবে করাতে দুজনের অংশীদারি নিশ্চিত হয় না। কেননা হতে পারে সে বছর জমিতে ওই পরিমাণ ফসলই উৎপন্ন হয়েছে, যা একজনের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।  


সর্বোপরি উভয় পক্ষ সততার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবে। এ ক্ষেত্রে কেউ এমন কোনো কাজ করবে না, যাতে তার পরিশ্রমের ফল ভোগ করতে না পারে।


(তথ্যকণিকা : হিদায়া, বাদায়েউস সানায়া, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু)


সারকথা হলো,  উপরোক্ত শর্ত সাপেক্ষে মসজিদ কমিটি জমি বর্গা বা ইজারা দিতে পারবে।



  والله اعلم بالصواب