জিজ্ঞাসা-১২৫০৫:
মুহতারাম, আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ , মসজিদে জামায়াতে ইমামের সামনের এবং পার্শ্ববর্তী বাসাসমুহ/আবাসন থেকে মহিলারা ইকতেদা করতে পারেন কিনা ইহার দালিলীক সমাধান কি, একান্ত প্রয়োজন, কিংবা মসজিদের পাশের ঘর থেকে কেউ ইকতেদা করেছেন এমন কোনো বর্ণনা আছে কি, কোন ভাই জানালে কৃতজ্ঞ হবো
তারিখ: ২৪/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা জয়নাল আবেদীন, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
আপনার প্রশ্ন অনুসারে সহজে বোঝার জন্য কয়েক ভাগে ভাগ করছি।
প্রশ্ন: ক। ইমামের সামনে দাঁড়ালে নামাজ সহিহ হবে কি?
উত্তর: ক। এ বিষয়ে ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,
فأجاب
" أما صلاة المأموم قدَّام الإمام : ففيها ثلاثة أقوال للعلماء :
أحدها : أنها تصح مطلقا , وإن قيل : إنها تكره , وهذا القول هو المشهور من مذهب مالك , والقول القديم للشافعي .
والثاني : أنها لا تصح مطلقا , كمذهب أبي حنيفة , والشافعي , وأحمد في المشهور من مذهبهما .
والثالث : أنها تصح مع العذر دون غيره ، مثل ما إذا كان زحمة فلم يمكنه أن يصلي الجمعة أو الجنازة إلا قدام الإمام , فتكون صلاته قدام الإمام خيراً له من تركه للصلاة .
الفتاوى الكبرى " ( 2 / 331 – 333 ) .
অর্থাৎ ইমামের সামনে জামাতের নামাযের ব্যাপারে আলেমদের তিনটি বক্তব্য রয়েছে:
তাদের মধ্যে একটি হল এটি একেবারে বৈধ, এমনকি যদি বলা হয় যে এটি মাকরুহ। এটি মালিক মাযহাবের সুপরিচিত দৃষ্টিভঙ্গি এবং আল-শাফি’র পুরানো উক্তি।
দ্বিতীয়টি: এটি মোটেও বৈধ নয়, যেমনটি আবু হানিফা, আল-শাফিঈ এবং আহমদ তাদের মাযহাবের সুপরিচিত দৃষ্টিভঙ্গিতে বলেছেন।
এবং তৃতীয়টি: এটি একটি ওজর সহ বৈধ এবং অন্য কেউ নয়, যেমন যদি সেখানে ভিড় থাকে এবং সে শুধুমাত্র জুমার নামায বা ইমামের সামনে জানাজা পড়তে পারে, তাই ইমামের সামনে না সামনে নামায পড়া তার জন্য উত্তম হবে। সূত্র: ফাতাওয়াল কাবির-২/৩৩১-৩৩৩
প্রশ্ন: খ। তিন ইমামের দলিল কি?
উত্তর: খ। ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফিয়ি এবং আহমদ ইবনে হাম্বল রহ এর মতে ইমামের সামনে দাঁড়ানো জায়েজ নেই। তাদের দলিল নিম্নরূপ:
হাদিস নং-০১
ثُمَّ جِئْتُ حَتَّى قُمْتُ عَنْ يَسَارِ رَسُولِ اللهِ صلي الله عليه وسلم فَأَخَذَ بِيَدِي فَأَدَارَنِي حَتَّى أَقَامَنِي عَنْ يَمِينِهِ فَجَاءَ ابْنُ صَخْرٍ حَتَّى قَامَ عَنْ يَسَارِهِ فَأَخَذَنَا بِيَدَيْهِ جَمِيعًا حَتَّى أَقَامَنَا خَلْفَهُ قَالَ وَجَعَلَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَرْمُقُنِي وَأَنَا لَا أَشْعُرُ ثُمَّ فَطِنْتُ بِهِ فَأَشَارَ إِلَىَّ أَنْ أَتَّزِرَ بِهَا
জাবের (রাঃ) বলেন, একদা মহানবী (ﷺ) মাগরেবের নামায পড়ার জন্য দাঁড়ালেন। এই সময় আমি এসে তাঁর বাম দিকে দাঁড়ালাম। তিনি আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে তাঁর ডান দিকে দাঁড় করালেন। ইতিমধ্যে জাব্বার বিন সাখার (রাঃ) এলেন। তিনি তাঁর বাম দিকে দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি আমাদের উভয়ের হাত ধরে ধাক্কা দিয়ে তাঁর পশ্চাতে দাঁড় করিয়ে দিলেন। তাখরিজ: মুসলিম-৩০১০; আবূ দাঊদ-৬৩৪; মিশকাত- ১১০৭
নোট: উক্ত হাদিসের আলোকে ফুকাহায়ে আহনাফ বলেন, ইমাম ব্যতীত দুই অথবা তিনজন মুসল্লি হলে ইমাম সামনে যাওয়া ওয়াজিব।
হাদিস নং-০২
لِيَلِني مِنْكُمْ أُولُوا الأحْلاَمِ وَالنُّهَى، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ». رواه مسلم
রাসূল (ﷺ) বলেন, আর তোমাদের মধ্যে যারা বয়ঃপ্রাপ্ত ও বুদ্ধিমান, তারাই যেন আমার নিকটে (প্রথম কাতারে আমার পেছনে) থাকে। অতঃপর যারা বয়স ও বুদ্ধিতে তাদের নিকটবর্তী তারা। অতঃপর তাদের যারা নিকটবর্তী তারা। তাখরিজ: মুসলিম-৪৩২
প্রশ্ন: গ। ইমামের সামনে দাঁড়ানোর ব্যাপারে চূড়ান্ত/প্রাধান্য মতামত কি?
উত্তর: গ। এ ব্যাপারে শায়েখ উসাইমিন রহ কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি জবাবে বলেন,
وسئل الشيخ ابن عثيمين رحمه الله : هل يجوز تقدم المأموم على الإمام ؟
فأجاب :
" الصحيح أن تقدم الإمام واجب ، وأنه لا يجوز أن يتقدم المأموم على إمامه ، لأن معنى كلمة " إمام " أن يكون إماماً ، يعني يكون قدوة ، ويكون مكانه قدام المأمومين ، فلا يجوز أن يصلي المأموم قدام إمامه ، وقد كان النبي صلى الله عليه وسلم يصلي قدام الصحابة رضي الله عنهم ، وعلى هذا فالذين يصلون قدام الإمام ليس لهم صلاة ، ويجب عليهم أن يعيدوا صلاتهم إلا أن بعض أهل العلم استثنى من ذلك ما دعت الضرورة إليه مثل أن يكون المسجد ضيقاً ، وما حواليه لا يسع الناس فيصلي الناس عن اليمين واليسار والأمام والخلف لأجل الضرورة " انتهى .
"مجموع فتاوى ابن عثيمين" (13/44) .
অর্থাৎ
শাইখ ইবনে উসাইমীন, আল্লাহ তার প্রতি রহম করুন, তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: অনুসারীর জন্য ইমামের পূর্বে যাওয়া কি জায়েজ?
তিনি জবাব দিলেন:
সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি হল ইমামের আগে হওয়া ওয়াজিব, এবং ইমামের পিছনে নামায পড়া ব্যক্তির জন্য তার ইমামের আগে হওয়া জায়েয নয়, কারণ "ইমাম" শব্দের অর্থ হল ইমাম হওয়া, অর্থাৎ ইমাম হওয়া। একজন আদর্শ, এবং তার স্থান জামাতের সামনে, তাই অনুসারীর জন্য তার ইমামের সামনে নামায পড়া জায়েয নয়, এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যদি তিনি ইমামের সামনে প্রার্থনা করেন। সাহাবায়ে কেরাম, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হোন।এর উপর ভিত্তি করে যারা ইমামের সামনে নামায পড়েন তাদের নামায পড়ার অধিকার নেই এবং তাদের অবশ্যই তাদের নামায পুনরায় পড়তে হবে, তবে কিছু জ্ঞানী ব্যক্তি যখন প্রয়োজনে আযান দেয় তখন এর ব্যতিক্রম করেছেন। এর জন্য, যেমন মসজিদ সংকীর্ণ হলে, এবং এর চারপাশে যা আছে তা লোকেদের বসাতে পারে না, তাই লোকেরা ডান এবং বামে নামাজ পড়ে এবং প্রয়োজনের কারণে সামনে এবং পিছনে। সূত্র: মাজমুউল ফাতাওয়া ইবনে উসাইমিন -১৩/৪৪
প্রশ্ন: ঘ। দুই কাতারের মাঝখানে কতটুকু দূরত্ব বজায় রাখলে নামাজ সহিহ হবে?
উত্তর: ঘ। দুই কাতারের মাঝখানে কতটুকু দূরত্ব হলে নামাজ হবে বা হবে না এই বিষয়ে সরাসরি কোন নস নেই। তবে হাদিসে কাছাকাছি কাতার বন্দী হতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দলিল:
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «رُصُّوا صُفُوفَكُمْ وَقَارِبُوا بَيْنَهَا وَحَاذُوا بِالْأَعْنَاقِ فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنِّي لَأَرَى الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ مِنْ خَلَلِ الصَّفِّ كَأَنَّهَا الْحَذَفُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ (সালাতে) তোমাদের কাতারগুলো মিলেমিশে দাঁড়াবে এবং কাতারগুলোও কাছাকাছি দাঁড়াবে । সহীহ : আবূ দাঊদ ৬৬৭, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৫৪৫, ইবনু হিব্বান ৬৩৩৯, সহীহ আত্ তারগীব ৪৯৪, সহীহ আল জামি‘ ৩৫০৫
ব্যাখ্যা: এ হাদিস থেকেফুকাহায়ে উম্মত দলিল দলিল গ্রহণ করেছেন, দুই কাতারের মাঝখানে কতটুকু দূরত্ব বজায় রাখা জায়েয ।
উপরোক্ত হাদিসে কাতার গুলো কাছাকাছি দাঁড়ানোর ব্যাখ্যা সম্পর্কে শায়েখ ইবনে তায়মিয়া রহ.
ابن تميم، وقال في التلخيص والبلغة: اتصال الصفوف أن يكون بينهما ثلاثة أذرع
অর্থাৎ তিনি আল-তালখীস এবং আল-বুলগাহ-এ বলেছেন: সারিগুলির সংযোগ হল যে তাদের মধ্যে তিনটি হাত/গজ (ছয় হাত) রয়েছে।
الأولى : إن كان بين المقتدي والإمام نهر كبير تجري فيه السفن ( ولو زورقا عند الحنفية ) لا يصح الاقتداء , وهذا باتفاق المذاهب , وإن اختلفوا في تحديد النهر الكبير والصغير . فقال الحنفية والحنابلة : النهر الصغير هو ما لا تجري فيه السفن.
وقال المالكية : هو ما لا يمنع من سماع الإمام , أو بعض المأمومين , أو رؤية فعل أحدهما .
যদি মুক্তাদী ও ইমামের মধ্যে একটি বড় নদী থাকে যেখানে জাহাজ প্রবাহিত হয় (হানাফীদের মতে এটি একটি নৌকা হলেও), ইমামের অনুসরণ করা বৈধ নয় এবং এটি মাযহাবের মতে। , এমনকি যদি তারা বড় এবং ছোট নদী সংজ্ঞায়িত করার ক্ষেত্রে ভিন্ন হয়। অর্থাৎ দুই কাতারের সমান বা ছয় হাত। সূত্র: আলফিকহু আলাল মাজহিবিল আরবা-০০২
প্রশ্ন: ঙ। মসজিদের পাশে কোন রুমে নামাজ আদায় করলে সহিহ হবে কি?
উত্তর: ঙ। ফিকহি হানাফির মতে মসজিদের বাইরে ইকতিদা সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত হল, কাতার মিলিত হতে হবে। কাতারের মাঝে কোনো রাস্তা, নদী অথবা খালি ময়দান থাকলে ইকতিদা সহীহ হবে না। দলিল:
حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ الْمُنْذِرِ، قَالَ حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي فُدَيْكٍ، قَالَ حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ، عَنِ الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ لَهُ حَصِيرٌ يَبْسُطُهُ بِالنَّهَارِ، وَيَحْتَجِرُهُ بِاللَّيْلِ، فَثَابَ إِلَيْهِ نَاسٌ، فَصَلَّوْا وَرَاءَهُ.
অর্থ: ইবরাহীম ইবনে মুনযির (রাহঃ) ... আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) এর একটি চাটাই ছিল। তিনি তা দিনের বেলায় বিছিয়ে রাখতেন এবং রাতের বেলায় তা দিয়ে কামরা বানিয়ে নিতেন। সাহাবীগণ তাঁর পেছনে কাতার বন্দী হয়ে দাঁড়ান এবং পেছনে নামায আদায় করেন।
সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯৪ (আন্তর্জাতিক নং ৭৩০)
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের হুজরায়/কামরায় ইমামতি করতেন আর সাহাবীরা মসজিদে থেকে এক্তেদা করতেন।
কাতার থেকে যদি ছয় বা তার বেশি হাত দূরে কোন ব্যক্তি দাঁড়ায় তাহলে তার নামাজ হবে না।
সারকথা হলো,
وَلَوْ تَقَدَّمَ عَلَى الْإِمَامِ مِنْ غَيْرِ عُذْرٍ فَسَدَتْ صَلَاتُهُ. كَذَا فِي فَتَاوَى قَاضِي خَانْ.
যদি মুক্তাদী উজর ছাড়াই ইমামের আগে চলে যায়, তাহলে তার নামায ভেঙ্গে যাবে। [ফাতাওয়া আলমগীরী-১/১০৩, মাকতাবায়ে জাকারিয়া দেওবন্দ]
আর আপনার প্রশ্নের বর্ণিত মহিলাদের নামাজ পড়া জায়গায় যদি মসজিদ সংলগ্ন হয় অর্থাৎ ছয় হাত দূরে না হয় তাহলে নামাজ সহিহ হবে।
শেষ কথা হলো, মহিলাদের নিজ ঘরে সমস্ত সালাত আদায় করা উত্তম। দলিল:
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: خَيْرُ مَسَاجِدِ النِّسَاءِ قَعْرُ بُيُوتِهِنَّ.
অর্থ- উম্মু ছালামা রা. হতে বর্ণিত হাদীছে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:- মহিলাদের জন্য সবচেয়ে উত্তম মাছজিদ হলো তাদের গৃহাভ্যন্তর। ইমাম আহমাদ ৬/২৯৭, ত্বাবরানী, ইবনে খুযায়মা ও হাকেম ১/২০৯ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন) হাকেম বলেন এর সনদ ছহীহ।
বর্তমান ফিতনার জামানায় আরও বেশি জরুরি।
মসজিদে নারীর গমন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা-২০৫ শিরোনামে মাসয়ালাটি আলোচিত হয়েছে। সেটা দেখা যেতে পারে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