আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৪৭২: দুড়ুল্লা কোন ভাষার শব্দ। দুড়ুল্লা অর্থ কী। কোন মানুষ নিজেকে অথবা অন্য মানুষকে এশকে দুড়ুল্লা বলে দাবি করতে পারবে।

No Comments

 


জিজ্ঞাসা-১২৪৭২:

আস্সালামু আলাইকুম, শাইখ দুড়ুল্লা কোন ভাষার শব্দ। দুড়ুল্লা অর্থ কী। কোন মানুষ নিজেকে অথবা  অন্য মানুষকে এশকে দুড়ুল্লা বলে দাবি করতে পারবে। কুরআন হাদীসের আলোকে উত্তরটা জানালে উপকৃত হবো। তারিখ: ১৯/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       


মাওলানা আনোয়ারুল আম্বিয়া যশোর  থেকে



  জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে কয়েক ভাগে ভাগ করছি:

প্রশ্ন: ক। দুড়ুল্লা/দুরুল্লাহ কোন ভাষার শব্দ?

উত্তর: ক। দুড়ুল্লা মূলত আরবি শব্দ। دور الله (দুরুল্লাহ) আরবি শব্দ থেকে উৎসারিত।

প্রশ্ন: খ। দুরুল্লাহ অর্থ কি?

উত্তর: খ। দুরুল্লাহ যৌগিক শব্দ। دور و الله ر (দুরুন ও আল্লাহ ) دور শব্দটি دار এর শব্দের বহুবচন। دار অর্থ ঘর, বাড়ি ইত্যাদি। সুতরাং দুরুল্লাহ অর্থ হলো আল্লাহর ঘর (কাবা শরীফ)।


প্রশ্ন: গ। কোন মানুষ নিজেকে অথবা অন্য মানুষকে এশকে দুরুল্লা বলতে পারে কি?

উত্তর: গ। ইশক ( আরবি : عشق ) একটি আরবি শব্দ যার অর্থ "ভালোবাসা" বা "আবেগ",। মুসলিম বিশ্বের এবং ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য ভাষায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় ।

উল্লেখ্য যে , عشق (এশক) শব্দটি মাসদার কিন্তু কখনো মাসদারও ইসমে ফায়েলের অর্থে ব্যবহৃত হয়। সুতরাং অর্থ দাঁড়ায় প্রেমিক, পাগল, দেওয়ানা ইত্যাদি।


সারকথা হলো, এশকে দুরুল্লাহ মানে হলো আল্লাহর ঘরের প্রেমিক, দেওয়ানা বা পাগল।

কোন মানুষ সাধারণত নিজেকে কোন কিছু দাবি করে না। তবে অন্য কেউ তাকে উপাধি দিলে দোষ নেই।
দলিল:

Surah Al-Hujraat, Verse 11:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّن قَوْمٍ عَسَىٰ أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِّن نِّسَاءٍ عَسَىٰ أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ

 একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম। সূরা হুজুরাত-১১

এ আয়াত থেকে বোঝা যায় মন্দ নামের পরিবর্তে ভালো নামে, ভালো/ সুন্দর উপাধিতে ডাকা যাবে।




সুন্দর নাম মানসিকতা ও স্বভাবের উপর নামের প্রভাব পড়ে। তাই তো আমাদের প্রিয় নবি (ﷺ) সাহাবাদেরকে নাম পরিবর্তন ও সুন্দর সুন্দর উপাধিতে ডাকতেন। যেমন,

 

হাদিস নং-০১

أَخْبَرَنِي عَبْدُ الحَمِيدِ بْنُ جُبَيْرِ بْنِ شَيْبَةَ، قَالَ: جَلَسْتُ إِلَى سَعِيدِ بْنِ المُسَيِّبِ، فَحَدّثَنِي: أَنّ جَدّهُ حَزْنًا قَدِمَ عَلَى النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فَقَالَ: مَا اسْمُكَ؟ قَالَ: اسْمِي حَزْنٌ، قَالَ: بَلْ أَنْتَ سَهْلٌ. قَالَ: مَا أَنَا بِمُغَيِّرٍ اسْمًا سَمّانِيهِ أَبِي قَالَ ابْنُ المُسَيِّبِ: فَمَا زَالَتْ فِينَا الحُزُونَةُ بَعْدُ.

আবদুল হুমাইদ বিন শায়বা বলেন, আমি হযরত সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিবের কাছে বসা ছিলাম। তিনি তখন বললেন, আমার দাদা ‘হাযান’ একবার নবীজীর দরবারে উপস্থিত হলেন। নবীজী তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কী? দাদা বললেন, আমার নাম হাযান। (হাযান অর্থ শক্তভূমি) নবীজী বললেন- না, তুমি হচ্ছ ‘সাহল’ (অর্থাৎ তোমার নাম হাযানের পরিবর্তে সাহল রাখো; সাহল অর্থ, নরম জমিন।) দাদা বললেন, আমার বাবা আমার যে নাম রেখেছেন আমি তা পরিবর্তন করব না। সাইদ ইবনুল মুসায়্যিব বলেন, এর ফল এই হল যে, এরপর থেকে আমাদের বংশের লোকদের মেযাজে রুঢ়তা ও কর্কশভাব রয়ে গেল। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬১৯৩

 

 হাদিস নং-০২

মুহাম্মাদ ইবনে আমর ইবনে আতা বলেন, আমি আমার মেয়ের নাম রাখলাম- বাররা (নেককার, ভালো মানুষ)। তখন যয়নব বিনতে আবি সালামা বললেন-

سُمِّيتُ بَرّةَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: لَا تُزَكّوا أَنْفُسَكُمْ، اللهُ أَعْلَمُ بِأَهْلِ الْبِرِّ مِنْكُمْ فَقَالُوا: بِمَ نُسَمِّيهَا؟ قَالَ: سَمّوهَا زَيْنَبَ.

আমার নাম ছিল, বাররা। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা নিজেরা নিজেদের পবিত্রতা ঘোষণা কোরো না। (কারণ, বাররা অর্থ, ভালো, নেককার, পূত-পবিত্র) আল্লাহই জানেন তোমাদের মধ্যে ভালো ও পূত-পবিত্র কারা। জিজ্ঞেস করা হল, তাহলে আমরা তার কী নাম রাখতে পারি? তখন নবীজী বললেন, তার নাম যয়নাব রাখ। (নবীজীর আদেশে তখন বাররা নাম পরিবর্তন করে তার নাম যয়নাব রাখা হল।) তাখরিজ: সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৪২

 

হজরত আবু বকর রা. কে সিদ্দিক এবং ওমর হলেন আল-ফারুক। তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ``হে আল্লাহর রাসূল! বর্তমানে মুসলমানের সংখ্যা কত? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিলেন, ``তোমাকে নিয়ে ৪০ (চল্লিশ) জন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এটাই যথেষ্ট। আজ থেকে আমরা এই চল্লিশ জনই কাবা গৃহে গিয়ে প্রকাশ্যে মহান আল্লাহ তাআলার ইবাদাত করবো। ভরসা মহান আল্লাহর। অসত্যের ভয়ে আর সত্যকে চাপা পড়ে থাকতে দেব না। সেদিনই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে "ফারুক" উপাধি দেন।

হজরত আলি রা.কে আসাদুল্লাহ এবং বীরশ্রেষ্ঠ খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. কে সাইফুল্লাহ উপাধিতে ভূষিত করেন। উপাধি দেওয়া,

 শেষ কথা হলো, কোন লোককে এশকে দুরুল্লাহ
ডাকা কোন সমস্যা নেই।
 


 

والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক