আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৮১২: কোরআন তিলাওয়াত এর সময় নামাজের সুরতে হাত বেঁধে তিলাওয়াত করার বিধান কি?

No Comments

 











জিজ্ঞাসা-১২৮১২: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।

সম্মানিত মুফতি সাহেবের কাছে আমার জানার বিষয়, নামাজ ছাড়া অন্য যে কোন সময় কোরআন তিলাওয়াত এর সময় নামাজের সুরতে হাত বেঁধে তিলাওয়াত করার বিধান কি? উত্তম, অনুত্তম নাকি অনুচিত? 

তারিখ:  ২০/১০/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা আব্দুর রহমান সাভার  থেকে।


 জবাব

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 


তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, নামাজের বাহিরে নামাজের সুরতে হাত বাঁধা নিয়ে জায়েজ ও নাজায়েজ দুটিই মতামত পাওয়া যায়। 

আপনার জানতে চাওয়া বিষয়টিকে পরিভাষায় تكتيف বা تكفير বলা হয়ে থাকে। তবে শব্দটি আরবী ভাষাভাষীদের নিকট বহুল প্রচলিত নয় বিধায় সেগুলো غرائب الألفاظ

 বা দুষ্প্রাপ্য শব্দের গ্রন্থতালিকায় স্থান পেয়েছে। আল্লামা আবু উবাইদ আল হারুভী (রাহি.) বলেন,


التكفير: وهو وضع اليدين على الصدر خضوعا.

التكتيف: وضع اليدين على الصدر كهيئة الصلاة.

الغريبين في القرآن والحديث ٥/‏١٥٧٧ — الهروي، أبو عبيد (ت ٤٠١)

তবে যেহেতু ইলমুশ শারীয়াহ'র প্রতিটি বিধান আরব-অনারব নির্বিশেষে সকল مكَلَّف بالشَّرْع এর জন্য সমভাবে প্রযোজ্য, তাই সর্বশ্রেণীর পাঠক সমাজের অনুধাবনের সুবিধার্থে ফিকহের পরিভাষায় এটিকে قبض ، ضم اليدين, وضع اليدين প্রভৃতি নামে নামকরণ করা হয়েছে। হাদীসের কিতাবগুলোতেও এজাতীয় শব্দপুঞ্জির ব্যাপক প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয়।


যেহেতু সালাত আদায়কালে হাত বেঁধে দাঁড়ানোর বিষয়টি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে একাধিক সহীহ হাদীস দ্বারা সুসাব্যস্ত, তাই কট্টরপন্থী শিয়া সম্প্রদায় ইমামিয়াদের এবিষয়ে আপত্তি থাকলেও তা গ্রহণযোগ্য নয়। তবে সালাতের বাহিরে এরূপ ভঙ্গি প্রদর্শন করা সুনিশ্চিতভাবেই বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণ। পারস্যবাসীদের কর্মপ্রথা একথারই প্রমাণ বহন করে। 


 لما جيء باُسارى الفرس إلى الخليفة الثاني ، كفّروا أمامه فسأل عن ذلك ، فأجابوه بأنّا نستعمله خضوعاً وتواضعاً لملوكنا . [ جواهر الكلام : 11 / 19 ]

অর্থাৎ, যখন পারস্য বিজয়ের পরমুহূর্তে যুদ্ধবন্দীদেরকে যখন ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা হজরত ওমর (রাযি.) এর সামনে হাজির করা হলো, তখন তারা তাঁরা সামনের দিকে হাত বেঁধে দাঁড়ালো। এর কারণ জানতে চাইলে তারা বললো, "আমরা রাজা-বাদশাহ সহ সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে এভাবেই সম্মান ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে থাকি।"


প্রশ্ন: ক । নাজায়েজ এর পক্ষে দলিল কী?

উত্তর: ক।  নামাজ ব্যতিত অন্য সময় হাত বাঁধা জায়েজ নেই। দলিল:


وأما ما جاء في كتاب " بدائع الفوائد " لابن القيم (3/91) :

" قال - يعني: الإمام أحمد - في رواية المزني: ويكره أن يجعلهما على الصدر.

وذلك لما روي عن النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أنه:

نهى عن التكفير. وهو وضع اليد على الصدر ". اهـ.

فإنه استدلال عجيب! فإن الحديث - إن صح - ليس فيه النهي عن التكفير في

الصلاة، وليس كل ما كان منهياً عنه خارج الصلاة يكون منهياً عنه فيها؛ بل قد يكون

العكس؛ فقد أمرنا - مثلاً - بالقيام فيها لله تعالى، ونهينا عنه خارجها لغيره سبحانه

وتعالى، فلا يبعد أن يكون الحديث كناية عن النهي عن الخضوع لغير الله تعالى، كما يُخضَع له تعالى بوضع اليدين على الصدر في الصلاة، فيكون عليه الصلاة والسلام نهى

عن هذا الوضع لغير الله تعالى؛ لما فيه من الخضوع وتعظيم غير الله تعالى.

وبهذا يتحقق أن هذا الحديث لا تعلق له بالصلاة مطلقاً؛ 

أصل صفة صلاة النبي صلى الله عليه وسلم ١/‏٢٢٥ — ناصر الدين الألباني (ت ١٤٢٠)

অর্থাৎ, আল্লামা ইবনুল কায়্যুম জাওযী (রাহি.) স্বীয় গ্রন্থ বাদাইউল ফাওয়াইদ কিতাবে ইমাম আহমদের বরাত দিয়ে সূত্রবিহীনভাবে একটি হাদীস এনেছেন। যেখানে হাত বাঁধার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। 

তবে আল্লামা নাসীরুদ্দীন আলবানী রহ. এই হাদীসের জবাবে বলেন, হাদীসটি সহীহ ধরে নেয়া হলেও এই কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই যে, সালাতেই হাত বাঁধতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বরং হাদীসের মূল ব্যাখ্যা এরূপ হতে পারে যে, নামাজে যেই কর্মপন্থা প্রদর্শন করে আল্লাহর সম্মুখে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে বিলিয়ে দিয়ে একচ্ছত্রভাবে তার নিরংকুশ সম্মান ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়ে থাকে, তা নামাজের বাইরে অন্য কারো জন্য করা চলবেনা। উদাহরণস্বরূপ, নামাজে আল্লাহর সামনে কিয়াম (দণ্ডায়মান) হয়ে তাকে সম্মান জানানো হয়ে থাকে। ঠিক সেভাবেই নামাজের বাইরে অন্য কাউকে সম্মান প্রদর্শনার্থে দাঁড়ানো যাবেনা। অনুরূপভাবে হাত বেঁধে আল্লাহর সামনে দাঁড়ানো হয়ে থাকে। সুতরাং নামাজের বাইরে হাত বেঁধে দাঁড়ানো যাবেনা। সুতরাং হাদীসের সাথে আর নামাজে হাত বাঁধা না বাঁধার সাথে ন্যুনতম কোন সম্পর্ক নেই। বরং হাদীসটিতে নামাজের বাইরে হাত বেঁধে না দাঁড়ানোর ব্যাপারে আলোকপাত করা হয়েছে।

সূত্র: বাদায়িউল ফাওয়ায়িদ-৩/৯৩; ইবনে কাইয়ুম রহ.


প্রশ্ন: খ। জায়েজ এর পক্ষে দলিল কী?

উত্তর: খ।  নামাজের বাহিরে নামাজের সুরতে হাত বাঁধা জায়েজ আছে। দলিল:

وأما وضع إحدى اليدين على الأخرى على الصدر أو التشبيك بين الأصابع خارج الصلاة فالأصل فيه الإباحة، ولم نقف على نهي شرعي عنه، أو أن ذلك من الشيطان أو من التشبه به.

অর্থাৎ, নামাজের বাইরেও যদি কেউ হাত বেঁধে দাঁড়ায়, সেক্ষেত্রে সেটি স্বাভাবিক নীতি অনুসারে বৈধ হওয়াটাই যুক্তিগ্রাহ্য। কারণ এর বিপরীতে কোন শরয়ী দলীল পাওয়া যায়নি। অথবা এমন কোন দলীল পাওয়া যায়নি, যা থেকে বুঝা যায় যে, এটা শয়তানের রীতি, কিংবা ইবলিশের কর্মপন্থা অনুসরণ। অতএব তাতে কোন সমস্যা নেই। সূত্র: আল-আদাবু ওয়াল আখলাকু ওয়ার রকায়িক-৫৯৮২১ (ফতোয়া)

সারকথা, আপনার প্রশ্নের বর্ণনা মোতাবেক, নামাজ ছাড়া অন্য যে কোন সময় কোরআন তিলাওয়াত এর সময় নামাজের সুরতে হাত বেঁধে তিলাওয়াত করা অনুচিত ।  দলিল ও যুক্তির আলোকে প্রথম মতের উপর আমল করাই অধিক নিরাপদ। অর্থাৎ নাজায়েজের মতটি প্রাধান্য পাবে।


  والله اعلم بالصواب