জিজ্ঞাসা-১২৩০৮
আসসালামু আলাইকুম।
হিজড়াগণ কি ওয়ারিশ পাবেন? তারিখ: ১৬/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা রফিকুল ইসলাম সাভার থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, সমাজসেবা অধিদফতরের জরিপ মতে বর্তমানে বাংলাদেশে হিজড়ার সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। সূত্র: সমাজসেবা অধিদফতর, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
হিজড়াও তাদের উত্তরাধিকার হিসেবে সকল সম্পদের অংশ পাবে। কারণ তারাও বাবা-মার সন্তান। তবে হিজড়ারা কতটুকু সম্পদের অংশ পাবে, তা বুঝতে হলে আগে হিজড়ার পরিচয় ও প্রকারভেদ জানতে হবে।
প্রশ্ন: ক। হিজড়া কাকে বলে?
উত্তর: ক। ইসলামী শরিয়তে হিজড়া বলা হয় যার পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ উভয়টি রয়েছে। অথবা কোনটিই নেই, শুধু প্রশ্রাবের জন্য একটি মাত্র ছিদ্রপথ রয়েছে। মোটকথা যার শরীরে পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ উভয়টি বিদ্যামান তবে ত্রুটিযুক্ত। সূত্র: কামুসুল ফিকহ
প্রশ্ন: খ। হিজড়া কত প্রকার?
উত্তর: খ। হিজড়া তিন প্রকার। যথা:
(০১) পুরুষ হিজড়া : بعد البلوغ إن نبتت له لحية أو أتى النساء أو احتلم كما يحتلم الرجال فهو ذكر অর্থাৎ যেসব হিজড়াদের দাড়ি মোচ গোঁফ গড়ায়, স্বপ্নদোষ হয় এবং সহবাসের শখ জাগে, সঙ্গে সঙ্গে শরীরের আকার আকৃতি সবদিক দিয়ে পুরুষের মতো মনে হয়।
(০২) নারী হিজড়া : وإن ظهر له ثدي كثدي المرأة أو دُرَّ له لبن أو حاض أو حبل فهو أنثى অর্থাৎ যেসব হিজড়াদের স্তন ঋতুস্রাব সহবাসের উপযোগিতা, গর্ভ সঞ্চার হওয়াসহ নারীজনিত সকল কিছু বিদ্যমান থাকে।
(০৩) পুরুষস্ত্রী হিজড়া/উভয়লিঙ্গ হিজড়া : فإن لم يعرف أذكر هو أم أنثى، بأن لم تظهر علامة من العلامات أو ظهرت وتعارضت فهو الخنثى المشكل.. অর্থাৎ যেসক হিজড়াদের মাঝে নারীপুরুষের কোনো নিদর্শন নেই অথবা উভয় ধরনের নিদর্শন সমানভাবে বিদ্যমান তারাই তৃতীয় শ্রেণির হিজড়া বা প্রকৃত হিজড়া । শরিয়তে তাদেরকে ‘খুনসায়ে মুশকিলা’ বা প্রকৃত হিজড়া বলে।
প্রশ্ন: গ। কে কতটুকু মিরাসের অংশ পাবে?
উত্তর: গ। وقد أجمع العلماء على أن الخنثى يورث حسب ما يظهر فيه من علامات مميزة، فمثلا: إن بال من حيث يبول الرجل ورث ميراث الرجل، وإن بال من حيث تبول المرأة ورث ميراث المرأة، وقد نقل الإجماع على هذا ابن المنذر وغيره.
أما إذا لم يظهر حاله، فهو خنثى مشكل، وللخنثى المشكل حالتان
সারকথা হলো, হজরতে ওলামায়ে কেরামগণ! এ বিষয়ে ইজমা (ঐক্যমত) হয়েছে যে, ১ নং পুরুষ হিজড়া হলে, পুরুষের অংশ, ২ নং নারী হিজড়া হলে নারীর অংশ পাবে আর পুরুষস্ত্রী হিজড়া (তৃতীয় লিঙ্গের) হলে, প্রসাবে রাস্তা দ্বারা নারী বা পুরুষ নির্ণয় হবে। দলিল:
হাদিসং-০১
عن بن عباس أن رسول الله صلى الله عليه و سلم سئل عن مولود ولد له قبل وذكر من أين يورث فقال النبي صلى الله عليه و سلم يورث من حيث يبول.
অর্থাৎ : হজরত আব্দুল্লাহ আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো এক গোত্রের নবজাতকের মীরাস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে যে, যে নারী নয়, পুরুষও নয়’ তার মীরাস কী? উত্তরে নবি (ﷺ) বলেন তার মীরাস নির্ণিত হবে তার প্রস্রাবের পথকে কেন্দ্র করে। তাখরিজ: মুসান্নেফে আব্দুর রাজ্জাক-১৯২০৪; মুসান্নেফে ইবনে আবি শায়বা-৩২০১৪
হাদিস/আসার-০২
أن عليا رضي الله عنه سئل عن المولود لا يدري أرجل أم امرأة فقال علي رضي الله عنه يورث من حيث يبول
অর্থাৎ : হজরত আলী (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলের কাছে জানতে চাওয়া যার নারী পুরুষ হওয়ার কোনটাই স্পষ্ট নয় তার বিধান কী? মিরাসে ক্ষেত্রে। তিনি বলেন তার হুকুম আরোপিত হবে তার প্রস্রাবের রাস্তা দেখে। তাখরিজ: সুনানি বাইহাকি কবরা ১২২৯৪
অর্থাৎ যদি পুরুষালী লিঙ্গ দিয়ে পেশাব করে তাহলে পুরুষ, আর যদি নারী লিঙ্গ দিয়ে পেশাব করে তাহলে নারী। আর যদি দু’টি দিয়েই পেশাব করে, তাহলে পেশাব আগে যে অঙ্গ দিয়ে বের হয়, সেই অঙ্গ হিসেবে নারী পুরুষ নির্ধারিত হবে। অর্থাৎ যদি পেশাব প্রথমে পুরুষাঙ্গ দিয়ে বের হয়, তাহলে পুরুষ আর যদি নারী অঙ্গ দিয়ে বের হয়, তাহলে তাকে নারী ধরা হবে এবং তারা সেই হিসেবে অংশ পাবে। যদি উভয়টা দিয়ে একই সময়ে বের হয়, তাহলে তাকে খুনছায়ে মুশকিল বলবে।
প্রশ্ন: ঘ। যদি প্রসাবে রাস্তা তথা ছেলে-মেয়ে নির্ণয় সম্ভব না হয়, তাহলে কিভাবে মিরাস পাবে।
উত্তর: ঘ। যদি উভয়টা দিয়ে একই সময়ে বের হয়, নারী-পুরুষ নির্ণয় সম্ভব না হয়, তাহলে, মিরাসের ব্যাপারে ফোকাহায়ে কেরামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
এ বিষয়ে ইমামে আজম আবু হানিফা বলেন, فقال أبو حنيفة: إنه يفرض أنه ذكر، ثم يفرض أنه أنثى، ويعامل بعد ذلك بأسوأ الحالين، حتى لو كان يرث على اعتبار، ولا يرث على اعتبار آخر لم يعط شيئًا. وإن ورث على كل الفرضين
অর্থাৎ নারী-পুরুষ পার্থক্য করা যায় না, প্রকৃত/তৃতীয় লিঙ্গের হিজড়াগণ উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের প্রাপ্ত অংশের মধ্য হতে কম অংশ যেটা হবে তাকে তাই দেয়া হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো মৃত ব্যক্তি এক ছেলে, এক মেয়ে এবং একজন হিজড়া সন্তান রেখে মারা যায়, তাহলে হিজড়াকে মেয়ের সমপরিমাণ অংশ দেয়া হবে। তদ্রƒপ মৃত ব্যক্তি যদি এক ছেলে এবং এক হিজড়া রেখে মারা যায় তাহলে ছেলে পাবে দুই তৃতীয়াংশ সম্পদ আর হিজড়া পাবে এক তৃতীয়াংশ সম্পদ। সূত্র: ফাতাওয়া শামী ১০/৪৫০, আলমউসূআতুল ফিকহিয়্যাহ আলকুওয়াইতিয়্যাহ ২০/৩২, আররাযী শরহে সিরাজী; পৃষ্ঠা ৯৪
মূলকথা হলো, পুরুষ হিজড়া হলে পুরুষের, নারী হিজড়া হলে নারীর অংশ পাবে। আর কোনটাও নির্ণয় না করা যায়, তাহলে নারী-পুরুষের প্রাপ্ত অংশ হতে কম পাবে, যা উপরে উদাহরণসহ দেখানো হয়েছে।
والله اعلم بالصواب