জিজ্ঞাসা-১২৭৯৮:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُوسَى الرَّازِيُّ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي زَائِدَةَ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ عَامِرٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " الْوَائِدَةُ وَالْمَوْءُودَةُ فِي النَّارِ " . قَالَ يَحْيَى بْنُ زَكَرِيَّا قَالَ أَبِي فَحَدَّثَنِي أَبُو إِسْحَاقَ أَنَّ عَامِرًا حَدَّثَهُ بِذَلِكَ عَنْ عَلْقَمَةَ عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم .
ইবরাহীম ইবনে মুসা (রাহঃ) ..... আমির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ জীবন্ত প্রথিত কন্যা এবং তার মা- উভয়ই জাহান্নামী। আবু দাউদ ৪৭১৭
উপরোক্ত হাদিসের আলোকে একটি ইলমি প্রশ্ন হলো, জীবন্ত প্রোথিত কন্যার দোষ কি?
তারিখ: ১১/১০/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা থেকে।
জবাব:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
وقد استشكل بعض الناس هذا الحديث ، وظن أنه مخالف لقوله تعالى : (أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى) النجم/38 ، ونحوها من الآيات .
وقد أجاب العلماء عن ذلك ، بأن الحديث ـ كما هو ظاهر القصة التي رواها الإمام أحمد إنما ورد في قضية معينة ، وليس حكما عاماً لكل وائدة وكل موءودة ، فهو وارد في وائدة مشركة ، وموءودة أيضاً مشركة ، ولكن الظاهر أنها كانت طفلة صغيرة .
وليس هناك إشكال في كون الوائدة الواردة في الحديث في النار .
وأما الموءودة فهو حكم لموءودة معينة علم النبي صلى الله عليه وسلم أنها في النار .
وقد اختلف العلماء في حكم أطفال المشركين في الآخرة .
وأرجح الأقوال في مصيرهم ؛ أنهم يُمتحنون يوم القيامة ، فمن أطاع أمر الله نجا ، ومن عصاه هلك ، وقد جاءت في السنة النبوية أحاديث كثيرة يترجح بها هذا القول. وهو اختيار كثير من المحققين من أهل العلم كشيخ الإسلام ابن تيمية وابن القيم وهو اختيار سماحة الشيخ ابن باز كما في مجموع الفتاوى (2/712 - 713) /
وانظر جواب السؤال رقم (6496) .
فيكون النبي صلى الله عليه وسلم قد علم – بالوحي- أن مصير هذه الموءودة في النار .
فالحديث إذاً خاص بأم سلمة بن يزيد واسمها مليكة ، وبابنتها التي وأدتها .
وإلى هذا القول مال ابن عبد البر وابن القيم والألباني وغيرهم من أهل العلم .
قال ابن عبد البر في معرض كلامه عن هذا الحديث " وهو حديث صحيح من جهة الإسناد إلا أنه محتمل أن يكون خرج على جواب السائل في عين مقصودة ، فكانت الإشارة إليها والله أعلم ، وهذا أولى ما حمل عليه هذا الحديث لمعارضة الآثار له ، وعلى هذا يصح معناه ، والله المستعان " انتهى من ( التمهيد 18 / 120) .
وقال ابن القيم في "أحكام أهل الذمة" (2/ 95) : الجواب الصحيح عن هذا الحديث : أن قوله (إن الوائدة والموءودة في النار) جواب عن تينك الوائدة والموءودة ، اللتين سئل عنهما ، لا إخبار عن كل وائدة وموءودة ، فبعض هذا الجنس في النار، وقد يكون هذا الشخص من الجنس الذي في النار" انتهى .
وقال الشيخ الألباني في "مشكاة المصابيح" (1/ 39) "إن الحديث خاص بموءودة معينة وحينئذ (ال) في ( المؤودة) ليست للاستغراق بل للعهد . ويؤيده قصة ابني مليكة" انتهى .
ونقل العظيم آبادي في "عون المعبود" ( 12 / 322 ) عن صاحب "السراج المنير" قوله : "فلا يجوز الحكم على أطفال الكفار بأن يكونوا من أهل النار بهذا الحديث لأن هذه واقعة عين في شخص معين" انتهى .
অর্থাৎ, এই হাদীসের ভাষ্য নিয়ে অনেক মানুষের মনে নানাধরণের প্রশ্নের উদ্রেক ঘটে। কারণ বাহ্যিক দৃষ্টিতে হাদীসটি আল্লাহ তায়ালার এই বাণীর সাথে সাংঘর্ষিক বলে প্রতীয়মান হয়- "এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির দায়ভার গ্রহণ করবেনা"। (সূরা নাজম- ৩৮) এছাড়াও পবিত্র কুরআনে একই অর্থবোধক অসংখ্য আয়াত রয়েছে।
শরীয়াহ গবেষক আলেমগণ এতদুভয়ের মাঝে সমন্বয় করতে গিয়ে বলেন, " মুসনাদে আহমদে আলোচ্য হাদীসটির প্রেক্ষাপটের বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে। সেটি অধ্যয়ন করলে সহজেই অনুমেয় হয় যে, হাদীসে বর্ণিত বিধানটি সার্বজনীন নয়। বরং সুনির্দিষ্ট একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই কথাটি বলা হয়েছে। হাদীসে বর্ণিত জীবন্ত কবর রচনাকারী এবং যাকে জীবন্ত মাটি চাপা দেয়া হয়েছে, উভয়েই ছিলো ঘটনাক্রমে মুশরিক। তবে হাদীসের পূর্বাপর থেকে প্রতীয়মান হয় যে, যাকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা হয়েছে, সে মুশরিকের ঘরে জন্ম গ্রহণ করলেও সে ছিলো নাবালিকা শিশু।
সুতরাং বর্বরতার পরিচয় দিয়ে যে জীবন্ত একজন মানুষকে মাটিতে পুঁতে ফেলার মতো ধৃষ্টতা দেখিয়েছে, তার জাহান্নামী হবার ব্যাপারে ত কোনই প্রশ্নই উঠেনা। কিন্তু আপত্তি দেখা দেয়, পরিস্থিতির শিকার সেই নিরপরাধ নাবালিকা শিশুর জাহান্নামী হওয়ার ব্যাপারে।কারণ নাবালকরা তো মা'সুম তথা নিষ্পাপ হয়ে থাকে। তবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অহীর মারফত তার সর্বশেষ পরিস্থিতির কথা জেনেই এমন মন্তব্য করেছেন- এমনটি ধরে নেয়া হলে আর কোন সংশয়ের অবকাশ থাকেনা।
উল্লেখ্য যে, বিধর্মীদের শিশুসন্তানরা নাবালক অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করলে আখিরাতে তাদের চূড়ান্ত ঠিকানা কোনটি হবে, জান্নাত না জাহান্নাম- এবিষয়ে মুহাক্কিক আলেমগণের মাঝে মতভিন্নতা আছে। তারমধ্যে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মতামত হলো, কিয়ামতের দিবসে শৈশবকালে মৃত্যুবরণকারী সেই শিশুদের পরীক্ষা নেয়া হবে। যে আল্লাহর আনুগত্য করবে, সে নাজাত পেয়ে যাবে। আর যে তাঁর নাফরমানী করবে, যে চূড়ান্তভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে। এবিষয়ে অসংখ্য হাদীস রয়েছে, যা এই মতকেই সমর্থন যোগায়। শাইখুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া, তার সুযোগ্য শিস্য ইবনুল কায়্যিম, শায়েখ বিন বায (রাহি.) সহ অধিকাংশ আহলে ইলম মাশেয়েখগণ এই মতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
সেই অনুসারে আলোচ্য হাদীসের ব্যাখ্যা হলো, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়াহীর মাধ্যমে অবগত হয়েছিলেন যে, এই শিশুকন্যাটির চূড়ান্ত গন্তব্য হলো, জাহান্নাম। তাই তিনি তাকে জাহান্নামী বলেছেন। তখন এই হাদীসটি দ্বারা উম্মে সালামা বিন ইয়াযিদ (যার প্রকৃত নাম ছিল মুলাইকা) এবং তার নিজ হাতে পুঁতে দেয়া স্বীয় শিশুকন্যা উদ্দেশ্য হবে। ইবনু আব্দিল বার, ইবনুল কায়্যিম, শাইখ আলবানী (রাহি.) সহ অধিকাংশ আহলে ইলম আলেমগণ এই মতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
এই হাদীসের প্রাসঙ্গিক আলোচনায় ইবনু আব্দিল বার (রাহি.) বলেন, " সনদগত বিবেচনায় হাদীসটি সহীহ, তবে এটি কারো প্রশ্নের জবাবের প্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। বিধানটি সার্বজনীন নয়। আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন।" এই ব্যাখাটিই সবচাইতে যুক্তিগ্রাহ্য। কারণ এর মাধ্যমেই অন্য সকল আয়াত ও হাদীসের মাঝে সমন্বয় রক্ষা করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে। ( আত তামহীদ - ১৮/১২০)
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রাহি.) তাঁর "আহকামে আহলে যিম্মাহ" গ্রন্থে (৯৫/২) বলেন, "আলোচ্য হাদীসটি নির্দিষ্ট একজন পুঁতে ফেলা নারী ও একজন নির্দিষ্ট জীবন্ত প্রোথিত মেয়েকে কেন্দ্র করে বর্ণিত। সকল পুঁতে ফেলা নারী ও সকল জীবন্ত প্রোথিত কন্যা সম্পর্কে বিধান বর্ণনা উদ্দেশ্য নয়।
শায়েখ আলবানী (রাহি.) মিশকাতুল মাসাবীহ এর পাদটিকায় (১/৩৯) এ বলেন, হাদীসটি নির্দিষ্ট ব্যক্তিদ্বয়কে কেন্দ্র করে বর্ণিত। সুতরাং শব্দদ্বয়ের শুরুতে বর্ণিত "আলিফ লাম" হলো, নির্দিষ্টতাজ্ঞাপক, সার্বিকতাজ্ঞাপক নয়। মুলাইকার সন্তানদ্বয় সংশ্লিষ্ট ঘটনাটি একথারই প্রমাণ বহন করে।
আল্লামা আযীমাবাদী "আউনুল মা'বূদ" কিতাবে ( ১২/৩২২) "আস-সিরাজুল মুনীর" গ্রন্থকারের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, "আলোচ্য হাদীসের উপর ভিত্তি করে ঢালাওভাবে বিধর্মীদের সকল শিশুসন্তানের ব্যাপারে এই বিধান দেয়া যাবেনা যে, তারা সকলেই জাহান্নামী হবে। কারণ এই হাদীসের বিধানটি সার্বজনীন নয়, বরং সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বর্ণিত।
والله اعلم بالصواب