জিজ্ঞাসা-১২৭৩০:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আসসালামু আলাইকুম আল বুরহানে আমার প্রশ্ন সাধারনত মিডিলইস্টে নামাজিরা এক ধরনের হাতা কাটা জামা/জুব্বা পরে সালাত আদায় করে তা দেখে আমাদের দেশের কিছু লোক সে রকম জামা পরে সালাত আদায় করছে। এ ধরনের হাতা কাটা জামা/জুব্বা পরে সালাত আদায়ে কোন বিধিনিষেধ আছে কি? দলিলসহ জানতে চাই।
তারিখ: ২২/০৮/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আব্দুর রশীদ দিনাজপুর থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
সতর পরিমাণ কাপড় পরিধানে থাকলে নামাজ আদায় হয়ে যায়। তবে হাফ হাতা শার্ট/গেঞ্জি, হাতা কাটা জুব্বা/পাঞ্জাবি/জামা পরিধান করে নামাজ আদায় করা অধিকাংশ ফুকাহায়ে মাকরুহ বলেছেন। দলিল:
আয়াত নং -০১
يَا بَنِي آدَمَ خُذُواْ زِينَتَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ
‘হে বনী-আদম! তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও।'(সূরা আ’রাফ ৩১)
নোট: এ আয়াতে কারিমায় নামাজে কেবল সতর আবৃত করতেই নির্দেশ দেওয়া হয়নি, বরং সাজসজ্জার পোশাকও পরিধান করতে বলা হয়েছে।
হাদিস নং -০১
- حَدَّثَنَا مُعَلَّى بْنُ أَسَدٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ طَاوُسٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أُمِرْتُ أَنْ أَسْجُدَ عَلَى سَبْعَةِ أَعْظُمٍ عَلَى الجَبْهَةِ، وَأَشَارَ بِيَدِهِ عَلَى أَنْفِهِ وَاليَدَيْنِ وَالرُّكْبَتَيْنِ، وَأَطْرَافِ القَدَمَيْنِ وَلاَ نَكْفِتَ الثِّيَابَ وَالشَّعَرَ»
মু’আল্লা ইবনে আসাদ (রাহঃ) ......... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) ইরশাদ করেছেনঃ আমি সাতটি অঙ্গের দ্বারা সিজদা করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। কপাল দ্বারা এবং তিনি হাত দিয়ে নাকের প্রতি ইশারা করে এর অন্তর্ভুক্ত করেন, আর দু’ হাত, দু’ হাঁটু, দু’ পায়ের আঙ্গুলসমূহ দ্বারা। আর আমরা যেন চুল ও কাপড় (হাতা) না গুটাই। তাখরিজ: বুখারি-৮১২; মুসলিম-৪৯০
হাদিস নং -০২
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاَءِ، وَإِبْرَاهِيمُ بْنُ مُوسَى، عَنِ ابْنِ الْمُبَارَكِ، عَنِ الْحَسَنِ بْنِ ذَكْوَانَ، عَنْ سُلَيْمَانَ الأَحْوَلِ، عَنْ عَطَاءٍ، - قَالَ إِبْرَاهِيمُ - عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنِ السَّدْلِ فِي الصَّلاَةِ وَأَنْ يُغَطِّيَ الرَّجُلُ فَاهُ .
মুহাম্মাদ ইবনুল-আলা .... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) মৃত্তিকাস্পর্শী লম্বা কাপড় পরিধান করে নামায পড়তে নিষেধ করেছেন এবং নামাযের সময় মুখ ঢাকতেও নিষেধ করেছেন। তাখরিজ:
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৬৪৩
নোট: এ হাদিস শরিফের ইশারাতুন নস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হাতের কাপড় কব্জি পর্যন্ত বা হাতের এত বেশি কাপড় পরিধান না করা, যাতে মাটিতে ছিছোড়ে/স্পর্শ করে, অর্থাৎ হাতের বাহিরে অতিরিক্ত কাপড়।
ফকিহদের মতামত:
ولو صلي رافعا كميه إلي مرفقين كره. ( فصل فيما يفسد صلاة)
কাপড়ের হাতলকে উপরের দিকে ভাজ করে রাখা মাকরূহ। সূত্র: ফতোয়ায়ে শামী -১/৬৯০; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া-৩/৩৭২
দ্বিতীয় কথা হলো, কতক আলেমদের মতে, হাফ হাতা শার্ট, হাতা কাটা জুব্বা/জামা পরিধান করে নামাজ আদায় করতে কোনো অসুবিধা নেই। তাদের যুক্তি হচ্ছে-
যেসব পোশাক পরিধান করে কোনো মহতি মাহফিল বা অনুষ্ঠানে যেতে সংকোচ বোধ হয়, ওসব পোশাক পরে নামাজ পড়া মাকরুহে তানজিহি। তবে কারো কাছে ওই মুহূর্তে হাফশার্ট বা গেঞ্জি থেকে ভালো কোনো পোশাক না থাকলে, সেগুলো পরেই নামাজ আদায় করা যাবে, এতে কোনো অসুবিধা নেই।’
বর্তমান সমাজে হাফ শার্ট বা টি-শার্ট পরে নামাজ পড়লে মাকরুহ হবে না বলে মনে করেন অনেক আলেম। কারণ হিসেবে তারা বলেন, যেহেতু আমাদের সমাজে টি-শার্ট বা হাফ হাতা শার্টকে অশালীন মনে করা হয় না, এমনকি অফিস-আদালত বা গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে হাফ শার্ট পড়া হয়, এছাড়াও বর্তমানে এটি সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত। তাই হাফ হাতা শার্ট বা টি-শার্ট পড়ে নামাজ পড়লে মাকরুহ হবে না।
তবে, ‘স্যান্ডো গেঞ্জি পরে যদি কেউ সালাত আদায় করেন, তাহলে তাঁর সালাত মাকরুহ হবে। কাঁধের ওপর যদি কোনো কাপড় দেওয়া থাকে বা চাদর দেওয়া থাকে, তাহলে তার সালাত হয়ে যাবে। মূল কথা হলো, সালাতের সময় কাঁধ ঢাকতে হবে, অন্যথায় সালাত মাকরুহ হবে।’ (ইফতা বিভাগ, দারুল উলুম দেওবন্দ, ভারত)
সারকথা হলো, যেহেতু অধিকাংশ ফুকাহার মতে মাকরুহ এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিকল্প পোশাক থাকতে, হাফ হাতা শার্ট, গেঞ্জি, জামা পরিধান না করায় উচিত। উল্লেখ্য যে, আমাদের দেশে নামাজের পোশাক বলতে পাঞ্জাবী/জামা ও পায়জামাই বুঝায়। সূরা আরাফের ৩১ নং আয়াতে সাজসজ্জা করার একটি ব্যাখ্যা হলো নামাজের পোশাক।
সুতরাং জামা-পায়জামা পরিধান করলে আর সন্দেহ থাকে না।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক