আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৭২৭: স্বামী- স্ত্রী কি পরস্পরকে মৃত্যুর পর গোসল দিতে পারবে?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৭২৭:  

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। 

সবিনয়ে জানতে চাই স্বামী স্ত্রীর মৃত হলে একে অপরের গোসল দিতে পারবে কিনা?

তারিখ:  ১৯/০৮/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

মাওলানা  রফিকুল ইসলাম, সাভার থেকে।


 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 


তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো

আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে বুঝার জন্য কয়েক ভাগে ভাগ করছি। 



প্রশ্ন: ক। স্ত্রী কি তার মৃত স্বামীকে গোসল দিতে পারবে?


উত্তর: ক। স্ত্রী তার মৃত স্বামীকে গোসল দিতে পারবে, এ বিষয়ে কোনো মতভেদ নেই। যেমন, ইমাম নববি রহ. বলেন,


قال النووي رحمه الله تعالى : "نقل ابن المنذر في كتابيه الإشراف وكتاب الإجماع أن الأمة أجمعت أن للمرأة غسل زوجها ، وكذا نقل الإجماع غيره.." انتهى من "شرح المهذب" (5/114).

ইমাম নববি রহ ইমাম মুনজির রহ. থেকে নকল/বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয়ই উম্মত এ বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, অবশ্যই নারী তার স্বামীকে গোসল দিতে পারবে। সূত্র: শরহুল মাজহাব -৫/১১৪


দলিল:

حَدَّثَنَا النُّفَيْلِيُّ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْحَاقَ، حَدَّثَنِي يَحْيَى بْنُ عَبَّادٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَبَّادِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ قَالَ سَمِعْتُ عَائِشَةَ، تَقُولُ لَمَّا أَرَادُوا غَسْلَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالُوا وَاللَّهِ مَا نَدْرِي أَنُجَرِّدُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ ثِيَابِهِ كَمَا نُجَرِّدُ مَوْتَانَا أَمْ نُغَسِّلُهُ وَعَلَيْهِ ثِيَابُهُ فَلَمَّا اخْتَلَفُوا أَلْقَى اللَّهُ عَلَيْهِمُ النَّوْمَ حَتَّى مَا مِنْهُمْ رَجُلٌ إِلاَّ وَذَقْنُهُ فِي صَدْرِهِ ثُمَّ كَلَّمَهُمْ مُكَلِّمٌ مِنْ نَاحِيَةِ الْبَيْتِ لاَ يَدْرُونَ مَنْ هُوَ أَنِ اغْسِلُوا النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَعَلَيْهِ ثِيَابُهُ فَقَامُوا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَغَسَلُوهُ وَعَلَيْهِ قَمِيصُهُ يَصُبُّونَ الْمَاءَ فَوْقَ الْقَمِيصِ وَيُدَلِّكُونَهُ بِالْقَمِيصِ دُونَ أَيْدِيهِمْ وَكَانَتْ عَائِشَةُ تَقُولُ لَوِ اسْتَقْبَلْتُ مِنْ أَمْرِي مَا اسْتَدْبَرْتُ مَا غَسَّلَهُ إِلاَّ نِسَاؤُهُ .

নুফায়লী (রাহঃ) .... আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আয়িশা (রাযিঃ)-কে এরূপ বলতে শুনেছিঃ যখন সাহাবীরা নবী (ﷺ)কে গোসল দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেন, তখন তাঁরা বলেনঃ আল্লাহর শপথ! আমরা বুঝতে পারছি না যে, আমরা কি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাপড় খুলে ফেলব, যেমন আমরা আমাদের অন্যান্য মৃত ব্যক্তির কাপড় খুলে ফেলি অথবা আমরা তাকে কাপড় পরা অবস্থায় গোসল দেব? যখন তারা মতভেদ করলো, তখন আল্লাহ তাদের সকলকে তন্দ্রাচ্ছন্ন করে ফেলেন, এমন কি তাদের একজনও এমন ছিল না (নিদ্রার কারণে) যার থুতনী তার বক্ষের উপর আপতিত হয়নি।


এ সময় জনৈক ব্যক্তি ঘরের এক কোণা হতে বলল, তাঁরা জানত না-তিনি কে? তোমরা নবী (ﷺ) কে তাঁর পরিধেয় কাপড়সহ গোসল দাও। তখন সাহাবীগণ উঠে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে কাপড়সহ গোসল দিতে শুরু করেন। এ সময় তাঁর দেহ তাঁর পবিত্র জামা ছিল। তাঁরা জামার উপর পানি ঢেলে, ঐ জামা দিয়ে তাঁর দেহ ঘর্ষণ করেন এবং তাঁরা তাঁর দেহে হাত লাগান নি।


আয়িশা (রাযিঃ) বলেনঃ আমি যদি আগে বুঝতে পারতাম, যা আমি পরে বুঝতে পারি, তবে তাঁকে তাঁর বিবিগণ ছাড়া আর কেউ-ই গোসল দিতে পারত না।

তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ- ৩১৪১; ইবনে মাজাহ-১৪৬৪


প্রশ্ন: খ। স্বামী কি তার মৃত স্ত্রীকে গোসল দিতে পারবে?

উত্তর: খ। এ বিষয়ে ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ইমাম আবু হানিফা, ইমাম সুফিয়ান সাওরি রহ. মতে জায়েজ নেই।


আবার ইমাম মালেক, ইমাম শাফি, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. এবং আহলে হাদিসের মতে জায়েজ।


প্রশ্ন: গ। ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম সুফিয়ান সাওরি রহ. এর দলিল কী?


উত্তর গ। ইমামদ্বয়ের দলিল হলো,

Surah Al-Baqara, Verse 234:

وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا فَعَلْنَ فِي أَنفُسِهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ

আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেকে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা। তারপর যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের ব্যাপারে নীতি সঙ্গত ব্যবস্থা নিলে কোন পাপ নেই। আর তোমাদের যাবতীয় কাজের ব্যাপারেই আল্লাহর অবগতি রয়েছে। সূরা বাকারা-২৩৪


এই আয়াত থেকে প্রমাণিত যে, মৃত্যুর পরে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, সুতরাং তাকে স্পর্শ করতে পারবে না।


হাদিস-০১

ولنا ما روي عن ابن عباس «أن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - سئل عن امرأة تموت بين رجال فقال: تيمم بالصعيد» ولم يفصل بين أن يكون فيهم زوجها، أو لا يكون؛.

অর্থাৎ, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত, একবার এক মহিলা আচমকা এমন এক স্থানে মৃত্যুবরণ করলো, যেখানে পুরুষ ব্যতিরেকে অন্য কোন নারী বিদ্যমান ছিলোনা। তখন তার গোসল-কাফন-দাফনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বললেন, " তাকে মাটি দ্বারা শুধু তায়াম্মুম করানো হবে"। অর্থাৎ গোসল দেয়া যাবেনা। এই হাদীসে স্বামী কিংবা অন্যকোন পুরুষের মাঝে পার্থক্য না করে ব্যাপকভাবে বলে দেয়া হয়েছে, মাইয়িতাকে (মৃত নারীকে) তায়াম্মুম করানো হবে, গোসল দেয়া যাবেনা। তাখরিজ: আলবাসবুত- ২য়  খণ্ড; ৭১ পৃৃষ্ঠা,, বাদায়েউস সানায়ে ১/৩০৪


হাদিস নং-০২

عن الشعبى قال: إذا ماتت المرأة انقطع عصمته ما بينها وبين زوجها،

অর্থাৎ যখন স্ত্রী মারা যায়, তখন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বন্ধন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। 


হাদিস নং-০৩

وعن الشعبى قال: لا يغسل الرجل امراته (مصنف ابن ابى شيبة، كتاب الجنائز، باب الرجل يغسل امرأته-7/146، رقم-11091-11092)

অর্থাৎ স্বামী তার মৃত স্ত্রীকে গোসল দিতে পারবে না। তাখরিজ: মুসান্নেফে ইবনে আবি শায়বা -১১০৯১-১১০৯২


প্রশ্ন: ঘ। ইমাম মালেক, ইমাম শাফি, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ এবং আহলে হাদিসের দলিল কী?


উত্তর: ঘ। দলিল নিম্নরূপ:

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ رَجَعَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ مِنَ الْبَقِيعِ فَوَجَدَنِي وَأَنَا أَجِدُ صُدَاعًا فِي رَأْسِي وَأَنَا أَقُولُ وَارَأْسَاهُ فَقَالَ " بَلْ أَنَا يَا عَائِشَةُ وَارَأْسَاهُ " . ثُمَّ قَالَ " مَا ضَرَّكِ لَوْ مِتِّ قَبْلِي فَقُمْتُ عَلَيْكِ فَغَسَّلْتُكِ وَكَفَّنْتُكِ وَصَلَّيْتُ عَلَيْكِ وَدَفَنْتُكِ " 

-আয়েশা (রাঃ) হতে বর্নিত তিনি বলেন, রাসুল ﷺ বাকী (কবরস্থান) হতে ফিরে এসে আমাকে মাথা ব্যাথা অবস্থায় পেলেন। তখন আমি বলছিলোম ‘হে আমার মাথা’। তিনি বললেন, ‘হে আয়েশা আমিও মাথা ব্যাথায় ভুগছি, হে আমার মাথা’!


অতপর তিনি বললেন, তুমি যদি আমার পূর্বে মারা যেতে তোমার কোন ক্ষতি হতো না। কেননা আমি তোমাকে গোসল করাতাম, কাফন পরাতাম, তোমার যানাযার সালাত আদায় করতাম এবং তোমাকে দাফন দিতাম। তাখরিজ: মাজাহ-১৪৬৫; ইরওয়া-৭০০


প্রশ্ন: ঙ। আহনাফের পক্ষে জবাব কী?


উত্তর: ঙ। 

ولأن النكاح ارتفع بموتها فلا يبقى حل المس والنظر، كما لو طلقها قبل الدخول، ودلالة الوصف أنها صارت محرمة على التأبيد، والحرمة على التأبيد تنافي النكاح ابتداء وبقاء، ولهذا جاز للزوج أن يتزوج بأختها وأربع سواها.

وإذا زال النكاح صارت أجنبية فبطل حل المس والنظر، بخلاف ما إذا مات الزوج؛ لأن هناك ملك النكاح قائم؛ لأن الزوج مالك، والمرأة مملوكة والملك لا يزول عن المحل بموت المالك، ويزول بموت المحل، كما في ملك اليمين فهو الفرق، وحديث عائشة محمول على الغسل تسببا فمعنى قوله: «غسلتك» قمت بأسباب غسلك، كما يقال بنى الأمير دارا حملناه على هذا صيانة لمنصب النبوة عما يورث شبهة نفرة الطباع عنه، وتوفيقا بين الدلائل على أنه يحتمل أنه كان مخصوصا بأنه لا ينقطع نكاحه بعد الموت لقوله: - صلى الله عليه وسلم - «كل سبب ونسب ينقطع بالموت إلا سببي ونسبي» .

وأما حديث علي - رضي الله عنه - فقد روي أن فاطمة - رضي الله عنها - غسلتها أم أيمن.

ولو ثبت أن عليا غسلها فقد أنكر عليه ابن مسعود حتى قال علي: أما علمت «أن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قال: إن فاطمة زوجتك في الدنيا والآخرة» فدعواه الخصوصية دليل على أنه كان معروفا بينهم أن الرجل لا يغسل زوجته  ( بدائع الصنائع في ترتيب الشرائع - ا/٣٠٤)

 

  স্বামী বা অন্য পুরুষের মাঝে পার্থক্য না করে সকলের ক্ষেত্রে একই বিধান প্রযোজ্য হবার কারণ হলো, মৃত্যুর মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনের সম্পূর্ণরূপে সমাপ্তি ঘটে। তাই এরপরে স্ত্রীকে দেখা কিংবা স্পর্শ করা কোনটাই জায়েজ নেই। পাশাপাশি মৃত্যুর মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের জন্য চিরস্থায়ীভাবে হারামও হয়ে যায়। আর এই চিরস্থায়ী হারাম হয়ে যাওয়ার কারণেই স্বামী তার মরহুমা স্ত্রীর বোনকে তাৎক্ষণিকভাবেই বিয়ে করতে পারবে, অনুরূপভাবে মরহুমা স্ত্রীকে বাদ দিয়ে একসাথে চারজন স্ত্রীকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে পারবে। 

   যেহেতু তাদের বৈবাহিক সম্পর্কের অবসান ঘটে গেছে, তাই মরহুমা স্ত্রী এখন তার কাছে ননমাহরাম অনাত্মীয়া নারীতে পরিণত হয়ে গিয়েছে। তাই তাকে কোন প্রকার দেখা কিংবা স্পর্শ করা জায়েজ নেই।

তবে স্বামীর মৃত্যুকালীন সময়টি ভিন্ন। সেক্ষেত্রে স্ত্রী তার স্বামীকে গোসল দিতে পারবে। কারণ বিবাহ হলো একধরনের মালিকানা চুক্তি। যার স্বত্বাধিকারী হলেন স্বামী। আর স্বত্তাধিকারীর মৃত্যুতে মালিকানা চুক্তি বাতিল হয়না, (বরং ক্ষেত্র বিশেষে তার মালিকানা উত্তরাধিকারীদের নিকট স্থানান্তরিত হয়ে যায়)। কিন্তু অধিকৃত মালিকানাধীন বস্তু নিঃশেষ হবার সাথে সাথে মালিকানা চুক্তির সমাপ্তি ঘটে। তাই স্ত্রীর মৃত্যুর মাধ্যমে তার উপর যাবতীয় অধিকার স্বামীর থেকে তিরোহিত হয়ে গেলো। যার ফলশ্রুতি স্বামী তার মরহুমা স্ত্রীকে গোসল দিতে পারবেনা।


 এবার আসা যাক হজরত আয়েশা (রাযি) এর হাদীসের প্রসঙ্গে, যেখানে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়েশা (রাযি.) কে গোসল দেয়ার ঐকান্তিক কামনা ব্যক্ত করেছেন।

এখানে একটি কথা ভালোভাবে জেনে রাখা চাই যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়েশা (রাযি.) কে গোসল দেয়ার মানে এই নয় যে তিনি নিজ হাতেই গোসল দেবেন। বরং এর মর্মার্থ হলো, তিনি নিজ উদ্যোগে তাঁর গোসলের ব্যবস্থা করবেন।

আর এজন্যই হাদীসে- "গোসল করানো" র পূর্বাংশে قمت عليك শব্দের ব্যবহার করেছেন। আরবীতে قام بالشيء এর অন্যতম একটি অর্থ হলো- উদ্যোগ গ্রহণ করা, ব্যবস্থা নেয়া, কোন কাজের সুষ্ঠুভাবে আঞ্জাম দেয়া, ইত্যাদি।


 আরবী ভাষার বালাগাত ( অলংকার) শাস্ত্রে এজাতীয় বাচনশৈলী বহুল আকারে প্রচলিত রয়েছে। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো, بني الأمير القصر

অর্থাৎ, বাদশাহ অট্টালিকা নির্মাণ করেছেন।

তার মানে এই নয় যে, বাদশাহ স্বয়ং রাজমিস্ত্রীর ভূমিকা পালন করে স্বহস্তে প্রাসাদখানা নির্মাণ করেছেন। বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্যে হলো, তিনি প্রাসাদ নির্মাণের যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, ব্যয়ভার নির্বাহ করেছেন। এজাতীয় উপমার ব্যবহারশৈলীকে আরবীতে مجاز عقلي

বা বুদ্ধিবৃত্তিক রূপকার্থ বলা হয়ে থাকে।



উল্লেখ্য যে, পারস্পরিক বিপরীতমুখী অর্থবোধক হাদীসগুলোর মাঝে সমন্বয়কল্পে এই ব্যাখাটি গ্রহণ করাটাই সবচাইতে বেশী নিরাপদ। 

  তাছাড়া আয়েশা (রাযি.) এর হাদীসের ব্যাখ্যায় এটাও বলা যায় যে, এই বিধান শুধুমাত্র তাদের সাথেই খাস (বিশেষায়িত) । অন্যদের বেলায় এই বিধান প্রযোজ্য হবেনা। কারণ আহলে বাইতের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মৃত্যুর মাধ্যমে সকল বংশীয় কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্কের অবসান ঘটে যায়, তবে আমার সাথে যাদের বংশীয় কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে, এ বন্ধন চিরকাল জাগরূক থাকবে।



এবার আসা যাক, হজরত আলী (রাযি.) কর্তৃক ফাতিমা (রাযি.) কে গোসলদান প্রসঙ্গে, প্রসিদ্ধতম মত অনুসারে আলী (রাযি.) স্বহস্তে হযরত ফাতিমা (রাযি.) কে গোসল করান নাই, বরং উম্মে আয়মান (রাযি.) তাকে গোসল করিয়েছেন। আর যদি ধরেও নেয়া হয় যে, তিনি নিজ হাতে ফাতিমা (রাযি.) কে গোসল দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও কোন সাংঘর্ষিকতা নেই। কারণ হজর‍ত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদের ঘোর আপত্তির মাথায় তিনি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসের উদ্বৃতি দিয়ে বলেছিলেন যে, তাদের দাম্পত্য জীবনের চলমান ধারা বেহেশত পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করবে। মাঝখানে তাতে কোন প্রকার ছেদ ঘটবেনা। কারণ আলী (রাযি.) কে সম্বোধন করে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, "নিশ্চয় ফাতিমা তোমার দুনিয়া ও আখিরাতের উভয় জগতের স্ত্রী"।

 

উপরিউক্ত ঘটনা থেকে স্পষ্টভাবেই একথা প্রতীয়মান হয় যে, সাহাবাদের স্বর্ণালী যুগে স্বামী কর্তৃক মৃতা স্ত্রীকে গোসল দেয়ার বিধান বিধিবদ্ধ ছিলোনা। তারই প্রেক্ষিতে   

 হজরত আলী (রাযি.) এর বিধিবহির্ভূত কর্মের উপর হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাযি.) এর ঘোর আপত্তি তুলেছিলেন। তখন আলী (রাযি.) তার এই আপত্তিকে অবনত মস্তকে মেনে নিয়ে জানালেন যে, আহলে বাইতের সদস্যগণের উপর এই সার্বজনীন বিধানটি প্রযোজ্য নয়। কারণ তাদের প্রসঙ্গে স্বতন্ত্র রেওয়াত বর্ণিত হয়েছে। যেখানে মৃত্যু পরবর্তীকালীন সময়েও তাদের সর্বপ্রকারের সম্পর্ক বহাল থাকার বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। 

সুতরাং তাঁদের এই ব্যতিক্রমী ঘটনাকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করে স্বামী কর্তৃক মৃত স্ত্রীকে গোসল দেয়াকে বিধিবদ্ধ করাটা মোটেই শুদ্ধ হবেনা। সূত্র: আল-মাসবুত- ২য় খণ্ড;৭১ পৃষ্ঠা,  বাদায়েউস সানায়ে ১/৩০৪


সারকথা হলো, স্বামী স্ত্রীকে গোসল দিতে পারবে এটা ব্যক্তি বিশেষের জন্য খাস, তাছাড়া নিষেধাজ্ঞার রহস্য হলো,


স্ত্রী ইচ্ছা করলে মৃত স্বামীর সঙ্গে নিজের শাহওয়াত (সহবাস) করতে পারবে না; কিন্তু স্বামী ইচ্ছা করলে মৃত স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করতে পারবে। (উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক পোস্ট মর্টেম এ নিয়োজিত জাল্লাদ মৃত বহু নারীকে ধর্ষণ করেছে)


আর এই কারণে ইমাম আবু হানিফা রহ. বলেছেন, স্বামী তার মৃত স্ত্রীকে গোসল দিতে পারবে না।



 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক