জিজ্ঞাসা-২১২ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। শায়েখদের নিকট জিজ্ঞাসা। জিলহজ্ব মাসের ১-১০ তারিখ পর্যন্ত চুল কাটা, না কাটার বিষয়ে বিধান কি? দয়া করে জানাবেন। তারিখ-৩০/০৬/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মোঃ মোজাম্মেল হোসেন খাগড়াছড়ি থেকে---
জবাব: ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। আমি জবাব রেডি করতেছি ইতোমধ্যে আমার ছোট ভাই দক্ষ যোগ্য আলেম মোঃ ইমরান তিনি একটি হাদিস পোষ্ট দিয়েছেন আমি তার সাথে যুক্ত করছি। প্রথমে আপনাকে ( প্রশ্নকারীকে)জাযাকাল্লাহু খাইর এজন্যই যে আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়োপযোগী প্রশ্ন করেছেন আগামীকাল জিলহজ মাসের এক তারিখ। যিনি কুরবানী দিবেন তার জন্য জিলহজ্জ মাসের চাঁদ উঠার পর থেকে চুল নখ না কাটা মুস্তাহাব। দলিল:
হাদীস নং ০১
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا رَأَيْتُمْ هِلَالَ ذِي الْحِجَّةِ، وَأَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يُضَحِّيَ، فَلْيُمْسِكْ عَنْ شَعْرِهِ وَأَظْفَارِهِ.
অর্থ : উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (ﷺ) বলেছেন, যখন যিলহজ্বের দশক শুরু হবে তখন তোমাদের মধ্যে যে কুরবানী করবে সে যেন তার চুল নখ না কাটে। তাখরিজ: মুসলিম- ১৯৭৭; জামে তিরমিযী-১৫২১
উপরোক্ত হাদীসের উপর ভিত্তি করে ফকীহগণ কুরবানীকারীর জন্য নখ-চুল না কাটাকে মুস্তাহাব বলেছেন।
হাদিস নং-০২
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ الْحَكَمِ الْبَصْرِيُّ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ مَالِكِ بْنِ أَنَسٍ، عَنْ عَمْرٍو، أَوْ عُمَرَ بْنِ مُسْلِمٍ عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَنْ رَأَى هِلاَلَ ذِي الْحِجَّةِ وَأَرَادَ أَنْ يُضَحِّيَ فَلاَ يَأْخُذَنَّ مِنْ شَعْرِهِ وَلاَ مِنْ أَظْفَارِهِ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . وَالصَّحِيحُ هُوَ عَمْرُو بْنُ مُسْلِمٍ قَدْ رَوَى عَنْهُ مُحَمَّدُ بْنُ عَمْرِو بْنِ عَلْقَمَةَ وَغَيْرُ وَاحِدٍ . وَقَدْ رُوِيَ هَذَا الْحَدِيثُ عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مِنْ غَيْرِ هَذَا الْوَجْهِ نَحْوَ هَذَا . وَهُوَ قَوْلُ بَعْضِ أَهْلِ الْعِلْمِ وَبِهِ كَانَ يَقُولُ سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ وَإِلَى هَذَا الْحَدِيثِ ذَهَبَ أَحْمَدُ وَإِسْحَاقُ . وَرَخَّصَ بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ فِي ذَلِكَ فَقَالُوا لاَ بَأْسَ أَنْ يَأْخُذَ مِنْ شَعْرِهِ وَأَظْفَارِهِ . وَهُوَ قَوْلُ الشَّافِعِيِّ وَاحْتَجَّ بِحَدِيثِ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَبْعَثُ بِالْهَدْىِ مِنَ الْمَدِينَةِ فَلاَ يَجْتَنِبُ شَيْئًا مِمَّا يَجْتَنِبُ مِنْهُ الْمُحْرِمُ
১৫২৯। আহমাদ ইবনুল হাকাম আল-বসরী (রাহঃ) ......... উম্মে সালামা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কুরবানী করার ইচ্ছা রাখে যুল-হজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পর সে যেন তার চুল ও নখ না কাটে। ইবনে মাজাহ ৩১৪৯, মুসলিম
আহমাদ ও ইসহাক (রাহঃ)-ও এ পথ অবলম্বন করেছেন। অপর কতক আলিম এ বিষয়ে অনুমতি দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, নখ, চুল কাটায় কোন দোষ নেই। এ হল শাফিঈ (রাহঃ)-এর অভিমত। আয়িশা (রাযিঃ) বর্ণিত এ হাদীসটিকে দলীল হিসাবে পেশ করেন, নবী (ﷺ) মদীনা থেকে হাদী (হজ্জের সময় কুরবানী করার জন্য পশু) পাঠাতেন। কিন্তু মুহরিম ব্যক্তি যে সমস্ত বিষয় পরিহার করে থাকে তা তিনিও পরিহার করতেন।
Narrated Umm Salamah:
That the Prophet (ﷺ) said: "Whoever sees the crescent of Dhul-Hijjah, and wants to slaughter a sacrifice he should not take from his hair nor from his nails."
—জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ১৫২৩ (আন্তর্জাতিক নং ১৫২৩)
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِرَجُلٍ: أُمِرْتُ بِيَوْمِ الْأَضْحَى عِيدًا جَعَلَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ لِهَذِهِ الْأُمَّةِ، فَقَالَ الرَّجُلُ: أَرَأَيْتَ إِنْ لَمْ أَجِدْ إِلَّا مَنِيحَةً أُنْثَى أَفَأُضَحِّي بِهَا؟ قَالَ: لَا، وَلَكِنْ تَأْخُذُ مِنْ شَعْرِكَ، وَتُقَلِّمُ أَظْفَارَكَ، وَتَقُصُّ شَارِبَكَ، وَتَحْلِقُ عَانَتَكَ، فَذَلِكَ تَمَامُ أُضْحِيَّتِكَ عِنْدَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ
‘আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত নবি কারিম (ﷺ) বলেছেন, আমাকে কুরবানির দিবসে ঈদ (পালনের) আদেশ করা হয়েছে। যা আল্লাহ এ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন। এক সাহাবি আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আমার কাছে শুধু একটি মানিহা থাকে (অর্থাৎ অন্যের থেকে নেওয়া দুগ্ধ দানকারী উটনী) আমি কি তা কুরবানি করতে পারি? নবি কারিম (ﷺ) বললেন, না, তবে তুমি চুল, নখ ও মোঁচ কাটবে এবং নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করবে। এটাই আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণ কুরবানি বলে গণ্য হবে। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ-২৭৮৯
প্রশ্ন: ক। জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিন নখ গোঁফ কাটা কি মাকরূহ?
উত্তর: ক। ০১ নং হাদীস বর্ণনা করার পর 'ইলাউস সুনান' গ্রন্থ প্রণেতা বলেন-
أقول : نهى النبى صلى الله عليه وسلم من أراد التضحية عن قلم الأظفار وقص الشعر فى العشر الأول، والنهى محمول عندنا على خلاف الأولى
'আমার অভিমত হলো, নবী করীম (ﷺ) কুরবানীর ইচ্ছাকারী ব্যক্তির জন্য জিলহজের প্রথম দশকে নখ কাটতে এবং চুল কাটতে নিষেধ করেছেন। তারি নিষিদ্ধতা অনুত্তমের পর্যায়ভুক্ত। (ইলাউস সুনান : ১৭/২৬৪)
وقال الشامى: بعد نقل هذا الحديث: هذا محمول على الندب دون الوجوب بالإجماع (رد المحتار، باب العيدين، مطلب فى إزالة الشعر والظفر فى ذى الحجة-3/66)
'আল্লামা শামী এই হাদিস উল্লেখ করার পর বলেন, ওলামায়ে কেরামের সর্বসম্মতিক্রমে এর দ্বারা মুস্তাহাব উদ্দেশ্য, ওয়াজিব নয়। সূত্র: রদ্দুল মুহতার : ৩/৬৬
প্রশ্ন: খ। আপনি উল্লেখ করেছেন জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন না কাটা মুস্তাহাব কিন্তু এই আমল করতে গিয়ে যদি 40 দিনের বেশি হয় তখন কোনটা প্রাধান্য পাবে?
উত্তর: খ। আপনি ঠিকই বলেছেন একদিকে জিলহজ মাসের ১০ দিনের ফজিলত অন্যদিকে 40 দিনের বেশি নখ গোঁফ না রাখার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যেমন,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ أَنَسٌ وُقِّتَ لَنَا فِى قَصِّ الشَّارِبِ وَتَقْلِيمِ الأَظْفَارِ وَنَتْفِ الإِبْطِ وَحَلْقِ الْعَانَةِ أَنْ لاَ نَتْرُكَ أَكْثَرَ مِنْ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً
হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের জন্য মোচ, নখ কর্তন এবং বগলের চুল ও অবাঞ্ছিত লোম কাটার সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সেটি হল, যেন তা চল্লিশ দিনের উর্দ্ধে না যায়। তাখরিজ: সহীহ মুসলিম-২৫৮, সুনানে ইবনে মাজাহ-২৯৫
এখন দুটি বিষয়ের সমন্বয় হলো আমরা এ ক্ষেত্রে জিলহজে মাসের প্রথম ১০ দিন আমলটা ছেড়ে দিব, ৪০ দিন হওয়ার আগে অবাঞ্চিত চুল-নখ কাটা প্রধান্য পাবে।
প্রশ্ন: গ। জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন নখ-চুল না কাটা কি শুধু যারা কুরবানী করবে তাদের জন্যই, না সবার জন্য মুস্তাহাব।
উত্তর: গ। অধিকাংশ আলেমদের মতে যারা কুরবানী করবে তাদের জন্যই শুধু মুস্তাহাব। দলিল: প্রথমে উল্লেখিত হাদিস দুটি। তবে কোন কোন আলেম বলেছেন সবার জন্য। দলিল:
হাদিস/আসার নং-০১
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِرَجُلٍ: أُمِرْتُ بِيَوْمِ الْأَضْحَى عِيدًا جَعَلَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ لِهَذِهِ الْأُمَّةِ، فَقَالَ الرَّجُلُ: أَرَأَيْتَ إِنْ لَمْ أَجِدْ إِلَّا مَنِيحَةً أُنْثَى أَفَأُضَحِّي بِهَا؟ قَالَ: لَا، وَلَكِنْ تَأْخُذُ مِنْ شَعْرِكَ، وَتُقَلِّمُ أَظْفَارَكَ، وَتَقُصُّ شَارِبَكَ، وَتَحْلِقُ عَانَتَكَ، فَذَلِكَ تَمَامُ أُضْحِيَّتِكَ عِنْدَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ
‘আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত নবি কারিম (ﷺ) বলেছেন, আমাকে কুরবানির দিবসে ঈদ (পালনের) আদেশ করা হয়েছে। যা আল্লাহ এ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন। এক সাহাবি আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আমার কাছে শুধু একটি মানিহা থাকে (অর্থাৎ অন্যের থেকে নেওয়া দুগ্ধ দানকারী উটনী) আমি কি তা কুরবানি করতে পারি? নবি কারিম (ﷺ) বললেন, না, তবে তুমি চুল, নখ ও মোঁচ কাটবে এবং নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করবে। এটাই আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণ কুরবানি বলে গণ্য হবে। তাখরিজ: তিরমিজ-হাদীস নং ১৫২৩ (আন্তর্জাতিক নং ১৫২৩)
হাদিস/আসার নং-০২
ওলীদ বিন মুসলিম বলেন, আমি মুহাম্মাদ বিন আজলানকে যিলহজ্বের দশকে চুল কাটা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন, আমাকে নাফে রাহ বলেছেন যে,আব্দুল্লাহ ইবনে উমর এক নারীর নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। মহিলাটি যিলহজ্বের দশকের ভেতর তার সন্তানের চুল কেটে দিচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, যদি ঈদের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে তবে বড় ভাল হত। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৫৯৫)
হাদিস/আসার নং-০৩
মুতামির ইবনে সুলাইমান আততাইমী বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি যে ইবনে সীরীন রাহ. যিলহজ্বের দশকে চুল কাটা অপছন্দ করতেন। এমনকি এই দশকে ছোট বাচ্চাদের মাথা মুন্ডণ করাকেও অপছন্দ করতেন। (আল মুহাল্লা, ই
ওলীদ বিন মুসলিম বলেন, আমি মুহাম্মাদ বিন আজলানকে যিলহজ্বের দশকে চুল কাটা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন, আমাকে নাফে রাহ বলেছেন যে,আব্দুল্লাহ ইবনে উমর এক নারীর নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। মহিলাটি যিলহজ্বের দশকের ভেতর তার সন্তানের চুল কেটে দিচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, যদি ঈদের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে তবে বড় ভাল হত। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৫৯৫)
হাদিস/আসার নং-০৪
মুতামির ইবনে সুলাইমান আততাইমী বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি যে ইবনে সীরীন রাহ. যিলহজ্বের দশকে চুল কাটা অপছন্দ করতেন। এমনকি এই দশকে ছোট বাচ্চাদের মাথা মুন্ডণ করাকেও অপছন্দ করতেন। (আল মুহাল্লা, ইবনে হাযম ৬/২৮)
এসব দলীলের কারণে কারো কারো মতে সকলের জন্যই যিলহজ্বের প্রথম দশকে নখ, গোফ ও চুল না-কাটা উত্তম।
والله اعلم بالصواب