আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১৩২৪০: নামাজের গুরুত্ব এবং কখন ফরজ করা হয়

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১৩২৪০: 

আসসালামু আলাইকুম।  মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হলো টপিকস "পাচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব " নামাজ কখন ফরজ হয়েছে, কেন হয়েছে এবং কেন আমরা নামাজ পড়ি। দলিল ভিত্তিক জানানোর জন্য অনুরোধ করছি।

তারিখ:০৬/০৫/২৫ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা   থেকে।


 জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিল কারিম। আম্মাবাদ -

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে জবাব কয়েক ভাগে দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ।

প্রশ্ন: ১। নামাজের গুরুত্ব?

উত্তর: ২। নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে অসংখ্য বর্ণনা এসেছে। তারমধ্যে কয়েকটি তুলে ধরা হলো:

আয়াত নং-০১ 

Surah Al-Baqara, Verse 43:

وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ

আর নামায কায়েম কর, যাকাত দান কর এবং নামাযে অবনত হও তাদের সাথে, যারা অবনত হয়। সূরা বাকারা-৪৩


আয়াত নং-০২

Surah Al-Muddathir, Verse 42:

مَا سَلَكَكُمْ فِي سَقَرَ

বলবেঃ তোমাদেরকে কিসে জাহান্নামে নীত করেছে?

قَالُوا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّينَ

তারা বলবেঃ আমরা নামায পড়তাম না। সূরা মুদ্দাসির,৪২-৪৩

আয়াত নং-০৩


হাদিস নং-০১ 

حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى التَّمِيمِيُّ، وَعُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، كِلاَهُمَا عَنْ جَرِيرٍ، قَالَ يَحْيَى أَخْبَرَنَا جَرِيرٌ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي سُفْيَانَ، قَالَ سَمِعْتُ جَابِرًا، يَقُولُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكَ الصَّلاَةِ " .

১৪৯। ইয়াহয়া ইবনে ইয়াহয়াহ আত তামীমী এবং উসমান ইবনে আবি শাঈবা (রাহঃ) ......... জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি নবী (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, বান্দা এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামায পরিত্যাগ করা।

It is narrated on the authority of Jabir that he heard the Apostle (may peace and blessings be upon him) saying. Verily between man and between polytheism and unbelief is the negligence of prayer.

—সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪৯ (আন্তর্জাতিক নং ৮২-১)

হাদিস নং-০২

1117 - حَدَّثَنَا عَبْدَانُ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ طَهْمَانَ، قَالَ: حَدَّثَنِي الحُسَيْنُ المُكْتِبُ، عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: كَانَتْ بِي بَوَاسِيرُ، فَسَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الصَّلاَةِ، فَقَالَ: «صَلِّ قَائِمًا، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَعَلَى جَنْبٍ

১০৫১। আবদান (রাহঃ) ......... ইমরান ইবনে হুসাইন (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার অর্শরোগ ছিল। তাই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর খিদমতে নামায সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম, তিনি বললেনঃ দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবে, তাতে সমর্থ না হলে বসে; যদি তাতেও সক্ষম না হও তাহলে কাত হয়ে শুয়ে।

Narrated `Imran bin Husain:

had piles, so I asked the Prophet (sallallahu ’alaihi wa sallam) about the prayer. He said, "Pray while standing and if you can’t, pray while sitting and if you cannot do even that, then pray Lying on your side."


সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০৫১ (আন্তর্জাতিক নং ১১১৭)


হাদীসের ব্যাখ্যা:

নামায দাঁড়িয়ে পড়াই জরুরী। তবে কেউ দাঁড়াতে একান্ত অপারগ হলে তাকে বসে বা তা-ও না পারলে শুয়ে অথবা ইশারা করে নামায পড়তে হবে। সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কেউ বসে নামায পড়লে তার নামায হবে না। এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (শামী: ১/৪৪৪, ৪৪৫) 


ফায়দা : বর্তমান সময় সামান্য সামান্য অসুস্থতার কারণে মানুষের মধ্যে চেয়ারে বসে নামায আদায়ের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা ফরয। একান্ত দাঁড়াতে অক্ষম হলে জমিনে বসে নামায আদায় করবে। হাঁটুতে ব্যথার কারণে পা ভাজ করতে না পারলে আসন গেড়ে বা কিবলার দিকে পা লম্বা করে দিয়েও নামায আদায় করতে পারে। অবশ্য দাঁড়িয়ে নামায পড়তে অক্ষম কোন ব্যক্তি যদি মাজা ব্যথার কারণে জমিনে বসতেও না পারে কিংবা মুসলিম অভিজ্ঞ ডাক্তার তাকে এ মর্মে সতর্ক করে যে, জমিনে বসা তার জন্য ক্ষতিকর তাহলে কেবল সে চেয়ারে বসে নামায আদায় করতে পারে। আর বসতে অক্ষম কোন ব্যক্তি যদি দাঁড়াতে সক্ষম হয় তাহলে সে দাঁড়ানোর আমল দাঁড়িয়েই করবে আর সিজদা বা অক্ষমতা বশত রুকু-সিজদা চেয়ারে বসে আদায় করবে। মনে রাখতে হবে, দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা ফরয। দাঁড়াতে অক্ষম ব্যক্তির জন্যই কেবল প্রয়োজনীয় ছাড় প্রযোজ্য হবে। 

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, গ্রামের মহিলাগণ অজ্ঞতার কারণে সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সামান্য অজুহাতেই বসে বসে নামায পড়েন। অথচ এতে তাদের নামায হয় না। আবার শহরের অতি আধুনিক মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তিগণ সামান্য কোমরে ব্যথা বা হাঁটু ব্যথার অজুহাতে অভিজ্ঞ মুফতি বা ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত চেয়ারে বসে নামায পড়ে থাকেন। অথচ তারা চেষ্টা করলে একটু কষ্ট হলেও দাঁড়িয়ে নামায পড়তে পারতেন। গ্রহণযোগ্য ওযর ব্যতীত ফরয বিধান (দাঁড়ানো) পরিত্যাগের কারণে তাদের নামায হচ্ছে না; কিন্তু এ দিকে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।


হাদিস নং-০৩ 

من حافظ عليها كانت له نورا وبرهانا ونجاة من النار يوم القيامة ومن لم يحافظ عليها لم تكن له نورا ونجاة وبرهانا وكان يوم القيامة مع قارون وفرعون وهامان وابي ابن خلف .

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাযিঃ থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন নামাজ সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, যে ব্যক্তি নামাজের হেফাজত করবে (নামাজ) তার জন্য নূর, দলীল ও নাজাতের উপায় হবে। আর যে ব্যক্তি নামাজের হেফাজত করবে না তার কোনো নূর, দলীল ও নাজাতের ব্যবস্থা হবে না। সে কেয়ামতের দিন কাড়ুন, ফেরআউন, হামান ও উবাই ইবনে খালফের সাথে থাকবে। —মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ৫৭৮


হাদিস নং-০৪

حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ نَصْرِ بْنِ عَلِيٍّ الْجَهْضَمِيُّ، حَدَّثَنَا سَهْلُ بْنُ حَمَّادٍ، حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، قَالَ حَدَّثَنِي قَتَادَةُ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ حُرَيْثِ بْنِ قَبِيصَةَ، قَالَ قَدِمْتُ الْمَدِينَةَ فَقُلْتُ اللَّهُمَّ يَسِّرْ لِي جَلِيسًا صَالِحًا . قَالَ فَجَلَسْتُ إِلَى أَبِي هُرَيْرَةَ فَقُلْتُ إِنِّي سَأَلْتُ اللَّهَ أَنْ يَرْزُقَنِي جَلِيسًا صَالِحًا فَحَدِّثْنِي بِحَدِيثٍ سَمِعْتَهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَعَلَّ اللَّهَ أَنْ يَنْفَعَنِي بِهِ فَقَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِنَّ أَوَّلَ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عَمَلِهِ صَلاَتُهُ فَإِنْ صَلُحَتْ فَقَدْ أَفْلَحَ وَأَنْجَحَ وَإِنْ فَسَدَتْ فَقَدْ خَابَ وَخَسِرَ فَإِنِ انْتَقَصَ مِنْ فَرِيضَتِهِ شَيْءٌ قَالَ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ انْظُرُوا هَلْ لِعَبْدِي مِنْ تَطَوُّعٍ فَيُكَمَّلَ بِهَا مَا انْتَقَصَ مِنَ الْفَرِيضَةِ ثُمَّ يَكُونُ سَائِرُ عَمَلِهِ عَلَى ذَلِكَ " . قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ تَمِيمٍ الدَّارِيِّ . قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ أَبِي هُرَيْرَةَ حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ . وَقَدْ رُوِيَ هَذَا الْحَدِيثُ مِنْ غَيْرِ هَذَا الْوَجْهِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ وَقَدْ رَوَى بَعْضُ أَصْحَابِ الْحَسَنِ عَنِ الْحَسَنِ عَنْ قَبِيصَةَ بْنِ حُرَيْثٍ غَيْرَ هَذَا الْحَدِيثِ وَالْمَشْهُورُ هُوَ قَبِيصَةُ بْنُ حُرَيْثٍ . وَرُوِيَ عَنْ أَنَسِ بْنِ حَكِيمٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم نَحْوُ هَذَا .


৪১৩. আলী ইবনে নসর ইবনে আলী আল-জাহযামী (রাহঃ)-হুরায়স ইবনে কাবীসা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ আমি একবার মদীনায় এলাম। দুআ করলামঃ হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য একজন নেক সঙ্গী লাভ সহজ করে দাও। পরে আমি আবু হুরায়রা (রাযিঃ)-এর নিকটে গিয়ে বসলাম। বললামঃ একজন নেক সঙ্গী জুটিয়ে দিতে আমি আল্লাহর নিকট দুআ করেছিলাম। মেহেরবাণী করে আপনি রাসূল (ﷺ) থেকে যে হাদীস শুনেছেন তা আমাকে শুনান। হয়ত আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে আমাকে উপকৃত করবেন। তিনি বললেনঃ আমি রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন বান্দার আমলের মধ্যে সর্ব প্রথম হিসাব নেয়া হবে নামাযের। যদি তা সঠিক বলে গণ্য হয়, তবে সে হবে কল্যাণপ্রাপ্ত ও সফলকাম। আর যদি তা সঠিক বলে গণ্য না হয়, তবে সে হবে অসফল ও ক্ষতিগ্রস্ত। ফরযের মধ্যে যদি কোন ক্রটি দেখা যায়, তবে মহান প্রভু বলবেনঃ লক্ষ্য কর, আমার বান্দার কোন নফল আমল আছে কি? তা দিয়ে তার ফরযের যতটুকু ক্রটি আছে তা পূরণ করে দাও। পরে এতদনুসারেই হবে অন্যান্য সব আমলের অবস্থা।


Huraith bin Qabisah narrated:

"I arrived in Al-Madinah and said: ’O Allah! Facilitate me to be in a righteous gathering.’" He said: "I sat with Abu Hurairah and said: ’Indeed I asked Allah to provide me with a righteous gathering. So narrate a hadith to me which you heard from Allah’s Messenger (ﷺ) so that perhaps Allah would cause me to benefit from it.’ He said: ’I heard Allah’s Messenger (ﷺ) say: "Indeed the first deed by which a servant will be called to account on the Day of Resurrection is his Salat. If it is complete, he is successful and saved, but if it is defective, he has failed and lost. So if something is deficient in his obligatory (prayers) then the Lord, Mighty and Sublime says: ’Look! Are there any voluntary (prayers) for my worshipper?’ So with them, what was deficient in his obligatory (prayers) will be completed. Then the rest of his deeds will be treated like that."

—জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ৪১৩ (আন্তর্জাতিক নং ৪১৩)


প্রশ্ন:২। কখন ফরজ করা হয়েছে?

উত্তর: ২। ৬১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে রজব তারিখে মিরাজের সময় পাঁচওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। দলিল- 

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى النَّيْسَابُورِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ فُرِضَتْ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِهِ الصَّلَوَاتُ خَمْسِينَ ثُمَّ نُقِصَتْ حَتَّى جُعِلَتْ خَمْسًا ثُمَّ نُودِيَ يَا مُحَمَّدُ إِنَّهُ لاَ يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَىَّ وَإِنَّ لَكَ بِهَذِهِ الْخَمْسِ خَمْسِينَ . قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ وَطَلْحَةَ بْنِ عُبَيْدِ اللَّهِ وَأَبِي ذَرٍّ وَأَبِي قَتَادَةَ وَمَالِكِ بْنِ صَعْصَعَةَ وَأَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ . قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ أَنَسٍ حَدِيثٌ حَسَنٌ   

২১৩. মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াহয়া আন নিসাপুরী (রাহঃ) ...... আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, মিরাজ রজনীতে নবী (ﷺ) এর উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয হয়েছিল পরে তা কমিয়ে শেষ পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত করা হয়। এপর বলা হল, হে মুহাম্মাদ আমার কথার কোন রদ বদল হয় না। আপনার জন্য এই পাঁচ ওয়াক্তের সাওয়াব পঞ্চাশ ওয়াক্তেরই সমান।

Anas bin Malik narrated:

"On the Night of Isra, fifty prayers were made obligatory upon the Prophet. Then it was decreased until it was made five. Then it was called out: ’O Muhammad! Indeed My Word does not change; these five prayers will be recorded for you as fifty.’"

—জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ২১৩ (আন্তর্জাতিক নং ২১৩)


প্রশ্ন: ৩। কেন হয়েছে ?

উত্তর: ৪। নামাজ বা সালাত এটি শুধু উম্মাতে মুহাম্মাদির আমল নয়, বরং পূর্ববর্তী নবী ও তাদের উম্মতদেরও আমল ছিল। দলিল- 


# আল্লাহ তাআলা ইবরাহীম আ., ইসহাক আ., ইয়াকুব আ.-এর আলোচনা করে বলেন-

وَجَعَلْنٰهُمْ اَىِٕمَّةً یَّهْدُوْنَ بِاَمْرِنَا وَاَوْحَیْنَاۤ اِلَیْهِمْ فِعْلَ الْخَیْرٰتِ وَاِقَامَ الصَّلٰوةِ وَاِیْتَآءَ الزَّكٰوةِ وَكَانُوْا لَنَا عٰبِدِیْنَ.

আমি তাদের বানিয়েছিলাম নেতা, যারা আমার নির্দেশে (মানুষকে) পথপ্রদর্শন করত। আমি ওহীর মাধ্যমে তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলাম সৎকর্ম করতে, নামায কায়েম করতে এবং যাকাত আদায় করতে। আর তারা আমারই ইবাদতকারী ছিল।-সূরা আম্বিয়া (২১) : ৭৩


# দোলনার শিশু ঈসা মাসীহ বলতে শুরু করলেন-

اِنِّیْ عَبْدُ اللهِ اٰتٰىنِیَ الْكِتٰبَ وَجَعَلَنِیْ نَبِیًّا وَّجَعَلَنِیْ مُبٰرَكًا اَیْنَ مَا كُنْتُ ۪ وَاَوْصٰنِیْ بِالصَّلٰوةِ وَالزَّكٰوةِ مَا دُمْتُ حَیًّا وَّبَرًّۢا بِوَالِدَتِیْ وَلَمْ یَجْعَلْنِیْ جَبَّارًا شَقِیّا وَالسَّلٰمُ عَلَیَّ یَوْمَ وُلِدْتُّ وَیَوْمَ اَمُوْتُ وَیَوْمَ اُبْعَثُ حَیًّا.

আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং নবী বানিয়েছেন আর তিনি আমাকে করেছেন বরকতময় আমি যেখানেই থাকি এবং আমাকে নামায ও যাকাতের নির্দেশ দিয়েছেন যতদিন আমি জীবিত থাকি। এবং আমাকে করেছেন আমার মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহারকারী। আমাকে করেননি উদ্ধত ও হতভাগা। আর আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন আমি মৃত্যুবরণ করব এবং যেদিন আমি জীবিত হয়ে পুনরুত্থিত হব।-সূরা মারইয়াম (১৯) : ৩০-৩৩


# আল্লাহ আরো ইরশাদ করেন-

وَاَوْحَیْنَاۤ اِلٰی مُوْسٰی وَاَخِیْهِ اَنْ تَبَوَّاٰ لِقَوْمِكُمَا بِمِصْرَ بُیُوْتًا وَّاجْعَلُوْا بُیُوْتَكُمْ قِبْلَةً وَّاَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِیْنَ.

আমি মূসা ও তার ভাইয়ের প্রতি ওহী প্রেরণ করলাম যেতোমরা তোমাদের সম্প্রদায়ের জন্য মিসরে ঘর-বাড়ি কর এবং তোমাদের ঘরসমূহকে নামাযের স্থান বানাও এবং নামায কায়েম কর আর মুমিনদের সুসংবাদ দাও।-সূরা ইউনুস (১০) : ৮৭


প্রশ্ন: ৪। কেন আমরা নামাজ পড়ি?

উত্তর: ৪। আল্লাহ তাআলার হুকুম তাই আমরা আদায় করি। তাছাড়া নানাবিধ ইহলৌকিক-পরলৌকিক উপকারিতা রয়েছে। যেমন,

(আয়াতে নবীজীকে লক্ষ করে বলেছেন-)


قُلْ لِّعِبَادِیَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا یُقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَیُنْفِقُوْا مِمَّا رَزَقْنٰهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِیَةً مِّنْ قَبْلِ اَنْ یَّاْتِیَ یَوْمٌ لَّا بَیْعٌ فِیْهِ وَلَا خِلٰلٌ.

আমার যে বান্দাগণ ঈমান এনেছে তুমি তাদেরকে বল, তারা যেন নামায কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে খরচ করে, সেই দিন আসার আগে, যে দিন কোনো বেচাকেনা থাকবে না এবং বন্ধুত্বও থাকবে না।-সূরা ইবরাহীম (১৪) : ৩১


এখানে আল্লাহ তাআলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে তাঁর বান্দাদেরকে নামাযের আদেশ করেছেন। এ থেকে বোঝা যায় নামায অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কিয়ামতের কঠিন সময়ে তা উপকারে আসবে।


অন্যত্র বলেছেন-

وَجَاهِدُوْا فِی اللهِ حَقَّ جِهَادِهٖ هُوَ اجْتَبٰىكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَیْكُمْ فِی الدِّیْنِ مِنْ حَرَجٍ مِلَّةَ اَبِیْكُمْ اِبْرٰهِیْمَ هُوَ سَمّٰىكُمُ الْمُسْلِمِیْنَ مِنْ قَبْلُ وَفِیْ هٰذَا لِیَكُوْنَ الرَّسُوْلُ شَهِیْدًا عَلَیْكُمْ وَتَكُوْنُوْا شُهَدَآءَ عَلَی النَّاسِ فَاَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَاٰتُوا الزَّكٰوةَ وَاعْتَصِمُوْا بِاللهِ هُوَ مَوْلٰىكُمْ فَنِعْمَ الْمَوْلٰی وَنِعْمَ النَّصِیْرُ.

এবং তোমরা আল্লাহর পথে সাধনা কর, যেমন সাধনা করা উচিত। তিনি তোমাদের মনোনীত করেছেন এবং দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের প্রতি কোনো সংকীর্ণতা আরোপ করেননি। তোমাদের পিতা ইবরাহীমের দ্বীন (-কে আঁকড়ে ধর)। তিনিই তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলিম, পূর্বেও এবং এ কিতাবেও, যাতে রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষী হয় আর তোমরা (অন্যান্য) মানুষের জন্য সাক্ষী হও। সুতরাং তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত আদায় কর এবং আল্লাহকে মজবুতভাবে ধর। তিনিই তোমাদের অভিভাবক। তিনি কত উত্তম অভিভাবক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী।-সূরা হজ্ব (২২) : ৭৮


এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা এই উম্মতকে (উম্মতে মুহাম্মাদী) সাক্ষী সাব্যস্ত করেছেন। কিয়ামতের দিন যখন অন্য উম্মতেরা অস্বীকার করে বলবে যে, নবীগণ আমাদের নিকট দ্বীনের কথা পৌঁছাননি তখন উম্মতে মুহাম্মাদী নবীদের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে-নিশ্চয় নবীগণ দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন। বলাবাহুল্য, উম্মতে মুহাম্মাদীর উপর এটা আল্লাহর বড় নিআমত। এ নিআমতের শোকরিয়া স্বরূপ আল্লাহ তাদেরকে নামায কায়েম করা, যাকাত আদায় করা এবং তাঁকে মজবুতভাবে ধরার আদেশ করেছেন।

এ থেকে নামাযের বিশেষ গুরুত্ব যেমন প্রমাণিত হয়, তেমনি এও বোঝা যায়, এই নিআমতের শুধু মৌখিক শোকরিয়া আদায় করা যথেষ্ট নয়; বরং আমলগতভাবেও শোকরিয়া আদায় করতে হবে। যে সকল আমল দ্বারা এ নিআমতের শোকরিয়া আদায় করা যায় তার শীর্ষে রয়েছে নামায, যাকাতসহ সর্বক্ষেত্রে আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করা।


সারকথা হলো,  



  والله اعلم بالصواب