জিজ্ঞাসা-১৩০২৭: শুধু এক ভরি স্বর্ণ থাকলে নারীদের কুরবানি দিতে হবে কি?
জিজ্ঞাসা-১৩০২৭:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। সম্মানিত মুফতি সাহেব,
কোনো মহিলার এক ভরি স্বর্ণ আছে? নগদ টাকা আছে বা নাই। তার উপর কুরবানী ওয়াজিব কিনা?
তারিখ: ১৬/০৬/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা সাজ্জাদ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, যদি সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা কিংবা বাণিজ্য-দ্রব্য- এগুলোর কোনোটি পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ না থাকে, কিন্তু এসবের একাধিক সামগ্রী এ পরিমাণ রয়েছে, যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয় তাহলে তাকে কুরবানি দিতে হবে। সূত্রঃ মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৬৬,৭০৮১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৩৯৩
তেমনি যদি কারো কাছে শুধু রূপা থাকে, স্বর্ণ বা নগদ অর্থ না থাকে, তাহলে যদি রূপার নেসাব পূর্ণ না হয়, তাহলে তার উপর কুরবানি (যাকাত) আবশ্যক হবে না। দলিল-
لا بد من اعتبار الغنى، وهو ان يكون فى ملكه مائتا درهم او عشرين دينارا ا وشئ تبلغ قيمته ذلك سوى مسكنه وما يأثث به وكسوته وخادمه وفرسه وسلاحه وما لا يستغنى عنه وهو نصاب صدقة الفطر (بدائع الصنائع-4/196، رد المحتار-9/453، الفتاوى الهندية-5/292)
কুরবানী আবশ্যক হওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক প্রাচুর্যের বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে। আর একজন ব্যক্তি তখনই ধনী হিসাবে বিবেচিত হবে, যখন তার স্বত্বাধিকারে- নিজ বাসস্থান, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, পরিধেয় পোশাক-পরিচ্ছদ, সেবক, চলার বাহন, আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রসামগ্রীসহ দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য উপাদানসমূহ ব্যতিরেকে দুইশত দিরহাম কিংবা বিশ দিনার অথবা সমমূল্যের সম্পদ বিদ্যমান থাকবে। (বাদায়েউস সানায়ে- ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার-৯/৪৫৩, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ৫/২৯২)
أما شرائط الوجوب: منها اليسار، وهو ما يتعلق به وجوب صدقة الفطر…… والمسر فى ظاهر الرواية: من له مأتا درهم أو عشرون دينارا أو شيء يبلغ ذلك سوى مسكنه ومتاع مسكنه ومركوبه وخادمه فى حاجته التى لا يستغنى عنها (الفتاوى الهندية-5/292، جديد-5/336-337، المحيط البرهانى-8/455، رقم-10776، الفتاوى الهندية-17/405، رقم-27649)
অর্থাৎ, কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো- এমন আর্থিক সচ্ছলতা, যার কারণে যাকাত আবশ্যক না হলেও সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়। জাহেরে রেওয়াতের সংজ্ঞা অনুসারে সচ্ছল ব্যক্তি তাকেই বলা হবে- বাসস্থান, ঘরের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র , চলার বাহন, সেবক, ইত্যাদির মতো নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু ব্যতীত যার স্বত্বাধিকারে দুইশত দিরহাম অথবা বিশ দিনার কিংবা তার সমমূল্যের সম্পত্তি বিদ্যমান রয়েছে। এই প্রয়োজনীয় বস্তু ব্যতিরেকে ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে বিনিয়োগকৃত চড়ে খাওয়া জন্তু, ঘোড়া কিংবা অন্য ব্যবসায়িক উপকরণ ইত্যাদির বাজার মূল্য দুইশত দিরহাম সমপরিমাণ হলে তাকে সচ্ছল ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এবং তার ওপর কুরবানী করা আবশ্যক হবে। ( ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ৫/২৯২, জাদীদ ৫/৩৩৬-৩৩৭।
আল-মুহীতুল বুরহানী; ৮/৪৫৫, নং-১০৭৭৬, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ১৭/৪০৫, নং-২৭৬৪৯)
সারকথা হলো, কোনো মহিলার এক ভরি স্বর্ণ থাকে, সঙ্গে রুপা, নগদ টাকা, পাওনা টাকা, ব্যাংকে জমানো টাকা, ব্যবসায়িক পণ্য সব মিলে যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা সমান (আজকের ১৬/০৬/২৪ বাজার মূল্য ৮৯,৯৮৫ টাকা) বা বেশি হয়, তাহলে কুরবানি ওয়াজিব হবে। আর এক ভরির সোনার সাথে সব কিছু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার সমান না হয়, তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।
والله اعلم بالصواب
আমল ও দুআ-২৪৫: হে আল্লাহ! আমার উপর যেন না থাকে কোনো বদকারের অনুগ্রহ, যার প্রতিদান আমাকে দিতে হয় দুনিয়া-আখিরাতে।
দু‘আ-১৯৯
اَللّٰهُمَّ لَا تَجْعَلْ لِفَاجِرٍ عِنْدِيْ نِعْمَةً أُكَافِيْهِ بِهَا فِيْ الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ.
ইয়া আল্লাহ! আমার উপর যেন না থাকে কোনো বদকারের অনুগ্রহ, যার প্রতিদান আমাকে দিতে হয় দুনিয়া-আখিরাতে।২৩১
-কানযুল উম্মাল-৩৮১০
২৩১. দুষ্ট ও অসভ্য লোকের কৃপাধীন হওয়া রুচিশীল ব্যক্তিমাত্রের জন্যই বড় কষ্টের।
জিজ্ঞাসা-১৩০২৮: এক অন্ডকোষ বিশিষ্ট গরু দিয়ে কুরবানি বিশুদ্ধ হবে কি না?
জিজ্ঞাসা-১৩০২৮:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। এক অন্ডকোষ বিশিষ্ট গরু দিয়ে কুরবানি বিশুদ্ধ হবে কি না?
এই সমস্যা জন্মগত কি না সেটা জানা জায়নি।
তারিখ: ১৬/০৬/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মো: কামরুল হাসান যশোর থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, পশুর অন্ডকোষ কেটে ফেললে বা না থাকলে এটা দোষ হিসেবে গণ্য হয় না। তাই এক অন্ডকোষ গরু বা পশু দ্বারা কুরবানি কোন সমস্যা নেই। দলিল-
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: ذَبَحَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الذَّبْحِ كَبْشَيْنِ أَقْرَنَيْنِ أَمْلَحَيْنِ مُوجَأَيْنِ،
জাবির ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন দু’টি ধূসর বর্ণের শিংবিশিষ্ট ও খাসী করা দুম্বা যবাহ করেন। [সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং-২৭৯৫]
দ্বিতীয় কথা হলো, প্রধান চারটি ত্রুটি থাকলে ঐ পশু দ্বারা কুরবানি জায়েজ নেই। দলিল:
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ، أَخْبَرَنَا جَرِيرُ بْنُ حَازِمٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْحَاقَ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي حَبِيبٍ، عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ عُبَيْدِ بْنِ فَيْرُوزَ، عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ، رَفَعَهُ قَالَ " لاَ يُضَحَّى بِالْعَرْجَاءِ بَيِّنٌ ظَلَعُهَا وَلاَ بِالْعَوْرَاءِ بَيِّنٌ عَوَرُهَا وَلاَ بِالْمَرِيضَةِ بَيِّنٌ مَرَضُهَا وَلاَ بِالْعَجْفَاءِ الَّتِي لاَ تُنْقِي " .
حَدَّثَنَا هَنَّادٌ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي زَائِدَةَ، أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ، عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ عُبَيْدِ بْنِ فَيْرُوزَ، عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم نَحْوَهُ بِمَعْنَاهُ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ حَدِيثِ عُبَيْدِ بْنِ فَيْرُوزَ عَنِ الْبَرَاءِ . وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا الْحَدِيثِ عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ .
১৫০৩। আলী ইবনে হুজর (রাহঃ) ......... বারা ইবনে আযিব (রাযিঃ) থেকে মারফু‘ হাদীস বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, খোঁড়া পশু যার খোঁড়া হওয়া স্পষ্ট, কানা পশু যার অন্ধত্ব সুস্পষ্ট, রুগ্ন পশু যার রোগ সুস্পষ্ট, ক্ষীণ পশু যার হাড্ডির মগজ পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে-এমন জন্তুর কুরবানী হবে না।
Narrated Al-Bara’ bin ’Azib:
A Marfu’ narration (from the Prophet (ﷺ)), saying: "A crippled animal whose limp is obvious is not to be slaughtered as sacrifice, nor an animal with a bad eye whose blindness is obvious, nor a sick animal whose sickness is obvious, nor an emaciated animal that has no marrow (in its bones)."
—জামে' তিরমিযী, হাদীস আন্তর্জাতিক নং ১৪৯৭; ইবনে মাজাহ ৩১৪৪
সারকথা হলো, অন্ডকোষ একটা থাকুক বা না’ই থাকুক সর্বাবস্থায় উক্ত পশু দিয়ে কুরবানী করা জায়েজ। বলদ বা অন্ডকোষ বিহীন পশু/গরু/ছাগল/খাসি দ্বারা কুরবানী করা উত্তম। কেননা এতে গোশত সুস্বাদু হয়।
والله اعلم بالصواب
খাদ্য ও পুষ্টি-০৯: কাঁঠালের বিচি; অবহেলিত এক পুষ্টি ভাণ্ডার
কাঁঠালের বিচি: অবহেলিত এক পুষ্টি ভাণ্ডার
|| মুহাম্মদ মিজানুর রহমান ||
গ্রীষ্মকালীন ফল কাঁঠাল অনেকের কাছেই দারুণ পছন্দের ফল। কাঁঠালের কোষ খেতে কার না ভালো লাগে! সুস্বাদু এই ফল খেয়ে আমরা সাধারণত বিচিগুলো ফেলে দিই। অথচ এই বিচিই হতে পারে স্বাস্থ্য রক্ষায় এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পুষ্টিবিদরা বলছেন, কাঁঠালের বিচি নানা ধরনের ভিটামিন, খনিজ ও ফাইবারসমৃদ্ধ, যা দেহের নানা উপকারে আসে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালের বিচিতে প্রায় ৭ গ্রাম প্রোটিন, পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইবার, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে। এছাড়া, এতে ভিটামিন বি এ, বি ও সি বিদ্যমান, যা স্নায়ুতন্ত্রকে সচল রাখে এবং মানসিক চাপ কমায়।
স্বাস্থ্য উপকারিতা
অনেক মানুষ হজম সমস্যায় ভোগেন। কাঁঠালের বিচি হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ফাইবার থাকায় এটি পেট পরিষ্কার রাখতে কার্যকর। এছাড়া, বিচিতে থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সহায়ক। নিয়মিত খেলে ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বজায় থাকে। বিচিতে থাকা পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম একত্রে হাড় শক্ত করে, যা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড় ক্ষয় রোধে সহায়ক। কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে প্রচুর থায়ামিন ও রিবোফ্লাভিন। উভয়ই ভিটামিন বি এর অন্তর্গত। এরা শরীরে শক্তি সঞ্চয়ের পাশাপাশি নার্ভস সিস্টেম, হৃদ্যন্ত্র, মস্তিষ্ক, অন্ত্র, মাংসপেশি ইত্যাদির রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। কাঁঠালের বিচিতে যে সালফার থাকে সেটি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণসম্পন্ন। ডায়রিয়া, গ্যাসের সমস্যা ও অন্যান্য খাদ্যজনিত পেটের অসুখ দূর করতে সাহায্য করে এটি। সর্বোপরি কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। বিচিতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েডস, স্যাপোনিনস, ফেনোলিকস ইত্যাদি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো শরীরের ইনফ্ল্যামেশনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে বহুগুণ।মানসিক চাপ কমাতে কাঁঠালের বীজ খুবই উপকারী। কাঁঠালের বীজ প্রোটিন ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস মস্তিষ্কের ক্যামিকেলের ভারসাম্য বজায় রেখে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। কাঁঠালের বিচিতে প্রচুর ভিটামিন এ আছে। যারা চোখের বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন, তারা চোখের যত্নে কাঁঠাল নিয়মিত খেতে পারেন।
খাওয়ার পদ্ধতি ও সতর্কতা
কাঁঠালের বিচি সিদ্ধ করে বা আগুনে পুড়িয়ে, ভেজে ভর্তা হিসেবে, সিদ্ধ বিচি সবজির সঙ্গে রান্না করেও খাওয়া যায়। এটি আমাদের শক্তি দেয় এবং মাংসপেশি সুগঠিত রাখতে সাহায্য করে। যদিও কাঁঠালের বিচি উপকারী, তবে অতিরিক্ত খাওয়া গ্যাস বা অম্বলের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই পরিমাণমতো এবং রান্না করে খাওয়া উত্তম।
আমরা অনেক সময় যেসব জিনিস ফেলনা ভাবি, সেগুলোই হতে পারে পুষ্টির উৎস। কাঁঠালের বিচি তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সঠিকভাবে গ্রহণ করলে এটি হতে পারে দেহের শক্তি ও রোগ প্রতিরোধের এক নির্ভরযোগ্য অনুষঙ্গ।
এমএইচ/আওয়ার ইসলাম ২৪.কম
জিজ্ঞাসা-২০৬: ব্যাংকে লোন থাকতে কুরবানী ওয়াজিব হবে কি?
জিজ্ঞাসা-২০৬: ব্যাংক লোন থাকতে কুরবানী হবে কি? (তারিখ- ২৫/০৬/২০২২ ঈসায়ি/ইংরেজি)
মাওলানা রফিক সাভার থেকে---
জবাব: আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করছেন। অনেকে ঋণ-এর অজুহাতে কুরবানি থেকে বিরত থাকে। আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে বুঝার জন্য কয়েকভাগে ভাগ করছি।
প্রশ্ন: ক। কুরবানি কার ওপর ও কখন ওয়াজিব হয়?
উত্তর: ক্ কুরবানীর দিনসমূহে (১০, ১১ ও ১২ জিলহজ) যার কাছে আবশ্যকীয় প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তাহলে তার উপর কুরবানী করা আবশ্যক।
নেসাব পরিমাণ হল, সাড়ে বায়ান্ন তোলা বা এর সমমূল্য পরিমাণ অতিরিক্ত সম্পদ মজুদ থাকা। যা বর্তমান বাজার অনুপাতে ১৫১৬*৫২.৫=৭৯,৫৯০ (কথায় উনসত্তর হাজার পাঁচশত নব্বই )টাকা (বাজুস কর্তৃক নির্ধারিত)
দলিল:
(وَأَمَّا) (شَرَائِطُ الْوُجُوبِ) : مِنْهَا الْيَسَارُ وَهُوَ مَا يَتَعَلَّقُ بِهِ وُجُوبِ صَدَقَةِ الْفِطْرِ دُونَ مَا يَتَعَلَّقُ بِهِ وُجُوبُ الزَّكَاةِ،………. وَالْمُوسِرُ فِي ظَاهِرِ الرِّوَايَةِ مَنْ لَهُ مِائَتَا دِرْهَمٍ أَوْ عِشْرُونَ دِينَارًا أَوْ شَيْءٌ يَبْلُغُ ذَلِكَ سِوَى مَسْكَنِهِ وَمَتَاعِ مَسْكَنِهِ وَمَرْكُوبِهِ وَخَادِمِهِ فِي حَاجَتِهِ الَّتِي لَا يَسْتَغْنِي عَنْهَا، فَأَمَّا مَا عَدَا ذَلِكَ مِنْ سَائِمَةٍ أَوْ رَقِيقٍ أَوْ خَيْلٍ أَوْ مَتَاعٍ لِتِجَارَةِ أَوْ غَيْرِهَا فَإِنَّهُ يُعْتَدُّ بِهِ مِنْ يَسَارِهِ،(الفتاوى الهندية، كتاب الأضحية، فصل شرائط الوجوب-5/292، رد المحتار، كتاب الاضحية-9/452-453، مجمع الانهر-4/167)
অর্থাৎ, কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো- এমন আর্থিক সচ্ছলতা, যার কারণে যাকাত আবশ্যক না হলেও সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়। জাহেরে রেওয়াতের সংজ্ঞা অনুসারে সচ্ছল ব্যক্তি তাকেই বলা হবে- বাসস্থান, ঘরের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র , চলার বাহন, সেবক, ইত্যাদির মতো নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু ব্যতীত যার স্বত্বাধিকারে দুইশত দিরহাম/ বিশ দিনার কিংবা তার সমমূল্যের সম্পত্তি বিদ্যমান রয়েছে। এই প্রয়োজনীয় বস্তু ব্যতিরেকে ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে বিনিয়োগকৃত চড়ে খাওয়া জন্তু, ঘোড়া কিংবা অন্য ব্যবসায়িক উপকরণ ইত্যাদির বাজার মূল্য দুইশত দিরহাম সমপরিমাণ হলে তাকে সচ্ছল ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এবং তার ওপর কুরবানী করা আবশ্যক হবে। ( ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, কুরবানীর অধ্যায়, কুরবানী আবশ্যক হওয়ার পরিচ্ছেদ, ৫/২৯২,। রদ্দুল মুহতার, কুরবানীর অধ্যায়, ৯/৪৫২-৪৫৩। মাজমাউল আনহার, ৪/১৬৭)
নোট: এখানে একটি বিষয় স্মরণ রাখতে হবে যে, যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে নিসাব পরিমান সম্পদ একবছর মালিকানায় থাকা শর্ত; কিন্তু কুরবানির বেলায় তা নয়। জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে নিসাব পরিমান সম্পদ থাকলেই কুরবানি ওয়াজিব হবে।
প্রশ্ন: খ। লোন/ঋণ থাকলে কুরবানি ওয়াজিব/দিতে হবে কিনা?
প্রশ্ন: খ। শরীয়তের বিধান হলো কাহারো ঋণ যদি এত হয় যা বাদ দিলে তার কাছে নিসাব পরিমাণ যাকাতযোগ্য সম্পদ থাকে না তাহলে তার ওপর যাকাত ফরয নয়। মুয়াত্তা মালেক ১০৭; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০০৩, ৭০৮৬, ৭০৮৯, ৭০৯০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৫৪৭-৫৪৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/৮৩
কিন্তু এখানে মনে রাখতে হবে যে, এই প্রসিদ্ধ মাসআলাটি সকল ঋণের ক্ষেত্রে নয়।
ঋণ দুই ধরনের হয়ে থাকে।
ক. প্রয়োজনাদি পূরণের জন্য বাধ্য হয়ে যে ঋণ নেওয়া হয়।
খ. ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে যে ঋণ নেওয়া হয়।
,
প্রথম প্রকারের ঋণ সম্পদ থেকে বাদ দিয়ে যাকাতের নিসাব বাকি থাকে কিনা তার হিসাব করতে হবে। নিসাব থাকলে যাকাত/কুরবানি ওয়াজিব হবে, অন্যথায় নয়।
,
কিন্তু যে সকল ঋণ উন্নয়নের জন্য নেওয়া হয় যেমন কারখানা বানানো, কিংবা ভাড়া দেওয়া বা বিক্রি করার উদ্দেশ্যে বিল্ডিং বানানো অথবা ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ঋণ নিলে যাকাতের হিসাবের সময় সে ঋণ ধর্তব্য হবে না। অর্থাৎ এ ধরনের ঋণের কারণে যাকাত কম দেওয়া বা কুরবানি থেকে বিরত থাকা যাবে না। তাখরিজ: মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৮৭
وفي رد المحتار- ( قوله أو مؤجلا إلخ ) عزاه في المعراج إلى شرح الطحاوي ، وقال : وعن أبي حنيفة لا يمنع وقال الصدر الشهيد : لا رواية فيه ، ولكل من المنع وعدمه وجه، زاد القهستاني عن الجواهر : والصحيح أنه غير مانع (رد المحتار-كتاب الزكاة، مطلب الفرق بين السبب والشرط والعلة-3/177، بدائع الصنائع-2/86
আপনার প্রশ্নে বর্ণিত ব্যাংকে লোন যদি,
(১) প্রথম প্রকারের হয়,তাহলে সেটা বাদ দিয়ে যদি আপনার নিকট যেহেতু নেসাব পরিমাণ টাকা আছে,তাহলে ঋন ব্যাতিত সম্পদের উপরেই আপনার কুরবানি ওয়াজিব হবে।
(২) আর যদি দ্বিতীয় প্রকারের ঋণ হয়,তাহলে বিধান হলোঃ
আপনি যাদের কাছ থেকে যেই লোন নিয়েছেন, এর বছরান্তের আদায়যোগ্য কিস্তি ছাড়া যদি আপনার কাছে সাড়ে বায়ান্ন তোলার রূপার সমমূল্য বর্তমান বাজর দর-৭৯,৫৯০ (কথায়, উনসত্তর হাজার পাঁচশত নব্বই) টাকা বাকি থাকে, তাহলে আপনার উপর কুরবানি আদায় করা আবশ্যক। কারণ দীর্ঘমেয়াদী ঋণ থাকা কুরবানি/যাকাত আবশ্যক হবার জন্য প্রতিবন্ধক নয়।
সারকথা: আপনি যদি দ্বিতীয় প্রকারের ঋণ হয়, ঈদের দিনগুলোতে মাসিক কিস্তি বাদ দিয়ে, অতিরিক্ত উনসত্তর হাজার পাঁচশত নব্বই টাকা থাকলে, আপনার ওপর কুরবানি ওয়াজিব হবে।
তথ্যসহযোগিতায়: আহলে হক মিডিয়া; ISLAMIC ONLINE MADRASHA
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১৩২৫২: ব্যবসায়ী পণ্যের যাকাত দিতে হবে কি
জিজ্ঞাসা-১৩২৫২:
আসসালামু আলাইকুম। আসসালামু আলাইকুম
আমি মুফতি সাহেবের কাছে ফতোয়া চাচ্ছি যে,
জনৈক সৈনিক মৃত্যু বরন করে, অতঃপর কর্তৃপক্ষ তার স্ত্রীর জীবন নির্বাহ করার জন্য ২০ লাখ টাকা দিয়ে তার জন্য একটি ব্যাবসার ব্যাবস্হা করে দেন।
বর্তমানে ঐ ব্যাবসার লাভের টাকা দিয়ে তার পরিবার অনেক কস্টে জীবন যাপন করছে। এমতাবস্থায় উক্ত মহিলা তার ব্যাবসার মূলধন ২০ লাখ টাকার যাকাত দিতে হবে কিনা? এটা তার জীবন যাপনের একমাত্র মাধ্যমে।
রেফারেন্স সহ সমাধান প্রত্যাশী। جزاك الله باحسن الجزاء
তারিখ:২৯/০৫/২৫ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা ইব্রাহীম বি. বাড়িয়া থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, যে মালের যাকাত দিতে হয়, ব্যবসায়ী পণ্য অন্যতম।
সুতরাং হস্তগত যেসব ব্যবসায়িক পণ্য রয়েছে। তা এখন বিক্রি করতে গেলে যে বিক্রয়মূল্য আছে, তা হিসেব করে চল্লিশ ভাগের এক ভাগ তথা শতকরা আড়াই টাকা হারে যাকাত আদায় করবে। চাই তা মূল মূল্য বা ক্রয়মূল্যের চেয়ে কম বা বেশি হোক। দলিল-
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ دَاوُدَ بْنِ سُفْيَانَ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ حَسَّانَ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ مُوسَى أَبُو دَاوُدَ، حَدَّثَنَا جَعْفَرُ بْنُ سَعْدِ بْنِ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ، حَدَّثَنِي خُبَيْبُ بْنُ سُلَيْمَانَ، عَنْ أَبِيهِ، سُلَيْمَانَ عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ، قَالَ أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَأْمُرُنَا أَنْ نُخْرِجَ الصَّدَقَةَ مِنَ الَّذِي نُعِدُّ لِلْبَيْعِ .
১৫৬২. মুহাম্মাদ ইবনে দাউদ (রাহঃ) ..... সামুরা ইবনে জুনদুব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদেরকে ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে খরিদকৃত পণ্যের যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।
Narrated Samurah ibn Jundub:
The Messenger of Allah (ﷺ) used to order us to pay the sadaqah (zakat) on what we prepared for trade.
—সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১৫৬২ (আন্তর্জাতিক নং ১৫৬২)
عن الحسن فى رجل اشترى متاعا فحلت فيه الزكاة؟ فقال: يزكيه بقيمته يوم حلت (المصنف لابن أبى شيبة-6\526، رقم-10559)
অর্থাৎ, হাসান (রহ.)-এর থেকে বর্ণিত আছে:
এক ব্যক্তি কিছু পণ্য কিনেছিল এবং এরপর সেই পণ্যে যাকাত ফরজ হয়ে যায়।
তিনি (হাসান) বললেন:
যেদিন যাকাত ফরজ হয়েছে, সেদিনের বাজারমূল্য অনুযায়ী সে যাকাত আদায় করবে।
(সূত্র: আল-মুসান্নাফ লি ইব্ন আবী শাইবা, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৫২৬, হাদীস নং ১০৫৫৯)
عن ابن جريج قال: سمعت أنا أنها قيمة العروض يوم تجرح زكاته (مصنف عبد الرزاق، كتاب الزكاة،
ইবনু জুরাইয (রহ.) বলেন:
আমি শুনেছি, যেদিন পণ্যের যাকাত ফরজ হয়, সেদিনের বাজারমূল্য অনুযায়ী হিসাব করে যাকাত দিতে হয়।
(সূত্র: আল-মুসান্নাফ লি আবদুর রায্জাক-৭১০৫; যাকাত অধ্যায়)
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা:
উপরের বর্ণনাগুলো থেকে বোঝা যায়, ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাত নির্ধারণের সময় তার বাজারমূল্য বিবেচনা করা হয়, এবং যেদিন যাকাত ফরজ হয়, সেদিনকার মূল্য অনুযায়ী যাকাত হিসাব করা উত্তম ও যথার্থ।
দ্বিতীয় কথা হলো, ব্যবসায়িক উপকরণের ওপর যাকাত আসে না। যেমন, একটি দোকান ডেকোরেশন করতে কয়েক লক্ষ টাকা লেগেছে, ফ্রিজ, ফ্যান, টাইলস ইত্যাদি দ্রব্য সামগ্রী যা দোকান সাজাতে প্রয়োজন হয় এগুলোর যাকাতের আওতায় আসবে না। আসবে শুধু ব্যবসায়িক পণ্য যা বিক্রি করা হবে।
সারকথা হলো, বর্তমান বাজারে এক লাখ দশ হাজার টাকা (আনুমানিক) যার কাছে থাকবে তাকে জাকাত আদায় করতে হবে। তিনি তো ২০ লাখ টাকার মালিক। সুতরাং উক্ত মহিলা লোককে যাকাত তাদের করতে হবে।
والله اعلم بالصواب

আহকামুল হাদিস-০১
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا حُمَيْدُ بْنُ مَسْعَدَةَ، حَدَّثَنَا حُصَيْنُ بْنُ نُمَيْرٍ أَبُو مِحْصَنٍ، حَدَّثَنَا حُسَيْنُ بْنُ قَيْسٍ الرَّحَبِيُّ، حَدَّثَنَا عَطَاءُ بْنُ أَبِي رَبَاحٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " لاَ تَزُولُ قَدَمَا ابْنِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عِنْدِ رَبِّهِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ عَنْ عُمْرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ وَعَنْ شَبَابِهِ فِيمَا أَبْلاَهُ وَمَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَ أَنْفَقَهُ وَمَاذَا عَمِلَ فِيمَا عَلِمَ " .
হুমায়দ ইবনে মাসআদা (রাহঃ) .... ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) বলেছেনঃ পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামতের দিন প্রভুর নিকট থেকে আদম সন্তানের পা সরবে নাঃ জিজ্ঞাসা করা হবে তার বয়স সম্পর্কে, কি কাজে সে তা অতিবাহিত করেছে, তার যৌবন সম্পর্কে কি কাজে সে তা বিনাশ করেছে; তার সম্পদ সম্পর্কে, কোথা থেকে সে তা অর্জন করেছে আর কি কাজে সে তা ব্যয় করেছে এবং সে যা শিখেছিল তদনুযায়ী কি আমল সে করেছে?
Ibn Mas’ud narrated that the Messenger of Allah (s.a.w) said:
"The feet of the son of Adam shall not move from before his Lord on the Day of Judgement, until he is asked about five things: about his life and what he did with it, about his youth and what he wore it out in, about his wealth and how he earned it and spent it upon, and what he did with what he knew."
—জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ২৪১৬ (আন্তর্জাতিক নং ২৪১৬)
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَخْبَرَنَا الأَسْوَدُ بْنُ عَامِرٍ، حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ عَيَّاشٍ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ جُرَيْجٍ، عَنْ أَبِي بَرْزَةَ الأَسْلَمِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ تَزُولُ قَدَمَا عَبْدٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ عُمْرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ وَعَنْ عِلْمِهِ فِيمَا فَعَلَ وَعَنْ مَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَا أَنْفَقَهُ وَعَنْ جِسْمِهِ فِيمَا أَبْلاَهُ " . قَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . وَسَعِيدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ جُرَيْجٍ هُوَ بَصْرِيٌّ وَهُوَ مَوْلَى أَبِي بَرْزَةَ وَأَبُو بَرْزَةَ اسْمُهُ نَضْلَةُ بْنُ عُبَيْدٍ .
২৪২০. আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুর রহমান (রাহঃ) ..... আবু বারযা আসলামী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ বান্দার পা (কিয়ামতের দিন) নড়বে না যতক্ষণ না তাকে প্রশ্ন করা হবে তার বয়স সম্পর্কে যে, কি কাজে সে তা শেষ করেছে; তার ইলম সম্পর্কে তদনুযায়ী কি আমল করেছে সে; তার সম্পদ সম্পর্কে কোথা সে তা অর্জন করেছে এবং কোথায় তা ব্যয় করেছে; তার শরীর সম্পর্কে সে কিসে তা বিনাশ করেছে।
Abu Barzah Al-Aslami narrated that the Messenger of Allah (s.a.w) said:
"The feet of the slave of Allah shall not move [on the Day of Judgement] until he is asked about five things: about his life and what he did with it, about his knowledge and what he did with it, about his wealth and how he earned it and where he spent it on, about his body and for what did he wear it out."
জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ২৪১৭ (আন্তর্জাতিক নং ২৪১৭)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হাশরের ময়দানে যখন হিসাব-নিকাশের জন্য সমস্ত মানুষকে একত্র করা হবে, তখন তাদেরকে যেসকল বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে তার মধ্যে বিশেষ পাঁচটির কথা এ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো তার আয়ু।
আল্লাহ তাআলা মানুষকে সীমিত কালের আয়ু দিয়ে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। দুনিয়া আখেরাতের শস্যক্ষেত্র। মানুষের কর্তব্য তার সীমিত আয়ুষ্কালকে এমন আমলে খরচ করা, যা দ্বারা আখেরাত আবাদ হয়। এককথায় সে আমল হলো শরীআতের অনুসরণ। দুনিয়ার মানুষ কিভাবে জীবনযাপন করবে, সে লক্ষ্যে তাকে শরীআত দেওয়া হয়েছে। শরীআত পালন দ্বারা আল্লাহর আনুগত্য করা হয়। তার খেলাফ করার দ্বারা হয় আল্লাহর নাফরমানি। আল্লাহ প্রত্যেককে জিজ্ঞেস করবেন সে তার সীমিত আয়ু আল্লাহর আনুগত্যের কাজে তথা শরীআতপালনে খরচ করেছে, না তাঁর নাফরমানিতে। এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কেউ নড়তে পারবে না।
দ্বিতীয় প্রশ্ন করা হবে আমল সম্পর্কে। আমল তো করতে হবে শরীআত অনুযায়ীই। তবে তাতেও ইখলাস থাকা জরুরি। ইখলাসবিহীন আমল গ্রহণযোগ্য নয়। ইখলাসের সঙ্গে আমল করার অর্থ কেবল আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই করা, দুনিয়ার কোনও স্বার্থ হাসিলের জন্য নয়। দুনিয়ার স্বার্থ যেমন টাকাপয়সা হতে পারে, তেমনি হতে পারে সুনাম-সুখ্যাতিও। সবটারই সারকথা লোকদেখানোর জন্য আমল করা। পরিভাষায় তাকে 'রিয়া' বলে। আল্লাহ তাআলা জিজ্ঞেস করবেন, তুমি আমল করেছিলেন আমার সন্তুষ্টির জন্য, নাকি মানুষকে দেখানোর জন্য? আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য হলে তিনি পুরস্কৃত করবেন, অন্যথায় কঠিন শাস্তি পেতে হবে।
তৃতীয় প্রশ্ন করা হবে অর্থ-সম্পদ সম্পর্কে যে, তা হালাল পথে উপার্জন করেছিল, না হারাম পথে। আল্লাহ তাআলা অর্থ উপার্জনের জন্য কিছু রীতিনীতি বলে দিয়েছেন। কুরআন ও হাদীছে তা সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। সে নীতি অনুযায়ী উপার্জন করা জরুরি। সে নীতি অনুযায়ী উপার্জন করলে তা ইবাদতরূপে গণ্য হয়। সে নীতি উপেক্ষা করে উপার্জন করলে তা হয় হারাম উপার্জন। হারাম উপার্জন কঠিন পাপ। যে ব্যক্তির খাবার ও পোশাক হালাল উপার্জনের নয়, তার ইবাদত কবুল হয় না। সে দুআ করলে প্রত্যাখ্যান করা হয়। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হালাল খাবারের গুরুত্ব ও হারাম পরিহারের আবশ্যিকতা সম্পর্কে ইরশাদ করেন-
أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا، وَإِنَّ اللهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ، فَقَالَ: {يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا، إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ} [المؤمنون: 51] وَقَالَ: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ} [البقرة: 172] ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ، يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ، يَا رَبِّ، يَا رَبِّ، وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ، وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ، وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ، وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ، فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ؟
‘হে মানুষ! নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র ছাড়া কিছু গ্রহণ করেন না। আল্লাহ তাঁর রাসূলদেরকে যে বিষয়ে আদেশ করেছেন, সে বিষয়ে মুমিনদেরও আদেশ করেছেন। আল্লাহ বলেন- يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا، إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ (হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে খাবে এবং সৎকর্ম করবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর, আমি সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত -সূরা মু'মিনূন : ৫১)। এবং আল্লাহ আরও বলেন- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ (হে মুমিনগণ! আমি তোমাদেরকে যে পবিত্র বস্তুসমূহ দান করেছি তা থেকে খাও -সূরা বাকারা : ১৭২)। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন, যে অনেক লম্বা সফর করে, চুল আলুথালু হয়ে যায়, শরীর ধুলোমলিন হয়ে যায়, এ অবস্থায় সে আসমানের দিকে দু'হাত তুলে বলে- ইয়া রাব্ব, ইয়া রাব্ব। অথচ সে যা খায় তা হারাম, যা পান করে তা হারাম এবং যে পোশাক পরে তাও হারাম। সে হারাম খেয়ে পরিপুষ্ট হয়। কিভাবে তার দুআ কবুল হবে?৩৭৮
চতুর্থ প্রশ্ন হবে তার অর্জিত সম্পদ সম্পর্কে যে, সে তা কোন্ কোন্ খাতে খরচ করেছে। বৈধ খাতে, না অবৈধ খাতে। অর্থ-সম্পদের অর্জন যেমন হালাল পন্থায় হওয়া জরুরি, তেমনি তা খরচও করতে হবে বৈধ খাতে। শরীআত যেসকল ক্ষেত্রে খরচ করতে অনুমতি দিয়েছে, কেবল তাতেই খরচ করা যাবে। যেসব ক্ষেত্রে খরচের অনুমতি নেই, তাতে খরচ করা জায়েয নয়। তাতে খরচ করলে তা হবে সম্পদের অপচয়। সম্পদের অপচয় সম্পূর্ণ হারাম। কুরআন মাজীদে অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই বলা হয়েছে। এমনিভাবে বৈধ খাতেও প্রয়োজনের বেশি খরচ করার অনুমতি নেই। সেটা অপব্যয়। ইসলাম অপব্যয় থেকেও বেঁচে থাকতে তাগিদ করেছে। এ কথা মনে করার কোনও কারণ নেই যে, আমার সম্পদ যেখানে ইচ্ছা যেমন ইচ্ছা খরচ করব। কেননা সম্পদ আল্লাহর দান। তা আল্লাহর নি'আমত। এর জন্য আল্লাহর শোকর আদায় করা জরুরি। আল্লাহর হুকুমমত খরচ করাই তাঁর শোকর।
কোনও কোনও খাতে খরচ করা ফরয। যেমন ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীর খাওয়া-পরায় খরচ করা, অসচ্ছল পিতা-মাতার ভরণপোষণ দেওয়া, অভুক্তকে খাওয়ানো, যাকাত- ফিতরা আদায় করা। এমনিভাবে সম্পদের এছাড়া আরও হক আছে। তা আদায় করাও জরুরি। আল্লাহ তাআলা এ প্রশ্নও করবেন যে, যেসকল খাতে খরচ করার হুকুম দেওয়া হয়েছিল তাতে যথাযথভাবে খরচ করা হয়েছে কি না। কাজেই খরচের শরীআতসম্মত খাতসমূহ ভালোভাবে জেনে নিয়ে সে অনুযায়ী অর্থ-সম্পদ খরচ করা একান্ত জরুরি।
পঞ্চম প্রশ্ন হবে শরীর সম্পর্কে যে, শরীরের শক্তি কোন্ কোন্ কাজে নিঃশেষ করা হয়েছে। আল্লাহর আনুগত্যের কাজে, না নাফরমানির কাজে। শরীরের শক্তি আল্লাহ তাআলার দান। এটা অনেক বড় এক নি'আমত। এরও শোকর আদায় জরুরি। এ শক্তি ইবাদত-বন্দেগীতে খরচ করলে এবং এর দ্বারা আল্লাহর সৃষ্টির সেবা করলে যথার্থ শোকর হয়। পক্ষান্তরে এ শক্তি যদি নাফরমানির কাজে ব্যয় করা হয়, এর দ্বারা সৃষ্টির প্রতি জুলুম-অত্যাচার করা হয়, তবে তা হবে আল্লাহর নি'আমতের চরম অকৃতজ্ঞতা। সুতরাং শরীরের শক্তিসমূহ- দৃষ্টিশক্তি, বাকশক্তি, শ্রবণশক্তিসহ যাবতীয় ইন্দ্রিয়শক্তির শরীআতসম্মত ব্যবহার একান্ত জরুরি, যাতে হাশরের ময়দানে প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেওয়া সম্ভব হয়।
প্রকাশ থাকে যে, আল্লাহ তাআলার সামনে জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হতে হলে নিস্তার পাওয়া খুব সহজ হবে না। আমাদের তো কামনা এটাই যেন তিনি আমাদেরকে বিনা হিসাবে ছেড়ে দেন। বিনা হিসাবে পার পাওয়ার জন্যই আয়ু, অর্থ-সম্পদ ও ইন্দ্রিয় শক্তিসহ আল্লাহ তাআলার যাবতীয় নিআমতের শরীআতসম্মত ব্যবহারের চেষ্টা থাকা জরুরি। আপন সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করলে আশা করা যায় আল্লাহ তাআলা হিসাব-নিকাশের কষ্ট-ক্লেশ থেকে মুক্তি দান করবেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সেরকম চেষ্টা করার তাওফীক দান করুন। চেষ্টার মধ্যেও যে অবহেলা ও গাফলাতি করে ফেলি, তাও তিনি ক্ষমা করে দিন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা জানা গেল আখেরাতে হিসাব-নিকাশের একটা বিষয় আছে। আমাদেরকে এর সত্যতায় বিশ্বাস রাখতে হবে।
খ. আখেরাতে আমাদের হিসাব-নিকাশ যাতে সহজ হয়; বরং বিনা হিসাবেই যাতে মুক্তি পেতে পারি, সে লক্ষ্যে হাদীছে বর্ণিত এ পাঁচওটি বিষয়ে আমাদেরকে শরীআতের বিধি-নিষেধ পালনে সচেষ্ট থাকতে হবে।
৩৭৮. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০১৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৮৩৪৮; সুনানে দারিমী, হাদীছ নং ২৭৫৯; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৯৮৯; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ১১১৮; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ২০২৯
রেফারেন্স: ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
জিজ্ঞাসা-২২৬: প্রবাসে থাকা অবস্থায় কুরবানী এবং হাত-পায়ের নখ ও চুল কাটার বিধান
জিজ্ঞাসা-২২৬: মুহতারাম শায়খ দের নিকট জানতে চাই: সৌদি নাগরিক যারা বাংলাদেশে রয়েছেন তাদের পক্ষ থেকে সৌদিতে কোন দিন কুরবানী করা হবে এবং তারা কোন দিন হাত পায়ের নখ এবং চুল কাটাবেন এবং আমরা যারা সৌদি এলাকায় রয়েছি বাংলাদেশে আমাদের পক্ষ থেকে কবে কোরবানি করা হবে এবং আমরা কখন হাত পায়ের নখ এবং চুল কা দোটাব। তারিখ-০৮/০৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা শরিফ, সাউথ সুদান যুবা-থেকে---
জবাব: সুতরাং যখনি কুরবানীর দিনসমূহ আসার পর কুরবানী করা হবে, তখনি কুরবানীদাতা তার চুল ও নখ ইত্যাদি কাটবেন। কুরবানী কোথায় করা হচ্ছে এটা মূল বিষয় নয়। বরং কুরবানীর দিনে কুরবানী করার সাথে চুল নখ কাটার বিধান সম্পর্কিত।
سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيِّبِ، يَقُولُ: سَمِعْتُ أُمَّ سَلَمَةَ، زَوْجَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ كَانَ لَهُ ذِبْحٌ يَذْبَحُهُ فَإِذَا أُهِلَّ هِلَالُ ذِي الْحِجَّةِ، فَلَا يَأْخُذَنَّ مِنْ شَعْرِهِ، وَلَا مِنْ أَظْفَارِهِ شَيْئًا حَتَّى يُضَحِّيَ»
নাবী (ﷺ) এর সহধর্মিনা উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তির নিকট কুরবানীর পশু আছে সে যেন যিলহাজ্জ এর নতুন চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানী করা পর্যন্ত তার চুল ও নখ না কাটে। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৯৭৭, ইফাবা-৪৯৫৯, সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং-২৭৯১]
وَمِمَّا وَرَدَ فِي صَحِيحِ مُسْلِمٍ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – «إذَا دَخَلَ الْعَشْرُ وَأَرَادَ بَعْضُكُمْ أَنْ يُضَحِّيَ فَلَا يَأْخُذَنَّ شَعْرًا وَلَا يُقَلِّمَنَّ ظُفُرًا» فَهَذَا مَحْمُولٌ عَلَى النَّدْبِ دُونَ الْوُجُوبِ بِالْإِجْمَاعِ، (رد المحتار، كتاب الصلاة، باب العيدين، مَطْلَبٌ فِي إزَالَةِ الشَّعْرِ وَالظُّفُرِ فِي عَشْرِ ذِي الْحِجَّةِ-2\181، دار ا لفكر بيروت(
সারকথা হলো: ব্যক্তি যে দেশে অবস্থান করবে, সে দেশের কুরবানি হলে তার নখ-চুল কাটবে; তার কুরবানি যেখানেই হোক না কেন। পূর্বে এরকম মাসয়ালা আল-বুরহানে আলোচিত হয়েছে যে, এক ব্যক্তি সৌদিতে ৩০দিন রোজা রেখে বাংলাদেশে আসল, সে এখন কি করবে? উক্ত ব্যক্তি বাংলাদেশে আরেকটি রোজা রেখে, পরের দিন ঈদ করবে। আল-বুহানের ওয়বেসাইটে মাসয়ালা দেখে দিন। সূত্র: ফাতওয়ায়ে রহমানিয়া ৫/১৮০-৮১; মাজমূফাতাওয়াশ-শাইখইবনে বায ১৫/১৫৫
والله اعلم بالصواب
আমল ও দুআ-৩৭৬: কাহারো খারাবী দেখিয়া নিরবে এই দু‘আ পড়বে
কাহারো খারাবী দেখিয়া নিরবে এই দু‘আ পড়বে
اَ لْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ عَافَانِيْ مِمَّا ابْتَلَاكَ بِهٖ وَفَضَّلَنِيْ عَلٰی كَثِيْرٍ مِّمَّنْ خَلَقَ تَفْضِيْلًا.
উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাা হিল্লাযী ‘আা ফাা নী মিম্মাাব তালাাকা বিহি ওয়া ফায যালানী ‘আলা কাসীরিন মিম্মান খলাক্বা তাফযীলা।
অর্থ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য যিনি আমাকে সেই অবস্থা হইতে রক্ষা করিয়াছেন যাহাতে তোমাকে লিপ্ত করিয়াছেন এবং তিনি আমাকে তাহার অনেক মাখলুক হইতে সম্মান দান করিয়াছেন।
তিরমিজী #৩৪৩১,৩৪৩২; ঈবনে মাজাহ #৩৮৯২;
হযরত ওমর (রাযিঃ) হইতে বর্নিত আছে যে, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, যে ব্যক্তি কোন বিপদগ্রস্থকে দেখিয়া এই দু’আ পড়িয়া লয়--
"الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي عَافَانِي مِمَّا ابْتَلَاكَ بِهِ وَفَضَّلَنِي عَلَى كَثِيرٍ مِمَّنْ خَلَقَ تَفْضِيلًا"
উক্ত দু’আ পাঠকারী সারাজীবন সেই বিপদ হইতে নিরাপদ থাকিবে, চাই সে বিপদ যেমন-ই হউক না কেন।
অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লহ তা’আলার জন্য যিনি আমাকে সেই অবস্থা হইতে রক্ষা করিয়াছেন যাহাতে তোমাকে লিপ্ত করিয়াছেন, এবং তিনি আমাকে তাহার অনেক মাখলুকের উপর সম্মান দান করিয়াছেন। তিরমিযী
ফায়দাঃ হযরত জাফর (রাযিঃ) বলেন, এই দু’আ মনে মনে পড়িবে বিপদগ্রস্থ ব্যক্তিকে শুনাইয়া পড়িবে না। (তিরমিযী)
হাদীস শরীফে বর্নিত আছে যে, যে ব্যাক্তি কাহাকেও রোগ-শোকে অথবা বিপদে পাতিত দেখিয়া উপরোল্লিখিত দোয়া অনুচ্চস্বরে পড়িবে (যাহাতে ঐ ব্যাক্তি শুনিতে না পায়) তবে সে আজীবন উক্ত রোগ-শোক হইতে নিরাপদে থাকিবে।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.tos.namajtime
জিজ্ঞাসা-১২৫৪৮: ঋণের টাকা মাফ করে দিলেই কি জাকাত আদায় হবে?
জিজ্ঞাসা-১২৫৪৮:
এক ব্যক্তি যাকাত দিনে ওয়ালা অন্য একজন কে কোন কাজের জন্য সতের হাজার টাকা দিয়েছেন ঐব্যক্তি গুরুতর অসুস্থ টাকা দিতে পারছে না এখন ঐটাকা যাকাত হিসেবে কেটে দিলে যাকাত হিসেবে গণ্য হবে কি না জানালে উপকৃত হব ধন্যবাদ সবাইকে।
তারিখ: ১৬/০৪/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা নেছার উদ্দিন কঙ্গো থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
জাকাত পাওয়ার হকদার ব্যক্তিকে শুধু মাফ করে বা জাকাত হিসেবে কেটে দিলে নিয়ত করলেও জাকাত আদায় হবে না, বরং ঐ মাল বা টাকা আগে হস্তগত হতে হবে। উদাহরণ:
প্রথমে ঋণগ্রহীতাকে যাকাত বাবদ সতের টাকা প্রদান করতে হবে। তারপর তার কাছ থেকে ঋণ পরিশোধ হিসেবে তার কাছ থেকে নিয়ে নিবে।
এভাবে করলে যাকাত এবং ঋণ দু’টোই আদায় হবে। ঋণগ্রহীতাকে টাকা হস্তান্তর না করে শুধু মাফ করে দিলেই যাকাত আদায় হবে না। দলিল:
হাদিস/আসার নং-০১
عبد الرزاق ، عن هشيم بن بشير ، عن المجالد ، عن الشعبي ، أن شريحا ، ومسروقا " كانا لا يجيزان الصدقة حتى تقبض " .
অর্থ: আবদুর রাজ্জাক ------ শাবি রহ শারিহ এবং মাসরুক হতে বর্ণনা করেছেন যে, জাকাতের মাল হস্তগত হওয়া পর্যন্ত জাকাত অনুমোদন করে না। তাখরিজ: মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক -১৬৫৯১
হাদিস/আসার নং -০২
16592 عبد الرزاق ، عن هشيم بن بشير ، عن إسماعيل بن أبي خالد ، عن الشعبي قال : " لا تجوز الصدقة إلا صدقة مقبوضة " .
অর্থাৎ হজরত শাবি হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাকাত জায়েজ নেই জাকাতের মাল হস্তগত ব্যতিত। তাখরিজ: মুসান্নেফে আব্দুর রাজ্জাক -১৬৫৯২
সারকথা হলো, আপনার মতে, এক ব্যক্তি যাকাত দিনে ওয়ালা অন্য একজনকে কোন কাজের জন্য সতের হাজার টাকা দিয়েছেন। ঐ ব্যক্তি গুরুতর অসুস্থ টাকা দিতে পারছে না। এখন ঐ টাকা যাকাত হিসেবে কেটে দিলে যাকাত হিসেবে গণ্য হবে না ।
প্রথমে হস্তগত হতে হবে, উপরে যে পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে, সেভাবে আদায় করতে হবে।
والله اعلم بالصواب