জিজ্ঞাসা-২০৬: ব্যাংক লোন থাকতে কুরবানী হবে কি? (তারিখ- ২৫/০৬/২০২২ ঈসায়ি/ইংরেজি)
মাওলানা রফিক সাভার থেকে---
জবাব: আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করছেন। অনেকে ঋণ-এর অজুহাতে কুরবানি থেকে বিরত থাকে। আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে বুঝার জন্য কয়েকভাগে ভাগ করছি।
প্রশ্ন: ক। কুরবানি কার ওপর ও কখন ওয়াজিব হয়?
উত্তর: ক্ কুরবানীর দিনসমূহে (১০, ১১ ও ১২ জিলহজ) যার কাছে আবশ্যকীয় প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তাহলে তার উপর কুরবানী করা আবশ্যক।
নেসাব পরিমাণ হল, সাড়ে বায়ান্ন তোলা বা এর সমমূল্য পরিমাণ অতিরিক্ত সম্পদ মজুদ থাকা। যা বর্তমান বাজার অনুপাতে ১৫১৬*৫২.৫=৭৯,৫৯০ (কথায় উনসত্তর হাজার পাঁচশত নব্বই )টাকা (বাজুস কর্তৃক নির্ধারিত)
দলিল:
(وَأَمَّا) (شَرَائِطُ الْوُجُوبِ) : مِنْهَا الْيَسَارُ وَهُوَ مَا يَتَعَلَّقُ بِهِ وُجُوبِ صَدَقَةِ الْفِطْرِ دُونَ مَا يَتَعَلَّقُ بِهِ وُجُوبُ الزَّكَاةِ،………. وَالْمُوسِرُ فِي ظَاهِرِ الرِّوَايَةِ مَنْ لَهُ مِائَتَا دِرْهَمٍ أَوْ عِشْرُونَ دِينَارًا أَوْ شَيْءٌ يَبْلُغُ ذَلِكَ سِوَى مَسْكَنِهِ وَمَتَاعِ مَسْكَنِهِ وَمَرْكُوبِهِ وَخَادِمِهِ فِي حَاجَتِهِ الَّتِي لَا يَسْتَغْنِي عَنْهَا، فَأَمَّا مَا عَدَا ذَلِكَ مِنْ سَائِمَةٍ أَوْ رَقِيقٍ أَوْ خَيْلٍ أَوْ مَتَاعٍ لِتِجَارَةِ أَوْ غَيْرِهَا فَإِنَّهُ يُعْتَدُّ بِهِ مِنْ يَسَارِهِ،(الفتاوى الهندية، كتاب الأضحية، فصل شرائط الوجوب-5/292، رد المحتار، كتاب الاضحية-9/452-453، مجمع الانهر-4/167)
অর্থাৎ, কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো- এমন আর্থিক সচ্ছলতা, যার কারণে যাকাত আবশ্যক না হলেও সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়। জাহেরে রেওয়াতের সংজ্ঞা অনুসারে সচ্ছল ব্যক্তি তাকেই বলা হবে- বাসস্থান, ঘরের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র , চলার বাহন, সেবক, ইত্যাদির মতো নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু ব্যতীত যার স্বত্বাধিকারে দুইশত দিরহাম/ বিশ দিনার কিংবা তার সমমূল্যের সম্পত্তি বিদ্যমান রয়েছে। এই প্রয়োজনীয় বস্তু ব্যতিরেকে ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে বিনিয়োগকৃত চড়ে খাওয়া জন্তু, ঘোড়া কিংবা অন্য ব্যবসায়িক উপকরণ ইত্যাদির বাজার মূল্য দুইশত দিরহাম সমপরিমাণ হলে তাকে সচ্ছল ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এবং তার ওপর কুরবানী করা আবশ্যক হবে। ( ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, কুরবানীর অধ্যায়, কুরবানী আবশ্যক হওয়ার পরিচ্ছেদ, ৫/২৯২,। রদ্দুল মুহতার, কুরবানীর অধ্যায়, ৯/৪৫২-৪৫৩। মাজমাউল আনহার, ৪/১৬৭)
নোট: এখানে একটি বিষয় স্মরণ রাখতে হবে যে, যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে নিসাব পরিমান সম্পদ একবছর মালিকানায় থাকা শর্ত; কিন্তু কুরবানির বেলায় তা নয়। জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে নিসাব পরিমান সম্পদ থাকলেই কুরবানি ওয়াজিব হবে।
প্রশ্ন: খ। লোন/ঋণ থাকলে কুরবানি ওয়াজিব/দিতে হবে কিনা?
প্রশ্ন: খ। শরীয়তের বিধান হলো কাহারো ঋণ যদি এত হয় যা বাদ দিলে তার কাছে নিসাব পরিমাণ যাকাতযোগ্য সম্পদ থাকে না তাহলে তার ওপর যাকাত ফরয নয়। মুয়াত্তা মালেক ১০৭; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০০৩, ৭০৮৬, ৭০৮৯, ৭০৯০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৫৪৭-৫৪৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/৮৩
কিন্তু এখানে মনে রাখতে হবে যে, এই প্রসিদ্ধ মাসআলাটি সকল ঋণের ক্ষেত্রে নয়।
ঋণ দুই ধরনের হয়ে থাকে।
ক. প্রয়োজনাদি পূরণের জন্য বাধ্য হয়ে যে ঋণ নেওয়া হয়।
খ. ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে যে ঋণ নেওয়া হয়।
,
প্রথম প্রকারের ঋণ সম্পদ থেকে বাদ দিয়ে যাকাতের নিসাব বাকি থাকে কিনা তার হিসাব করতে হবে। নিসাব থাকলে যাকাত/কুরবানি ওয়াজিব হবে, অন্যথায় নয়।
,
কিন্তু যে সকল ঋণ উন্নয়নের জন্য নেওয়া হয় যেমন কারখানা বানানো, কিংবা ভাড়া দেওয়া বা বিক্রি করার উদ্দেশ্যে বিল্ডিং বানানো অথবা ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ঋণ নিলে যাকাতের হিসাবের সময় সে ঋণ ধর্তব্য হবে না। অর্থাৎ এ ধরনের ঋণের কারণে যাকাত কম দেওয়া বা কুরবানি থেকে বিরত থাকা যাবে না। তাখরিজ: মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৮৭
وفي رد المحتار- ( قوله أو مؤجلا إلخ ) عزاه في المعراج إلى شرح الطحاوي ، وقال : وعن أبي حنيفة لا يمنع وقال الصدر الشهيد : لا رواية فيه ، ولكل من المنع وعدمه وجه، زاد القهستاني عن الجواهر : والصحيح أنه غير مانع (رد المحتار-كتاب الزكاة، مطلب الفرق بين السبب والشرط والعلة-3/177، بدائع الصنائع-2/86
আপনার প্রশ্নে বর্ণিত ব্যাংকে লোন যদি,
(১) প্রথম প্রকারের হয়,তাহলে সেটা বাদ দিয়ে যদি আপনার নিকট যেহেতু নেসাব পরিমাণ টাকা আছে,তাহলে ঋন ব্যাতিত সম্পদের উপরেই আপনার কুরবানি ওয়াজিব হবে।
(২) আর যদি দ্বিতীয় প্রকারের ঋণ হয়,তাহলে বিধান হলোঃ
আপনি যাদের কাছ থেকে যেই লোন নিয়েছেন, এর বছরান্তের আদায়যোগ্য কিস্তি ছাড়া যদি আপনার কাছে সাড়ে বায়ান্ন তোলার রূপার সমমূল্য বর্তমান বাজর দর-৭৯,৫৯০ (কথায়, উনসত্তর হাজার পাঁচশত নব্বই) টাকা বাকি থাকে, তাহলে আপনার উপর কুরবানি আদায় করা আবশ্যক। কারণ দীর্ঘমেয়াদী ঋণ থাকা কুরবানি/যাকাত আবশ্যক হবার জন্য প্রতিবন্ধক নয়।
সারকথা: আপনি যদি দ্বিতীয় প্রকারের ঋণ হয়, ঈদের দিনগুলোতে মাসিক কিস্তি বাদ দিয়ে, অতিরিক্ত উনসত্তর হাজার পাঁচশত নব্বই টাকা থাকলে, আপনার ওপর কুরবানি ওয়াজিব হবে।
তথ্যসহযোগিতায়: আহলে হক মিডিয়া; ISLAMIC ONLINE MADRASHA
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক