আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৭৪৩: ইমামতি করার হকদার কে?

No Comments

 




জিজ্ঞাসা-১২৭৪৩: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। 

কুদুরী কিতাবে পড়েছিলাম,ইমামের প্রথমত যোগ্য হলেন ক্বারী সাহেব,মুকতাদীগন ছাওয়া ছাওয়া হলে পর্যায়ক্রমে আলেম,মুত্তাকী,বয়স্ক অতঃপর দেখতে সুন্দর এ বিষয়ের হাদীসটি প্রয়োজন। 

তারিখ:  ৩১/০৮/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা    আবু সুমাইয়া মোঃ শাহজাহান শেখ,কুমিল্লা থেকে।


 জবাব

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 


তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, ইমাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে কয়েকটি গুণাবলী সরাসরি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত আর বাকিগুলো ফোকাহায়ে কেরাম কিয়াস বা হিকমাহ অবলম্বন করে বর্ণিত করেছেন। যেমন,

وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَأَبُو سَعِيدٍ الأَشَجُّ كِلاَهُمَا عَنْ أَبِي خَالِدٍ، - قَالَ أَبُو بَكْرٍ حَدَّثَنَا أَبُو خَالِدٍ الأَحْمَرُ، - عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ رَجَاءٍ، عَنْ أَوْسِ بْنِ ضَمْعَجٍ، عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ الأَنْصَارِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " يَؤُمُّ الْقَوْمَ أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللَّهِ فَإِنْ كَانُوا فِي الْقِرَاءَةِ سَوَاءً فَأَعْلَمُهُمْ بِالسُّنَّةِ فَإِنْ كَانُوا فِي السُّنَّةِ سَوَاءً فَأَقْدَمُهُمْ هِجْرَةً فَإِنْ كَانُوا فِي الْهِجْرَةِ سَوَاءً فَأَقْدَمُهُمْ سِلْمًا وَلاَ يَؤُمَّنَّ الرَّجُلُ الرَّجُلَ فِي سُلْطَانِهِ وَلاَ يَقْعُدْ فِي بَيْتِهِ عَلَى تَكْرِمَتِهِ إِلاَّ بِإِذْنِهِ " . قَالَ الأَشَجُّ فِي رِوَايَتِهِ مَكَانَ سِلْمًا سِنًّا .

 আবু বকর ইবনে আবিশাঈবা (রাহঃ) ও আবু সাঈদ আল আশাজ্জ (রাহঃ) ......... আবু মাসউদ আনসারী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, সেই ব্যক্তি লোকদের ইমামতি করবেন যিনি আল্লাহর কিতাব পাঠে সবচাইতে অভিজ্ঞ। কুরআন পাঠে যদি সকলেই সমান হয় তবে যিনি তাঁদের মধ্যে সুন্নাহ সম্পর্কে সর্বাপেক্ষা অভিজ্ঞ। তাতেও যদি সকলে একরকম হয় তবে যিনি আগে হিজরত করেছেন। তাতেও যদি সকলেই সমান হয় তবে যিনি আগে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির অধিকারে ইমামতি করবে না এবং অনুমতি ছাড়া কারো ঘরে তার বিশেষ আসনে বসবে না। আশাজ্জ তাঁর রিওয়ায়াতে ইসলামের স্থলে বয়সের কথা বলেছেন।—সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪০৬ (আন্তর্জাতিক নং ৬৭৩-১)


হাদীসের ব্যখ্যা:

এ বর্ণনা অনুযায়ী প্রমাণিত হয় যে, ইমামতির জন্য অগ্রাধিকার পাবে কুরআন পাঠে পারদর্শী ব্যক্তি। কিন্তু রসূল স. মৃত্যুর পূর্বে যখন খুব অসুস্থ ছিলেন তখন তাঁর স্থানে ইমামতির দায়িত্ব দিয়েছিলেন হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রা.কে যিনি সুন্নাহ সম্পর্কে বড় আলেম ছিলেন। অথচ সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে বড় কারী হিসেবে খ্যাত ছিলেন উবাই ইবনে কাআব রা.। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ইমামতির দায়িত্ব না দিয়ে হযরত আবু বকর রা.কে দায়িত্ব দেয়া থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  এর শেষ সিদ্ধান্ত ছিলো সুন্নাহ সম্পর্কে যিনি বড় আলেম হবেন তাঁকে ইমামতির দায়িত্ব দেয়া। তারপর কুরআন পাঠে পারদর্শী ব্যক্তি। এরপরে আগে হিজরতকারী ব্যক্তি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)। অতঃপর আগে ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তি; যদি নতুন মুসলমান হয়। অন্যথায় যার বয়স বেশী সেই ইমামতির হকদার হিসেবে সাব্যস্ত হবে। (রদ্দুল মুহতার:৪/২৩০)


ফায়দা : কোন মসজিদে নিয়মিত ইমাম থাকলে সেখানে এ নীতিমালা কার্যকর নয়। বরং মসজিদের নিয়মিত ইমামই ইমামতির হকদার সাব্যস্ত হবে। আর কোন মসজিদে নির্ধারিত ইমাম না থাকলে সেখানে নামায পড়ানোর জন্য অথবা কোথাও ইমাম নিয়োগ করতে হলে সে ক্ষেত্রে এ নীতিমালা অনুযায়ী অগ্রাধিকার সাব্যস্ত করা হবে। এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (শামী: ১/৫৫৭) এ নীতিমালা লংঘন করে যদি তুলনামূলক কম যোগ্যকে নিয়োগ দেয়া হয় অথবা তাকে দিয়ে নামায পড়ানো হয় তাহলে নিয়োগদাতাগণ অপরাধী সাব্যস্ত হবে। (শামী: ১/৫৫৯) অবশ্য নামায সহীহ হওয়ার শর্ত-শরায়েত পূর্ণ থাকলে তার ইমামতিতে নামায সহীহ হয়ে যাবে।



আদ দুররুল মুখতার প্রণেতা ইমামতীর অধিক হক্বদার কে হবে? এর আলোচনা করতে গিয়ে ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করেছেন যে,


1.

যে ব্যক্তি নামাযের মাসআলার ব্যাপারে অধিক জানে উক্ত ব্যক্তি ইমামতীর অধিক যোগ্য হবে। যদি উপস্থিত সবাই নামাযের মাসআলায় সমান জ্ঞানী হয়, তাহলে-


2.

উপস্থিতদের মাঝে যার কিরাত সুন্দর হয়, সে ইমাম হবে। যদি এতেও সবাই বরাবর হয়, তাহলে-


3.

ঐ ব্যক্তি ইমাম হবে, যে অধিক বুজুর্গ তথা সন্দেহযুক্ত বস্তু থেকে বেশি পরিমান বেঁচে থাকে। যদি এতেও সবাই সমান সমান হয়, তাহলে-


4.

যে ব্যক্তি সবার চেয়ে বয়সে বড় হবে বা ইসলাম আগে গ্রহণ করেছে সে হবে ইমাম। যদি এ গুণেও উপস্থিত সবাই সমান হয়, তাহলে-


5.

যার চরিত্র উত্তম। যদিও এতেও সবাই বরাবর হয়, তাহলে-


6.

যে ব্যক্তি অধিক পরিমাণ তাহাজ্জুদ পড়ে উক্ত ব্যক্তি হবে ইমাম। যদি এ গুণেও সবাই সমান গুণান্বিত হয়, তাহলে-


7.

বংশের দিক থেকে যে ব্যক্তি উত্তম হবে সে ইমাম হবে। যদি এতেও সবাই বরাবর হয়, তাহলে-


8.

যে ব্যক্তি অধিক অভিজাত হবে সে ইমাম হবে। যদি এতেও সবাই বরাবর হয়, তাহলে-


9.

যার কণ্ঠ অধিক সুন্দর হবে সে ইমাম হওয়ার অধিক হকদার হবে। যদি উল্লেখিত সকল গুণে সবাই সমান সমান হয় তাহলে-a ثُمَّ الْأَحْسَنُ زَوْجَةً ثُمَّ الْأَكْثَرُ مَالًا ، ثُمَّ الْأَكْثَرُ جَاهًا (ثُمَّ الْأَنْظَفُ ثَوْبًا) ثُمَّ الْأَكْبَرُ رَأْسًا وَالْأَصْغَرُ عُضْوً 


রদ্দুল মুহতারে উক্ত বক্তব্যের ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে (قَوْلُهُ ثُمَّ الْأَحْسَنُ زَوْجَةً) لِأَنَّهُ غَالِبًا يَكُونُ أَحَبَّ لَهَا وَأَعَفَّ لِعَدَمِ تَعَلُّقِهِ بِغَيْرِهَا . وَهَذَا مِمَّا يُعْلَمُ بَيْنَ الْأَصْحَابِ أَوْ الْأَرْحَامِ أَوْ الْجِيرَانِ ، إذْ لَيْسَ الْمُرَادَ أَنْ يَذْكُرَ كُلٌّ مِنْهُمْ أَوْصَافَ زَوْجَتِهِ حَتَّى يَعْلَمَ مَنْ هُوَ أَحْسَنُ زَوْجَةً “তারপর প্রাধান্য পাবে ঐ ব্যক্তি যার স্ত্রী সুন্দরী” কারণ এক্ষেত্রে স্ত্রীর প্রতি তার ভালবাসা থাকবে অধিক বেশি, ফলে অন্য মহিলাদের সাথে সম্পর্ক করা থেকে সে থাকবে অধিক নিরাপদ। আর এ বিষয়টি (কার স্ত্রী সুন্দরী) জানা যাবে সাথী সঙ্গী কিংবা প্রতিবেশি বা নিকত্মীয়গণ থেকে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য এটা নয় যে, উপস্থিত সবাই স্বীয় স্ত্রীর গুণাবলী বলতে শুরু করে দিবে, যাতে কার স্ত্রী সুন্দরী তা জানা যায়।


 (قَوْلُهُ ثُمَّ الْأَكْثَرُ مَالًا) إذْ بِكَثْرَتِهِ مَعَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ الْأَوْصَافِ يَحْصُلُ لَهُ الْقَنَاعَةُ وَالْعِفَّةُ فَيَرْغَبُ النَّاسُ فِيهِ أَكْثَرَ 

“তারপর যার সম্পদ বেশি” যেহেতু পূর্বোল্লিখিত গুণসহ অধিক সম্পদশালীও হয়, তাহলে তার মাঝে অল্পে তুষ্টতা এবং আখলাকের পরিচ্ছন্নতা বেশি থাকা স্বাভাবিক। আর এমন ব্যক্তির প্রতি (স্বাভাবিকভাবে) মানুষের আগ্রহ থাকে বেশি। সূত্র: রদ্দুল মুহতার-২৬১

সারকথা হলো,  ইমাম সুন্দর কণ্ঠের অধিকারী,  স্ত্রী যার সুন্দরী সে হকদার, এগুলো ফোকাহায়ে কেরাম এর কিয়াসি মাসয়ালা।


  والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক