আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৮০৩: শিশুরা জামাআতের কাতারে কোথায় দাঁড়াবে?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৮০৩: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মুহতারাম আসসালামু আলাইকুম,৪/৫ /৬ বছরের একাধিক ছেলে এবং মেয়ে শিশু একত্রে তার পিতা বা অন্য কোন কারও সাথে জুমার দিন মসজিদে আসলে উক্ত শিশুরা কোথায় দাঁড়াবে? দয়াকরে দলিল সহ জানাবেন।

তারিখ:  ১৪/১০/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা মিজানুর রহমান কুমিল্লা   থেকে।


 জবাব

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 


তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো

একাধিক শিশু হলে সাবালকদের পেছনে পৃথক কাতারে দাঁড় করানো সুন্নাত। তবে হারিয়ে যাওয়া বা দুষ্টুমি করার আশঙ্কা হলে বড়দের কাতারেও দাঁড়াতে পারবে। দলিল:


হাদিস নং-০১

وَيَجْعَلُ الرِّجَالَ قُدَّامَ الْغِلْمَانِ، وَالْغِلْمَانَ خَلْفَهُمْ، وَالنِّسَاءَ خَلْفَ الْغِلْمَانِ. رَوَاهُ أَحْمَدُ.

আবু মালিক আল-আশআরী রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “পুরুষদেরকে ছেলেদের সামনে দাঁড় করানো হয়, ছেলেরা তাদের পিছনে, আর মহিলারা ছেলেদের পিছনে।" তাখরিজ: মুসনাদে আহমদ -২২৯১১


হাদিস নং -০২

حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ حَبِيبٍ الْحَارِثِيُّ، وَصَالِحُ بْنُ حَاتِمِ بْنِ وَرْدَانَ، قَالاَ حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ زُرَيْعٍ، حَدَّثَنِي خَالِدٌ الْحَذَّاءُ، عَنْ أَبِي مَعْشَرٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لِيَلِنِي مِنْكُمْ أُولُو الأَحْلاَمِ وَالنُّهَى ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ - ثَلاَثًا - وَإِيَّاكُمْ وَهَيْشَاتِ الأَسْوَاقِ " .

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যারা বয়ঃপ্রাপ্ত ও বুদ্ধিমান, তারাই যেন আমার নিকটে (প্রথম কাতারে আমার পেছনে) থাকে। অতঃপর যারা বয়স ও বুদ্ধিতে তাদের নিকটবর্তী তারা। অতঃপর তাদের যারা নিকটবর্তী তারা। আর তোমরা বাজারী হট্টগোল হতে দূরে থাকবে। তাখরিজ: মুসলিম-৪৩২; আবু দাউদ -৬৭৫; তিরমিজি-২২৮


হাদিস নং-০৩

حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ الأَنْصَارِيُّ، حَدَّثَنَا مَعْنٌ، حَدَّثَنَا مَالِكُ بْنُ أَنَسٍ، عَنْ إِسْحَاقَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي طَلْحَةَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ جَدَّتَهُ، مُلَيْكَةَ دَعَتْ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِطَعَامٍ صَنَعَتْهُ فَأَكَلَ مِنْهُ ثُمَّ قَالَ " قُومُوا فَلْنُصَلِّ بِكُمْ " . قَالَ أَنَسٌ فَقُمْتُ إِلَى حَصِيرٍ لَنَا قَدِ اسْوَدَّ مِنْ طُولِ مَا لُبِسَ فَنَضَحْتُهُ بِالْمَاءِ فَقَامَ عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَصَفَفْتُ عَلَيْهِ أَنَا وَالْيَتِيمُ وَرَاءَهُ وَالْعَجُوزُ مِنْ وَرَائِنَا فَصَلَّى بِنَا رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ انْصَرَفَ " . قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ أَنَسٍ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . وَالْعَمَلُ عَلَيْهِ عِنْدَ أَكْثَرِ أَهْلِ الْعِلْمِ قَالُوا إِذَا كَانَ مَعَ الإِمَامِ رَجُلٌ وَامْرَأَةٌ قَامَ الرَّجُلُ عَنْ يَمِينِ الإِمَامِ وَالْمَرْأَةُ خَلْفَهُمَا . وَقَدِ احْتَجَّ بَعْضُ النَّاسِ بِهَذَا الْحَدِيثِ فِي إِجَازَةِ الصَّلاَةِ إِذَا كَانَ الرَّجُلُ خَلْفَ الصَّفِّ وَحْدَهُ وَقَالُوا إِنَّ الصَّبِيَّ لَمْ تَكُنْ لَهُ صَلاَةٌ وَكَأَنَّ أَنَسًا كَانَ خَلْفَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَحْدَهُ فِي الصَّفِّ . وَلَيْسَ الأَمْرُ عَلَى مَا ذَهَبُوا إِلَيْهِ لأَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَقَامَهُ مَعَ الْيَتِيمِ خَلْفَهُ فَلَوْلاَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم جَعَلَ لِلْيَتِيمِ صَلاَةً لَمَا أَقَامَ الْيَتِيمَ مَعَهُ وَلأَقَامَهُ عَنْ يَمِينِهِ . وَقَدْ رُوِيَ عَنْ مُوسَى بْنِ أَنَسٍ عَنْ أَنَسٍ أَنَّهُ صَلَّى مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَأَقَامَهُ عَنْ يَمِينِهِ . وَفِي هَذَا الْحَدِيثِ دَلاَلَةٌ أَنَّهُ إِنَّمَا صَلَّى تَطَوُّعًا أَرَادَ إِدْخَالَ الْبَرَكَةِ عَلَيْهِمْ .

ইসহাক আল আনসারী (রাহঃ) ..... আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তাঁর মাতামহী মুলায়কা (রাযিঃ) একবার খানা তৈরী করে রাসুল(ﷺ) কে তাঁর ঘরে দাওয়াত করেছিলেন।রাসুল(ﷺ) এসে খানা খেয়ে বললেন, দাঁড়াও, তোমাদের নিয়ে সালতি আদায় করে নেই। আনাস (রাযিঃ) বলেন, আমি উঠে আমদের একটা চাটাই নামিয়ে আনলাম। এটি বহু ব্যবহারে কালচে হয়ে পড়েছিল তাই তা সামান্য পানি ছিটিয়ে পরিস্কার করে নিলাম। রাসূল (ﷺ) তাতে নামায আদায় করতে দাঁড়ালেন। আমি ও আমার ভাই ইয়াতীমও পিছনে দাঁড়ালেন। আর বৃদ্ধা মাহিলা আমাদেরে পিছনে দাঁড়ালেন। রাসূল (ﷺ) আমাদের নিয়ে দু রাকআত নামায আদায় করলেন পরে চলে গেলেন। ।—জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ২৩৪ (আন্তর্জাতিক নং ২৩৪)


নোট:

ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (রাহঃ) বলেনঃ আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত এই হাদিসটি হাসান ও সহীহ। আলিমগণ এতদুনুসারে আমল করছেন। তাঁরা বলেন, ইমামের সাথে যদি একজন পুরুষ ও একজন মহিলা থাকে তবে পুরুষটি ইমামের ডানে পাশে এবং মহিলাটি ইমামের পিছনে দাঁড়াবে। কাতারে পিছনে একা দাঁড়ায়ে নামায জায়েয হওয়ার বিষয়ে ফকীহদের কেউ কেউ এই হাদিসটিকে দলীল হিসাবে পেশ করে থাকেন তাঁরা বলেন বালকটির নামায ধর্তব্যের নয়। সুতরাং এখানে রাসূল (ﷺ) এর পিছনে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু একা দাড়িয়েছিলেন বলে ধরা যায়। কিন্তু এই ধরনের প্রমাণ পেশ করা বস্তুত ঠিক নয়। কারণ, রাসূল (ﷺ) তাঁর পিছনে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সাথে এক বালককেও দাড় করিয়েছিলেন। তিনি যদি তাঁর নামাযকে ধর্তব্য বলে গণ্য না করতেন তবে কখনও তাকে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সঙ্গে দাঁড় করাতেন না। বরং অবশ্যই আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু কে তাঁর পাশে দাঁড় করাতেন। কেননা মূরা ইবনে অনাস এর সূত্রে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এ-ও বর্ণিত আছে,যে, তিনি একদিন রাসূল (ﷺ) এর সাথে নামায আদায় করেছিলে। তখন তিনি তাঁকে তাঁর ডান পাশে দাঁড় করিয়েছিলেন। এই অনুচ্ছেদে উল্লেখিত মূল হাদিসটি দ্বারা এ কথাও বুঝা যায় যে, উক্ত পরিবাবেরর লোকদের বরকত দানের উদ্দেশ্যে রাসূল (ﷺ) নফল হিসাবে ঐ দু‘রাক'আত নামায আদায় করেছিলেন।


হাদীসের ব্যখ্যা:

এতিম হলো নাবালক শিশু। মেশকাত শরীফ-৩২৮১নং হাদীসে উল্লেখ রয়েছে যে, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরে কেউ এতিম থাকে না।


সারকথা হলো,  শরীয়তের নিয়ম হলো আলেম উলামা ও বয়স্ক মুরব্বীরা প্রথম কাতারে দাঁড়াবেন। আর শিশুরা যতটুকু সম্ভব পেছনের দিকে থাকবে। যদি শিশুরা হৈ চৈ বা দুষ্টুমি করার আশংকা থাকে, তাহলে অভিভাবকরা তাদের শিশুকে পাশে নিয়ে দাঁড়াবেন। কান্নাকাটি করে এমন ছোট শিশু হলে অভিভাবক কাতারের এক পাশে তাকে দিয়ে দাঁড়াবেন।

আর যদি বুঝমান বালক হয়, তাহলে বড় মানুষের কাতারে অসুবিধা নেই।


  والله اعلم بالصواب