আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৮২৩: মসজিদের কয়টি সিঁড়ি হওয়া সুন্নাত এবং কোন সিড়িতে দাঁড়িয়ে খুতবা দিতে হবে?

No Comments

 











জিজ্ঞাসা-১২৮২৩: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মুহতারাম  আমার দুটি প্রশ্ন ঃ 

প্রথমতঃ জুমার নামাজের জন্য মেম্বারের থাক কয়টি থাক বা সিঁড়ি হওয়া প্রয়োজন। আমরা দেখি তৃতীয় সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে খুতবা প্রদান করেন। এটা কি সঠিক পদ্ধতি ? এছাড়াও আমাদের দেশে যে মেম্বার ব্যবহার করা হয় এছাড়া অন্য কোন পদ্ধতিতে মেম্বার বানানো হয় কিনা? পিছন থেকে অথবা পাশ থেকে মেম্বার ঘুরিয়ে উঠানোর কোন পদ্ধতি আছে কি? পিছন থেকে আসার সিস্টেম কোথাও দেখা যায় এটা কি হাদিস সম্মত? জানাবেন।

২নং প্রশ্ন ঃ মেম্বার থাকার পরেও যদি কেউ মেম্বারের নিচে দাঁড়িয়ে খুতবা দেয় তাহলে তা হবে কি এবং হাদিস সম্মত কিনা থাকলে রেফারেন্স সহ পেশ করলে ভালো হয়।

তারিখ:  ৩১/১০/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, ঝালকাঠি  থেকে।


 জবাব

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 


তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো

আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে বোধগম্যের জন্য কয়েকটি অংশে ভাগ করছি। 


প্রশ্ন: ক। মিম্বারের কয়টি সিঁড়ি বা তাক সুন্নাত?

উত্তর: ক। মিম্বারের তিনটি সিঁড়ি বা তাক হওয়া সুন্নাত, তবে কম বেশি হলেও অসুবিধা নেই। কেননা এ বিষয়ে শরীয়তে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। দলিল:

হাদিস নং-০১

حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، وَقُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، كِلاَهُمَا عَنْ عَبْدِ الْعَزِيزِ، قَالَ يَحْيَى أَخْبَرَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ أَبِي حَازِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ نَفَرًا، جَاءُوا إِلَى سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَدْ تَمَارَوْا فِي الْمِنْبَرِ مِنْ أَىِّ عُودٍ هُوَ فَقَالَ أَمَا وَاللَّهِ إِنِّي لأَعْرِفُ مِنْ أَىِّ عُودٍ هُوَ وَمَنْ عَمِلَهُ وَرَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَوَّلَ يَوْمٍ جَلَسَ عَلَيْهِ - قَالَ - فَقُلْتُ لَهُ يَا أَبَا عَبَّاسٍ فَحَدِّثْنَا . قَالَ أَرْسَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى امْرَأَةٍ قَالَ أَبُو حَازِمٍ إِنَّهُ لَيُسَمِّيهَا يَوْمَئِذٍ " انْظُرِي غُلاَمَكِ النَّجَّارَ يَعْمَلْ لِي أَعْوَادًا أُكَلِّمُ النَّاسَ عَلَيْهَا " . فَعَمِلَ هَذِهِ الثَّلاَثَ دَرَجَاتٍ ثُمَّ أَمَرَ بِهَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَوُضِعَتْ هَذَا الْمَوْضِعَ فَهْىَ مِنْ طَرْفَاءِ الْغَابَةِ . وَلَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَامَ عَلَيْهِ فَكَبَّرَ وَكَبَّرَ النَّاسُ وَرَاءَهُ وَهُوَ عَلَى الْمِنْبَرِ ثُمَّ رَفَعَ فَنَزَلَ الْقَهْقَرَى حَتَّى سَجَدَ فِي أَصْلِ الْمِنْبَرِ ثُمَّ عَادَ حَتَّى فَرَغَ مِنْ آخِرِ صَلاَتِهِ ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَى النَّاسِ فَقَالَ " يَا أُيُّهَا النَّاسُ إِنِّي صَنَعْتُ هَذَا لِتَأْتَمُّوا بِي وَلِتَعَلَّمُوا صَلاَتِي " .

আবু হাযিম (রাহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কতিপয় লোক সাহল ইবনে সা’দ (রাযিঃ) এর নিকট আগমন করল এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মিম্বর কি কাঠের তৈরী ছিল, তা নিয়ে তারা বিতর্ক করতে লাগল। তিনি (সাহল ইবনে সা’দ) বললেন, আল্লাহর কসম! সেটি কি কাঠের তৈরী ছিল, কে তৈরী করেছিল, তা আমি ভাল করে জানি এবং সর্বপ্রথম কোনদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার উপর আরোহণ করেছিলেন, তাও আমি দেখেছি।


আবু হাযিম বলেন, আমি সাহল (রাযিঃ) কে বললাম, হে আব্বাসের পিতা! আপনি ঐসব ঘটনা পুনরায় আমাদের নিকট বর্ণনা করুন। তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এক মহিলাকে বলে পাঠালেন [আবু হাযিম বলেন, সাহল ইবনে সা’দ (রাযিঃ) সেইদিন মহিলাটির নামও বলেছিলেন] তুমি তোমার কাঠমিস্ত্রি গোলামটিকে একটু ফুরসত দিও। সে আমার জন্য একটি মিম্বর তৈরী করে দিবে, আমি তার উপর থেকে মানুষকে ওয়ায-নসীহত করব। অতঃপর সেই গোলামটি তিন সিঁড়িবিশিষ্ট এই মিম্বরটি বানায় এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নির্দেশে সেটি মসজিদের এই স্থানে (বর্তমান স্থানে) রাখা হয়। তার কাঠগুলি গাবা অঞ্চলের ঝাউগাছের ছিল।*


আর আমি দেখলাম, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার উপর দাঁড়ালেন এবং (নামাযের) তাকবীর বললেন, লোকেরাও তার পিছনে তাকবীর বলল। তিনি মিম্বরের উপরেই ছিলেন, অতঃপর তিনি রুকু হতে উঠে দু’এক কদম পিছনের দিকে হেঁটে নীচে নেমে গেলেন। আর মিম্বরের গোঁড়ায় সিজদা করলেন। আবার তিনি পূর্বস্থানে চলে গেলেন। এভাবে তিনি তার নামায সমাপ্ত করলেন। তারপর তিনি লোকদের দিকে ফিরে বললেন, হে লোকসকল! আমার এরূপ করার কারণ হল, যেন তোমরা আমার অনুকরন করতে পার এবং আমার নামায শিখে নিতে পার। 

* গাবা মদীনার নয় মাইল দূরে অবস্থিত মালভূমির নাম।

—সহীহ মুসলিম, আন্তর্জাতিক নং ৫৪৪


হাদিস নং-০২

وروى أحمد (2415) عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قال : َ" كَانَ مِنْبَرُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَصِيرًا ، إِنَّمَا هُوَ ثَلَاثُ دَرَجَاتٍ " . وإسناده حسن . وقال الهيثمي : رواه أحمد ورجاله رجال الصحيح

অর্থাৎ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এর মিম্বরটি ছোট ছিল। তা ছিল তিন তাক বা সিঁড়ি বিশিষ্ট। তাখরিজ: মুসনাদে আহমদ-২৪১৫


প্রশ্ন: খ। কোন সিড়িতে দাঁড়িয়ে খুতবা দেওয়া সুন্নাত?

উত্তর: খ। আমরা উপরে উল্লেখ করেছি তিনটি তাক হওয়া সুন্নাত। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপরে দাঁড়িয়ে খুৎবা প্রদান করতেন। এরপর হযরত আবু বকর রা. স্বীয় খেলাফত কালে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মানার্থে উপরের তাকে দাঁড়িয়ে খুৎবাহ না দিয়ে মাঝের তাকে দাঁড়িয়ে খুৎবাহ দিতেন। এরপর হযরত উমর রা. স্বীয় খেলাফতের যমানায় হুজুর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও হযরত আবু বকরের রাযি. প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে উপরে এবং মাঝের তাকে না দাঁড়িয়ে নীচের তাকে দাঁড়িয়ে খুৎবাহ দিতেন। এখন ইমামের জন্য যেকোন তাকে দাঁড়িয়ে খুৎবাহ দেওয়ার অনুমতি আছে। কেননা- তিনটি পদ্ধতিই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামদের থেকে প্রমাণিত আছে। দলিল:

عن أَنَس بْن مَالِكٍ : " أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُومُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَيُسْنِدُ ظَهْرَهُ إِلَى جِذْعٍ مَنْصُوبٍ فِي الْمَسْجِدِ فَيَخْطُبُ النَّاسَ ، فَجَاءَهُ رُومِيٌّ فَقَالَ : أَلَا أَصْنَعُ لَكَ شَيْئًا تَقْعُدُ عَلَيْهِ وَكَأَنَّكَ قَائِمٌ ؟ فَصَنَعَ لَهُ مِنْبَرًا لَهُ دَرَجَتَانِ وَيَقْعُدُ عَلَى الثَّالِثَةِ

হজরত আনাস বিন মালিকের সূত্রে: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার দিনে দাঁড়াতেন এবং মসজিদে স্থাপন করা একটি কাঠের সাথে তার পিঠ হেলান দিতেন এবং লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতেন।” তারপর একজন রুম অধিবাসী এসেছিলেন। তিনি বললেনঃ আমি কি আপনার জন্য এমন কিছু বানাবো না যাতে তুমি তাতে বসতে পারেন যেমন আপনি দাঁড়িয়ে আছেন?অতঃপর তিনি তাকে দুই ধাপ বিশিষ্ট মিম্বর বানিয়ে দিলেন এবং তৃতীয় তাকে বসার জন্য। তাখরিজ: সুনানে দারিমি -৩৬; মুসনাদে আহমদ -২১২৫২


