ইমাম আবু ইউসুফ রহ. (জন্ম : ১১৩ হি., মৃত্যু : ১৮২ হি.)
ইমাম আবু ইউসুফ রহ. বলেন, আমি হাদীস ও ফিকহের ইলম হাসিল করতাম। তখন আমি অতি দরিদ্র ও দুর্দশাগ্রস্ত। একদিন আমার পিতা এসে দেখলেন, আমি ইমাম আবু হানীফা রহ.-এর কাছে বসে ইলম শিখছি। তখন আমার পিতা আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললেন, বাবা, তুমি ইমাম আবু হানীফার পেছনে পা বাড়িয়ো না। ইমাম আবু হানীফা ধনী মানুষ। আর তুমি প্রাণ বাঁচানোর মতো জীবিকার জন্য মুখাপেক্ষী। তার এ বক্তব্যের ফলে আমি বেশ কিছু দিন ইমাম আবু হানীফা রহ.-এর দরসে ইলম শিখতে আসিনি। তখনকার মতো আমি পিতার কথা মেনে নেওয়াই শ্রেয় মনে করলাম। ইমাম আবু হানীফা রহ. দরসে আমাকে অনুপস্থিত দেখে আমার খোঁজ-খবর নিলেন এবং আমার সম্পর্কে অন্যদের কাছে জানতে চাইলেন। এরপর আমি পুনরায় তাঁর দরসে যোগদান করতে শুরু করি। অনুপস্থিত থাকার পর যখন প্রথম দিন তাঁর দরসে গেলাম, তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি দরসে অনুপস্থিত ছিলে কেন? আমি বললাম, জীবিকা উপার্জনের তাগাদা আর পিতার কথা পালন করতে গিয়ে আমাকে দরসে অনুপস্থিত থাকতে হয়েছে। এরপর দরসে বসলাম। লোকেরা যখন চলে গেল তখন তিনি আমার নিকট একটি থলি দিয়ে বললেন, এগুলো তোমার প্রয়োজনে ব্যয় করো। আমি দেখি, থলিতে একশ দিরহাম রয়েছে। এরপর তিনি আমাকে বললেন, তুমি নিয়মিত দরসে যোগদান করতে থাক। আর এগুলো শেষ হয়ে গেলে তুমি আমাকে জানাবে। সুতরাং আমি নিয়মিত দরসে যোগদান করতে থাকলাম। অল্প কয়েক দিন অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি আমাকে আরও একশ দিরহাম প্রদান করলেন এবং তিনি নিয়মিত আমার খোঁজ-খবর নিতেন। এরপর আমি আর কখনও তাঁকে আমার অভাব সম্পর্কে জানাইনি এবং অর্থ ফুরিয়ে যাওয়া সম্পর্কে অবহিত করিনি। মনে হত, যেন আমার অর্থ ফুরিয়ে যাওয়ার কথা কোনোভাবে তাঁর জানা হয়ে যেত। এরপর আল্লাহর ইচ্ছায় আমি সহায়-সম্পদ ও বিত্ত-বৈভবের মালিক হই। এভাবে একাধারে ১৭ বছর তাঁর দরসে যোগদান করার পর আমি আমার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হই এবং আল্লাহ তাআলা তাঁর বরকতে ও তাঁর নেক নিয়তের উসিলায় আমাকে ইলম ও সহায়-সম্পদ দান করেন। আল্লাহ তাআলা আমার পক্ষ থেকে তাঁকে এর উত্তম জাযা দান করুন এবং তাঁকে ক্ষমা করে দিন।- খতীব বাদগদাদী, তারীখে বাগদাদ ১৪/২৪৪; আলমুওয়াফফাক, মানকিবু আবী হানীফা, ইমাম আবু ইউসুফের আলোচনা ১/৪৯৬