জিজ্ঞাসা-১৮৯:
১। মসজিদের মেম্বার কি ইট সিমেন্ট বালি দ্বারা তৈরি করা জায়েজ? ২। মসজিদের মিনার দেওয়া জায়েজ কিনা কারন অনেকে বলেন যে রাসুল সাল্লামের যুগে মসজিদের মিনার ছিল না। তারিখ-৫/৬/২২ ইংরেজি
সাইফুল ইসলাম ত্রিশাল মোমেনশাহি থেকে--
জবাব: সম্মানিত শায়েখ। আপনি দুটি বিষয় জানতে চেয়েছেন। ইনশাল্লাহ তার জবাব নিম্নে দেওয়া হলো।
ونسأل الله التوفيق وهو الموفق والمعين
প্রশ্ন: ১। মসজিদের মেম্বার কি ইট সিমেন্ট বালি দ্বারা তৈরি করা জায়েজ?
উত্তর: ১। হ্যাঁ জায়েজ। আমাদের আহলে হাদিস ভাইয়েরা এটাকে বিদআত বলতে চায়/নাজায়েজ মনে করে। তাদের দলিল:
فَعَمِلَ هَذِهِ الثَّلاَثَ الدَّرَجَاتِ مِنْ طَرْفَاءِ الْغَابَةِ অর্থ: অতঃপর সে গাবার ঝাউ গাছ থেকে তিন স্তর বিশিষ্ট মিম্বর তৈরি করেছিল। ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/১৫২১; ইবনু মাজাহ হা/১৪১৪, পৃঃ ১০২
এ দ্বারা প্রমাণ হয় রাসূল (ﷺ) এর মিম্বার ছিল কাঠের। এখন প্রশ্ন হলো, রসূলের যুগে না থাকলেই কি বিদআত। আসুন এখন তাদের মুখেই বিদআতের সংজ্ঞা জানি।
বিদআত বলা হয় দ্বীন ও ইবাদতে নব আবিষ্কৃত কাজকে। অর্থাৎ দ্বীন বা ইবাদত মনে করে করা এমন কাজকে বিদআত বলা হবে, যে কাজের কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর কোন দলীল নেই। (সংজ্ঞাটি দিয়েছেন আহলে হাদিসের অন্যতম আলেম জবাব আব্দুল হামিদ ফাইযী সাহেব)আবদুল হামীদ ফাইযী
রাসূল (ﷺ) বলেছেন-
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ
‘যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু সৃষ্টি করল যা মূলত তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তা অগ্রাহ্য। সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৫০১
অর্থা্ৎ রাসূল (ﷺ) এর মিম্বরটি ইট-বালি-সিমেন্ট ও টাইলস দ্বারা মিম্বর তৈরি ছিল না। কোনো ব্যক্তিই মিম্বরটি পাকা হওয়া ইবাদত বা দ্বীনের কোনো বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত মনে করে না।
কাজেই উক্ত ব্যক্তির দাবিটি একটি ভিত্তিহীন দাবি। সুতরাং মিম্বরটি ইট-বালি-সিমেন্ট ও টাইলস তৈরি করতে শরিয়তের দৃষ্টিতে কোনো সমস্যা নেই।
যদি তাই হয়, তাহলে কয়েক প্রশ্নের জবাব দিন।
(ক) রাসূল (ﷺ) এর যুগে মাইকে আজান দেওয়া হয়নি; অথচ সারা দুনিয়ায় মাইকে আজান হচ্ছে। আপনি কি মসজিদের মাইকে/সাউন্ড বক্সে নামাজ পড়ান না?
(খ) রাসূল (ﷺ) এর গাছের ডাল দ্বারা মেসওয়াক করতেন; এখন যে আপনি ব্রাশ ব্যবহার করেন, এটা কি বিদআত?
(গ) আপনি যে বুখারি/সিয়া সিত্তার দলিল দেন; রাসূল (ﷺ) এর যুগে কি বুখারি ছিল ? তাহলে বুখারি কি বিদআত?
