জিজ্ঞাসা-১২৪৭৮:
আসসালামু আলাইকুম। ফিকহি হানাফির অনুসারে ওমরা হজের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতসমূহ কি কি? জানালে উপকৃত হবো। তারিখ: ২৭/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা সিরাজুল হক ঢাকা থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, পবিত্র কুরআন-হাদিসে কোথায় হজ ও ওমরার ফরজ, ওয়াজিব সংখ্যা নির্ধারণ নেই। তবে গুরুত্ব এর কথা এসেছে। তাই এর সংখ্যা নির্ণয়ে সমআনিত ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
হানাফি মাজহাবের মতে, হজের ফরজ ৩টি। ইমাম শাফেয়ীর নিকট অতিরিক্ত আরও একটি রয়েছে। তাহলো সাফা ও মারওয়াতে সায়ী করা।
ركان الحج عند المالكية إن للحجِّ أربعة أركان في المذهب المالكي، وهي: الإحرام، والوقوف بعرفة، والطواف، والسعي، وفيما يأتي بيان هذه الأركان:
ইমাম মালেক ও শাফেয়ীর আরেক মত মতে মুজদালিফায় অবস্থানও ফরয। সূত্র: কিতাবুল ফিকহি আলাল মাজাহিবিল আরবা-১ম খণ্ড; ৫৭৭ পৃ.
এক. ইহরাম বাঁধা। দুই. উ’কুফে আ’রাফা (বা আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা)। তিন. তাওয়াফুয জিয়ারাত।
হজের ওয়াজিব ৬টি
মৌলিক ভাবে হজের ওয়াজিব ৬টি
এক. ‘সাফা ও মারওয়া’ পাহাড়গুলো মধ্যে ৭ বার সায়ি করা।
দুই. অকুফে মুযদালিফায় (৯ই জিলহজ) অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যদয় পর্যন্ত একমুহূর্তের জন্য হলেও অবস্থান করা।
তিন. মিনায় তিন শয়তান (জামারাত) সমূহকে পাথর নিক্ষেপ করা।
চার. ‘হজে তামাত্তু’ ও ‘কিবরান’ কারীরা ‘হজ’ সমাপনের জন্য দমে শোকর করা।
পাঁচ. ইহরাম খোলার পূর্বে মাথার চুল কাটা।
ছয়. মক্কার বাইরের লোকদের জন্য তাওয়াফে বিদা অর্থাৎ মক্কা থেকে বিদায়কালে তাওয়াফ করা।
ছাড়াও আরও কয়েকটি ওয়াজিব রয়েছে।
৭. মীকাতের পূর্বে ইহরাম বাঁধা।
৮. সায়ী সাফা থেকে শুরু করা ওয়াজিব। যদি মারওয়া থেকে শুরু করে তাহলে সাত চক্কর হওয়ার পর অতিরিক্ত আরেকটি চক্কর দিবে। আর প্রথম চক্কর বাতিল ঘোষণা করবে। নতুবা দম দিতে হবে। সায়ীর চক্কর থেকে যদি অধিকাংশ ছেড়ে দেয়, তখন দম ওয়াজিব হবে। আর যদি এক, দুই বা তিন চক্কর ছেড়ে দিলে সদকা ওয়াজিব। (আহসানুল ফতওয়া, খ. ৪, পৃ. ৫২৮)।
৯. দিনের বেলায় আরাফাতে অবস্থান শুরু করলে মাগরিব পর্যন্ত থাকা ওয়াজিব। ১০. তাওয়াফে জিয়ারত দশ তারিখ সুবহে সাদিকের পর থেকে বার তারিখ সূর্য ডুবা পর্যন্ত সময়ে আদায় করা।
১১. দশ তারিখ তামাত্তু ও কেরান কারীদের জন্য পাথর নিক্ষেপ, কুরবানী ও হালকের মাঝে তারতীব ওয়াজিব। আর ইফরাদকারীর জন্য পাথর নিক্ষেপ ও হালকের মাঝে তারতীব ওয়াজিব। এসব কাজ ও তাওয়াফে জিয়ারতের মাঝখানে তারতীব ওয়াজিব নয়।
১২. তাওয়াফে জিয়ারত অযূর সাথে করা ওয়াজিব।
১৩. প্রতিটি তাওয়াফের পরে দু’রাকাত নামাজ পড়া ওয়াজিব। ১৪. মক্কাবাসী ও যারা হিলে তথা হারামের বাইরে ও মীকাতের ভেতরে বসবাস করে, যেমন জিদ্দা, তায়েফ ইত্যাদিতে তখন তাদের কেরান ও তামাত্তু না করা ওয়াজিব। যদি করে দম দিতে হবে। যারা সেখানে বাইর থেকে গিয়ে মুকীম হিসেবে বসবাস করে, তাদেরও একই বিধান।
১৫. হজের তিন ফরযে তারতীব পালন ও নির্দিষ্ট স্থান ও সময়ে আদায় করা ওয়াজিব। নোট: হজের যে কোনো ওয়াজিব ইচ্ছাকৃত বা ভুলে ছুটে গেলে হজ বাতিল হয় না। তবে আদায়ে অক্ষম হলে, তখন দম বা সদকা দিতে হবে। তেমনি হজে যেখানে তারতীব ওয়াজিব সেখানেও আগে পরে করলে দম দিতে হবে।
তবে ওযর ব্যতীত যদি কোনো ওয়াজিব ছেড়ে দেয় তখন পাপ হবে দম দিলেও তা মাফ হবে না; বরং তা মাফ হওয়ার জন্য তাওবা করতে হবে। তবে যদি কোনো ওয়াজিব গ্রহণযোগ্য ওযরের কারণে ছুটে যায় তখন দমও দিতে হয় না। যেমন, মহিলাদের মাসিকের কারণে যদি বিদায়ী তাওয়াফ ছুটে যায়। তবে পুরুষ বিদায়ী তাওয়াফ ছেড়ে দিলে সর্বাবস্থায় দম দিতে হয়।
হজের সুন্নতসমূহ:
হজের সুন্নত ১০টি। যথা: ১. তাওয়াফ করা (ইফরাদ ও কিরান হজকারীর জন্য)। ২. তাওয়াফের সময় প্রথম তিন চক্কর সৈনিকের মতো বীরদর্পে চলা। ৩. খলিফা অথবা তাঁর প্রতিনিধি তিন দিন তিন জায়গায় খুতবা প্রদান করা বা ভাষণ দেওয়া। ৭ জিলহজ কাবা শরিফের হারাম শরিফে, ৯ জিলহজ আরাফাতে মসজিদে নামিরাতে, ১১ জিলহজ মিনায়। ৪. ৮ জিলহজ মক্কা শরিফ থেকে মিনায় গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা এবং রাতে সেখানে অবস্থান করা। ৫. ৯ জিলহজ সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফাতের দিকে রওনা হওয়া। ৬. অকুফে আরাফা বা আরাফাতে অবস্থানের জন্য সকালে গোসল করা। ৭. ৯ জিলহজ আরাফাতে অবস্থান করে সূর্যাস্তের পর মুজদালিফার দিকে রওনা করা। ৯. ১০, ১১ ও ১২ জিলহজ মিনায় রাত্রি যাপন করা। ১০. মিনা থেকে মক্কা শরিফ প্রত্যাবর্তনের সময় ‘মুহাচ্ছার’ নামক জায়গায় কিছু সময় অবস্থান করা।
ফিকহি হানাফির মতে, ওমরার ফরয দুটি
১। ওমরার ইহরাম করা। অর্থাৎ উমরার নিয়তে তালবিয়া পাঠ করা।
২। বাইতুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করা ।
ওমরার ওয়াজিব দুটি
১। সাফা-মারওয়ার মাঝে সায়ী করা।
২। মাথার চুল মুণ্ডানো বা কটা। দলিল:
আমরা হযরত উসমান (রা.)-এর সঙ্গে মক্কায় এসেছি। তাঁকে দেখেছি, তিনি মক্কা থেকে বের হওয়ার আগে ইহরাম খুলতেন না। তিনি শুধু বাইতুল্লাহ শরিফের তাওয়াফ করতেন এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করতেন। এরপর মাথা মুণ্ডিয়ে ফেলতেন।’ [মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস: ১৩৭৮৬]
ওমরার সুন্নতসমূহ:
উল্লিখিত রুকন ও ওয়াজিবসমূহ ব্যতীত উমরার অন্য আমলসমূহ সুন্নত, যেমন:
১ - ইহরামের সময় গোসল করা।
২- একটি চাদর ও একটি সেলাইবিহীন লুঙ্গিতে ইহরাম করা।
৩ - তালবিয়া পাঠ করা ও তা উঁচু স্বরে পাঠ করা।
৪- তাওয়াফের সময় ইযতিবা করা। ইযতিবা হলো ডানবগলের নিচ দিয়ে চাদর পেঁচিয়ে ডানকাঁধ উন্মুক্ত রাখা।
- والله اعلم بالصواب