জিজ্ঞাসা-১২৪৭৫:
আমার জিজ্ঞাসা কেউ বেতের বাকি রেখে ঘুমিয়ে গেল শেষ রাতে পড়বে বলে, কিন্তু পড়তে পারলনা,বেতের সে কখন কিভাবে আদায় করবে। তারিখ: ২২/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আব্দুস সালাম সাভার থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
«أَوْتِرُوا قَبْلَ أَنْ تُصْبِحُوا» رَوَاهُ مُسْلِمٌ
“ভোর (ফজর) হওয়ার পূর্বে তোমরা বিতর সালাত আদায় করো। [সহীহ মুসলিম ৭৫৪।]
দ্বিতীয় কথা হলো, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পযন্ত কোন নফল নামাজ জায়েজ নেই (তবে এ সময় কাজা আদায় করতে পারবে, সামনে আলোচনা আসছে)। দলিল:
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، قَالَ قَرَأْتُ عَلَى مَالِكٍ عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ حَفْصَةَ أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ، أَخْبَرَتْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا سَكَتَ الْمُؤَذِّنُ مِنَ الأَذَانِ لِصَلاَةِ الصُّبْحِ وَبَدَا الصُّبْحُ رَكَعَ رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ قَبْلَ أَنْ تُقَامَ الصَّلاَةُ .
ইয়াহইয়া ইবনে ইয়াহইয়া (রাহঃ) ... ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, উম্মুল মু’মিনীন হাফসা (রাযিঃ) তাঁকে সংবাদ দিয়েছেন যে, মুআযযিন যখন ফজরের আযান দিয়ে নীরব হয়ে যেতেন এবং ভোর প্রকাশ হয়ে যেত, তখন ফজরের ইকামতের আগে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সংক্ষেপে দু’রাকআত নামায আদায় করতেন।
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৪৯ (আন্তর্জাতিক নং ৭২৩-১)
হাদিস নং-০২
حَدَّثَنِي أَحْمَدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْحَكَمِ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ زَيْدِ بْنِ مُحَمَّدٍ، قَالَ سَمِعْتُ نَافِعًا، يُحَدِّثُ عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنْ حَفْصَةَ، قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا طَلَعَ الْفَجْرُ لاَ يُصَلِّي إِلاَّ رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ .
আহমাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে হাকাম (রাহঃ) ... হাফসা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফজরের সময় হলে সংক্ষিপ্ত দু’রাক’আত ছাড়া অন্য কোন নামায আদায় করতেন না। তাখরিজ: সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৫১ (আন্তর্জাতিক নং ৭২৩-৩)
হাদিস নং-০৩:
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ عَبْدَةَ الضَّبِّيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ مُحَمَّدٍ، عَنْ قُدَامَةَ بْنِ مُوسَى، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْحُصَيْنِ، عَنْ أَبِي عَلْقَمَةَ، عَنْ يَسَارٍ، مَوْلَى ابْنِ عُمَرَ عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " لاَ صَلاَةَ بَعْدَ الْفَجْرِ إِلاَّ سَجْدَتَيْنِ " . وَمَعْنَى هَذَا الْحَدِيثِ إِنَّمَا يَقُولُ لاَ صَلاَةَ بَعْدَ طُلُوعِ الْفَجْرِ إِلاَّ رَكْعَتَىِ الْفَجْرِ . قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو وَحَفْصَةَ . قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ ابْنِ عُمَرَ حَدِيثٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ حَدِيثِ قُدَامَةَ بْنِ مُوسَى وَرَوَى عَنْهُ غَيْرُ وَاحِدٍ . وَهُوَ مَا اجْتَمَعَ عَلَيْهِ أَهْلُ الْعِلْمِ كَرِهُوا أَنْ يُصَلِّيَ الرَّجُلُ بَعْدَ طُلُوعِ الْفَجْرِ إِلاَّ رَكْعَتَىِ الْفَجْرِ .
আহমদ ইবনে আবদা আয্-যাবরী (রাহঃ) .... ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেনঃ সুবহে সা’দিকের পর দু’সিজদা (দু’রাকআত সুন্নাত) ব্যতীত কোন নামায নেই। হাদীসটির র্মম হলো, সুবহে সা’দিকের পর দু’রাকআত সুন্নাত ব্যতীত (নফল) কোন নামায নাই।
নোট:
এই বিষয়ে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ও হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (রাহঃ) বলেনঃ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসটি গারীব। কুদামা ইবনে মূসা-এর সূত্র ব্যতীত এটির রিওয়ায়াত আছে বলে আমরা জানি না। তবে তার সনদে একাধিক রাবী এটি বর্ণনা করেছেন। আলিমগণ এই বিষয়ে সকলেই একমত। ফজরের দু’রাকআত সুন্নাত ছাড়া সুবহে সা’দিকের পর অন্য নামায আদায় করা মাকরূহ বলে তারা মত প্রকাশ করেছেন।
জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ৪১৯ (আন্তর্জাতিক নং ৪১৯)
হাদিস নং-০৪
সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব (রহ.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বলেছেন- ‘(ফজরের) আজানের পর দুই রাকাত সুন্নত ছাড়া কোনো (নফল) নামাজ নেই।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৪৭৫৬)
তৃতীয় কথা হলো, সুবহে সাদিকের পূর্বে বেতর আদায় করতে না পারলে হারাম ওয়াক্ত ব্যতিত যে কোন সময় আদায় করে নিবে। দলিল:
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ نَامَ عَنِ الْوِتْرِ أَوْ نَسِيَهُ فَلْيُصَلِّ إِذَا أَصْبَحَ أَوْ ذَكَرَهُ
“যে ব্যক্তি বিত্র সালাত না পড়ে ঘুমিয়ে গেলো বা তা পড়তে ভুলে গেলো, সে যেন ভোরবেলা অথবা যখন তার স্মরণ হয় তখন তা পড়ে নেয়। [তিরমিযী ৪৬৫,আহমাদ ১৪৩১
সারকথা হলো, শেষ রাতে বা সুবহে সাদিকের পূর্বে বেতের আদায় করতে না পারলে, ফজর নামাজের সময় অথবা সূর্য উদিত হলে, দিনে অর্থাৎ হারাম ওয়াক্ত ব্যতিত যে কোন কোন সময় আদায় করে নিবে।
- والله اعلم بالصواب