(ঘ) আমরা যে দামি জায়নামাজে নামাজ আদায় করি, রাসূল (ﷺ) জায়নামাজে নামাজ আদায় করেছেন?
প্রশ্ন: ২। মসজিদের মিনার দেওয়া জায়েজ কিনা কারন অনেকে বলেন যে রাসুল সাল্লামের যুগে মসজিদের মিনার ছিল না।
উত্তর: ২। কথা ঠিক রাসূল (ﷺ) এর যুগে মদিনায় মিনারের ব্যবহার ছিল না। সে সময় ছাদের ওপর থেকে আজান দেওয়া হতো। রাসুল (সা.)-এর ওফাতের পর মিনারের ব্যবহার শুরু হয়।
তবে ইসলামের প্রথম যুগে মিনার ছিল না—এ কথা অকাট্যভাবে বলা যাবে না। তবে হ্যাঁ, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর যুগে মিনার সংস্কৃতি না থাকলেও সাহাবায়ে কিরামের যুগে সেটি ছিল। এ বিষয়ে মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা নামক হাদিস গ্রন্থে প্রমাণ পাওয়া যায়। আবদুল্লাহ বিন শাকিক (রহ.) বলেন, সুন্নত হলো, আজান মিনারে হবে এবং ইকামত মসজিদে হবে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এভাবেই আমল করতেন । মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৩৪৫
অনুরূপভাবে ইমাম আহমদ (রহ.) মুসনাদ আহমাদ নামক গ্রন্থে বিশুদ্ধ সূত্রে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে এ বিষয়ে একটি বর্ণনা এনেছেন। বরং এ বিষয়ে কয়েকটি হাদিসের কিতাবে আলাদা অধ্যায় আনা হয়েছে। ইমাম আবু দাউদ (রহ.) সুনানে আবু দাউদে এ বিষয়ে একটি অধ্যায় এনেছেন। এর শিরোনাম হলো, ‘বাবুল আযান ফাওকাল মানারাতি (মিনারের ওপর আজান দেওয়া অধ্যায়)। ’ ইমাম বায়হাকি (রহ.) তাঁর গ্রন্থে এ বিষয়ে ‘আল-আযান ফিল মানারাহ’ শিরোনামে একটি অধ্যায় এনেছেন।
আরব-অনারবের ইসলামিক স্কলাররা এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছেন যে আজান দেওয়ার জন্য মসজিদে উঁচু মিনার তৈরি করা যাবে। কারণ এতে দূরবর্তী লোকদের আজান শোনানো সহজ হয়। আর আজানের স্বর যত উচ্চ হয়, ততই উত্তম। সূত্র: আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৯; ইবনু কুদামা, আল-মুগনি ১/৩০৮
তবে মধ্যযুগে তুর্কি শাসকরা খ্রিস্টানদের ক্রুশের বিপরীতে ইসলামী নিদর্শন হিসেবে চাঁদ-তারা নির্বাচন করেছিলেন এবং এটি তুর্কি সাম্রাজ্যের প্রতীকে পরিণত হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় আধুনিক যুগে বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্র ও ইসলামী সংস্থাগুলো তাদের পতাকায় ক্রুশের বিপরীতে ইসলামী নিদর্শন হিসেবে চিহ্নটি ব্যবহার করে থাকে। এতে উলামায়ে কিরাম কোনো আপত্তি করেননি। কেননা রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘তোমরা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বিরোধিতা করো। সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ২১৮৬
তবে কতিপয় বিদ্বান কাফিরদের সাদৃশ্য অবলম্বনের সম্ভাবনা থেকে দূরে থাকতে এমন চিহ্ন ব্যবহার না করাই উত্তম বলে মত প্রকাশ করেছেন। ফাতাওয়া উসাইমিন, মাজমুউল ফাতাওয়া ১৬/১৭৮
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক