০৪। পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ, ও মহান আসলাফ-আকাবিরের আমল বনাম আমাদের জিন্দেগি
এস্তেগফারে সুফল
কুরআন শরিফ:
আয়াত নং-০১
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا(01) يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا (11) وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا(21)
অর্থ: অতঃপর বলেছিঃ তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দিবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন। সূরা নুহ,১০-১২
আয়াত নং-০২
وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
অর্থ: মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। সূরা নুর-৩১
হাদিসে নববি:
হাদিস নং-০১
وَعَنِ الْأَغَرِّ بْنِ يَسَارٍ الْمُزَنِيِّ قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺيَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلٰى اللهِ واسْتَغْفِرُوهُ فَإِنِّي أتُوبُ في اليَومِ مِئَةَ مَرَّةٍ رواه مسلم
অর্থ: আগার ইবনে য়্যাসার মুযানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর সমীপে তওবা কর ও তাঁর নিকট ক্ষমা চাও! কেননা, আমি প্রতিদিন ১০০ বার করে তওবাহ ক’রে থাকি। তাখরিজ:মুসলিম ৭০৩৪, আবূ দাঊদ ১৫১৫
হাদিস নং-০২
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَن رَسُولِ اللهِ ﷺ أَنَّهُ قَالَ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ : أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي بِي وَأَنَا مَعَهُ حَيْثُ يَذْكُرُنِي وَاللهِ للهُ أفْرَحُ بِتَوبَةِ عَبْدِهِ مِنْ أحَدِكُمْ يَجِدُ ضَالَّتَهُ بالفَلاَةِ وَمَنْ تَقَرَّبَ إلَيَّ شِبْراً تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ ذِرَاعاً وَمَنْ تَقَرَّبَ إِلَيَّ ذِرَاعاً تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ بَاعاً وَإِذَا أقْبَلَ إِلَيَّ يَمْشِي أقْبَلْتُ إِلَيْهِ أُهَرْوِلُ متفقٌ عليه
অর্থ: আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ আযযা অজাল্ল বলেন, ’আমি সেইরূপ, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে। আমি তার সাথে থাকি, যখন যে আমাকে স্মরণ করে। আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দার তওবায় তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অপেক্ষা বেশি খুশী হন, যে তার মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া বাহন ফিরে পায়। আর যে ব্যক্তি আমার দিকে এক বিঘত পরিমাণ অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক হাত পরিমাণ অগ্রসর হই। যে আমার দিকে এক হাত পরিমাণ অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে দুই হাত পরিমাণ অগ্রসর হই। আর সে যখন আমার দিকে হেঁটে অগ্রসর হয়, আমি তখন তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হই। তাখরিজ: বুখারী ৭৮০৫ , মুসলিম ৭১২৮
হাদিস নং-০৩
وعنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضِي اللَّه عنْهُما قَال: قالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: منْ لَزِم الاسْتِغْفَار، جَعَلَ اللَّه لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مخْرجًا، ومنْ كُلِّ هَمٍّ فَرجًا، وَرَزَقَهُ مِنْ حيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ رواه أبو داود.
অর্থ: আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি কেউ বেশি বেশি কাছে ক্ষমা চায়, আল্লাহতায়ালা তাকে সব প্রকার দুর্দশা থেকে মুক্তি দান করেন, হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে পরিত্রাণ দান করেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না। তাখরিজ: আবু দাউদ-১৫২০, ইবনে মাজাহ_৩৮১৯
*আসলাফ-আকাবেরদের আমল:
জনৈক ব্যক্তি একদিন বিখ্যাত তাবেয়ি হজরত হাসান বসরি রহ.এর দরবারে এসে জিজ্ঞেস করলেন, হুজুর আমি গুনাহগার/আমার দ্বারা গুনাহ হয়ে গেছে, এখন আমি কি করবো, জবাবে তিনি বললেন, এস্তেগফার কর (আল্লাহ তাআলার ক্ষমা চাও)।
একটু পরে আরেক ব্যক্তি এসে বললো, হুজুর! অনাবৃষ্টি/খরা চলছে। এখন আমি/আমরা কি করবো। জবাবে তিনি বললেন, এস্তেগফার কর।
একটু পরে আরেক জন ব্যক্তি আসলো, তিনি অভাব-অনোটনের অভিযোগ করলো। হাসান বসরি রহ. এর জবাবে এবারও বললেন, এস্তেগফার কর।
একটু পরে আরেক জন লোক এসে, সন্তান হয়না, এব্যাপারে করণীয় কি/আমল জানতে চায়লো। এবারও তিনি জবাবে, তাকে বললেন, এস্তেগফার কর।
দরবারে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে থেকে একজন জিজ্ঞেস করলেন, হজরত, আপনি যে চারজন ব্যক্তিকে একই আমলের কথা বললেন; কারণ কি (আমাদের তা বুঝে আসছে না)?
তখন হজরত হাসান বসরি রহ. বললেন, তোমরা কি এ আয়াতে কারিমা পড়েনি? মহান আল্লাহ বলেন,
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا(01) يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا (11) وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا(21)
অর্থ: অতঃপর বলেছিঃ তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দিবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন। সূরা নুহ,১০-১২
উপরোক্ত মানবজীবনের চারটি সমস্যা সমাধান প্রকল্পে এ আয়াতে এস্তেগফারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনা থেকে একথাও প্রমাণিত হয় যে, কোন আল্লাহ ওয়ালা,বুযুর্গ যখন কিছু বলে, অবশ্যই তা পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ মুওয়াফিক। কিন্তু আমাদের অনেক সময় বুঝে আসে না। সূত্র: "মুসলিম জীবন সাফল্যে 40 হাদিস" লেখক মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
নিরীক্ষণ:
প্রিয় বন্ধুগণ! পবিত্র কুরআন- হাদিস ও আমাদের মহান পূর্বসূরীদের আমলের সাথে সাথে একটু আমাদের আমল যাচাই-বাছাই, ওজন ও নিরক্ষণ করি।
আমাদের নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদিন ১০০বার এস্তেগফার করতেন। তাহলে আমাদের আরও কত বেশি এস্তেগফার/ক্ষমাপ্রার্থনা করা উচিত, তা সহজেই অনুমেয়?
*আবেদন/পরামর্শ:
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ كُلُّ بَنِي آدَمَ خَطَّاءٌ وَخَيْرُ الْخَطَّائِينَ التَّوَّابُونَ
আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক আদম সন্তান ত্রুটিশীল ও অপরাধী, আর অপরাধীদের মধ্যে উত্তম লোক তারা যারা তওবা করে। তাখরিজ: আহমাদ ১৩০৪৯, তিরমিযী ২৪৯৯, ইবনে মাজাহ ৪২৫১, দারেমী ২৭২৭
সুতরাং তওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে আমরা উত্তম ব্যক্তি এবং সফলকাম ব্যক্তি হওয়ার চেষ্টা করব। আল্লাহতালা আমাকে এবং সব মুসলমানকে দাওফিক দান করুন।
বেশ কিছুদিন আগে আমার এক ঘনিষ্ঠ ধর্ম শিক্ষক (নাম প্রকাশ করাটা তিনি পছন্দ করবেন না, তাই উল্লেখ করলাম না) তিনি আমাকে তার ইস্তেগফারের সুফল সম্পর্কে অবহিত করেছেন যে, আমি কয়েকদিন যাবত ইস্তেগফার পড়তেছি আল্লাহ তাআলা আমাকে ইস্তেগফারের অসম্ভব সুফল দান করেছেন, আমার কল্পনা ব্যতীত আমি রিজিক প্রাপ্ত হয়েছি।
মহান আল্লাহতাআলা আমাদেরকে বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে দুনিয়া এবং আখেরাতে সর্বোত্তম কল্যাণের ভাগী হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন!!