আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৭১০: তালাক প্রাপ্ত নারী স্বামীর বাড়িতে বসবাস করা জায়েজ?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৭১০:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।  স্বামী যদি তার স্ত্রীকে তালাক দেয় তাহলে সেই স্ত্রী তার সন্তানদের সাথে একই বাড়িতে অবস্থান করতে পারবে কিনা,যেখানে একাধিক ঘর রয়েছে এবং সকল সন্তান সাবালক। এবিষয়ে ধর্মীয় কোন বিধিনিষেধ আছে কী? দালীলিক আলোচনা পেশ করতে  অনুরোধ করছি। (জরুরি)

তারিখ:  ০৪/০৮/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 

মাওলানা  মনিরুল ইসলাম, রাজশাহী।থেকে।


 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, তালাক প্রাপ্ত স্ত্রী স্বামীর বাড়িতে বিশেষ প্রয়োজনে শর্তসাপেক্ষে বসবাস করা জায়েজ আছে।


দ্বিতীয় কথা হলো, তালাকে মুগাল্লাযা পতিত হওয়ার সাথে সাথেই স্বামী-স্ত্রী পরস্পর একসঙ্গে বসবাস করা, দেখা করা হারাম। দলিল:


فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ 

তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। সূরা বাকারা-২৩০


وقال الليث عن نافع كان ابن عمر إذا سئل عمن طلق ثلاثا قال لو طلقت مرة أو مرتين فأن النبي صلى الله عليه و سلم أمرني بهذا فإن طلقتها ثلاثا حرمت حتى تنكح زوجا غيرك


حَدَّثَنَا مُحَمَّدٌ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ طَلَّقَ رَجُلٌ امْرَأَتَهُ فَتَزَوَّجَتْ زَوْجًا غَيْرَهُ فَطَلَّقَهَا، وَكَانَتْ مَعَهُ مِثْلُ الْهُدْبَةِ فَلَمْ تَصِلْ مِنْهُ إِلَى شَىْءٍ تُرِيدُهُ، فَلَمْ يَلْبَثْ أَنْ طَلَّقَهَا فَأَتَتِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ زَوْجِي طَلَّقَنِي، وَإِنِّي تَزَوَّجْتُ زَوْجًا غَيْرَهُ فَدَخَلَ بِي، وَلَمْ يَكُنْ مَعَهُ إِلاَّ مِثْلُ الْهُدْبَةِ فَلَمْ يَقْرَبْنِي إِلاَّ هَنَةً وَاحِدَةً، لَمْ يَصِلْ مِنِّي إِلَى شَىْءٍ، فَأَحِلُّ لِزَوْجِي الأَوَّلِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ تَحِلِّينَ لِزَوْجِكِ الأَوَّلِ حَتَّى يَذُوقَ الآخَرُ عُسَيْلَتَكِ، وَتَذُوقِي عُسَيْلَتَهُ "

পরিচ্ছেদঃ ২৭৭৫. যে ব্যক্তি তার স্ত্রীকে বলল- ’’তুমি আমার জন্য হারাম।’’ হাসান (রাহঃ) বলেন, তবে তা তার নিয়ত অনুযায়ী হবে। ’আলিমগণ বলেন, যদি কেউ তার স্ত্রীকে তিন তালাক দেয়, তবে সে স্ত্রী তার জন্য হারাম হয়ে যাবে। তাঁরা এটাকে হারাম আখ্যায়িত করেছেন, যা তালাক বা বিচ্ছেদ দ্বারা সম্পন্ন হয়। তবে এ হারাম করাটা তেমন নয়, যেমন কেউ খাদ্যকে হারাম ঘোষণা করল; কেননা হালাল খাদ্যকে হারাম বলা যায় না। কিন্তু তালাকপ্রাপ্তাকে হারাম বলা যায়। আবার তিন তালাকপ্রাপ্তা সমবন্ধে বলেছেন, সে (স্ত্রী) অন্য স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আব্দ্ধ হওয়া ছাড়া প্রথম স্বামীর জন্য বৈধ হবে না। লাঈস (রাহঃ) নাফি’ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ইবনে উমর (রাযিঃ)- কে তিন তালাক প্রদানকারী সমবন্ধে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলতেনঃ যদি তুমি এক বা দুই দিতে ! কেননা নবী (ﷺ) আমাকে এরূপ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই কেউ স্ত্রীকে তিন তালাক দিলে তার জন্য সে হারাম হয়ে যাবে, যতক্ষণ না সে (স্ত্রী) অন্যত্র বিবাহ করে।


৪৮৮৭। মুহাম্মাদ (রাহঃ) ......... আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জনৈক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তালাক দিলে সে (স্ত্রী) অন্য স্বামীকে বিবাহ করে। পরে সেও তাকে তালাক দেয়। তার লিঙ্গ ছিল কাপড়ের কিনারা সদৃশ। সুতরাং মহিলা তার থেকে নিজের মনবাসনা সিদ্ধ করতে পারতো না। দ্বিতীয় স্বামী অবিলন্বে তালাক দিলে সে (মহিলা) নবী (ﷺ) এর নিকট এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার স্বামী আমাকে তালাক দিলে আমি অন্য স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আব্দ্ধ হই। এরপর সে আমার সাথে সংগত হয়। কিন্তু তার সাথে কাপড়ের কিনারা সদৃশ বৈ কিছুই নেই। তাই সে একরারের অধিক আমার নিকটস্থ হল না এবং আপন মনবাসনা সিদ্ধী করতে সক্ষম হল না। এরূপ অবস্থায় আমি আমার প্রথম স্বামীর জন্য বৈধ হব কি? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তুমি ততক্ষণ পর্যন্ত তোমার প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে না, যতক্ষণ না দ্বিতীয় স্বামী তোমার কিছু স্বাদ উপভোগ করে আর তুমিও তার কিছু স্বাদ আস্বাদন কর।

—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮৮৭ (আন্তর্জাতিক নং ৫২৬৪-৫২৬৫)




তৃতীয় কথা হলো, একই বাড়িতে অবস্থান করলে শরয়ি পর্দা রক্ষা করতে হবে, অর্থাৎ বাড়ি একটি থাকলেও প্রবেশ পথ দুটি হতে হবে। কোন সময় উক্ত স্ত্রী একাকী বাসায় অবস্থান করতে পারবে না। 

যেহেতু যেহেতু তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী পর নারীর মতো, তাই একাকী এক বাসায় নারী-পুরুষ থাকা জায়েজ নেই। দলিল:

1862 - حَدَّثَنَا أَبُو النُّعْمَانِ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ عَمْرٍو، عَنْ أَبِي مَعْبَدٍ، مَوْلَى ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لاَ تُسَافِرِ المَرْأَةُ إِلَّا مَعَ ذِي مَحْرَمٍ، وَلاَ يَدْخُلُ عَلَيْهَا رَجُلٌ إِلَّا وَمَعَهَا مَحْرَمٌ» ، فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أُرِيدُ أَنْ أَخْرُجَ فِي جَيْشِ كَذَا وَكَذَا، وَامْرَأَتِي تُرِيدُ الحَجَّ، فَقَالَ: «اخْرُجْ مَعَهَا»

 আবু নু’মান (রাহঃ) ......... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) ইরশাদ করেনঃ মেয়েরা মাহরাম (যার সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ) ব্যতীত অন্য কারো সাথে সফর করবে না। মাহরাম কাছে নেই (খাতওয়াত তথা একাকী) এমতাবস্থায় কোন পুরুষ কোন মহিলার নিকট গমন করতে পারবে না।  তাখরিজ: বুখারি -১৮৬২


সারকথা হলো, সন্তানের খাতিরে তালাকপ্রাপ্ত নারী, স্বামীর বাড়িতে অবস্থান করতে পারবে। তবে কোন অবস্থাতেই পর্দার খেলাফ করতে পারবে না,  


যদি শরয়ি পর্দা রক্ষা করা সম্ভব না হয়, তাহলে উক্ত বাড়িতে সন্তানদের সঙ্গে বসবাস করা জায়েজ নেই।


 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক