আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৩৯৪: নারী-পুরুষের নামাজের মধ্যে পার্থক্য আছে কী?

No Comments

 











জিজ্ঞাসা-১২৩৯৪:

পুরুষ ও মহিলা সলাত আদায়ের ক্ষেত্র রুকু ও সিজদাহ করার সময় কোন পার্থক্য আছে কিতারিখ২৩/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি


মাওলানা আনওয়ারুল আম্বিয়া যশোর থেকে।

 

জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো,  নারী-পুরুষ মধ্যে শারীরিক গঠন,অবয়বসক্ষমতা এক নয়তাই তো নামাজ-রোজা-হজ ইত্যাদি ইবাদতের  ক্ষেত্রে পার্থক্য-ছাড় রয়েছে। তাই রুকু-সিজদার ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে।  নিম্নে হাদিস ও আসার উল্লেখ করা হলো,  ونسأل الله التوفيق وهو الموفق والمعين

 

নারীদের রুকুর পদ্ধতি:

 

মহিলাগণ রুকুর সময় পুরুষদের মত পূর্ণাঙ্গ ঝুঁকবে না। বরং উভয় হাত হাটুতে রাখবে। কিন্তু জড়োসড়ো হয়ে পুরুষদের চেয়ে কম ঝুঁকবে। দলিল:

 

হাদিস নং-০১

حَدَّثَنَا حَفْصٌ عَنِ الْجَعْدِ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْمَدِينَةِ عَنِ ابْنَةٍ لِسَعْدٍ أَنَّهَا كَانَتْ تُفْرِطُ فِي الرُّكُوع تَطَأْطُؤًا مُنكَرَاً ، فَقَالَ لَهَا سَعْدٌ : إنَّمَا يَكْفِيك إذَا وَضَعْت يَدَيْك عَلَى رُكْبَتَيْك.

আয়েশা বিনতে সাদ থেকে বর্ণিততিনি রুকুতে খুব বেশী ঝুঁকতেন যা দৃষ্টিকটু। অতঃপর হযরত সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস রা. তাকে বললেন: তোমার দুই হাত হাঁটুতে রাখলে তোমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। তাখরিজ: ইবনে আবী শাইবা- ২৫৯২


নোট:  এ হাদীসের রাবিগণ সবাই বুখারি ও মুসলিমের রাবি

 

হাদিস/আসার নং-০২

حَدَّثَنَا أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْمُقْرِئ ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي أَيُّوبَ ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي حَبِيبٍ ، عَنْ بُكَيْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ الأَشَجِّ ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ؛ أَنَّهُ سُئِلَ عَنْ صَلاَةِ الْمَرْأَةِ ؟ فَقَالَ : تَجْتَمِعُ وَتَحْتَفِزُ. (مصنف ابن ابى شيبة، كتاب الصلاة، في المرأة كَيْفَ تَجْلِسُ فِي الصَّلاَةِ، رقم الحديث-2794)

হযরত ইবনে আব্বাস রা. কে জিজ্ঞেস করা হল-মহিলারা কিভাবে নামায আদায় করবেতিনি বললেন-খুব জড়সড় হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামায আদায় করবে। তাখরিজমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-২৭৯৪

 

হাদিস/আসার নং-০২

 عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، عَنْ عَطَاءٍ قَالَ: تَجْتَمِعُ الْمَرْأَةُ إِذَا رَكَعَتْ تَرْفَعُ يَدَيْهَا إِلَى بَطْنِهَا، وَتَجْتَمِعُ مَا اسْتَطَاعَتْ، فَإِذَا سَجَدَتْ فَلْتَضُمَّ يَدَيْهَا إِلَيْهَا، وَتَضُمَّ بَطْنَهَا وَصَدْرَهَا إِلَى فَخِذَيْهَا، وَتَجْتَمِعُ مَا اسْتَطَاعَتْ “

হযরত আতা বিন আবী রবাহ রহ. বলেন: মহিলারা যখন রুকু করবে তখন জড়োসড়ো হয়ে করবে। হাত উঁচু করে পেটের সাথে মিলিয়ে রাখবে এবং যথাসম্ভব জড়োসড়ো হয়ে থাকবে। অতঃপর যখন সিজদা করবে দুই হাত শরীরের সাথে মিলিয়ে রাখবে। পেট ও সিনা রানের সাথে মিলিয়ে রাখবে এবং যথাসম্ভব জড়োসড়ো হয়ে থাকবে। তাখরিজ: মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক-৫০৬৯

 

নারীদের সিজদা পদ্ধতি:

 

হাদিস নং-০১

3016 – أخبرناه أبو بكر محمد بن محمد أنبأ أبو الحسين الفسوي ثنا أبو علي اللؤلؤي ثنا أبو داود ثنا سليمان بن داود أنبأ بن وهب أنبأ حيوة بن شريح عن سالم بن غيلان عن يزيد بن أبي حبيب أن رسول الله صلى الله عليه و سلم مر على امرأتين تصليان فقال إذا سجدتما فضما بعض اللحم إلى الأرض فإن المرأة ليست في ذلك كالرجل (سنن الكبرى للبيهقى، كتاب الحيض، باب ما يستحب للمرأة من ترك التجافي في الركوع والسجود، رقم الحديث-3016)

তাবেয়ী ইয়াযীদ বিন আবী হাবীব রহ. বলেন-একবার রাসূল সা. দুই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদেরকে (সংশোধনের উদ্দেশ্য) বললেন-যখন সেজদা করবে তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবে। কেননা মহিলারা এ ক্ষেত্রে পুরুষদের মত নয়। তাখরিজ: সুনানুল বায়হাকি-৩০১৬কিতাবুল মারাসিল লি ইমাম আবু দাউদ-৮০

নোটহাদিসটির সনদ সম্পর্কে আহলে হাদিসের অন্যতম  নেতা/আলেম  নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ আওনুল বারী” (১/৫২০) তে লিখেছেন-উল্লেখিত হাদিসটি সকল ইমামদের উসুল অনুযায়ী দলীল হিসেবে পেশ করায় যোগ্য

 

হাদিস নং-

  وَالآخَرُ حَدِيثُ أَبِى مُطِيعٍ الْحَكَمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الْبَلْخِىِّ عَنْ عُمَرَ بْنِ ذَرٍّ عَنْ مُجَاهِدٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- :« إِذَا جَلَسْتِ الْمَرْأَةُ فِى الصَّلاَةِ وَضَعَتْ فَخِذَهَا عَلَى فَخِذِهَا الأُخْرَى ، وَإِذَا سَجَدْتْ أَلْصَقَتْ بَطْنَهَا فِى فَخِذَيْهَا كَأَسْتَرِ مَا يَكُونُ لَهَا ، وَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَنْظُرُ إِلَيْهَا وَيَقُولُ يَا مَلاَئِكَتِى أُشْهِدُكُمْ أَنِّى قَدْ غَفَرْتُ لَهَا (السنن الكبرى، كتاب الصلاة، باب مَا يُسْتَحَبُّ لِلْمَرْأَةِ مِنْ تَرْكِ التَّجَافِى فِى الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ، رقم الحديث-3324

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত।  রাসূল () ইরশাদ করেছন-মহিলা যখন নামাযের মধ্যে বসবে তখন যেন (ডান) উরু অপর উরুর উপর রাখে। আর যখন সেজদা করবে তখন যেন পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। যা তার সতরের জন্য অধিক উপযোগী। আল্লাহ তায়ালা তাকে দেখে বলেন-ওহে আমার ফেরেস্তারা! তোমরা সাক্ষী থাক। আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। তখিরিজসুনানে বায়হাকি-৩৩২৪

নোটএই হাদিসটির সনদ  হাসান।

 

হাদিস/আসার নং-

 5072 – عبد الرزاق عن إسرائيل عن أبي إسحاق عن الحارث عن علي قال إذا سجدت المرأة فلتحتفز ولتلصق فخذيها ببطنها (مصنف عبد الرزاق، كتاب الصلاة، باب تكبير المرأة بيديها وقيام المرأة و ركوعها وسجودها، رقم الحيث-5072)

হযরত আলী রা. বলেছেন-মহিলা যখন সেজদা করে তখন সে যেন খুব জড়সড় হয়ে সেজদা করে এবং উভয় উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে। তাখরিজমুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৫০৭২মুসান্নাফে ইবনে শাইবা-২৭৯৩সুনানে কুবরা বায়হাকী-২/২২২


 হাদিস/আসার নং-
  5068 – 
عبد الرزاق عن معمر عن الحسن وقتادة قالا إذا سجدت المرأة فإنها تنضم ما استطاعت ولا تتجافى لكي لا ترفع عجيزتها

হযরত হাসান বসরী ও কাতাদা রহ. বলেন-মহিলা যখন সেজদা করবে তখন সে যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে থাকবে। অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রেখে সেজদা দিবেনা যাতে কোমড় উঁচু হয়ে না থাকে।  তাখরিজমুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৭হাদিস নং-৫০৬৮মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০৩

হাদিস নং-
 5071 – 
عبد الرزاق عن معمر والثوري عن منصور عن إبراهيم قال كانت تؤمر المرأة أن تضع ذراعها وبطنها على فخذيها إذا سجدت ولا تتجافى كما يتجافى الرجل لكي لا ترفع عجيزتها

হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহ. আরো বলেন-মহিলাদের আদেশ করা হত তারা যেন সেজদা অবস্থায় হাত ও পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। পুরুষের মত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা না রাখে। যাতে কোমড় উঁচু হয়ে না থাকে। তাখরিজ:  মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৫০৭১

 

 

আইম্মায়ে আরবার মতামত:


১. ইমামে আজম আবু হানিফার মত:

روى امامنا الأعظم عن نافع عن ابن عمر رضى الله عنهما أنه سئل كيف كان النساء يصلين على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ قال كن يتربعن أمرن أن يحتفزن،

أخرجه أبو محمد الحارثى والأشنانى وابن خسرو من طريقه عن سفيان الثورى عنه، راجع جامع الماسانيد-1/400، وهذا أقوى واحسن ما روى فى هذا الباب، ولذا احتج به امامنا وجعله مذهبه وأخذ به،

আমাদের ইমামে আজম আবু হানীফা রহ. নাফে রহ. থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ কে জিজ্ঞেস করা হল-রাসূল () এর যুগে মহিলারা কিভাবে নামায পড়তেন?” তিনি বললেন-আগে তারা চারজানু হয়ে বসতেনপরে তাদেরকে জড়সড় হয়ে বসতে বলা হয়েছে। তাখরিজ: জামেউল মাসানিদ-১/৪০০

 

 ইমাম  শাফেয়ি রহ.

قال الشافعي ) وقد أدب الله تعالى النساء بالاستتار وأدبهن بذلك رسوله صلى الله عليه وسلم وأحب للمرأة في السجود أن تضم بعضها إلى بعض وتلصق بطنها بفخذيها وتسجد كأستر ما يكون لها وهكذا أحب لها في الركوع والجلوس وجميع الصلاة أن تكون فيها كأستر ما يكون لها (كتاب الأم،  باب الذكر في السجود)

ইমাম শাফেয়ী রহঃ বলেন-আল্লাহ পাক মহিলাদেরকে পুরোপুরি আবৃত থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। তার রাসূল () ও অনুরূপ শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আমার নিকট পছন্দীয় হল-সেজদা অবস্থায় মহিলারা এক অঙ্গের সাথে অপর অঙ্গ মিলিয়ে রাখবে। পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে। আর সেজদা এমনভাবে করবে যাতে সতরের চূড়ান্ত হেফাযত হয়। অনুরূপ রুকুবৈঠক ও গোটা নামাযে এমনভাবে থাকবে যাতে সতরের পুরোপুরি হেফাযত হয়। তাখরিজ: কিতাবুল উম্ম-১/১৩৮

. ইমাম মালেকী রহ. এর মত:

মালেকী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফক্বীহ ইমাম আবুল আব্বাস আল কারাফী রঃ ইমাম মালিক রহঃ এর মত উল্লেখ করেন-

وأما مساواة النساء للرجال ففي النوادر عن مالك تضع فخذها اليمنى على اليسرى وتنضم قدر طاقتها ولا تفرج في ركوع ولا سجود ولا جلوس بخلاف الرجل

নামাযে মহিলা পুরুষের মত কিনাএ বিষয়ে ইমাম মালিক রহঃ থেকে বর্ণিত। মহিলা ডান উরু বাম উরুর উপর রাখবে এবং যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে বসবে। রুকু সেজদা ও বৈঠকে কোন সময়ই ফাঁক ফাঁক হয়ে বসবেনা। পক্ষান্তরে পুরুষের পদ্ধতি হল ভিন্ন। {আয যাখীরা-২/১৯৩}

. ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল এর মত:

ইমাম আহমদ রহঃ এর ফাতওয়া উল্লেখ আছে ইমাম ইবনে কুদামা রহঃ এর আল মুগীনী কিতাবে।

فأما المرأة فذكر القاضي فيها روايتين عن أحمد إحداهما ترفع لما روى الخلال بإسناده عن أم الدرداء وحفصة بنت سيرين أنهما كانتا ترفعان أيديهما وهو قول طاوس ولأن من شرع في حقه التكبير شرع في حقه الرفع كالرجل فعلى هذا ترفع قليلا قال أحمد رفع دون الرفع والثانية لا يشرع لأنه في معنى التجافي ولا يشرع ذلك لها بل تجع نفسها في الركوع والسجود وسائر صلاتها

তাকবীরের সময় মহিলারা হাত উঠাবে কি উঠাবে নাএ বিষয়ে কাজী [আবু ইয়াজ] ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ থেকে দুটি মত উল্লেখ করেছেন। প্রথম মত হল হাত উঠাবে। কেননা খাল্লাল হযরত উম্মে দারদা এবং হযরত হাফসা বিন সীরীন থেকে সনদসহ বর্ণনা করেন যেতারা হাত উঠাতেন। ইমাম তাউসের বক্তব্যও তাই। উপরন্তু যার ব্যাপারে তাকবীর বলার নির্দেশ রয়েছে তার ব্যাপারে হাত উঠানোরও নির্দেশ রয়েছে। যেমন পুরুষ করে থাকে। এ হিসেবে মহিলারাও হাত উঠাবে। তবে সামান্য। আহমাদ রহঃ বলেন-তুলনামূলক কম উঠাবে

 

সারকথা কথা হলো, নারী-পুরুষদের সালাতের মধ্যে রুকু-সিজদাসহ আরও অন্যান্য আমলে ভিন্নতা রয়েছে। যা হাদিস, আসার, তাবেয়ি, তাবে তাবায়ি আইয়ামে আরবার মতা দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং যারা বলে নারী-পুরুষ নামাজের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, তাদের কথা সঠিক নয়।

তথ্য সহযোগিতায়: দলীলসহ নামাযের মাসায়েল আল্লামা আব্দুল মতীন হাফিজাহুল্লাহ, আহলে হক মিডিয়া

 

والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে