জিজ্ঞাসা-১২৭৯৪:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। Assalamualaikum.
(১)মাস্টার্স মাস একজন দ্বীনদার মানুষ যিনি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যখন নকলের মহোৎসব ছিল পরীক্ষার হলে পরিদর্শকরাই বই বের করে,ব্লাকবোর্ডে লিখে দিয়ে নানাভাবে নকলে সহযোগিতা করতো, তিনি এভাবেই নকল করে ম্যাট্রিক থেকে এমএ পর্যন্ত ১০০% নকল করে পাশ করেছেন। তিনি এখন অনুতপ্ত। তার প্রশ্ন নকল করে পাশ করা সনদ দিয়ে চাকুরীর অর্থ কি তার জন্য হালাল হবে?
(২) তার দ্বিতীয় প্রশ্ন : তিনি ম্যাট্রিক Registration এর সময় ইচ্ছাকৃতভাবে বেশ কয়েক বছর বয়স কমিয়ে দিয়েছিলেন। বর্ধিত বয়সের চাকুরীর বেতন কি হালাল হবে?
তারিখ: ০৬/১০/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা নূরুল আমীন, নীলফামারী থেকে।
জবাব:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্ন দুটির উত্তর একই রকম। নকল করে পাশ করা এবং ইচ্ছাকৃতভাবে বয়স কমিয়ে দেওয়া দুটিই ধোঁকার অন্তর্ভুক্ত। আর ইসলামে ধোঁকা হারাম। দলিল -
وَحَدَّثَنِي يَحْيَى بْنُ أَيُّوبَ، وَقُتَيْبَةُ، وَابْنُ، حُجْرٍ جَمِيعًا عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ جَعْفَرٍ، - قَالَ ابْنُ أَيُّوبَ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، - قَالَ أَخْبَرَنِي الْعَلاَءُ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، . أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَرَّ عَلَى صُبْرَةِ طَعَامٍ فَأَدْخَلَ يَدَهُ فِيهَا فَنَالَتْ أَصَابِعُهُ بَلَلاً فَقَالَ " مَا هَذَا يَا صَاحِبَ الطَّعَامِ " . قَالَ أَصَابَتْهُ السَّمَاءُ يَا رَسُولَ اللَّهِ . قَالَ " أَفَلاَ جَعَلْتَهُ فَوْقَ الطَّعَامِ كَىْ يَرَاهُ النَّاسُ مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنِّي " .
আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্তূপীকৃত খাদ্যশস্যের পাশ দিয়া যাচ্ছিলেন। তখন তিনি স্তূপের মধ্যে হাত ঢুকালেন। তাঁর হাতের আঙ্গুলগুলো আদ্র দেখতে পান। তিনি বললেনঃ হে খাদ্যশস্যের মালিক! এটা কি? সে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! এতে বৃষ্টি পড়েছিল। রাসুল বললেনঃ কেন তুমি ভিজা অংশ খাদ্যশস্যের উপরে রাখনি, যাতে লোকেরা তা দেখতে পায়। যে ব্যক্তি ধোকা দেয় সে আমার দলভুক্ত নয়।
—সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৬ (আন্তর্জাতিক নং ১০২)
দ্বিতীয় কথা হলো, নকল সার্টিফিকেট এবং বয়স কমানো হারাম হলেও
পরবর্তীতে কর্মক্ষেত্রে সে যথাযথভাবে দায়িত্ব আঞ্জাম দেয় তাহলে এভাবে চাকরি নেওয়া নাজায়েয হলেও বেতন হালাল হয়ে যাবে। কিন্তু যদি সে তার কর্মক্ষেত্রের অযোগ্য হয় এবং যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় তাহলে তার জন্য ঐ চাকরিতে থাকা বৈধ হবে না। আর ঠিকমত দায়িত্ব পালন না করে বেতন নেওয়াও বৈধ হবে না। এ বিষয়ে আরব বিশ্বের হাম্বলি মাজহাবের বিখ্যাত আলেম শায়েখ ইবনে বায রহ. কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি বলেন -
سئل الشيخ ابن باز رحمه الله : " رجل يعمل بشهادة علمية وقد غش في امتحانات هذه الشهادة ، وهو الآن يحسن هذا العمل بشهادة مرؤوسيه ، فما حكم راتبه هل هو حلال أم حرام ؟
فأجاب : " لا حرج إن شاء الله , عليه التوبة إلى الله مما جرى من الغش , وهو إذا كان قائماً بالعمل كما ينبغي فلا حرج عليه من جهة كسبه ؛ لكنه أخطأ في الغش السابق ، وعليه التوبة إلى الله من ذلك " انتهى من "مجموع فتاوى ابن باز" (19/31).
অর্থাৎ, শায়েখ আব্দুল আযীয বিন বায (রাহি.) কে একবার প্রশ্ন করা হলো যে, ' জনৈক ব্যক্তি একাডেমিক সার্টিফিকেটের বলে এক জায়গায় চাকুরি করে। কিন্তু ঘটনাক্রমে সে ঐ সার্টিফিকেট অর্জনের পরীক্ষায় অসুদপায় অবলম্বন করে নকলের আশ্রয় নিয়েছিলো। তবে সে তার কর্মস্থলে নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য বেশ সুনাম ও সুখ্যাতির সাথে অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে সুচারুরূপে পালন করে আসছে। এখন প্রশ্ন হলো- তার প্রাপ্ত বেতন তার জন্য হালাল হচ্ছে, নাকি হারাম?
এর জবাবে শায়েখ আব্দুল আযীয বিন বায (রাহি.) বলেন, আল্লাহ চাহে তো, তাতে কোন সমস্যা নেই। বেতন হিসেবে প্রাপ্ত অর্থ সে নির্বিঘ্নে নিজের প্রয়োজনার্থে ব্যায় নির্বাহ করতে পারবে। তবে তার অতীত জীবনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য অনুতপ্ত হৃদয়ে আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠচিত্তে তাওবা করতে হবে। কারণ যেহেতু সে বর্তমান কর্মস্থলে বেশ কর্তব্যনিষ্ঠার সাথে অর্পিত দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে, তাই তার প্রাপ্ত বেতন দিয়ে নিজের ব্যায় নির্বাহে কোন সমস্যা নেই। তবে অতীতের প্রবঞ্চনামূলক কীর্তিকলাপের কারণে সে মস্ত বড় অন্যায় করে ফেলেছে। এজন্যই অশ্রুবিধৌত কলব নিয়ে বিগলিত নয়নে এই মহাপাপ থেকে তাওবা করে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নেয়াটা তার জন্য একান্ত আবশ্যক। (ইবনে বাযের ফাতাওয়া সংকলন- ১৯/৩১)
সারকথা হলো, নকল করা দ্বারা অর্জিত সার্টিফিকেট ও ইচ্ছা করে বয়স কমানো হারাম হলেও বর্তমান কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে, বেতন হালাল হবে। এবং বিগত জীবনের ভুলের জন্য খাঁটি দিলে তওবা করতে হবে।
والله اعلم بالصواب