জিজ্ঞাসা-১২৭১৪:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আসসালামুয়ালাইকুম। লোভ সম্পর্কে ইসলাম। লেশনপ্লান প্রয়োজন।
তারিখ: ০৯/০৮/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আসাদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
০১. ভূমিকা: বিজ্ঞ ওলামায়ে দ্বীন ও মাশায়েখগণ মানুষের নেতিবাচক চরিত্র গুলির দুইটি দিক মূল বিবেচনা করেছেন। অর্থাৎ সমস্ত মন্দ চরিত্রের মূল হল দুইটি জিনিস, এক লোভ দুই অহংকার। বাকিগুলো হলো এ দুটির শাখা। তাই তাই নিচে লোভের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, ক্ষতিসমূহ, বাঁচার উপায় উল্লেখ করা হবে, ইনশাল্লাহ।
০২. লোভের আভিধানিক অর্থ:
লোভ শব্দটি বাংলা। আরবিতে প্রতিশব্দ হলো الحرص (হিরস)। সমর্থবোধক শব্দ হচ্ছে -
إمْساك , إمْسَاك , إمْسَاكٌ , بُخْل , بُخْلٌ , تقتيرٌ , تَقْتِير , تَقْتِيرٌ , جَشَع , جَشَعٌ , شَرَه , شُحّ , شُحٌّ , ضِيق , طَمَع , مُسْكَة , نَهَم ، جَشَع ، طَمَع , شَرَه ، تَمَسُّك ، بُخْل , شِحّ ، بُخْل
مرادفات حَرَص (فعل):
جَشِعَ , رَغِبَ , شَرِهَ , طَمِعَ ،جَشِعَ ، طَمَعَ , شَرِهَ ، تَمَسَّكَ ، بَخِلَ , شَحَّ ، بَخِلَ
অর্থাৎ লোভ, আগ্রহী, ইচ্ছা, বিরত থাকা,কৃপণ,পেটুক, অভাব ইত্যাদি।
০৩. লোভের পারিভাষিক সংজ্ঞা:
লোভ হ'ল লিপ্সা বা কাম্য বস্ত্ত লাভের প্রবল ইচ্ছা।
شدّةُ الإِرادة والشَّرَه إِلى المطلوب . وقال الجوهري : الحِرْصُ الجَشَعُ ، وقد حَرَصَ عليه يَحْرِصُ ويَحْرُصُ حِرْصاً وحَرْصاً وحَرِصَ حَرَصاً ؛ وقول أَبي ذؤيب : ولقد حَرَِِصْت بأَن أُدافعَ عنهمُ ، فإِذا المَنيّةُ أَقْبَلَتْ لا تُدْفَعُ عدَّاه بالباء لأَنه في معنى هَمَمْتُ ، والمعروف حَرَصْتُ عليه .
অর্থাৎ ইচ্ছার তীব্রতা এবং যা কাঙ্খিত তার জন্য লোভ। আল-জাওহারী বলেছেন: লোভী আগ্রহ, এবং তিনি এটির প্রতি আগ্রহী, প্রখর আগ্রহ, তীক্ষ্ণতা এবং প্রখর আগ্রহের প্রতি আগ্রহী।
যেমন, আবী যুইব বলেন: আমি তাদের রক্ষা করতে আগ্রহী ছিলাম, তাই যদি মৃত্যু আসে তবে তাকে বা' দিয়ে ব্যতীত আমি প্রতিহত করতে পারতাম না, কারণ এটি হুম এর অর্থ, এবং আমি যে অনুগ্রহের জন্য আগ্রহী ছিলাম। সূত্র: আলমুজাম কামুসুল মহিত
০৪. লোভের প্রকারভেদ:
হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী লোভ প্রথমত দুই প্রকার।
ক) সম্মান-খ্যাতির লোভ।
খ) সম্পদের লোভ। দলিল:
حَدَّثَنَا سُوَيْدُ بْنُ نَصْرٍ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْمُبَارَكِ، عَنْ زَكَرِيَّا بْنِ أَبِي زَائِدَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَعْدِ بْنِ زُرَارَةَ، عَنِ ابْنِ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ الأَنْصَارِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَا ذِئْبَانِ جَائِعَانِ أُرْسِلاَ فِي غَنَمٍ بِأَفْسَدَ لَهَا مِنْ حِرْصِ الْمَرْءِ عَلَى الْمَالِ وَالشَّرَفِ لِدِينِهِ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . وَيُرْوَى فِي هَذَا الْبَابِ عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَلاَ يَصِحُّ إِسْنَادُهُ .
. সুওয়ায়াদ ইবনে নসর (রাহঃ) ..... ইবনে কা‘ব ইবনে মালিক আনসারী তৎ পিতা কা‘ব ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ দুটো ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে বকরীর পালে ছেড়ে দিলেও তারা এতটুকু ক্ষতি করতে পারে না একজনের অর্থ ও প্রতিপত্তির মোহ তার দ্বীনের যতটুকু ক্ষতি করতে পারে। তাখরিজ: জামে তিরমিজি -২৩৭৬
নোট: এ হাদীসটি হাসান-সহীহ।
০৫. সম্মান-খ্যাতির লোভ। এটা আবার দুই প্রকার। যথা:
الحرص على الشرف، وهو على قسمين:
أحدهما: طلب الشرف بالوِلاية والسلطان والمال ، وهذا خطير جداً، – وهو الغالب – وهو يمنع خير الآخرة وشرفها وكرامتها، لأنه يَحمِل العبد على التكَبّر والجَور.
সম্মানের প্রতি লোভ আবার দুই প্রকার।
তাদের মধ্যে একটি: অভিভাবকত্ব, কর্তৃত্ব/রাজত্ব এবং অর্থের মাধ্যমে সম্মান খোঁজা, এবং এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক, এবং এটি সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং এটি আখেরাতের কল্যাণ, সম্মান এবং মর্যাদাকে বাধা দেয়, কারণ এটি বান্দাকে অহংকার ও জুলুমের দিকে ঠেলে দেয়।
হাদিস নং -০১
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ قَالَ لِىْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَا عَبْدَ الرَّحْمَنِ لاَ تَسْأَلِ الإِمَارَةَ، فَإِنَّكَ إِنْ أُوْتِيْتَهَا عَنْ مَسْأَلَةٍ وُكِلْتَ إِلَيْهَا، وَإِنْ أُوْتِِيْتَهَا مِنْ غَيْرِ مَسْأَلَةٍ أُعِنْتَ عَلَيْهَا،
আব্দুর রহমান ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আব্দুর রহমান, তুমি কখনো নেতৃত্ব চেয়ে নিও না। কেননা তুমি যদি চেয়ে নিয়ে তা লাভ কর, তাহ’লে তোমাকে ঐ দায়িত্বের হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে (অর্থাৎ তুমি দায়িত্ব পালনে হিমশিম খাবে, কিন্তু কোন সহযোগিতা পাবে না)। আর না চাইতেই যদি তা পাও তাহ’লে তুমি সেজন্য সাহায্যপ্রাপ্ত হবে’। তাখরিজ: বুখারী হা/৭১৪৭; মুসলিম হা/১৬৫২
হাদিস নং -০২
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, إِنَّكُمْ سَتَحْرِصُونَ عَلَى الإِمَارَةِ، وَسَتَكُونُ نَدَامَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ، فَنِعْمَ الْمُرْضِعَةُ وَبِئْسَتِ الْفَاطِمَةُ ‘তোমরা সত্বর নেতৃত্বের লোভী হয়ে পড়বে। অথচ সেটি ক্বিয়ামতের দিন লজ্জার কারণ হবে। অতএব কতইনা সুন্দর দুগ্ধ দায়িনী ও কতই না মন্দ দুগ্ধ বিচ্ছিন্নকারিনী’। তাখরিজ:বুখারি-৭১৪৮; মিশকাতুল মাসাবিহ- ৩৬৮১
হাদিস নং -০৩
حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلَانَ قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو دَاوُدَ قَالَ: أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ، عَنْ عَاصِمٍ، قَالَ: سَمِعْتُ زِرَّ بْنَ حُبَيْشٍ، يُحَدِّثُ عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَهُ: «إِنَّ اللَّهَ أَمَرَنِي أَنْ أَقْرَأَ عَلَيْكَ القُرْآنَ»، فَقَرَأَ عَلَيْهِ {لَمْ يَكُنِ الَّذِينَ كَفَرُوا} [البينة: 1] وَقَرَأَ فِيهَا: «إِنَّ ذَاتَ الدِّينِ عِنْدَ اللَّهِ الحَنِيفِيَّةُ المُسْلِمَةُ لَا اليَهُودِيَّةُ وَلَا النَّصْرَانِيَّةُ وَلَا المَجُوسِيَّةُ، مَنْ يَعْمَلْ خَيْرًا فَلَنْ يُكْفَرَهُ» وَقَرَأَ عَلَيْهِ: «لَوْ أَنَّ لِابْنِ آدَمَ وَادِيًا مِنْ مَالٍ لَابْتَغَى إِلَيْهِ ثَانِيًا، وَلَوْ كَانَ لَهُ ثَانِيًا، لَابْتَغَى إِلَيْهِ ثَالِثًا، وَلَا يَمْلَأُ جَوْفَ ابْنِ آدَمَ إِلَّا التُّرَابُ، وَيَتُوبُ اللَّهُ عَلَى مَنْ تَابَ»: «هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ وَقَدْ رُوِيَ مِنْ غَيْرِ هَذَا الوَجْهِ» رَوَاهُ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبْزَى، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَهُ: «إِنَّ اللَّهَ أَمَرَنِي أَنْ أَقْرَأَ عَلَيْكَ القُرْآنَ» وَقَدْ رَوَاهُ قَتَادَةُ، عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِأُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ: «إِنَّ اللَّهَ أَمَرَنِي أَنْ أَقْرَأَ عَلَيْكَ القُرْآن
৩৮৯৮। মাহমুদ ইব্ন গায়লান (রাহঃ)... উবাই ইবন কা'ব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাকে বলেছিলেন : আল্লাহ তা'আলা আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন তোমাকে কুরআন পাঠ করে শুনাতে। এরপর তিনি (সূরা বায়্যিনা ৯৮) পাঠ করে শোনালেন ।
তিনি আরো পাঠ করলেন : আল্লাহর কাছে একমাত্র দীন হল একনিষ্ঠ আল্লাহয় সমর্পিত দীন। ইয়াহুদীবাদ নয়, খৃষ্টবাদও নয়, অগ্নি-উপাসনাবাদও নয়। যে ব্যক্তি ভাল করবে, তা কখনো অস্বীকার করা হবে না।
তিনি আরো পাঠ করলেন : কোন আদম সন্তানের জন্য যদি এক উপত্যকাপূর্ণ সম্পদও হয়, তবুও সে অবশ্যই দ্বিতীয়টির কামনা করবে। যদি দ্বিতীয়টিও তার হয়, তবুও সে অবশ্যই তৃতীয়টির কামনা করবে। মাটি, ছাড়া আদম সন্তানের উদর আর কিছুই পূর্ণ করতে পারবে না। আর আল্লাহ যাকে ফেরানোর, তাকে ফিরাবেন । তাখরিজ: তিরমিজি - ৩৮৯৮
হাদীসটি হাসান-সাহীহ।
عن وهب بن منبه رحمه الله أنه قال: «أَعوَن الأخلاق على الدين الزهادة في الدنيا، وأَوشَكُها ردىً اتباع الهوى، ومِن اتباع الهوى الرغبة في الدنيا، ومِن الرغبة في الدنيا حب المال والشرف، ومِن حب المال والشرف استحلال المحارم».
ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ রহ. -এর সূত্রে, তিনি বলেছেন: "ধর্মের নৈতিকতার সাহায্যকারী হল এই দুনিয়া ত্যাগ করা, এবং এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর হল আবেগের অনুসরণ করা, এবং আবেগের অনুসরণ থেকে হল আকাঙ্ক্ষা। দুনিয়া, আর এই দুনিয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে অর্থ ও সম্মানের ভালবাসা এবং অর্থ ও সম্মানের ভালবাসা থেকে অজাচারের অনুমতি রয়েছে।"
الثاني: طلب الشرف والعُلُوّ على الناس بالأمور الدينية كالعلم والعمل والزهد، وهذا أفحش من الأول وأقبح وأشد فساداً وخطراً، لأنّ العلم زاد الآخرة لم يُجعَل في حظوظ الدنيا، لأجل هذا كان أشد الناس عذاباً يوم القيامة من كانت هذه حاله.
অর্থাৎ দ্বিতীয়টি: জ্ঞান, কাজ এবং ইবাদত/সাধনার মতো ধর্মীয় বিষয়ে মানুষের উপর সম্মান ও আধিপত্য খোঁজা।
আয়াত নং -০১
,لاَ تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَفْرَحُونَ بِمَا أَتَوْا وَيُحِبُّونَ أَنْ يُحْمَدُوا بِمَا لَمْ يَفْعَلُوا فَلَا تَحْسَبَنَّهُمْ بِمَفَازَةٍ مِنَ الْعَذَابِ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ ‘যেসব লোকেরা তাদের মিথ্যাচারে খুশী হয় এবং তারা যা করেনি, এমন কাজে প্রশংসা পেতে চায়, তুমি ভেব না যে, তারা শাস্তি থেকে বেঁচে যাবে। বস্ত্ততঃ তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক আযাব’ (আলে ইমরান ৩/১৮৮)
হাদিস নং -০১
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,مَنْ تَعَلَّمَ عِلْمًا مِمَّا يُبْتَغَى بِهِ وَجْهُ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ لاَ يَتَعَلَّمُهُ إِلاَّ لِيُصِيبَ بِهِ عَرَضًا مِنَ الدُّنْيَا لَمْ يَجِدْ عَرْفَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘যে ব্যক্তি ইলম শিক্ষা করল যার মাধ্যমে আল্লাহর চেহারা অন্বেষণ করা হয়, অথচ সে তা শিক্ষা করে দুনিয়াবী সম্পদ অর্জন করার জন্য, সে ক্বিয়ামতের দিন জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না’। তাখরিজ:
হাদিস নং -০২
حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، ح وَحَدَّثَنَا هَنَّادٌ، - يَعْنِي ابْنَ السَّرِيِّ - عَنْ أَبِي الأَحْوَصِ، - الْمَعْنَى - عَنْ عَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ، قَالَ مُوسَى عَنْ سَلْمَانَ الأَغَرِّ، - وَقَالَ هَنَّادٌ عَنِ الأَغَرِّ أَبِي مُسْلِمٍ، - عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، - قَالَ هَنَّادٌ - قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ الْكِبْرِيَاءُ رِدَائِي وَالْعَظَمَةُ إِزَارِي فَمَنْ نَازَعَنِي وَاحِدًا مِنْهُمَا قَذَفْتُهُ فِي النَّارِ " .
মুসা ইবনে ইসমাঈল (রাহঃ) .... হান্নাদ (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ আল্লাহ বলেন, ‘‘অহংকার আমার চাদর এবং শ্রেষ্ঠত্ব আমার লুঙ্গী স্বরূপ। তাই, যে ব্যক্তি এ দু’টি জিনিসে আমার শরীক হতে চায়, আমি তাকে দোজখে নিক্ষেপ করবো।’’
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস আন্তর্জাতিক নং ৪০৯০
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
হাদিস/আসার নং -০৩
ওমর ফারূক (রাঃ)-এর নিকটে জনৈক ব্যক্তি লোকদের প্রতি ওয়ায করার অনুমতি চাইলে তিনি তাকে বলেন, أَخْشَى عَلَيْكَ أَنْ تَقُصَّ فَتَرْتَفِعَ عَلَيْهِمْ فِى نَفْسِك ثُمَّ تَقُصَّ فَتَرْتَفِعَ حَتَّى يُخَيَّلَ إِلَيْكَ أَنَّكَ فَوْقَهُمْ بِمَنْزِلَةِ الثُّرَيَّا فَيَضَعَكَ اللَّهُ تَحْتَ أَقْدَامِهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِقَدْرِ ذَلِكَ. ‘আমার ভয় হয় ওয়ায করার ফলে তোমার মধ্যে ধ্রুবতারার ন্যায় উচ্চ মর্যাদা পাওয়ার অহংকার সৃষ্টি হবে। আর তাতে আল্লাহ তোমাকে ক্বিয়ামতের দিন ঐসব লোকদের পায়ের তলায় রাখবেন’। তাখরিজ: মুসনাদে আহমদ -১১১
নোট: হাদিসটির/আসারটির সনদ হাসান।
وقد حذّر السلف رحمهم الله من هذا الصنيع أشدّ التحذير، فعن علي رضي الله عنه قال: «يا حَمَلَة العلم اعملوا به، فإنما العالم من عَمِل بما عَلِم، فوافق عَمَلَه عِلمَه، وسيكون أقوام يحملون العلم لا يجاوز تراقيهم، يخالف عَمَلهم عِلمهم، وتخالف سريرتهم علانيتهم، يجلسون حِلَقاً حِلَقاً فيباهُون بعضهم بعضاً، حتى إنّ الرجل ليغضب على جليسه إذا جلس إلى غيره ويَدَعه، أولئك لا تَصعَد أعمالهم في مجالسهم تلك إلى الله تعالى».
এবং সালাফ বা পূর্বসূরিরা, এই কাজের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে সতর্ক করেছিলেন। হজরত আলী রা বলেছিলেন: "হে জ্ঞানের ধারকগণ, এটির উপর আমল করুন, কারণ আলেম হল একজন। যে সে যা জানে তার সাথে কাজ করে এবং তার কাজ তার জ্ঞানের সাথে একমত হয়। প্রকাশ্যে, তারা চেনাশোনা করে বসে এবং একে অপরকে দেখায়, যাতে একজন লোক তার সঙ্গীর উপর রাগ করে যদি সে অন্য কারো সাথে বসে তাকে ছেড়ে চলে যায়। কর্ম ঐ পরিষদে সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে আরোহন না।
وعن سفيان بن عيينة رحمه الله أنه قال : قال مطرف: «إنّ أقبح القُبح: الرغبة في الدنيا أن تُطلَبَ بعمل الآخرة».
