জিজ্ঞাসা-১৩০২৭:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। সম্মানিত মুফতি সাহেব,
কোনো মহিলার এক ভরি স্বর্ণ আছে? নগদ টাকা আছে বা নাই। তার উপর কুরবানী ওয়াজিব কিনা?
তারিখ: ১৬/০৬/২৪ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা সাজ্জাদ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, যদি সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা কিংবা বাণিজ্য-দ্রব্য- এগুলোর কোনোটি পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ না থাকে, কিন্তু এসবের একাধিক সামগ্রী এ পরিমাণ রয়েছে, যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয় তাহলে তাকে কুরবানি দিতে হবে। সূত্রঃ মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৬৬,৭০৮১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৩৯৩
তেমনি যদি কারো কাছে শুধু রূপা থাকে, স্বর্ণ বা নগদ অর্থ না থাকে, তাহলে যদি রূপার নেসাব পূর্ণ না হয়, তাহলে তার উপর কুরবানি (যাকাত) আবশ্যক হবে না। দলিল-
لا بد من اعتبار الغنى، وهو ان يكون فى ملكه مائتا درهم او عشرين دينارا ا وشئ تبلغ قيمته ذلك سوى مسكنه وما يأثث به وكسوته وخادمه وفرسه وسلاحه وما لا يستغنى عنه وهو نصاب صدقة الفطر (بدائع الصنائع-4/196، رد المحتار-9/453، الفتاوى الهندية-5/292)
কুরবানী আবশ্যক হওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক প্রাচুর্যের বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে। আর একজন ব্যক্তি তখনই ধনী হিসাবে বিবেচিত হবে, যখন তার স্বত্বাধিকারে- নিজ বাসস্থান, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, পরিধেয় পোশাক-পরিচ্ছদ, সেবক, চলার বাহন, আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রসামগ্রীসহ দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য উপাদানসমূহ ব্যতিরেকে দুইশত দিরহাম কিংবা বিশ দিনার অথবা সমমূল্যের সম্পদ বিদ্যমান থাকবে। (বাদায়েউস সানায়ে- ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার-৯/৪৫৩, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ৫/২৯২)
أما شرائط الوجوب: منها اليسار، وهو ما يتعلق به وجوب صدقة الفطر…… والمسر فى ظاهر الرواية: من له مأتا درهم أو عشرون دينارا أو شيء يبلغ ذلك سوى مسكنه ومتاع مسكنه ومركوبه وخادمه فى حاجته التى لا يستغنى عنها (الفتاوى الهندية-5/292، جديد-5/336-337، المحيط البرهانى-8/455، رقم-10776، الفتاوى الهندية-17/405، رقم-27649)
অর্থাৎ, কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো- এমন আর্থিক সচ্ছলতা, যার কারণে যাকাত আবশ্যক না হলেও সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়। জাহেরে রেওয়াতের সংজ্ঞা অনুসারে সচ্ছল ব্যক্তি তাকেই বলা হবে- বাসস্থান, ঘরের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র , চলার বাহন, সেবক, ইত্যাদির মতো নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু ব্যতীত যার স্বত্বাধিকারে দুইশত দিরহাম অথবা বিশ দিনার কিংবা তার সমমূল্যের সম্পত্তি বিদ্যমান রয়েছে। এই প্রয়োজনীয় বস্তু ব্যতিরেকে ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে বিনিয়োগকৃত চড়ে খাওয়া জন্তু, ঘোড়া কিংবা অন্য ব্যবসায়িক উপকরণ ইত্যাদির বাজার মূল্য দুইশত দিরহাম সমপরিমাণ হলে তাকে সচ্ছল ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এবং তার ওপর কুরবানী করা আবশ্যক হবে। ( ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ৫/২৯২, জাদীদ ৫/৩৩৬-৩৩৭।
আল-মুহীতুল বুরহানী; ৮/৪৫৫, নং-১০৭৭৬, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ১৭/৪০৫, নং-২৭৬৪৯)
সারকথা হলো, কোনো মহিলার এক ভরি স্বর্ণ থাকে, সঙ্গে রুপা, নগদ টাকা, পাওনা টাকা, ব্যাংকে জমানো টাকা, ব্যবসায়িক পণ্য সব মিলে যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা সমান (আজকের ১৬/০৬/২৪ বাজার মূল্য ৮৯,৯৮৫ টাকা) বা বেশি হয়, তাহলে কুরবানি ওয়াজিব হবে। আর এক ভরির সোনার সাথে সব কিছু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার সমান না হয়, তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।
والله اعلم بالصواب