জিজ্ঞাসা-১২৮১৭:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মুহতারাম,অনুগ্রহ পূর্বক জানাবেন। জুমুয়ার দিনে নখ কাটার ফযিলত ও নিয়ম। হাদীসসহ।
তারিখ: ২৫/১০/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা ওবায়দুর রহমান ফরিদপুর থেকে।
জবাব:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, সহিহ সনদে শুক্রবারে নখ কাটার ফজিলত সংক্রান্ত কোন হাদিস বর্ণনা হয়নি। কিছু হাদিস দুর্বল , কিছু হাদিস জাল, নিম্নে তার দুএকটি উল্লেখ করা হলো।
হাদিস নং-০১
مَن قلّم أظفارَه يوم الجمعة وُقِيَ من السوء إلى مثلها” وقال عنه الزرقاني في شرح المواهب ” ج4 ص215 “: إنه حديث ضعيف رواه الطبراني في الأوسط والبزار عن أبي هريرة.
অর্থাৎ যে ব্যক্তি শুক্রবারে নখ কাটবে সে অনুরূপ অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাবে। তাখরিজ: শারহুল মাওয়াহিব- ৪র্থ খণ্ড;২১৫ পৃষ্ঠা, তাবারানি; মুসনাদে বাজ্জার
নোট: হাদিসটির সনদ জয়িফ বা দুর্বল।
হাদিস নং -০২
أنه من قول ابن مسعودٍ بلفظ: «مَن قلَّم أظفاره يوم الجمعة، أخرج الله عز وجل منه داءً، وأدخل فيه شفاءً». وهذه الأحاديث مُنْكَرةٌ أو موضوعةٌ؛ كما قال الحافظ ابن رجب في "فتح الباري" (5/359):
أنه من قول ابن مسعودٍ بلفظ: «مَن قلَّم أظفاره يوم الجمعة، أخرج الله عز وجل منه داءً، وأدخل فيه شفاءً». وهذه الأحاديث مُنْكَرةٌ أو موضوعةٌ؛ كما قال الحافظ ابن رجب في "فتح الباري" (5/359)
হজরত ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, "যে ব্যক্তি শুক্রবারে তার নখ কাটবে, মহান আল্লাহ তার থেকে একটি রোগ দূর করবেন এবং তার মধ্যে নিরাময় প্রবেশ করবেন।" তাখরিজ: আল-হাফিজ ইবনে রজব "ফাতহুল বারী" (5/359)
নোট: এই হাদীসগুলো হয় মুনকার বা বানোয়াট।
হাদিস নং -০৩
أنه حديث :” مَن قصَّ أظافرَه في يوم الجمعة أخرج الله منه مرضًا وزادَه شِفاء ” لم نجد حديثًا صحيحًا بهذا المعنى، والذي وجدناه هو ما ذكره الشعراني في كتابه ” كشف الغمة ” ج1 ص180
অর্থাৎ যে ব্যক্তি শুক্রবারে তার নখ কাটবে, আল্লাহ তার অসুস্থতা দূর করবেন এবং তার আরোগ্য বৃদ্ধি করবেন। তাখরিজ: কাশফুল গুমা -১/১৮০
নোট: হাদিসটির সনদ পাওয়া যায়নি।
হাদিস নং -০৪
من قلم أظفاره يوم السبت خرج منه الداء ودخل فيه الشفاء، ومن قلم أظفاره يوم الأحد خرجت منه الفاقة ودخل فيه الغني ومن قلم أظفاره يوم الإثنين خرجت منه العلة ودخلت فيه الصحة، ومن قلم أظفاره يوم الثلاثاء خرج منه المرض ودخلت فيه العافية، ومن قلم أظفاره يوم الأربعاء خرج منه الوسواس والخوف ودخل الأمن والصحة ومن قلم أظفاره يوم الخميس خرج منه الجذام ودخلت فيه العافية، ومن قلم أظفاره يوم الجمعة دخلت فيه الرحمة وخرجت منه الذنوب.
অর্থাৎ শনিবার নখ কাটার ফলে তার থেকে অসুস্থতা বের হয়ে আসে এবং আরোগ্য তার মধ্যে প্রবেশ করে। আর যে রবিবার নখ কাটে তার থেকে দারিদ্র্য বেরিয়ে আসে এবং তার মধ্যে ধনীতা প্রবেশ করে। তার মধ্যে প্রবেশ করল।সোমবার নখ কাটার ফলে তার থেকে অসুস্থতা বেরিয়ে আসে এবং স্বাস্থ্য তার মধ্যে প্রবেশ করে। মঙ্গলবার নখ কাটলে তার থেকে অসুস্থতা বেরিয়ে আসে এবং নিরাপত্তায় প্রবেশ করে।বুধবার কুমন্ত্রণা ও ভয় বের হয়ে আসে। তার মধ্যে নিরাপত্তা ও সুস্থতা প্রবেশ করল। বৃহস্পতিবার তার নখ কাটার ফলে তার থেকে কুষ্ঠরোগ বেরিয়ে এল এবং সুস্থতা প্রবেশ করল। শুক্রবার তার নখ কাটার ফলে তার মধ্যে রহমত প্রবেশ করল এবং তার থেকে পাপ বেরিয়ে গেল। তাখরিজ: ফাওয়ায়িদুল মাজমু -১৮২
নোট: আল্লামা শাওকানি রহ. বলেন, হাদিসটি মাওজু বা জাল।
প্রশ্ন: ক। নখ কাটার নিয়ম বা তারতীব কী?
উত্তর: ক। সহিহ সনদে নখ কাটার নিয়ম বা তারতিব বর্ণিত হয়নি। ওয়ালামায়ে দ্বীন কিছু তারতিব বর্ণনা করেছেন। যেমন,
নখ কাটার সময় উত্তম হচ্ছে- ডান হাত থেকে কাটা শুরু করে আবার ডান হাতেই শেষ করা।
অর্থাৎ ডান হাতের শাহাদাত আংগুলি থেকে শুরু করে কনিষ্ঠাংগুলিতে শেষ করা। অত:পর বাম হাতের কনিষ্ঠাংগুলি থেকে শুরু করে বৃদ্ধাংগুলি পর্যন্ত কাটা।
তারপর সর্বশেষে ডান হাতের বৃদ্ধাংগুলি কাটা। পায়ের কখ কাটার সময় উত্তম পন্থা হচ্ছে- ডান পায়ের কনিষ্ঠাংগুলি থেকে শুরু করে ধারাবাহিক নিয়মে কেটে কেটে বাম পায়ের কনিষ্ঠাংংগুলিতে গিয়ে শেষ করা।
দ্বিতীয় কথা হলো, সমস্ত ভালো-উত্তম কাজগুলো ডান দিক থেকে শুরু করা সুন্নত এতে কোন সন্দেহ নেই। তাই সর্বপ্রথম ডান হাত এবং ডান পা থেকে নখ কাটা শুরু করা উচিত। দলিল:
أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مَعْمَرٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو عَاصِمٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ بِشْرٍ، عَنْ أَشْعَثَ بْنِ أَبِي الشَّعْثَاءِ، عَنْ الْأَسْوَدِ بْنِ يَزِيدَ، عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحِبُّ التَّيَامُنَ، يَأْخُذُ بِيَمِينِهِ، وَيُعْطِي بِيَمِينِهِ، وَيُحِبُّ التَّيَمُّنَ فِي جَمِيعِ أُمُورِهِ»
আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত:
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ডানদিক হতে আরম্ভ করাকে পছন্দ করতেন। তিনি ডান হাতে গ্রহন করতেন, ডান হাতে দান করতেন, প্রত্যেক অবস্থায় তিনি ডান দিক হতে আরম্ভ করা পছন্দ করতেন। সুনান আন-নাসায়ী, হাদীস নং ৫০৫৯
অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে :
أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الْأَعْلَى، قَالَ: حَدَّثَنَا خَالِدٌ، قَالَ: حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، قَالَ: أَخْبَرَنِي الْأَشْعَثُ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبِي يُحَدِّثُ، عَنْ مَسْرُوقٍ، عَنْ عَائِشَةَ، وَذَكَرَ، «أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُحِبُّ التَّيَامُنَ مَا اسْتَطَاعَ فِي طُهُورِهِ، وَتَنَعُّلِهِ، وَتَرَجُّلِهِ»
আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত:
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওযু করতে, জুতা পরতে এবং চুল আঁচড়াতে যথাসম্ভব ডান দিক থেকে আরম্ভ করা পছন্দ করতেন। সুনান আন-নাসায়ী, হাদীস নং ৫২৪০
সারকথা হলো, শুক্রবারে চুল নখ কাটা মুস্তাহাব, হজরত ইবনে ওমর রা থেকে এ মর্মে আসার বর্ণিত রয়েছে।
والله اعلم بالصواب