এবং সুফিয়ান বিন উয়ায়নাহ (রহঃ) এর সূত্রে, আল্লাহ তার উপর রহম করুন, তিনি বলেছেন: মুতাররিফ বলেছেন: "কদর্যের মধ্যে সবচেয়ে কুৎসিত: দুনিয়ার আকাঙ্ক্ষা হল পরকালের কাজের জন্য অন্বেষণ করা।"
০৬. সম্পদের লোভ: এটা আবার দুই প্রকার।যথা:
والحرص على المال هو أيضاً على نوعين:
أحدهما: شدة محبة المال مع شدة طلبه من وجوهه المباحة، والمبالغة في ذلك، وهذا النوع مُضِرٌ بآخرة العبد ، لأنّ فيه صَرفٌ لِأَنفَسِ الأوقات في تحصيل الأقوات مع تضييع التزوّد للآخرة.
তার মধ্যে একটি: অর্থের প্রতি ভালবাসার তীব্রতা এবং অনুমতিযোগ্য দিকগুলির জন্য তার চাহিদার তীব্রতা এবং এতে অতিরঞ্জন, এবং এই প্রকার বান্দার পরকালের জন্য ক্ষতিকারক, কারণ এতে সে জীবিকা অর্জনের জন্য সবচেয়ে মূল্যবান সময় ব্যয় করে। পরকালের জন্য রসদ/পাথেয় নষ্ট করার সময়।
ومن المواعظ في ذلك:
قول ابن مسعود رضي الله عنه: «الرضا أن لا ترضي الناس بسخط الله ، ولا تَحمَد أحداً على رِزق الله، ولا تَلُم أحداً على ما لم يؤتك الله ، فإنّ الرزق لا يسوقه حِرصُ حريص ، ولا يردّه كراهية كاره».ِ
ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন: “সন্তুষ্টি এই যে, আপনি আল্লাহর ক্রোধে মানুষকে সন্তুষ্ট করবেন না, আল্লাহর বিধানের জন্য কারো প্রশংসা করবেন না এবং আল্লাহ আপনাকে যা দেননি তার জন্য কাউকে দোষারোপ করবেন না, কারণ রিযিক নয়। অধীর আগ্রহের দ্বারা চালিত, এবং বিদ্বেষীদের ঘৃণা দ্বারা তাড়িয়ে দেওয়া হয় না।"
الثاني: طلب المال من الوجوه المحرّمة، مع منع الحقوق الواجبة ، والإيغال والحرص الشديد على جمعه، وفي هذا منقصة للدين والإيمان، وانتهاك للحرمات.
দ্বিতীয়টি: হারাম উপায় থেকে অর্থ চাওয়া, প্রাপ্য অধিকার অস্বীকার করার সময়, অতিরঞ্জিত করা এবং তা আদায়ে খুব সতর্কতা অবলম্বন করা এবং এটি দ্বীন ও বিশ্বাসের অভাব এবং পবিত্রতার লঙ্ঘন।
قال السلف رحمهم الله: «الشحُّ هو الحرص الشديد، الذي يحمل صاحبه على أن يأخذ الأشياء من غير حِلّها ويمنعها من حقوقها».
সালাফ বা পূর্বসূরিরা বলেছেন: "অভাব হল চরম আগ্রহ/লোভ যা তার মালিককে অমীমাংসিত জিনিসগুলি নিতে এবং তাদের অধিকার থেকে বাধা দিতে বাধ্য করে।"
অর্থ-সম্পদের লোভ : লোভ মানুষের স্বভাব জাত একটি বৈশিষ্ট্য। অধিক পাওয়ার আকাংখাকে এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ উপার্জনের আশা ব্যক্ত করা এই বৈশিষ্ট্যের অন্যতম। প্রত্যেক বান্দার জন্য আল্লাহ রিযিক বণ্টন করে দিয়েছেন। যা থেকে কমবেশী করা হবে না। অতএব পরিমিত ও প্রয়োজন পূর্ণ হওয়ার পর আরও বেশী পাওয়ার আকাংখাকে দমন করতে হবে। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন, أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ-حَتَّى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ ‘অধিক পাওয়ার আকাংখা তোমাদের (পরকাল থেকে) গাফেল রাখে, যতক্ষণ না তোমরা কবরস্থানে উপনীত হও’ (তাকাছুর ১০২/১-২)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দো‘আ করতেন, اللَّهُمَّ ارْزُقْ آلَ مُحَمَّدٍ قُوتًا ‘হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদের পরিবারকে পরিমিত রিযিক দান কর’। তাখরিজ: বুখারি -৬৪৬০; মুসলিম -১০৫৫
অতএব হে লোভী! যখন তুমি মালের পেছনে জীবন শেষ করলে, তখন আখেরাতের জন্য তুমি কখন সময় দিবে? অথচ আল্লাহ বলেন,يَا ابْنَ آدَمَ تَفَرَّغْ لِعِبَادَتِى أَمْلأْ صَدْرَكَ غِنًى وَأَسُدَّ فَقْرَكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ مَلأْتُ صَدْرَكَ شُغْلاً وَلَمْ أَسُدَّ فَقْرَكَ ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য অবসর হও। তাহ’লে আমি তোমার অন্তর প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দিব এবং তোমার অভাব দূর করে দিব। আর যদি তা না কর তাহ’লে তোমার দু’হাত ব্যস্ততা দিয়ে ভরে দিব এবং তোমার অভাব দূর করব না’। তাখরিজ: ইবনে মাজাহ -৪১০৭
কবি বলেন, وَلاَ تَحْسَبَنَّ الْفَقْرَ مِنْ فَقْرِ الْغِنَى + وَلَكِنْ فَقْرُ الدِّيْنِ مِنْ أَعْظَمِ الْفَقْرِ‘সচ্ছলতা হারানোকে দরিদ্রতা ভেবো না। বরং দ্বীন হারানোই হ’ল সবচেয়ে বড় দরিদ্রতা’। সূত্র: মাউজু রাসায়েল -৬৫ পৃষ্ঠা, ইবনে রজব হাম্বলি রহ.
নিঃসন্দেহে মালের লোভ সকল শত্রুর চেয়ে বড় শত্রু। যা মানুষকে সর্বদা ব্যস্ত রাখে। অথচ তা তার নিজের কোন কাজে লাগে না। যা তাকে আখেরাতের কাজ থেকে বিরত রাখে। অথচ যেটা ছিল তার নিজের জন্য। কেননা অতিরিক্ত যে মাল জমা করার জন্য সে দিন-রাত দৌড়ঝাঁপ করছে, তা সবই সে ফেলে যাবে। কিছুই সাথে নিতে পারবে না, তার নিজস্ব নেক আমলটুকু ব্যতীত। অথচ সে আমল করার মত ফুরছত তার নেই। কবি হুসাইন বিন আব্দুর রহমান বলেন, الْمَالُ عِنْدَكَ مَخْزُونً لِوَارِثِهِ + مَا الْمَالُ مَالُكَ اِلاَّ يَوْمَ تُنْفِقُهُ ‘মাল তোমার কাছে জমা থাকে তার ওয়ারিছদের জন্য। আর ঐ মাল তোমার নয়, যতক্ষণ না তুমি তা (আল্লাহর পথে) ব্যয় করবে’। সূত্র: কিতাবুল বুখালা-২২২, খতিবে বাগদাদি রহ.
অতএব লোভ হ’ল দু’প্রকারের। ক্ষতিকর লোভ (فاجع حرص) যা তাকে আখেরাত থেকে ফিরিয়ে দুনিয়ার কাজে লিপ্ত রাখে। আর কল্যাণকর লোভ (نافع حرص), যা তাকে আল্লাহর আনুগত্যের কাজে আকৃষ্ট করে ও সেদিকেই ব্যস্ত রাখে।
মালের লোভ হ’ল, যা অবৈধ ও হারাম পথে উপার্জনে প্ররোচিত করে। এটাকে الشُّحُّ বা কৃপণতা বলে। যা নিন্দিত। আল্লাহ বলেন, وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ‘যে ব্যক্তি হৃদয়ের কৃপণতা থেকে বাঁচল, সে সফলকাম হ’ল’ (হাশর ৫৯/৯)।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, إِيَّاكُمْ وَالشُّحَّ فَإِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بِالشُّحِّ أَمَرَهُمْ بِالْبُخْلِ فَبَخَلُوا وَأَمَرَهُمْ بِالْقَطِيعَةِ فَقَطَعُوا وَأَمَرَهُمْ بِالْفُجُورِ فَفَجَرُوا ‘তোমরা কৃপণতা হ’তে বেঁচে থাক। কেননা কৃপণতা তোমাদের পূর্বেকার লোকদের ধ্বংস করেছে। এ বস্ত্ত তাদের বলেছে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করতে, তখন সে তা করেছে। তাদের বখীলী করার নির্দেশ দিয়েছে, তখন সে তা করেছে। তাদের পাপ করার নির্দেশ দিয়েছে, তখন সে তা করেছে’। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ -১৬৯৮
জাবের (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে, وَاتَّقُوا الشُّحَّ فَإِنَّ الشُّحَّ أَهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حَمَلَهُمْ عَلَى أَنْ سَفَكُوا دِمَاءَهُمْ وَاسْتَحَلُّوا مَحَارِمَهُمْ...‘এ বস্ত্ত তাদেরকে রক্ত প্রবাহিত করতে প্ররোচিত করে (তখন তারা সেটা করে) এবং তারা হারামকে হালাল করে’। তাখরিজ: মুসলিম -২৫৭৮
قال الإمام علی (ع(: أغنی الأغنياءِ مَن لَم يَکُن لِلحرصِ أسيراً.
ইমাম আলী (আঃ) বলেছেন : ‘সেই ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা ধনি যে লোভের বন্দি নয়'।
الإمام الصادق (ع) : کانَ أميرُ المؤمِنِين صلواتُ الله عليه يقول: ابن آدم، إن کُنت تُرِيدُ مِن الدّنيا ما يَکفِيک فإِنَّ أيسر ما فِيها يَکفِيک، وَ إِن کنت إنّما تُرِيدُ ما لا يَکفِيک فإنَّ کلَّ ما فِيها لا يَکفِيک.
ইমাম সাদিক (আঃ) বলেছেন : আমিরুল মু'মিনীন (আঃ) বলতেন যে, হে আদমের সন্তানেরা! যদি তুমি দুনিয়া হতে পরিমাণ মত চাও তাহলে সেটাই তোমার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু যদি পরিমাণের চেয়ে বেশী চাও, সমস্ত দুনিয়াও তোমার জন্য যথেষ্ঠ নয়'। (আল কাফী, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩১৬, হাদীস নং ৭)
০৭. সাওয়াল ও লালসা ব্যতীত দান গ্রহণ বৈধ
وَحَدَّثَنَا هَارُونُ بْنُ مَعْرُوفٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ وَهْبٍ، ح وَحَدَّثَنِي حَرْمَلَةُ بْنُ يَحْيَى، أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ سَمِعْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ، - رضى الله عنه - يَقُولُ قَدْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُعْطِينِي الْعَطَاءَ فَأَقُولُ أَعْطِهِ أَفْقَرَ إِلَيْهِ مِنِّي . حَتَّى أَعْطَانِي مَرَّةً مَالاً فَقُلْتُ أَعْطِهِ أَفْقَرَ إِلَيْهِ مِنِّي . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " خُذْهُ وَمَا جَاءَكَ مِنْ هَذَا الْمَالِ وَأَنْتَ غَيْرُ مُشْرِفٍ وَلاَ سَائِلٍ فَخُذْهُ وَمَا لاَ فَلاَ تُتْبِعْهُ نَفْسَكَ " .
২২৭৬। হারুন ইবনে মারুফ ও হারামালা ইবনে ইয়াহিয়া (রাহঃ) ......... উমর উবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে কিছু দান করতে চাইলেন। আমি বললাম, আমার চাইতে যারা বেশী দারিদ্র তাদের দান করুন। অবশেষ একবার আমাকে কিছু মাল দিলেন। আমি বললাম, আমার চাইতে বেশী দারিদ্র তা দান করুন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তুমি এটি নাও। সাওয়ালও লালসা ছাড়া যে মাল তোমার নিকট আসে তুমি তা গ্রহণ কর। আর যে সম্পদ এভাবে আসে না তুমি তার পেছনে লেগো না।
—সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৭৬ (আন্তর্জাতিক নং ১০৪৫-১)
০৮. লোভের ক্ষতিসমূহ:
লোভ-লালসা মানুষের অন্তরের মারাত্মক ব্যাধি। সীমাহীন লোভ-লালসা মানুষকে তার সামর্থ্যের বাইরে ঠেলে দেয়। তার বিবেক-বুদ্ধি লোপ করে তাকে দুর্নীতি ও পাপের পথে পরিচালিত করে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, জবরদখল, ঘুষ-দুর্নীতি, মারামারি, হানাহানি, সন্ত্রাস, বোমাবাজি, অপহরণ, গুম, খুনখারাবিসহ অধিকাংশ সামাজিক অনাচার বা বিপর্যয়ের পেছনে লোভ-লালসার বিরাট প্রভাব রয়েছে
০৯. লোভ থেকে বাঁচার উপায়:
(ক) অল্পে তুষ্ট থাকা:
(খ) আখেরাতকে প্রধান্য দেওয়া:
আল্লাহ বলেন, مَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الْآخِرَةِ نَزِدْ لَهُ فِي حَرْثِهِ وَمَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤْتِهِ مِنْهَا وَمَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ نَصِيبٍ ‘যে কেউ পরকালের ফসল কামনা করে, আমরা তার ফসল বাড়িয়ে দেই। আর যে ব্যক্তি ইহকালের ফসল কামনা করে, আমরা তাকে সেখান থেকে কিছু দিয়ে থাকি। কিন্তু পরকালে তার কোনই অংশ থাকবে না’ (শূরা ৪২/২০)
আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
مَنْ أَحَبَّ دُنْيَاهُ أَضَرَّ بِآخِرَتِهِ وَمَنْ أَحَبَّ آخِرَتَهُ أَضَرَّ بِدُنْيَاهُ فَآثِرُوا مَا يَبْقَى عَلَى مَا يَفْنَى ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াকে ভালবাসবে, সে তার আখেরাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আর যে ব্যক্তি আখেরাতকে ভালবাসবে, সে তার দুনিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। অতএব তোমরা ধ্বংসশীল বস্ত্তর উপরে চিরস্থায়ী বস্ত্তকে অগ্রাধিকার দাও’। তাখরিজ: আহমাদ হা/১৯৭১২; ছহীহ আত-তারগীব হা/৩২৪৭; মিশকাত হা/৫১৭৯
(গ) আখেরাতের বিষয় প্রতিযোগিতা করা: এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
,وَفِي ذَلِكَ فَلْيَتَنَافَسِ الْمُتَنَافِسُونَ-
‘আর এরূপ বিষয়েই প্রতিযোগীদের প্রতিযোগিতা করা উচিত’। সূরা মুত্বাফফেফীন-২৬
হাসান বাছরী (২১-১১০ হি.) বলেন, إذَا رَأَيْت الرَّجُلَ يُنَافِسُ فِي الدُّنْيَا فَنَافِسْهُ فِي الآخِرَةِ ‘যখন তুমি দেখবে কেউ তোমার সঙ্গে দুনিয়ার ব্যাপারে প্রতিযোগিতা করছে, তখন তুমি তার সঙ্গে আখেরাতের বিষয়ে প্রতিযোগিতা কর’। সূত্র: মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৬৩৫১
(ঘ) নিজের চেয়ে নিচু ব্যক্তির দিকে তাকানো:
(ঙ) রিজিক বণ্টিত:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই সমাধান দিচ্ছেন- أَيّهَا النّاسُ اتّقُوا اللهَ وَأَجْمِلُوا فِي الطّلَبِ، فَإِنّ نَفْسًا لَنْ تَمُوتَ حَتّى تَسْتَوْفِيَ رِزْقَهَا وَإِنْ أَبْطَأَ عَنْهَا، فَاتّقُوا اللهَ وَأَجْمِلُوا فِي الطّلَبِ، خُذُوا مَا حَلّ، وَدَعُوا مَا حَرُمَ হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উপার্জনে সহজতা অবলম্বন করো। জেনে রেখো, যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ তার জন্যে নির্ধারিত রিজিক পূর্ণ না করে ততক্ষণ তার কিছুতেই মৃত্যু হবে না। একটু দেরিতে হলেও তা তার কাছে পৌঁছাবেই। তাই আল্লাহকে ভয় করো। উপার্জনে সহজতা অবলম্বন করো। হালাল যতটুকু তা গ্রহণ করো আর যা কিছু হারাম তা বর্জন করো। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২১৪৪)
(চ) সকল সম্মানের প্রকৃত অধিকারী আল্লাহ তাআলা: মর্যাদা ও সম্মানের বিষয়ে কোরআনের ভাষ্য-
مَنْ كَانَ یُرِیْدُ الْعِزَّةَ فَلِلّٰهِ الْعِزَّةُ جَمِیْعًا. যে ব্যক্তি মর্যাদা লাভ করতে চায়, (সে জেনে রাখুক-) সমস্ত মর্যাদা আল্লাহরই হাতে। -সুরা ফাতির (৩৫)
সারকথা হলো,
নোট: চলমান---------
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক