আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৭৪৬: উমাইর, নুসাইর, য়ুসাইর নাম সমূহের অর্থ কী?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৭৪৬: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। 

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আশা করি আল্লাহর রহমাতে ভালো আছেন। আমি আমার ব্যক্তিগত একটা বিষয়ে আপনার সহযোগিতা চাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ আমার বড় ছেলের ঘরে একজন নতুন মেহমান আসতেছে তার একটা ইসলামী নাম রাখার পূর্বে যাচাই করা দরকার নামটির সঠিক উচ্চারণ,( আরবী সহ), নামটির অর্থ, নামটির সাথে কোন সাহাবীর নামের সাথে মিল আছে কিনা? আমি তিনটি নাম পাঠাচ্ছি আর প্রত্যের নামের সাথে বিন আরীফ শব্দ থাকবে যেহেতু আমার ছেলের নাম আরীফ। অগ্রিম জাজাকাল্লাহ খাইরান। আল্লাহ হাফেজ।

Nusair

Umair

Yusair

তারিখ:  ০২/০৯/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা মনিরুল হক ঝালকাঠি  থেকে।


 জবাব

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 


তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো

প্রথমেই আপনাদেরকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। কারণ আপনারা প্রচলিত স্রোতধারার বাইরে গিয়ে আপনাদের ঘর আলোকিত করে আগমন করা নতুন অতিথির জন্য সুন্দর অর্থবহ ইসলামসম্মত একটি নাম নির্বাচনের জন্য মনস্থ করেছেন। কারণ সহীহ হাদীসের ভাষ্যমতে কিয়ামতের দিন প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজনাম ও পিতৃনাম ধরেই সম্বোধন করা হবে। 


عَنْ أبي الدرداء قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِنَّكُمْ تُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِأَسْمَائِكُمْ وَأَسْمَاءِ آبَائِكُمْ، فَأَحْسِنُوا أَسْمَاءَكُمْ ".

অর্থাৎ,  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, " কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের নিজনাম ও তোমাদের পিতার নাম উল্লেখ করে ডাকা হবে। সুতরাং তোমরা নাম বাছাইকালে সুন্দর সুন্দর নাম নির্বাচন করবে। ( সুনানে আবি দাঊদ- ৪৯৪৮)


  এবার আসা যাক আপনার বাছাইকৃত নামগুলো প্রসঙ্গে!  আপনার পছন্দকৃত তিনটির নামের সবিস্তারিত বিশ্লেষণ নিম্নে আলোকপাত হলো-


  আপনার চয়নকৃত পছন্দসই নাম তিনটি হলো, যথাক্রমে-  উমাইর, নুসাইর, য়ুসাইর।

  উল্লিখিত শব্দগুলো হলো, আরবী تَصْغِيْر এর সীগাহ ( ক্ষুদ্রতাজ্ঞাপক শব্দকাঠামো)। আল্লাহ তায়ালার মনোনীত বান্দা হজরত শোয়াইব ( আঃ) নামও এই শব্দকাঠামো দিয়ে তৈরি ।আরবগণ নানাবিধ কারণে "তাছগীর"এর ছীগাহ ব্যবহার করে থাকেন। তবে মানুষের নামকরণের ক্ষেত্রে  তাদের এই তাছগীর শৈলী প্রয়োগের সিংহভাগ উদ্দেশ্য হলো, স্নেহবাৎসল্যতা প্রদর্শন করা, সোহাগসুলভ মনোভাব ব্যক্ত করা, হ্রদয়ের মাঝে আন্দোলিত প্রীতিবোধের উচ্ছাস ঘটিয়ে কাউকে সম্ভাষণ করা। 


√ "উমাইর /উমায়ের " عُمَيْر শব্দটি আরবী উমর  عمر শব্দের ক্ষুদ্রতাজ্ঞাপক শব্দ। উমর শব্দের অর্থ হলো, বয়ষ্কাল/ জীবন/ আবাদীকরণ। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন- 


{ وَمَا یُعَمَّرُ مِن مُّعَمَّرࣲ وَلَا یُنقَصُ مِنۡ عُمُرِهِۦۤ إِلَّا فِی كِتَـٰبٍۚ إِنَّ ذَ ٰ⁠لِكَ عَلَى ٱللَّهِ یَسِیرࣱ } سورة الفاطر-١١


অর্থাৎ, কোন ব্যক্তি চাই সে দীর্ঘজীবী হোক কিংবা স্বল্পায়ুর অধিকারী, প্রত্যেকের জীবনসীমার মেয়াদকাল কিতাবে সংরক্ষিত আছে। নিশ্চয় এই কর্মযজ্ঞ সাধন করা আল্লাহর নিকট অনেক সহজ। ( সূরা ফাতির- ১১)  


সেই অনুসারের "উমাইর /উমায়ের" শব্দের অর্থ হলো- "আদর-আহলাদে বেড়ে ওঠা দীর্ঘজীবী "। ( যেহেতু তাছগীরের শব্দকাঠামোতে স্নেহ বাৎসল্যতার অর্থ বিরাজমান, তাই "আদর-আহলাদ" অংশটি যুক্ত করা হয়েছে।)

     উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একজন সাহাবীর নাম ছিলো, উমায়ের বিন সা'দ। তিনি কৈশোরেই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতে হাত রেখে ইসলাম ধর্মের দীক্ষায় দীক্ষিত হোন।

   এছাড়া তৎকালীন সময়ে আবু উমায়ের নামক জনৈক শিশু সাহাবী "নুগায়ের"  পাখী দিয়ে খেলাধুলা করতেন। তাঁর সাথে দেখা হলেই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাস্যরসিকতার ছলে ছন্দের ঝংকার তুলে বলে উঠতেন-

يا أبا عُمَير، ما فَعَلَ النُّغَير

(ওহে আবু উমায়ের, কী করছে এখন প্রিয় পাখী নুগায়ের?)


√ আরবী  نَسْر ( সীন অব্যয়যোগে) শব্দের অর্থ হলো, ঈগল পাখি।

আবার, نَصْر ( সোয়াদ অব্যয়যোগে) শব্দের অর্থ হলো, বিজয়, সাহায্য, ইত্যাদি।

পবিত্র কুরআনে এই শব্দটি বহুল আকারে ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- 

{  أَلَاۤ إِنَّ نَصۡرَ ٱللَّهِ قَرِیبࣱ } سورة البقرة -٢١٤

অর্থাৎ,  জেনে রেখো, আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটেই। ( সূরা বাক্বারা-২১৪)


এই "নাসর" শব্দটিরই مُصَغَّر বা ক্ষুদ্রার্থবোধক শব্দকাঠামো হলো, نُصَيْر (নুসাইর / নুসায়ের)। যার অর্থ হলো,  খুদে সাহায্যকারী / সুক্ষ্ম বিজয় ইত্যাদি


মুসলিম ইতিহাসের পাতায় মূসা বিন নুসায়েরের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। কারণ মুসলমানদের স্পেন বিজয়ে তিনি গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছিলেন। এছাড়াও তিনি উত্তর আফ্রিকার গভর্ণর হিসেব দায়িত্ব পালন করেন । একজন মুসলিম সেনাপতি হিসেবে তাঁর অপরিসীম শৌর্যবীর্য ও দূরদর্শী  রণকৌশল বিশ্বজোড়া সুনাম ও সুখ্যাতির স্বাক্ষর রেখে গিয়েছে।



√ আরবী يُسْر ( য়ুসর) শব্দের অর্থ হলো- সহজতা, স্বাচ্ছন্দ্য, সমৃদ্ধি, প্রাচুর্য ইত্যাদি। পবিত্র কুরআনের অসংখ্য জায়গায় এই শব্দটির উপস্থিতি ব্যপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন- 

{ یُرِیدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلۡیُسۡرَ وَلَا یُرِیدُ بِكُمُ ٱلۡعُسۡرَ }  سورة البقرة - ١٨٥

অর্থাৎ,  আল্লাহ তোমাদের সাথে সহজতা চান,কঠোরতা আরোপ করতে চাননা। (সূরা বাকারা- ১৮৫)


এই "য়ুসর" শব্দটিরই مُصَغَّر বা ক্ষুদ্রতাজ্ঞাপক শব্দকাঠামো হলো, يُسَيْر (য়ুসাইর / য়ুসায়ের)। যার অর্থ হলো, জলবৎ তরলং সহজসাধ্য বিষয় বা বস্তু /স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ব্যক্তিত্ব/ সহজসুলভ মানসিকতার অধিকারী।


সাহাবাগণের নামীয় তালিকাতেও এই নামটি স্থান করে নিয়েছে।"য়ুসাইর বিন আমর" ছিলেন আল্লাহর রাসূলের অন্যতম একজন একনিষ্ঠ সাহাবী। তিনি কূফার অধিবাসী ছিলেন। 


 সারকথা হলো,   উপরিউক্ত প্রতিটি নামের সাথে পিতৃনাম "আরীফ/আরিফ" যুক্ত করে নামকরণ করা যাবে। সাহাবায়ে কেরামের স্বর্ণালী যুগেও এধরণের নামকরণের ব্যপক প্রচলন ছিল। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সহ তাঁরা প্রত্যেকেই নিজের নামের সাথে পিতৃনাম সংযুক্ত করে  পরিচিত হতেন। যেমন- মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।

অনুরূপভাবে,  হজরত আবু বকর বিন আবি কুহাফা (রাযি.) ওমর বিন খাত্তাব ( রাযি.), উসমান বিন আফফান ( রাযি.), আলী বিন আবী তালেব (রাযি.), আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাযি.) ইত্যাদি।


  والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি আসাদুল ইসলাম তানয়িম,

সহযোগিতায়, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক