জিজ্ঞাসা-১২৮০৯:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আছছালামু আলাই কুম ওয়ারহমাতুল্লহ। মুহতারম,মুফতি সাহেবের কাছে জানার বিষয় হচ্ছে, স্বামী মারাযাওয়ার দুই মাস পরে স্ত্রী মারাযান। স্বামী বলেও গিয়েছেন," আমার মৃত্যুর অল্পদিন পরেই তুমি মারাযাবে।" এখন স্বামী কি স্ত্রীর মৃত্যু,পাশাপাশি তাদের কবর এসব উপলব্ধি করতে পারছেন?
তারিখ: ১৮/১০/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মাহবুব, পিরোজপুর।
জবাব:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, মানুষের মৃত্যুর পর নেককারদের রুহ ইল্লিয়ীন আর কাফের-মুনাফিক- পাপিষ্ট ব্যক্তিদের সিজ্জিনে থাকবে, কথাটি পবিত্র কুরআন ও হাদীসের দ্বারা প্রমাণিত। এ বিষয়ে আলবুরহানে জিজ্ঞাসা -১২৭৭৪ শিরোনামে মাসয়ালাটি আলোচিত হয়েছে।
দ্বিতীয় দ্বিতীয় কথা হলো মৃত ব্যক্তি কবরে শুনতে পায় কিনা সাহাবায়ে কেরাম, তাবিয়ি এবং পরবর্তীতে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছেন। তবে চূড়ান্ত কথা হলো, তারা শুনতে পায়। মৃত ব্যক্তির রূহ ইল্লিন বা সিজ্জিনে থাকে, কবরে শুনতে পাওয়া ওলামায়ে দ্বীন দুটি ব্যাখ্যা করেছেন, এক হল আল্লাহ তাআলা তখন তাদের রুহকে ফেরত দেন দ্বিতীয়টা হল রুহ ইল্লিন/সিজ্জিন থাকলেও দেহের সাথে একটা কানেকশন থাকে। দলিল:
হাদিস নং-০১
. وَمَا كَانَ أَحَدٌ أَحَبَّ إِلَىَّ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَلاَ أَجَلَّ فِي عَيْنِي مِنْهُ وَمَا كُنْتُ أُطِيقُ أَنْ أَمْلأَ عَيْنَىَّ مِنْهُ إِجْلاَلاً لَهُ وَلَوْ سُئِلْتُ أَنْ أَصِفَهُ مَا أَطَقْتُ لأَنِّي لَمْ أَكُنْ أَمْلأُ عَيْنَىَّ مِنْهُ وَلَوْ مُتُّ عَلَى تِلْكَ الْحَالِ لَرَجَوْتُ أَنْ أَكُونَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ ثُمَّ وَلِينَا أَشْيَاءَ مَا أَدْرِي مَا حَالِي فِيهَا فَإِذَا أَنَا مُتُّ فَلاَ تَصْحَبْنِي نَائِحَةٌ وَلاَ نَارٌ فَإِذَا دَفَنْتُمُونِي فَشُنُّوا عَلَىَّ التُّرَابَ شَنًّا ثُمَّ أَقِيمُوا حَوْلَ قَبْرِي قَدْرَ مَا تُنْحَرُ جَزُورٌ وَيُقْسَمُ لَحْمُهَا حَتَّى أَسْتَأْنِسَ بِكُمْ وَأَنْظُرَ مَاذَا أُرَاجِعُ بِهِ رُسُلَ رَبِّي .
মুহাম্মাদ ইবনে মুসান্না আল আনাযী, আবু মাআন আল রাকাশী ও ইসহাক ইবনে মনসুর (রাহঃ) ......... ইবনে শামাসা আল মোহরী (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমরা আমর ইবনে আস (রাযিঃ)-এর মুমুর্ষ অবস্থায় তাকে দেখতে উপস্থিত হলাম। তখন তিনি দেওয়ালের দিকে মুখ করে অনেকক্ষণ কাঁদছিলেন।
পরবর্তীকালে আমরা নানা বিষয়ের সাথে জড়িয়ে পড়েছি, তাই জানিনা, এতে আমার অবস্থান কোথায়? সুতরাং আমি যখন মারা যাব, তখন যেন কোন বিলাপকারিণী অথবা আগুন যেন আমার জানাযার সাথে না থাকে। আমাকে যখন দাফন করবে তখন আমার উপর আস্তে আস্তে মাটি ফেলবে এবং দাফন সেরে একটি উট যবাই করে তার গোশত বল্টন করতে যে সময় লাগে, ততক্ষণ আমার কবরের পাশে অবস্থান করবে। যেন তোমাদের উপস্থিতির কারণে আমি আতঙ্কমুক্ত অবস্থায় চিন্তা করতে পারি যে, আমার প্রতিপালকের দূতের কি জবাব দেব।
—সহীহ মুসলিম, আন্তর্জাতিক নং ১২১
হাদিস নং -০২
1370 - حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ صَالِحٍ، حَدَّثَنِي نَافِعٌ، أَنَّ ابْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَخْبَرَهُ، قَالَ: اطَّلَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى أَهْلِ القَلِيبِ، فَقَالَ: «وَجَدْتُمْ مَا وَعَدَ رَبُّكُمْ حَقًّا؟» فَقِيلَ لَهُ: تَدْعُو أَمْوَاتًا؟ فَقَالَ: «مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ مِنْهُمْ، وَلَكِنْ لاَ يُجِيبُونَ»
ইবনে উমর (রাযিঃ) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) (বদরে নিহত) গর্তবাসীদের* দিকে ঝুঁকে বললেনঃ তোমাদের সাথে তোমাদের রব যে ওয়াদা করেছিলেন, তা তোমরা বাস্তব পেয়েছো তো? তখন তাঁকে বলা হল, আপনি মৃতদের ডেকে কথা বলছেন? (ওরা কি তা শুনতে পায়?) তিনি বললেনঃ তোমরা তাদের চাইতে বেশী শুনতে পাও না, তবে তারা সাড়া দিতে পারছে না।
* الْقَلِيبِ -
পুরাতন গর্ত বা খাদ যে গর্তের মুখ বন্ধ করা হয়নি। বদর যুদ্ধে নিহত মুশরিক দলনতা আবু জাহল গংদের একটি গর্তে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, এটাকেই قَلِيبِ বদরের গর্ত বা খাদ বলা হয়।
—সহীহ বুখারী, আন্তর্জাতিক নং ১৩৭০
হাদিস নং -০৩
1374 - حَدَّثَنَا عَيَّاشُ بْنُ الوَلِيدِ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الأَعْلَى، حَدَّثَنَا سَعِيدٌ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّهُ حَدَّثَهُمْ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " إِنَّ العَبْدَ إِذَا وُضِعَ فِي قَبْرِهِ وَتَوَلَّى عَنْهُ أَصْحَابُهُ، وَإِنَّهُ [ص:99] لَيَسْمَعُ قَرْعَ نِعَالِهِمْ
আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, (মৃত) বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তার সাথী এতটুকু মাত্র দূরে যায় যে সে (মৃত ব্যক্তি) তখনও তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। সহীহ বুখারী, আন্তর্জাতিক নং ১৩৭৪
তৃতীয় কথা হলো, মৃত্যুর পর রুহুগুলির পরস্পরে মোলাকাত/সাক্ষাত হয়। দলিল:
﴿يَٰٓأَيَّتُهَا ٱلنَّفۡسُ ٱلۡمُطۡمَئِنَّةُ ٢٧ ٱرۡجِعِيٓ إِلَىٰ رَبِّكِ رَاضِيَةٗ مَّرۡضِيَّةٗ ٢٨ فَٱدۡخُلِي فِي عِبَٰدِي ٢٩ وَٱدۡخُلِي جَنَّتِي٣٠﴾ [الفجر: ٢٧، ٣١]
“হে প্রশান্ত আত্মা! তুমি ফিরে এসো তোমার রবের প্রতি সন্তুষ্টচিত্তে, সন্তোষভাজন হয়ে। অতঃপর আমার বান্দাদের মধ্যে শামিল হয়ে যাও। আর প্রবেশ করো আমার জান্নাতে।” [সূরা আল-ফাজর, আয়াত: ২৭-৩১] অর্থাৎ তাদের সাথে শামিল হও এবং তাদের সাথে থাকো। আর এ কথা মৃত্যুর সময় আত্মাকে বলা হবে।
আল্লাহ তা‘আলা শহীদদের সম্পর্কে বলেছেন,
﴿أَحۡيَآءٌ عِندَ رَبِّهِمۡ يُرۡزَقُونَ ١٦٩﴾
“তারা তাদের রবের নিকট জীবিত। তাদেরকে রিযিক দেওয়া হয়।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৯]
আল্লাহ তা‘আলা শহীদদের সম্পর্কে আরও বলেছেন,
﴿يَسۡتَبۡشِرُونَ بِٱلَّذِينَ لَمۡ يَلۡحَقُواْ بِهِم مِّنۡ خَلۡفِهِمۡ﴾
“আর তারা উৎফুল্ল হয়, পরবর্তীদের থেকে যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয় নি তাদের বিষয়ে।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৭০]
আল্লাহ তা‘আলা শহীদদের সম্পর্কে আরও বলেছেন,
﴿يَسۡتَبۡشِرُونَ بِنِعۡمَةٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَفَضۡلٖ١٧١ ﴾ [ال عمران: ١٦٩، ١٧١]
“তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে নি‘আমত ও অনুগ্রহ লাভ করে খুশি হয়।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৭১] এ আয়াতসমূহ দ্বারা তাদের পরস্পর মিলিত হওয়া তিনভাবে প্রমাণিত হয়:
১- তারা (শহীদগণ) জীবিত। আর জীবিতরা পরস্পর পরস্পরের সাথে মিলিত হয়, দেখা সাক্ষাৎ করে।
২- তারা তাদের পরবর্তীতে আগমনকারী ভাইদের আগমন ও তাদের সাথে দেখা হওয়ার ব্যাপারে আনন্দিত ও উৎফুল্ল।
৩-﴿يَسۡتَبۡشِرُونَ﴾ শব্দ প্রমাণ করে যে, তারা পরস্পর পরস্পরে সুসংবাদ দেয় ও খুশি হয়।
সারকথা হলো, উক্ত ব্যক্তি যে বলে গিয়েছেন তুমি আমার মৃত্যুর অল্প দিনের মধ্যে মারা যাবে, এটা তার কারামত হতে পারে। কেননা আহলুল সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা হলো
كرامة اولياء حق
অর্থাৎ আওলিয়াদের কারামত সত্য।
আর মৃত ব্যক্তিদের রুহের সাক্ষাৎ কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং স্বামী বুঝতে পারবেন স্ত্রী মারা গিয়েছেন।
হাকিমুল উম্মত মুজাদ্দিদুল মিল্লাত শাহ আশরাফ আলী থানভী রহ এর লেখিত "শওকে ওয়াতান বা আখেরাতের প্রেরণা"। নামক কিতাবে এ সংক্রান্ত হাদিস শরিফ আছে। কিতাবটি গ্রামের বাড়িতে থাকায় হাদিসটির দিতে পারলাম না ,পরবর্তীতে সংগ্রহ করে জানানো হবে ইনশাল্লাহ।
والله اعلم بالصواب