يستحب أن يقف على الدرجة التي تلي المستراح كما ذكره المصنف ، قال الشيخ أبو حامد : فإن قيل قد روي أن أبا بكر نزل عن موقف النبي صلى الله عليه وسلم درجة ، وعمر درجة أخرى ، وعثمان أخرى ، ووقف علي رضي الله عنه في موقف النبي صلى الله عليه وسلم

অর্থাৎ, গ্রন্থকারে মতে খুতবা প্রদানকালে মিম্বারের বিশ্রামস্থল সংলগ্ন ধাপে দাঁড়ানো মুস্তাহাব। শাইখ আবূ হামেদ বলেন, " যদি প্রশ্ন করা হয়ে থাকে, এমন বর্ণনাও তো পাওয়া যায় যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দণ্ডায়মানস্থল হতে এক ধাপ নীচে নেমে হযরত আবূ বকর (রাযি.) খুতবা প্রদান করতেন। পরবর্তীতে হযরত ওমর ফারুক ( রাযি.) এসে হযরত আবূ বকর (রাযি.) এর দণ্ডায়মান স্থল হতে এক ধাপ নীচে নেমে খুতবা প্রদান করতেন। পরবর্তীতে হজরত আলী (রাযি.) এসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দন্ডায়মান স্থলেই দাঁড়িয়ে খুতবা প্রদান করতেন। 


প্রশ্ন: গ। অন্য দেশের মিম্বার কেমন?

উত্তর: গ। অন্য দেশের মেম্বার সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। তবে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মেম্বার ছিল কাঠের তৈরি। বর্তমান যুগে ইট-বালু-সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা জায়েজ কিনা এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা-১৮৯ শিরোনামের মাসয়ালাটি আলোচিত হয়েছে। সেটা দেখা নেওয়ার অবকাশ রয়েছে।


প্রশ্ন: ঘ। পিছন থেকে বা পাশ থেকে মেম্বার ঘুরিয়ে উঠানোর কোন পদ্ধতি আছে কি?


উত্তর: ঘ। পিছন থেকে বা পাশ থেকে মেম্বার ঘুরিয়ে উঠানোর কোন পদ্ধতি বিশেষত্ব/সুন্নত/মুস্তাহাব আছে বলে আমার জানা নেই।


প্রশ্ন: ঙ। মিম্বারে দাঁড়িয়ে খুতবা দেওয়া কি জরুরি?

উত্তর: ঙ। মেম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দেওয়া মুস্তাহাব/সুন্নাতে যায়েদা। দলিল:


فالمنبر من المستحبات باتفاق أهل العلم ، وليس من واجبات ولا أركان خطبة الجمعة ،

قال الحافظ ابن حجر رحمه الله تعالى :

" وفيه استحباب اتخاذ المنبر لكونه أبلغ في مشاهدة الخطيب والسماع منه " .

انتهى من " فتح الباري " ( 2 / 400 ) .

অর্থাৎ আহলে এলেমগণ এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন যে মেম্বারে দাঁড়িয়ে খুৎবা দেয়া মুস্তাহাব। এটি ওয়াজিব নয় বা জুমার খুতবার রোকন নয়।


ইবনে হাজার আহকালানি রহ. বলেন, খুতবার জন্য মেম্বার ব্যবহার করা মুস্তাহাব। এটা এজন্য যে খতিবকে দেখার জন্য এবং তার বাণী শোনার জন্য। সূত্র: ফাতহুল বারী -২/৪০০


ইমাম নববি রহ. বলেন,

قال النووي رحمه الله تعالى :

" أجمع العلماء على أنه يستحب كون الخطبة على منبر ، للأحاديث الصحيحة التي أشرنا إليها ، ولأنه أبلغ في الإعلام ، ولأن الناس إذا شاهدوا الخطيب كان أبلغ في وعظهم

“আলেমগণ সর্বসম্মতভাবে (ইজমা) একমত যে খুতবাটি মিম্বরে দেওয়া মুস্তাহাব, কারণ আমরা যে সহীহ হাদীসগুলি উল্লেখ করেছি, এবং কারণ লোকেরা যদি প্রচারককে দেখে তবে তিনি তার প্রচারে আরও বাগ্মী হবে।” সূত্র: আলমাজমু শারহুল মাজহাব -৪/৪০২


তবে মেম্বার থাকা সত্বেও মেম্বারে খুতবা না দেওয়া ঠিক হয়নি বিনা কারণে।


সারকথা হলো,   মিম্বরের সিঁড়ির সংখ্যার ব্যাপারে ইসলামের বাধ্যবাধকতা নেই, তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ হিসেবে তিনটি হওয়া উত্তম এবং যেকোনো সিঁড়িতে খুতবা দেওয়া যাবে তবে তৃতীয় তাকে খুতবা দেওয়া উত্তম এবং মিম্বর থাকতে চেয়ারে বসে খুতবা দেওয়া ঠিক নয়।



  والله اعلم بالصواب