আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৭১৯: সাহাবায়ে কেরাম কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামে সাওয়াব রেছানি করেছেন?

No Comments

 












জিজ্ঞাসা-১২৭১৯:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আসসালাুআলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।প্রশ্ন:১২৭১৮ এর জবাবের আলোকে জানতে চাই সাহাবাগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে এভাবে সওয়াব পাঠিয়েছেন মর্মে কোন স্পষ্ট দলীল প্রমাণ আছে কিনা? মাগফিরাতের, দোয়ার বিষয় গুলো তো স্পষ্ট এতে তো কারো আপত্তি নাই।

তারিখ:  ১৩/০৮/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

মাওলানা   নুরুল ইসলাম বরগুনা, থেকে।


 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, হজরতে সাহাবায়ে কেরাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে এভাবে সওয়াব পাঠিয়েছেন মর্মে কোন স্পষ্ট দলীল প্রমাণ নেই।


তবে  কোন আমল গ্রহণযোগ্য, আমলযোগ্য- জায়েজ হওয়ার জন্য নবী বা সাহাবাদের করা জরুরি নয়। বরং কোরআন-হাদিস-আসার থেকে দালালাতুন নস বা ইশারাতুন নস  হলেই যথেষ্ট। 

দ্বিতীয় কথা হলো, হজরতে ফোকাহায়ে উম্মত হাদিসের গভীর সমুদ্র থেকে উসূল গ্রহণ করে লক্ষ কোটি মাসয়ালা ইস্তিমবাত করে উম্মার কল্যাণ সাধিত করেছেন, না হলে নিত্য নতুন হাজারো দ্বীনি প্রয়োজনের সমাধান মানুষ কোরআন হাদিসে সরাসরি খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়।


আর ওলামা-ফোকাহার সিদ্ধান্ত, ব্যাখ্যা না মানলে এই দ্বীন টিকা  সম্ভব নয়। উদাহরণস্বরূপ:


(০১) حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الْبَالِسِيُّ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ الْحَسَنِ بْنِ شَقِيقٍ، حَدَّثَنَا حُسَيْنُ بْنُ وَاقِدٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ الْعَهْدُ الَّذِي بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمُ الصَّلاَةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ ‏"‏ ‏.‏

ইসমাঈল ইবন ইবরাহীম বালিসী (রাহঃ) ........ বুরায়দা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ আমাদের ও তাদের (কাফিরদের) মধ্যে যে অঙ্গীকার রয়েছে, তা হলো সালাত। কাজেই যে ব্যক্তি সালাত বর্জন করলো, সে কুফরী করলো। তাখরিজ: সুনানে ইবনে মাজা' ১০৭৯; তিরমিজি-২৬২১; নাসায়ি-৪৬৩; আহমদ-২২৯৮৭

তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)


এরকম একাধিক হাদিসে নামাজ ত্যাগকারী কাফের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এখন এই হাদিসের জাহেরী অর্থ ধরলে আমরা মুসলিম খুজে পাবো না, আর আশ্চর্য হল স্বামী স্ত্রীর কেউ কাফের বা মুরতাদ  সাথে সাথেই বিবাহ বন্ধন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। 

ওলামায়েদ্বীন  কাফেরের ব্যাখ্যা করেছেন নামাজকে যে অস্বীকার করে, নামাজ ত্যাগকারী কাফের নয়।


(০২) হাদিস শরীফকে ভেজাল যুক্ত বা জাল হাদিস থেকে সংরক্ষণ করার লক্ষ্যে ওলামায়ে দ্বীন উসূলে হাদীস বা হাদিস যাচাই-বাছাই এর মানদন্ড আবিষ্কার করেছেন।

যা সরাসরি কোরআন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়।

এখন যদি উসূলে হাদিস না মানি,  তাহলে সহিহ, দুর্বল জাল হাদিস নির্ণয় করা সম্ভব নয়।


কোরআন হাদিসের মর্ম উদ্ধারে ক্ষেত্রে ফুকাহায়ে উম্মত অগ্রগামী।  যেমন বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম তিরমিজি (রহ.) বলেন,  الفقهاء و هم اعلم يعني الحديث অর্থাৎ ফুকাহায়ে কেরাম  হাদিসের অর্থ বিষয়ে অধিক জ্ঞাত। সূত্রঃ  জামে তিরমিজি-৩/৩১৫পৃ.



তৃতীয় কথা হলো, প্রশ্নে উল্লেখিত ঈসালে সওয়াবের নিয়মটা সরাসরি নস না থাকলেও, ফোকাহায়ে কেরাম নিম্নের কোরান এবং হাদিসের ইশারাতুন নস দ্বারা দলিল গ্রহণ করেছেন। যেমন,


হাম্বলী মাযহাবের বিখ্যাত ফকিহ আল্লামা ইবনে কুদামা রহ. বলেন,

 إجماع المسلمين، فإنهم في كل عصر ومصر يجتمعون ويقرؤون القرآن، ويهدون ثوابه إلى موتاهم، من غير نكير.

এতে মুসলমানদের ইজমা আছে। প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক শহরে তারা সমবেত হয়ে কুরআন তিলাওয়াত করে সওয়াব রেসানি করেছে। এতে কেউ কোনো আপত্তি করেনি। -আলমুগনী ৩/৫২২

দলিল:

আয়াত নং-০১

Surah Al-Hashr, Verse 10:

وَالَّذِينَ جَاءُوا مِن بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ 

আর এই সম্পদ তাদের জন্যে, যারা তাদের পরে আগমন করেছে। তারা বলেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে এবং ঈমানে আগ্রহী আমাদের ভ্রাতাগণকে ক্ষমা কর। সূরা হাশর-১০


আয়াত নং-০২

فَاعْلَمْ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَ اسْتَغْفِرْ لِذَنْۢبِكَ وَ لِلْمُؤْمِنِیْنَ وَ الْمُؤْمِنٰتِ وَ اللهُ یَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَ مَثْوٰىكُمْ.

জেনে রেখো, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই এবং ক্ষমা প্রার্থনা কর নিজ ত্রুটি-বিচ্যুতিরন্য এবং মুসলিম নর-নারীদের জন্যও। সূরা মুহাম্মদ-১৯


হাদিস নং-০১

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ، - يَعْنِي الإِسْكَنْدَرَانِيَّ - عَنْ عَمْرٍو، عَنِ الْمُطَّلِبِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ شَهِدْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الأَضْحَى بِالْمُصَلَّى فَلَمَّا قَضَى خُطْبَتَهُ نَزَلَ مِنْ مِنْبَرِهِ وَأُتِيَ بِكَبْشٍ فَذَبَحَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِيَدِهِ وَقَالَ " بِسْمِ اللَّهِ وَاللَّهُ أَكْبَرُ هَذَا عَنِّي وَعَمَّنْ لَمْ يُضَحِّ مِنْ أُمَّتِي " .

কুতায়বা ইবনে সা‘ঈদ (রাহঃ) ..... জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ঈদুল আযহার দিন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর সঙ্গে ঈদগাহে উপস্থিত হই। তিনি খুতবা শেষ করার পর যখন মিম্বর হতে অবতরণ করেন, তখন তাঁর নিকট একটি বকরী আনা হয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) নিজ হাতে সেটি যবেহ করেন এবং এ সময় বলেনঃ বিসমিল্লাহ-হি আল্লাহু আকবার। এটি আমার তরফ হতে এবং আমার উম্মতের ঐ ব্যক্তিদের পক্ষ হতে, যারা কুরবানী করেনি।

সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২৮০১ (আন্তর্জাতিক নং ২৮১০)

তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)


সারকথা হলো, হজরতের সাহাবায়ে কেরাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে এভাবে সওয়াব পাঠিয়েছেন মর্মে কোন স্পষ্ট দলীল প্রমাণ নেই, তবে ফোকাহায়ে কেরাম ইশারাতুন নস দ্বারা জায়েজ বলেছেন।


 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক