জিজ্ঞাসা-১২৭৩১:
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহ। সুদ এর সংজ্ঞা এর ভয়াবহতা সম্পর্কে কোরআন ও হাদীসের রেফারেন্সসহ জানতে চাই। উল্লেখ্য, সুূদ দাতা ও গ্রহীতা উভয়ই কি সমান অপরাধী? কারণ গ্রহীতা অনেক সময় করজে হাসানা না পেয়ে বাধ্য হয়েই সুদ নিয়ে থাকে। ধন্যবাদ।
তারিখ: ১৭/০৮/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মাহবুব ঢাকা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে বোধগম্যের জন্য প্রথমত দুই ভাগে তারপর আবার কয়েকভাগে ভাগ করছি।
০১. সুদের পরিচয়, ভয়াবহতা, ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করা ইত্যাদি।
ক। সুদের আভিধানিক অর্থ কী?
উত্তর: ক। কুরআন ও হাদীসের পরিভাষায় সুদকে (ربا) ‘রিবা’ বলা হয়। এই শব্দের মূল ধাতু হল (ر ب و ) যার আভিধানিক অর্থ হল, বাড়, বৃদ্ধি, আধিক্য, স্ফীতি প্রভৃতি। رَبَاঅর্থাৎ বেড়েছে বা বৃদ্ধি পেয়েছে। ربا السويق অর্থাৎ ছাতু ঘোলার পর ফেঁপে উঠেছে। ربا في حجره অর্থাৎ সে তার কোলে প্রতিপালিত (বড়) হয়েছে। أربى الشيء সে জিনিসটাকে বাড়িয়েছে ইত্যাদি অর্থ অভিধানে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরবিতে প্রতিশব্দ হলো:
الزيادة،النفل،الفضل، , إِزْدَادَ , تَجَاوَزَ , تَفَشَّى , تَفَوَّقَ , زَادَ , سَمَا و غير ذالك
ইংরেজিতে প্রতিশব্দ হলো: Interest; usury,exceeding ; surpassing ; too much ; excessive ; spare ; extra ; surplus ; accessory.
কুরআন মাজীদেও উক্ত শব্দ ‘বৃদ্ধি’র অর্থে ব্যবহূত হয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
﴿يَمْحَقُ اللهُ الرِّبا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ﴾
অর্থাৎ, আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং সদকাহকে বৃদ্ধি দেন। সূরা বাকারা-২৭৫
প্রশ্ন: খ। সুদের পারিভাষিক অর্থ কী?
উত্তর: খ। শরীয়তের ফিক্হবিদ্দের পরিভাষায় সুদের সংজ্ঞা হল,
هو زيادة أحد البدلين المتجانسين من غير أن يقابل هذه الزيادة عوض.
অর্থাৎ, একই শ্রেণীভুক্ত দুটি জিনিসের পরস্পর আদান-প্রদান করার সময় একজনের অপরজনের নিকট এমন বেশী নেওয়া যাতে এ বেশী অংশের বিনিময়ে কোন জিনিস থাকে না। (আল বুনূকুল ইসলামিয়্যাহ বাইনান নাযারিয়্যাতি অত্তাত্ববীক্ব ৪৪ পৃঃ)
ফতোয়া আলামগীরীতে সুদের নিম্নরূপ সংজ্ঞা করা হয়েছে;
الربا عبارة عن فضل مال لا يقابله عوض في معاوضة ما بمال.
অর্থাৎ, এক মালের বদলে অন্য মালের আদান-প্রদানকালে সেই অতিরিক্ত (নেওয়া) মালকে সূদ বলা হয়; যার কোন বিনিমেয় থাকে না।
হেদায়াতে সুদের সংজ্ঞা এইভাবে করা হয়েছে;
الربا هو الفض المستحق لأحد المتعاقدين في المعاوضة الخالي من عوض شرط فيه
অর্থাৎ, লেন-দেন করার সময় সেই অতিরিক্ত মালকে সুদ বলা হয়; যা কোন একপক্ষ শর্ত অনুসারে কোন বিনিময় ছাড়াই লাভ করে থাকে।
বুঝা এই গেল যে, মূল থেকে যে পরিমাণ অংশ বেশী নেওয়া বা দেওয়া হবে সেটাকেই সুদ বলা হবে। সুতরাং সুদের সংজ্ঞা হল এইরূপ; ‘‘ঋণে দেওয়া মূল অর্থের চেয়ে সময়ের বিনিময়ে যে অতিরিক্ত অর্থ শর্ত ও নির্দিষ্টরূপে নেওয়া হয় তার নাম হল সুদ।’’
প্রশ্ন: গ। সুদের ভয়াবহতা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?
উত্তর: গ। সুদের ভয়াবহতা সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও হাদীস শরীফে নানান ধমক, শাস্তির কথা এসেছে। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো:
আয়াত নং -০১
اَلَّذِیْنَ یَاْكُلُوْنَ الرِّبٰوا لَا یَقُوْمُوْنَ اِلَّا كَمَا یَقُوْمُ الَّذِیْ یَتَخَبَّطُهُ الشَّیْطٰنُ مِنَ الْمَسِّ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَالُوْۤا اِنَّمَا الْبَیْعُ مِثْلُ الرِّبٰوا ۘ وَ اَحَلَّ اللهُ الْبَیْعَ وَ حَرَّمَ الرِّبٰوا فَمَنْ جَآءَهٗ مَوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّهٖ فَانْتَهٰی فَلَهٗ مَا سَلَفَ وَ اَمْرُهٗۤ اِلَی اللهِ وَ مَنْ عَادَ فَاُولٰٓىِٕكَ اَصْحٰبُ النَّارِ هُمْ فِیْهَا خٰلِدُوْنَ.
অর্থ: যারা সুদ খায় তারা (কিয়ামতের দিন) সেই ব্যক্তির মতো দাঁড়াবে, যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে। এটা এজন্য যে, তারা বলে, ক্রয়-বিক্রয় তো সুদের মতোই। অথচ আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম। যার নিকট তার প্রতিপালকের উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, তবে অতীতে যা হয়েছে তা তারই। আর তার ব্যাপার আল্লাহর এখতিয়ারে। আর যারা পুনরায় করবে তারাই জাহান্নামের অধিবাসী হবে। সেখানে তারা হবে চিরস্থায়ী। সূরা বাকারা- ২৭৫
আয়াত নং -০২
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَ ذَرُوْا مَا بَقِیَ مِنَ الرِّبٰۤوا اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ فَاِنْ لَّمْ تَفْعَلُوْا فَاْذَنُوْا بِحَرْبٍ مِّنَ اللهِ وَ رَسُوْلِهٖ وَ اِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوْسُ اَمْوَالِكُمْ لَا تَظْلِمُوْنَ وَ لَا تُظْلَمُوْنَ.
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যা বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাও, যদি তোমরা মুমিন হও।
যদি তোমরা না ছাড় তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে নাও। আর যদি তোমরা তাওবা কর তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই। এতে তোমরা (কারও প্রতি) জুলুম করবে না এবং তোমাদের প্রতিও জুলুম করা হবে না। সূরা বাকারা২৭৮-২৭৯
আয়াত নং -০৩
یَمْحَقُ اللهُ الرِّبٰوا وَ یُرْبِی الصَّدَقٰتِ وَ اللهُ لَا یُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ اَثِیْمٍ.
আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ কোনো অকৃতজ্ঞ পাপীকে ভালোবাসেন না। সূরা বাকারা-২৭৬
অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা সুদ থেকে অর্জিত অর্থ বা তার বরকত নষ্ট করে দেন। আর সদকা দানকারীর অর্থ-সম্পদ বা তার বরকত বৃদ্ধি করে দেন।
আয়াত নং -০৪
فَبِظُلْمٍ مِّنَ الَّذِیْنَ هَادُوْا حَرَّمْنَا عَلَیْهِمْ طَیِّبٰتٍ اُحِلَّتْ لَهُمْ وَ بِصَدِّهِمْ عَنْ سَبِیْلِ اللهِ كَثِیْرًا وَّ اَخْذِهِمُ الرِّبٰوا وَ قَدْ نُهُوْا عَنْهُ وَ اَكْلِهِمْ اَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ وَ اَعْتَدْنَا لِلْكٰفِرِیْنَ مِنْهُمْ عَذَابًا اَلِیْمًا.
ভালো ভালো যা ইহুদীদের জন্য বৈধ ছিল আমি তা তাদের জন্য অবৈধ করেছি; তাদের সীমালংঘনের জন্য, আল্লাহর পথে অনেককে বাধা দেওয়ার জন্য এবং তাদের সুদ গ্রহণের জন্য, যদিও তা তাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল; এবং অন্যায়ভাবে লোকদের ধন-সম্পদ গ্রাস করার জন্য। তাদের মধ্যে যারা কাফের তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছি। সূরা নিসা,১৬০-১৬১
ব্যাখ্যা: উক্তরোক্ত দুই আয়াতে ইহুদীদের যেসকল অপরাধের কারণে তাদের দুনিয়া ও আখেরাতের শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে তন্মধ্যে একটি ছিল তাদের সুদ গ্রহণের অপরাধ
হাদিস নং-০১
اجْتَنِبُوا السّبْعَ المُوبِقَاتِ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللّهِ وَمَا هُنّ؟ قَالَ: الشِّرْكُ بِاللّهِ... وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ اليَتِيمِ..
অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বিরত থাক। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেই সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ কী? তিনি বললেন-
১. আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করা, ২. জাদু করা, ৩. অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করা, যা আল্লাহ নিষেধ করেছেন। ৪. সুদ খাওয়া, ৫. এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা, ৬. জিহাদের ময়দান থেকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালিয়ে যাওয়া। ৭. সতী-সাধ্বী সরলমনা-উদাসীনা মুমিন নারীদের বিরুদ্ধে অপকর্মের মিথ্যা অপবাদ দেওয়া। তাখরিজ: বুখারি- ২৭৬৬, ৬৮৫৭; মুসলিম- ৮৯; সুনানে আবু দাউদ- ২৮৭৪
হাদিস নং-০২
لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ آكِلَ الرِّبَا وَمُؤْكِلَهُ.
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত। যে ব্যক্তি সুদ খায় এবং যে সুদ খাওয়ায় উভয়কে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা‘নত করেছেন। তাখরিজ: মুসলিম- ১৫৯৭; জামে তিরমিযী- ১২০৬; সুনানে নাসাঈ- ৫১০৪
হাদিস নং -০৩
لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ آكِلَ الرِّبَا، وَمُؤكِلَهُ، وَشَاهِدَيْهِ، وَكَاتِبَهُ.
যে সুদ খায়, যে সুদ খাওয়ায়, যে সাক্ষী থাকে এবং যে ব্যক্তি সুদের হিসাব-নিকাশ বা সুদের চুক্তিপত্র ইত্যাদি লিখে দেয় সকলের প্রতি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা‘নত করেছেন। তাখরিজ: মুসনাদে আহমাদ-৬৬০; সুনানে আবু দাউদ-৩৩৩৩; জামে তিরমিজি- ১২০৬
হাদিস নং-০৪
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الرِّبَا سَبْعُونَ حُوبًا، أَيْسَرُهَا أَنْ يَنْكِحَ الرَّجُلُ أُمَّهُ»
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সুদের গুনাহর সত্তরটি স্তর রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র স্তর হলো আপন মাকে বিবাহ (যেনা) করা। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২২৭৪, শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৫১৩১, মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং-২২৫৯]
প্রশ্ন: ঘ। করজে হাসানা না পেলে সুদ ভিত্তিক লোন নেওয়া জায়েজ হবে কি?
উত্তর: ঘ। আমি উপরে সুদের ভয়াবহতা সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা উল্লেখ করেছি। সুদ অকাট্যভাবে হারাম। তবে একান্ত ঠেকাবশত সুদ ভিত্তিক লোন জায়েজ আছে। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু, এর বেশি জায়েজ নেই। দলিল:
فقد بين الله سبحانه وتعالى أن الضرورات تبيح المحظورات، ومن المقرر فقهياً أن الضرورة تقدر بقدرها، فقال الله -تبارك وتعالى: وَقَدْ فَصَّلَ لَكُمْ مَا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ إِلَّا مَا اضْطُرِرْتُمْ إِلَيْهِ [الأنعام:119].
وقال الله تعالى بعد ذكر بعض المحرمات: فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلا عَادٍ فَلا إِثْمَ عَلَيْهِ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ [البقرة:173].
অর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্টভাবে ভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন যে, প্রয়োজনের তীব্রতা অনেকসময় নিষিদ্ধ বস্তুকেও বৈধতায় রূপ দিয়ে থাকে। আর ফিকহ শাস্ত্রের একটি সুবিদিত মূলনীতি হলো, কোন বিধিবহির্ভূত বিষয়ের প্রচণ্ড আবশ্যকীয়তা দেখা দিলে তার প্রয়োজন অনুপাতেই সেটি বৈধ হিসেবে নির্ণীত হবে, তার অতিরিক্ত নয়। এবিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- " তিনি তোমাদেরকে সবিস্তারে বর্ণনা করে দিয়েছেন ঐ সকল বস্তু, যা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ। তবে একান্ত অপরাগতার পরিস্থিতিতে প্রয়োজন অনুপাতে তোমরা সেগুলোকেও গ্রহণ করতে পারবে।" (সূরা আনআম- ১১৯)
এছাড়া অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা কিছু হারাম বস্তুর বর্ণনা দেয়ার পর বলেন, " পরম আগ্রহবোধ না নিয়ে কিংবা সীমা অতিক্রম না করে কেউ যদি অপারগ হয়ে বর্ণিত খাদ্যগুলো গ্রহণে বাধ্য হয়ে পড়ে, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তার প্রতি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি দান করবেন, এবং দয়াপরবশ আচরণ করবেন। ( সূরা বাক্বারা- ১৭৩)
أن تكون الضرورة قائمة لا منتظرة، فلا يجوز الاقتراض بالربا تحسباً لما قد يكون في المستقبل.
ثانياً: ألا يكون لدفع الضرورة وسيلة أخرى إلا مخالفة الأوامر والنواهي الشرعية، فلا يجوز الإقبال على القرض الربوي مع وجود البديل المشروع أو الأخف حرمة.
ثالثاً: يجب على المضطر مراعاة قدر الضرورة، لأن ما أبيح للضرورة يقدر بقدرها، ولذلك قرر الفقهاء أنه لا يجوز للمضطر أن يأكل من الميتة، إلا بما يسد رمقه.
رابعاً: ألا يقدم المضطر على فعل لا يحتمل الرخصة بحال، فلا يجوز له قتل غيره افتداء لنفسه، لأن نفسه ليست أولى من نفس غيره، ونحو هذا.
অর্থাৎ, প্রথমত. অত্যধিক প্রয়োজনীয়তা তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যমান থাকতে হবে, অনাগত ভবিষ্যতের আশংকা নির্ভর হওয়া চলবেনা। সুতরাং অনাগত ভবিষ্যতে অর্থসংকটে নিপতিত হবার অনিশ্চিত আশংকা নিয়ে সুদভিত্তিক ঋণ গ্রহণের বৈধতা নেই।
দ্বিতীয়ত. প্রয়োজন নিবারণের বিকল্প অন্যকোন অবলম্বন থাকা চলবেনা। সুতরাং শরীয়ত সম্মত কোন বৈধ উপায় যদি উপস্থিত থাকে, কিংবা এমন কোন বিকল্প পদ্ধতি বিদ্যমান থাকে, যার গুরুতরতা সুদের তুলনায় লঘু বা হালকা, তাহলে সেই বিকল্প পদ্ধতি ছেড়ে সুদী লেনদেন জড়িত হওয়া কোনক্রমেই জায়েজ হবেনা।
তৃতীয়ত. নিরুপায় ব্যক্তির জন্য আবশ্যক হলো, প্রয়োজনীয়তার অনুপাতের দিকটির প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখা। কারণ অপারগতার কারণে যে বিষয়টির বৈধতা দেয়া হয়েছে, তার অবকাশের পরিধি প্রয়োজনীয়তা অনুপাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে। এজন্যই ফকীহগণ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, প্রচন্ড ক্ষুধায় কাতর ব্যক্তি তার সামনে কোন মৃতপ্রাণী দেখতে পেলে সেখান থেকে শুধু ততোটুক পরিমানই সে ভক্ষণ করতে পারবে, যতোটুকু পরিমাণ তার ক্ষুৎতাড়নাকে নিবারণ করে।
চতুর্থত. নিরুপায় ব্যক্তি অপারগতার তাড়নায় এমন কোন কাজ করে বসতে পারবেনা, শরীয়তের দৃষ্টিতে যার অবকাশ কোন অবস্থাতেই মেলেনা, অর্থাৎ কোনসময়ই তা বৈধ হয়না। সুতরাং নিজের প্রাণের বিনিময়ে আরেকজনকে হত্যা করা তার জন্য বৈধ নয়। কারণ আরেকজনের প্রাণসত্তার চাইতে তার প্রাণসত্তা কোনক্রমেই উত্তম নয়। মর্যাদাগত দিক দিয়ে উভয়েই সমান।
সারকথা হলো,
ثم إنه لا يخفى عليك أن الاقتراض بالربا محرم لا يجوز الإقدام عليه إلا لضرورة لا يمكن دفعها إلا به لقول الله تعالى : ( فاتقوا الله ما استطعتم واسمعوا وأطيعوا) . [ التغابن: 16].
অর্থাৎ, একথা সুবিদিত যে, সুদ ভিত্তিক ঋণব্যবস্থা হারাম ও নিষিদ্ধতম একটি কর্ম। এধরণের লেনদেনে জড়িত হওয়া কোনক্রমেই জায়েয নয়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে এমন অপারগতা যদি প্রকাশ পায়, যা নিবারণ করা একপ্রকার অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে প্রয়োজন অনুপাতে তা বৈধ রয়েছে। আল্লাহ তায়ালার বাণী- "সাধ্যমোতাবেক তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আর তাঁর (নির্দেশনাবলী) শ্রবণ করো এবং তাঁকে মান্য করো। ( সূরা তাগাবুন -১৬)
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
সহযোগিতায়, মুফতি আসাদুল ইসলাম তানয়িম