আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৪৬৯: শবে মেরাজের রাত্র উপলক্ষে আমল করার ব্যাপারে হাদিসে কোন নির্দেশনা আছে কিনা?

No Comments

 


জিজ্ঞাসা-১২৪৬৯:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। বিজ্ঞজনের নিকট জানার বিষয় হলো:

শবে মেরাজের রাত্র উপলক্ষে  আমল করার ব্যাপারে হাদিসে কোন নির্দেশনা আছে কিনা?  এই রাত্রি উপলক্ষে নবী করীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবা কিরাম কি আমল করতেনহাদিসের আলোকে জানতে চাইআসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ /তারিখ:  ১৭/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 

মাওলানা রফিকুল ইসলাম কুড়িগ্রাম থেকে।


  জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো,  রজব মাস সম্মানিত মাস এতে কোন সন্দেহ নেই। যেমন,

Surah At-Taubah, Verse 36:

إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِندَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَٰلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنفُسَكُمْ وَقَاتِلُوا الْمُشْرِكِينَ كَافَّةً كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ كَافَّةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ

নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটিআসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধানসুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না। সূরা তওবা -৩৬

 

 

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الْوَهَّابِ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ مُحَمَّدٍ، عَنِ ابْنِ أَبِي بَكْرَةَ، عَنْ أَبِي بَكْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِنَّ الزَّمَانَ قَدِ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ خَلَقَ اللَّهُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ، السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا مِنْهَا، أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ، ثَلاَثٌ مُتَوَالِيَاتٌ، ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَانَ ".


আব্দুল্লাহ ইবনে আবদুল ওয়াহাব (রাহঃ) ... আবু বকর (রাযিঃ) কর্তৃক নবী () থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনআল্লাহ যেদিন আসমান যমীন সৃষ্টি করেন সেদিন যেভাবে কাল (যামানা) ছিল তা আজও অনুরূপভাবে বিদ্যমান। বারমাসে এক বছরতন্মধ্যে চার মাস পবিত্র। যার তিন মাস ধারাবাহিক যথা যুলক্বাদযুলহ্বজ্জ ও মুহাররাম আর মুযার গোত্রের রজব যা জামাদিউস সানী ও শাবান মাসদ্বয়ের মধ্যবর্তী। তাখরিজ: বুখারি-৪৬৬২, মুসলিম-১৭৬৯


দ্বিতীয় কথা হলো, সাহাবা, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন কেউ কখনো মেরাজ রজনী উদযাপন করেছেন এমন কোনো প্রমাণ নেই। এটি একটি কুসংস্কারও বিদআত। সূত্র: আলমাওয়াহিবুল লাদুননিয়্যাহ ও শরহুল মাওয়াহিব ৮/১৮-১৯; আলবিদায়া ওয়াননিহায়া ২/৪৭১; লাতায়িফুল মাআরিফ পৃ. ১৩৪

 

প্রশ্ন: ক।  রজব মাসে কি কোন রোজা আছে?

 

উত্তর: ক। হ্যাঁ, রজব মাসে রোজা আছে। দলিল:

دَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، عَنْ سَعِيدٍ الْجُرَيْرِيِّ، عَنْ أَبِي السَّلِيلِ، عَنْ مُجِيبَةَ الْبَاهِلِيَّةِ، عَنْ أَبِيهَا، أَوْ عَمِّهَا أَنَّهُ أَتَى رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ انْطَلَقَ صُمْ مِنَ الْحُرُمِ وَاتْرُكْ صُمْ مِنَ الْحُرُمِ وَاتْرُكْ


মূসা ইবনে ইসমাঈল ..... মুজীবা আল্-বাহেলীয়্যা তাঁর পিতা হতে অথবা তাঁর চাচা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনতুমি পবিত্র  মাসগুলোতে (মহররম, জিলকদ, জিলহজ ও রজব মাসগুলোতে) রোযা রাখবে এবং রোযা পরিত্যাগও করবে। এরূপ তিনি তিনবার বলেন। তাখরিজ: সুনানে আবি দাউদ-২৪২৮

 

নোট: শায়েখ আলবানি রহ. হাদিসরি সনদকে জয়িফ বলেছেন।

 

ফজিলত বর্ণনা-আমলের ক্ষেত্রে জয়িফ/দুর্বল হাদিস গৃহীত-গ্রহণীয় যা আহলে এলমেদের নিকট স্বীকৃত। যেমনইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.) বলেনহালাল-হারামের বিষয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে থাকি। তবে ফজিলতের ক্ষেত্রে নমনীয়তা অবল্বমন করি। ইমাম নববি(রহ.) বলেনফজিলতউৎসাহ বা ভীতি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে জয়িফ (দুর্বলহাদিসের আমল করা উত্তম। কিন্তু জাল হাদিস থেকে পারবে না।  তিনি আরও বলেন বিষয়ে ওলামায়ে কেরাম ঐকমত্য পোষণ করেছেন। (সূত্র : আল-আজকার,১১-১২)

 

ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদিসের আলোকে ওলামায়ে কেরাম সম্মানিত চার মাসে (রজব তার মধ্যে একটি) রোজা রাখাকে মুস্তাহাব বলেছেন।

 


প্রশ্ন: খ।  ২৭ রজব নামাজ, রোজা রাখার হুকুম কি?


উত্তর: খ। এ বিষয়ে দুটি মতামত পাওয়া যায়।

প্রথম মত: 

অধিকাংশ আলেমের মতেশবে মেরাজ উপলক্ষে রোজা, নামাজ বিদআত। এ সম্পর্কে শায়েখ ইবনে উসাইমীনকে রজবের সাতাশ তারিখ রোজা রাখা এবং সেই রাতে নামাজ পড়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল।

 

ا حكم صيام يوم السابع والعشرين من شهر رجب؟

وسئل الشيخ ابن عثيمين رحمه الله عن صيام يوم السابع والعشرين من رجب وقيام ليلته.


فأجاب: "صيام اليوم السابع العشرين من رجب وقيام ليلته وتخصيص ذلك بدعة، وكل بدعة ضلالة." انتهى. "مجموع فتاوى ابن عثيمين" (20/440).

উত্তরে তিনি বললেনঃ রজবের সাতাশ তারিখ রোজা রাখা এবং সেই রাতে নামাজে রাত কাটানো বিদআত এবং প্রতিটি বিদআতই গোমরাহী।  সূত্র: মাজমু ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন -20/440


দ্বিতীয় মত: ২৭ রজব তারিখে রোজা রাখা মুস্তাহাব। 

وقالت الدار إن التنفُّل بـ صيام يوم السابع والعشرين من شهر رجب لا مانع منه شرعًا، بل هو من الأمور المستحبة المندوب إليها والمرغَّب في الإتيان بها وتعظيم شأنها؛ لقول النبي صلى الله عليه وآله وسلم: «مَنْ صَامَ يَومَ سَبْعٍ وَعِشْرِينَ مِنْ رَجَبٍ كَتَبَ اللهُ لَهُ صِيَامَ سِتِّينَ شَهْرًا». وهذا الحديث وإن كان فيه ضعفٌ، إلا أنه ممَّا يُعمل به في فضائل الأعمال على ما هو مقرر عند الفقهاء في مثل ذلك.


মিসরিয় দারুল ইফতায় বলা হয়েছে, রজব মাসের সাতাশ তারিখে নফল রোজা রাখা শরিয়তে নিষিদ্ধ নয়, বরং এটি এমন একটি কাঙ্খিত জিনিস মুস্তাহাব ও প্রশংসিত । এটা এবং তার মর্যাদা মহিমান্বিত. । দলিল:


عن أبي هريرةَ رضيَّ اللهُ عنه قال : مَنْ صام يومَ سبعٍ وعشرينَ من رجبٍ كُتبَ له صيامُ ستِّينَ شهرًا وهو اليومُ الذي هبط فيه جبريلُ وابن عراق الكناني (ت ٩٦٣هـ) في "تنـزيه الشريعة", كتاب الصوم, ٢/١٦١, (٤١).بالرِّسالةِ

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি রজবের সাতাশ তারিখে রোজা রাখবে, আল্লাহ তার জন্য ষাট মাসের রোজা লিখে দেবেন।” তাখরিজ: তাবয়িনুল আজব,হাদিস-৪৫, ইবনে হাজার আসকালানি; তানযিহুল শারিয়াহ;কিতাবুস সিয়াম-২/১৬১


এই হাদিসটি যদিও দুর্বলতা আছে, এমন একটি বিষয় যা ফকীহদের দ্বারা এ যেই জাতীয় বিষয়ে প্রতিষ্ঠিত অনুসারে আমলের গুণাবলীতে কাজ করা। অর্থাৎ দুর্বল হাদিস আমল যোগ্য। সূত্র: মিসর দারুল ইফতা ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত


সারকথা হলো, প্রথম মতটা অগ্রগণ্য কেননা তা অধিকাংশ আলেমদের রায়। আর  ২৭ রজব তারিখে রোজা রাখার বিষয়ে জয়িফ/ দুর্বল হাদিস এসেছে, তাই কেউ রাখতে চাইলে রাখতে পারবে। তবে অন্যান্য (নামাজ) ইবাদত প্রমাণিত নয়। সুতরাং এ উপলক্ষে মসজিদে বা কোথায় জমায়েত হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।



  • والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক