দুনিয়ার মহব্বত..
এক বয়ানে হযরত থানভী (রহ.) বলেন-
" আমি সম্পদ উপার্জন করা থেকে নিষেধ করি না, সম্পদের মোহ থেকে নিষেধ করি। দেখুন, অন্যান্য ফরয আদায়ের পর হালাল উপার্জনও একটি ফরয, বরং আল্লাহ তাআলার কত বড় মেহেরবানী যে, তিনি দুনিয়ার মহব্বতকে নিষেধ করেননি; বরং (দুনিয়াতে) আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (মহব্বতের) চেয়ে অধিক মহব্বত করতে নিষেধ করেছেন, যার আলামত হল দুনিয়ার কারণে আমলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হওয়া। এমনকি অর্থ-সম্পদের প্রতি স্বভাবগত ভালবাসা অধিক হওয়াও নিষিদ্ধ নয়, নিষিদ্ধ হল চিন্তাগতভাবেও সম্পদের ভালোবাসাকে প্রাধান্য দেওয়া। চিন্তাগতভাবে আল্লাহ ও তার রাসূলের মহব্বতকেই প্রাধান্য দিতে হবে। এর আলামত হল, আল্লাহর হুকুম-আহকাম পালনে ও 'জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ'তে কোনো ধরনের ত্রুটি হতে না দেওয়া। যদি এটা ঠিক থাকে তাহলে স্বভাবগত মহব্বত অধিক হলেও চাই সম্পদের প্রতি হোক কিংবা স্ত্রীর প্রতি কিংবা সন্তানের প্রতি, ভয়ের কোনো কারণ নেই।
কেউ যদি স্বীয় সন্তানের মৃত্যুতে খুব কাঁদে, কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের ঘটনা শুনে বেশি না কাঁদে, তবে এর জন্য তাকে জবাবদিহি করতে হবে না। কিন্তু যখন দ্বীনী বিষয় ও দুনিয়াবী স্বার্থের মধ্যে সংঘর্ষ হবে তখন দুনিয়াকে প্রাধান্য দিলে জবাবদিহি করতে হবে। কিন্তু যদি দুনিয়ার লোভ ও আসক্তিকে দ্বীনের জন্য কুরবান করা হয় অথচ এর জন্য দুঃখ হচ্ছে, মনোকষ্ট হচ্ছে, তাহলে শাস্তির তো প্রশ্নই আসে না বরং সে অনেক বেশি সওয়াবের অধিকারী হবে। তাকওয়ার পূর্ণতা তো এখানেই যে, দুনিয়ার লোভ ও আসক্তি থাকা সত্ত্বেও তাকে প্রতিহত করতে সক্ষম হওয়া।
মোটকথা, পার্থিব আকর্ষণমাত্রই নিন্দিত নয়। হাঁ, এই আকর্ষণকে কার্যক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া নিন্দিত।"
(আনফাসে ঈসা, পৃষ্ঠা ৬৮)
কিন্তু কীভাবে বুঝা যাবে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের মহব্বত বেশি, না দুনিয়ার মহব্বত বেশি? এর উত্তর হযরত থানভী (রহ.) এভাবে দিয়েছেন যে, 'এর আলামত হল আমলে ব্যাঘাত ঘটা।' অর্থাৎ, যখন সম্পদের আগ্রহ এবং তা উপার্জনের মগ্নতা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণের মধ্যে ঘাটতি সৃষ্টি করবে তখন বুঝে নিতে হবে যে, দুনিয়ার মহব্বত অধিক হয়ে গেছে। এটা ভয়ের কারণ ও গোনাহের কারণ।
ইসলাহি মাজালিস চতুর্থ খন্ড; মুফতি ত্বাকি উসমানী হাফি.