আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৭৩২: সময়ের মূল্য বা অবসর সময়ের সৎ ব্যবহার।

No Comments

 



















জিজ্ঞাসা-১২৭৩২: 

 মুহতারাম, 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, 

 অবসর সময়ের সৎ ব্যবহার। এ বিযয় দুটির খুতবা সংক্রান্ত আলোচনা দরকার। অনুগ্রহ করে সহোযোগিতা করবেন।

তারিখ:  ২৩/০৮/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

মাওলানা  মাহমুদুল হাসান, কুড়িগ্রাম থেকে।


 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 


তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো

ক। ভূমিকা: আলাহ তাআলা সূরা ‘আছর’ এর মধ্যে মানবজাতির ক্ষতিগ্রস্ততার কথা বলার সময় যুগ-সময়ের শপথ করেছেন। তা থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, সময় যা মানুষ লাভ করে তা অনেক বড় ও অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিম্নে কুরআন-হাদীস, আসলাফ আকাবিরে নজরে সময়ের মূল্য তুলে ধরা হবে ইনশাআল্লাহ।

و الله التوفيق و المستعان

। কুরআনুল কারিমে সময়ের কসম/শপথ :

القسم بالوقت في القرآن الكريم

أقسم الله عز وجل في القرآن الكريم بالوقت في مواضع متعددة نظراً لعظمته وأهميته، وخص القسم به من خلال القسم بأجزاء منه في فواتح العديد من السور، فقد أقسم بالعصر فقال تعالى: (وَالْعَصْرِ*إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ*إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ) سورة العصر. وجاء القسم هنا بالعصر أي الدهر، وأقسم بالفجر، فقال: (وَالْفَجْرِ وليالٍ عشر) سورة الفجر، وأقسم باللّيل والنهار، فقال: (وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى*وَالنَّهَارِ إِذَا تَجَلَّى) سورة الليل. وقال تعالى في موضع آخر: (وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ خِلْفَةً لِمَنْ أَرَادَ أَنْ يَذَّكَّرَ أَوْ أَرَادَ شُكُورًا) سورة الفرقان، وما هذا القسم إلا لبيان أهمية الوقت في الإسلام وأثره على الفرد والمجتمع.

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা অনেক জায়গায় সময়ের কসম করেছেন। যেমন,


আয়াত নং -০১

وَالْعَصْرِ

কসম যুগের (সময়ের)। সূরা আসর-০১


আয়াত নং -০২

وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَىٰ

وَالنَّهَارِ إِذَا تَجَلَّىٰ

শপথ রাত্রির, যখন সে আচ্ছন্ন করে। 

শপথ দিনের, যখন সে আলোকিত হয়। সূরা লাইল,১-২


আয়াত নং -০৩

وَالنَّهَارِ إِذَا جَلَّاهَا

وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَاهَ

শপথ দিবসের যখন সে সূর্যকে প্রখরভাবে প্রকাশ করে।

শপথ রাত্রির যখন সে সূর্যকে আচ্ছাদিত করে। সূরা শামস, ৩-৪


আয়াত নং -০৪

وَالْفَجْرِ

وَلَيَالٍ عَشْرٍ

শপথ ফজরের,শপথ দশ রাত্রির, শপথ তার। সূরা ফজর,১-২


আয়াত নং -০৫

وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ خِلْفَةً لِّمَنْ أَرَادَ أَن يَذَّكَّرَ أَوْ أَرَادَ شُكُورًا

যারা অনুসন্ধানপ্রিয় অথবা যারা কৃতজ্ঞতাপ্রিয় তাদের জন্যে তিনি রাত্রি ও দিবস সৃষ্টি করেছেন পরিবর্তনশীলরূপে। সূরা ফুরকান -৬২


এ শপথ দ্বারা ইসলামে সময়ের গুরুত্ব ফুটে ওঠে। এবং এর প্রভাব ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে ব্যাপক। সূত্র: কিমাতুল ওয়াকতি ফি ইসলাম


। সময়ের গুরুত্ব সম্পর্কে আল-কুরআন:

আয়াত নং-০১

حَتَّىٰ إِذَا جَاءَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ رَبِّ ارْجِعُونِ

لَعَلِّي أَعْمَلُ صَالِحًا فِيمَا تَرَكْتُ كَلَّا إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَائِلُهَا وَمِن وَرَائِهِم بَرْزَخٌ إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ

যখন তাদের কারও কাছে মৃত্যু আসে, তখন সে বলেঃ হে আমার পালণকর্তা! আমাকে পুনরায় (দুনিয়াতে ) প্রেরণ করুন। 

যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি, যা আমি করিনি। কখনই নয়, এ তো তার একটি কথার কথা মাত্র। তাদের সামনে পর্দা আছে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত। সূরা মুমিনুন,৯৯-১০০


আয়াত নং -০২

وَأَنفِقُوا مِن مَّا رَزَقْنَاكُم مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَيَقُولَ رَبِّ لَوْلَا أَخَّرْتَنِي إِلَىٰ أَجَلٍ قَرِيبٍ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُن مِّنَ الصَّالِحِينَ

আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় সে বলবেঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। সূরা মুনাফিকুন -১০


আয়াত নং -০৩

وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّىٰ يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ

এবং পালনকর্তার এবাদত করুন, যে পর্যন্ত আপনার কাছে নিশ্চিত কথা (মৃত্যু আসা পর্যন্ত) না আসে। সূরা হিজর -৯৯


ঘ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দৃষ্টিতে সময়ের মূল্য:


হাদিস নং -০১

6412 - حَدَّثَنَا المَكِّيُّ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَعِيدٍ هُوَ ابْنُ أَبِي هِنْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " نِعْمَتَانِ مَغْبُونٌ فِيهِمَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ: الصِّحَّةُ وَالفَرَاغُ " قَالَ عَبَّاسٌ العَنْبَرِيُّ: حَدَّثَنَا صَفْوَانُ بْنُ عِيسَى، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَعِيدِ بْنِ أَبِي هِنْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، سَمِعْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلَهُ


মক্কী ইবনে ইবরাহীম (রাহঃ) ......... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ দুটি নিআমত এমন আছে, যে দু’টোতে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তা হল, সুস্থতা আর অবসর। তাখরিজ: বুখারি-৬৪১২



হাদীসের ব্যখ্যা:

মানুষকে আল্লাহ যে নিয়ামতগুলো দান করেছেন সেগুলোর সঠিক ও যথার্থ ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নতি ও সফলতা অর্জন করা সম্ভব, আর তার অন্যথা হলে অবনতি ও ব্যর্থতা এই সহজ সত্যটাই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতের সামনে তুলে ধরেছেন। এই হাদীসে এ ধরনের দু’টি নেয়ামতের কথা উল্লেখ করে তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘দু’টি নিয়ামতের ব্যাপারে অসংখ্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। (অর্থাৎ এ দু’টি নিয়ামতের যথাযথ মূল্যায়ন না করার কারণে তারা কল্যাণবঞ্চিত।) নিয়ামত দু’টি হল ‘সুস্থতা’ ও ‘অবকাশ’।’


অনেক মানুষ ধোঁকার মধ্যে থাকার অর্থ হল, প্রথমত এই দুই নিআমত সাধারণত একসাথে লাভ হয় না। অনেক মানুষ সুস্থ, কিন্তু তার অবসর নেই। আবার অনেকে অবসর, কিন্তু সুস্থ নয়। আর কারো ভাগ্যে যদি উভয় নিআমতই একসাথে মিলে যায় তবে এর প্রকৃত মূল্যায়ন খুব কম মানুষই করে থাকে; বরং অযথা কাজকর্মে এ দুই নিআমত নষ্ট হয়ে যায়।


অসুস্থতাও আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নিআমত। বিভিন্ন হাদীসে রোগ-শোক ও বালা-মসিবতেরও তাৎপর্য ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। অসুস্থতা দেহের যাকাত স্বরূপ। এর দ্বারা শরীর গুনাহমুক্ত হয়, পাক-পবিত্র হয়। আল্লাহর কাছে বান্দার মর্যাদা বুলন্দ হয়। ভবিষ্যত জীবনের জন্য উপদেশ গ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়।


এ দু’টি বিষয়ে আল্লাহর তাআলার কত বড় দান তা খুব ভালোভাবে বুঝে আসে যখন এগুলো হারিয়ে যায়। অসুস্থ মানুষের পক্ষে সুস্থতার মাহাত্ম্য বোঝা সহজ। আর নানা অবাঞ্ছিত ঝামেলায় জর্জরিত হলে তখনই বুঝে আসে অবকাশের মূল্য। কিন্তু তখন বুঝে আসলেও কিছু করার থাকে না।


পবিত্র কুরআনের ইরশাদ-


وَ اِنْ تَعُدُّوْا نِعْمَتَ اللهِ لَا تُحْصُوْهَا اِنَّ الْاِنْسَانَ لَظَلُوْمٌ كَفَّارٌ.


তোমরা আল্লাহ্র নিআমত গণনা করে শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয়ই মানুষ অকৃতজ্ঞ ও নাফরমান। -সূরা ইবরাহীম (১৪) : ৩৪


শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা শাব্বীর আহমাদ উসমানী রাহ. এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখেন, ‘আল্লাহ তাআলার নিআমত এত অসংখ্য যে, যদি তোমরা সবাই মিলে ভাসাভাসাভাবেও গণনা শুরু কর তাহলেও ক্লান্ত হয়ে বসে পড়বে। শেষ অংশের ব্যাখ্যায় বলেন- ‘মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অকৃতজ্ঞ ও জালেম ঐ ব্যক্তি, যে এত অসংখ্য নিআমত দেখেও নিজের প্রকৃত ও মহান দাতার হক সম্পর্কে সচেতন হয়নি।


আমরা আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায়ের ক্ষেত্রে কত অক্ষম! তাঁর একটি নিআমতের শুকরিয়াও আমাদের পক্ষে যথাযথভাবে আদায় করা সম্ভব নয়। শুধু আফিয়াতের নিআমতের কথাই চিন্তা করুন। কত বিস্তৃত এই নিআমাত! কত অসংখ্য তার শাখা-প্রশাখা। এই অসংখ্য শাখা-প্রশাখার অধিকাংশের ক্ষেত্রেই আমাদের মনে হয় না যে, এরও শুকরিয়া আদায় করা উচিত।


প্রতিটি মুহূর্তে আমরা কত নিআমতের মধ্যে ডুবে আছি। অনেক নিআমতের দিকে তো মানুষের দৃষ্টি যায় এবং কিছু না কিছু হলেও শুকরিয়া আদায় করে। কিন্তু লাখো-কোটি নিআমত এমন, যা মানুষের উপলদ্ধি- সীমারও বাইরে; সেগুলোর শুকরিয়া আদায় হবে কীভাবে? আমাদের এই দেহযন্ত্রের প্রতিটি অংশের জন্যই কি আলাদা আলাদাভাবে শুকরিয়া করা উচিত নয়? কিন্তু আমাদের মধ্যে কে এমন আছে, যার দেহের কোনো একটি অঙ্গের সুস্থতা ও আফিয়াতের জন্য সার্বক্ষণিক শুকরিয়া আদায়ের সৌভাগ্য হয়েছে।


হাদীসে শরীফে এসেছে- কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে নিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে তা হল, আমি কি তোমাকে একটি সুস্থ দেহ দেইনি? তোমাকে কি ঠান্ডা পানি দ্বারা পরিতৃপ্ত করিনি? অর্থাৎ এই নিয়ামত প্রহণ করে তোমার দায়িত্ব কতটুকু পালন করেছ? এই প্রশ্নের উত্তর মানুষকে দিতে হবে।


একটি সুস্থ ও কর্মক্ষম শরীর আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নেয়ামত। এ শরীর আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন তাঁর অসীম কুদরতের মাধ্যমে। এক ঘনান্ধকার স্থানে, মাতৃজঠরে। মহাকুশলী আল্লাহ এমনই নিপুণতায় মানবদেহ সৃষ্টি করেছেন, যতই মানুষ তা চিন্তা করে ততই অভিভূত হয়। মানুষের নিজের স্বত্তায় রয়েছে সৃষ্টিকর্তার পরিচয়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ‘ভূ-পৃষ্ঠে রয়েছে বিশ্বাসীদের জন্য অনেক নিদর্শন। আর রয়েছে তোমাদের নিজ স্বত্তায়। এরপরও কি তোমরা দেখবে না?’-সূরা যারিয়াত : ২১ 


আল্লাহর পরিচয়, তাঁর জ্ঞান ও কুশলতার পরিচয় লাভের এত সহজ উপায় বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও যদি আল্লাহর সঙ্গে পরিচিত না হওয়া যায় তবে এরচেয়ে বড় বঞ্চনা আর কী হতে পারে!


মানবদেহে যে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন এবং যে নিপুণভাবে এগুলো কাজ করে যাচ্ছে তা এক মহাবিস্ময়। সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যথাযথভাবে কাজ করে গেলেই মানুষ পূর্ণ সুস্থ থাকে। আর কোনো অঙ্গের কাজ সামান্য ব্যাহত হলে মানুষ হয়ে পড়ে অসুস্থ। তার প্রয়োজনীয় কাজ-কর্মও তখন স্থগিত হয়ে যায়।


তাই সুস্থতা যেমন আল্লাহ তাআলার অপার কুদরতের নিদর্শন তেমনি তাঁর মহামূল্যবান নিয়ামত। আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন এই মহা নিয়ামতের হিসাব নেবেন।


অপর নিয়ামতটি হল অবকাশ। আল্লাহ তাআলা যখন কারো জীবন চলার মতো হালাল জীবিকার ব্যবস্থা করে দিলেন তখন আর পেরেশানী থাকার কথা নয়। শোকরগোযারী ও অল্পেতুষ্টির যে শিক্ষা ইসলাম দিয়েছে সেই শিক্ষার আলোকে মনমানস গঠিত হলে এ পরিমাণ জীবিকাই প্রশান্তির জন্য যথেষ্ট। হাদীস শরীফে এসেছে- ‘সম্পদের প্রাচুর্য থেকে অমুখাপেক্ষিতা আসে না। এটা আসে হৃদয়ের প্রাচুর্য থেকে।’


পার্থিব ধন-সম্পদ সম্পর্কে যখন সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হয়, অর্থাৎ এ সত্যটুকু অনুধাবনের যোগ্যতা অর্জিত হয় যে, এই ধন-সম্পদ জীবনের পরম লক্ষ্য নয়, জীবনধারণের উপকরণ মাত্র; তখন মানুষের চিন্তাভাবনা ও মনমানসে ভারসাম্য আসে। আর তা প্রভাব ফেলে তার কাজ-কর্মে। মানুষ তখন সম্পদের পিছনে ধাবিত হয় না; বরং সম্পদ ব্যবহার করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট হয়। বস্ত্তত জীবনের লক্ষ্যউদ্দেশ্য সম্পর্কে অভ্রান্ত ধারণা মানুষকে চিত্তশালী করে। তখনই মানুষের পক্ষে প্রশান্তমনে আল্লাহর তাআলার ইবাদত-বন্দেগী ও ইতাআত-আনুগত্যে নিবেদিত হওয়া সম্ভব হয়। এই যে আত্মনিবেদনের সুযোগ এরই নাম অবকাশ। এই অবকাশ আল্লাহ তাআলার অতি বড় নিয়ামত। একে কাজে লাগিয়ে মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পথে অনেক দূর অগ্রসর হতে পারে। তবে আশঙ্কা থাকে, মানুষ যদি অসচেতন হয় কিংবা অবহেলা প্রদর্শন করে তাহলে এই মূল্যবান সুযোগও হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। তাই হযরত রাসূল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে সাবধান করেছেন।


তো এই দুই নিয়ামত- সুস্থতা ও অবকাশকে কাজে লাগানোই হল সফলতার পথ। প্রশ্ন হল, কীভাবে এগুলোকে কাজে লাগানো যায়? এখানে এসে চিন্তা ও দৃষ্টির পরিচ্ছন্নতা প্রয়োজন হয়। কেননা, ভ্রান্ত চিন্তা জীবনের সকল কর্ম ও সাধনাকে অর্থহীন করে তুলতে পারে। হয়তো সারাজীবন সে মরিচিকার পিছনেই ছুটল। তার এই ছোটাটা অর্থহীন হল। যারা তাদের জীবন নাচ-গান করে কাটিয়ে দেয় তারা তো এ কাজটিকে খুব গুরুত্বের সাথেই গ্রহণ করে। গালভরা কথা আর তত্ত্ব ও বুলির ফুলঝুড়ি দিয়ে এর অর্থবহতা প্রমাণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব তো এক শ্রেণীর দর্শক-শ্রোতার মনোরঞ্জন ছাড়া আর কিছুই নয়। এ সবের জন্য কি একজন মানুষের গোটা জীবন নিবেদিত হতে পারে?


তাই চিন্তার পরিচ্ছন্নতা প্রয়োজন। মানুষের জীবনের সর্বোচ্চ লক্ষ্য একটিই হতে পারে। তা হল, আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন আর অনন্ত জীবনের সফলতা লাভ। এই এক লক্ষ্যে সফল হওয়ার প্রেরণা জাগ্রত হলে জীবনের সকল মহৎ কর্ম সুচারুরূপে সম্পাদিত হয়। কেননা, ইসলাম বলে আল্লাহর পথে চলেই তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবে। এককথায় সে পথটি হল ইসলাম। ইসলামের সঠিক ও ব্যাপক মর্ম কর্মে ও বিশ্বাসে ধারণ করে মুসলিম হতে পারাটাই হল মানব-জীবনের পরম লক্ষ্য। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি জ্বিন ও ইনসানকে সৃজন করেছি শুধু আমার ইবাদতের জন্য।’ 


হাদিস নং -০২

عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: قال رسولُ الله صلى الله عليه وسلم لرجلٍ وهو يَعِظُه: ((اغْتَنِمْ خَمْسًا قبلَ خَمْسٍ: شبابَكَ قبلَ هَرَمِكَ، وصِحَّتَكَ قبلَ سَقَمِكَ، وغِناءكَ قبلَ فَقْرِكَ، وفَراغَكَ قبلَ شُغلِكَ، وحياتَكَ قبلَ موتِكَ))؛ أخرجه الحاكم في المستدرك


প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেন, তোমরা পাঁচটি বিষয়কে পাঁচটি বিষয় আসার পূর্বেই গুরুত্ব দাও এবং এর সদ্ব্যবহার কর। বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনকে, অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতাকে, দারিদ্রে্যর পূর্বে স্বচ্ছলতাকে, ব্যস্ততার পূর্বে অবসরকে এবং মরণের পূর্বে জীবনকে। তাখরিজ: সহিহ তারগিব ওয়াত তারহিব -৩৩৫৫; হাকেম-৭৮৪৬; বায়হাকি -১০২৪৮


হাদিস নং -০৩

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا مَالِكُ بْنُ أَنَسٍ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ حُسَيْنٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ مِنْ حُسْنِ إِسْلاَمِ الْمَرْءِ تَرْكَهُ مَا لاَ يَعْنِيهِ " . قَالَ أَبُو عِيسَى وَهَكَذَا رَوَى غَيْرُ وَاحِدٍ مِنْ أَصْحَابِ الزُّهْرِيِّ عَنِ الزُّهْرِيِّ عَنْ عَلِيِّ بْنِ حُسَيْنٍ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم نَحْوَ حَدِيثِ مَالِكٍ مُرْسَلاً وَهَذَا عِنْدَنَا أَصَحُّ مِنْ حَدِيثِ أَبِي سَلَمَةَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ . وَعَلِيُّ بْنُ حُسَيْنٍ لَمْ يُدْرِكْ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ .

কুতায়বা (রাহঃ) ...... আলী ইবনে হুসাইন (রাহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন একজনের ইসলামী গুণের অন্যতম হল অনর্থক বিষয় পরিত্যাগ করা। তাখরিজ: জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ২৩১৮


হাদিস নং -০৪

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَخْبَرَنَا الأَسْوَدُ بْنُ عَامِرٍ، حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ عَيَّاشٍ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ جُرَيْجٍ، عَنْ أَبِي بَرْزَةَ الأَسْلَمِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ تَزُولُ قَدَمَا عَبْدٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ عُمْرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ وَعَنْ عِلْمِهِ فِيمَا فَعَلَ وَعَنْ مَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَا أَنْفَقَهُ وَعَنْ جِسْمِهِ فِيمَا أَبْلاَهُ " . قَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . وَسَعِيدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ جُرَيْجٍ هُوَ بَصْرِيٌّ وَهُوَ مَوْلَى أَبِي بَرْزَةَ وَأَبُو بَرْزَةَ اسْمُهُ نَضْلَةُ بْنُ عُبَيْدٍ .

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুর রহমান (রাহঃ) ..... আবু বারযা আসলামী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ বান্দার পা (কিয়ামতের দিন) নড়বে না যতক্ষণ না তাকে প্রশ্ন করা হবে তার বয়স সম্পর্কে যে, কি কাজে সে তা শেষ করেছে; তার ইলম সম্পর্কে তদনুযায়ী কি আমল করেছে সে; তার সম্পদ সম্পর্কে কোথা সে তা অর্জন করেছে এবং কোথায় তা ব্যয় করেছে; তার শরীর সম্পর্কে সে কিসে তা বিনাশ করেছে। তাখরিজ: জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ২৪১৭ 


নোট: হাদীসটি হাসান-সহীহ।


হাদিস নং -০৫

كان رسول الله صلى الله عيله وسلم يجتهد في العشر الأواخر ما لا يجتهد في غيره.

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দশকে সবচেয়ে বেশি মেহনত করতেন। তাখরিজ: মুসলিম- ১১৭৫


হাদিস নং -০৬

كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا دخل العشر أحيا الليلَ، وأيقظ أهلَه، وجّدَّ وَشَدَّ المِئْزَرَ.

শেষ দশক শুরু হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা রাত জাগতেন। পরিবারের লোকদেরকেও জাগাতেন। অনেক মেহনত করতেন। এমনকি কোমর বেঁধে নিতেন। তাখরিজ: সহীহ বুখারী, হাদীস ২০২৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৭৪


। সাহাবায়ে কেরাম এর দৃষ্টিতে সময়ের মূল্য: 


০১. 

إن عدم استفادة المسلم من وقته أمرٌ كرهه السلف، قال عبدالله بن مسعود رضي الله عنه: إني لأكره أن أرى الرجل فارغًا لا في أمر دنياه، ولا في أمر آخرته.

একজন মুসলিম তার সময় থেকে উপকৃত হতে ব্যর্থ হওয়া এমন একটি বিষয় যা পূর্বসূরিরা ঘৃণা করতেন।আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন: আমি একজন মানুষকে কর্মহীন দেখতে অপছন্দ করি, না তার পার্থিব বিষয়ে, না কোন বিষয়ে পরকালের। সূত্র: আরশিফু মুলতাকি আহলিল হাদিস - ৭৪/২১৫ 

২. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা বলেন,

قال ابن مسعود رضي الله عنه (ما ندمت على شيء ندمي على يوم غربت شمسه، نقص فيه أجلي ولم يزد فيه عملي).

আমি কোন কিছুর জন্য অনুশোচনা করি না যেমন আমি অনুশোচনা করি যেদিন সূর্য ডুবেছিল, যেদিন আমার জীবন সংক্ষিপ্ত হয়েছিল এবং আমার আমল বাড়েনি। সূত্র: কিতাবু কিমাতুয যামান ইনদাল ওলামা-২৭ পৃষ্ঠা


ঙ। মনীষীদের দৃষ্টিতে সময়ের মূল্য: 


০১. ইমাম আবুল ওফা ইবনে আকিল রহ. বলেন,

قال الإمام أبو الوفاء بن عقيل

 رحمه الله: إني لا يحلُّ لي أن أُضيِّع ساعةً من عمري، حتى إذا تعطَّل لساني عن مذاكرة ومناظرة، وبصري عن مُطالعة، أُعْمِل فِكْري في حال راحتي وأنا مستطرح، فلا أنهضُ إلا وقد خطر لي ما أسطِّره.

আমার জিহ্বা অধ্যয়ন, ইলমি আলোচনা, ইলমি বাহাছ এবং আমার দৃষ্টি পড়াশুনায় মশগুল না থাকে, তাহলে আমার জীবনের এক মূহুর্ত নষ্ট করা আমার জন্য জায়েজ নয়। 

সূত্র: মিন আকওয়ালিস সালাফ ফিল ইসতিফাদাতি মিনাল ওয়াকতি-১২/২২, শায়েখ ফাহাদ বিন আব্দুল আজিজ

০২.

 كان سليم بن أيوب بن سليم رحمه الله، لا يدع وقتًا يمضي بغير فائدة؛ إما ينسخ، أو يدرس، أو يقرأ.

শায়েখ সালিম বিন আইয়ুব বিন সালিম রহ সময়কে লাভ ছাড়া যেতে দেননি। হয় কপি (কোন কিছু আয়ত্ব, মুখস্থ) করুন, অধ্যয়ন করুন বা পড়ুন। সূত্র: মিন আকওয়ালিস সালাফ ফিল ইসতিফাদাতি মিনাল ওয়াকতি-১২/২২, শায়েখ ফাহাদ বিন আব্দুল আজিজ


০৩. 

الإمام ابن الجوزي رحمه الله كان لا يُضيِّع من زمانه شيئًا.

ইমাম ইবনে জাওযি রহ তার জীবনে এক মূহুর্ত নষ্ট করতেন না। সূত্র: মিন আকওয়ালিস সালাফ ফিল ইসতিফাদাতি মিনাল ওয়াকতি-১২/২২, শায়েখ ফাহাদ বিন আব্দুল আজিজ


০৪.

الشيخ عبدالوهاب بن الأمين علي بن عبدالله بن عبيدالله بن سكينة رحمه الله، كانت أوقاته محفوظةً، فلا يمضي له ساعة إلا في قراءة أو ذِكْرٍ أو تهجُّدٍ أو تَسْمِيعٍ.

শায়েখ আব্দুল ওয়াহ্হাব বিন আমিন রহ. তার সময়টাকে হিফাজত করতেন। এক মূহুর্ত অতিবাহিত করতেন না তেলাওয়াত, জিকির অথবা তাহাজ্জুদ অথবা দরস-তাদরিস ব্যতিত।

সূত্র: মিন আকওয়ালিস সালাফ ফিল ইসতিফাদাতি মিনাল ওয়াকতি-১২/২২, শায়েখ ফাহাদ বিন আব্দুল আজিজ

০৫.

الإمام النووي رحمه الله، كان لا يُضيِّع له وقتًا في ليل ولا في نهار إلا في وظيفة من الاشتغال بالعلم حتى في ذَهابه في الطريق ومجيئه يشتغل في تكرير محفوظه أو مطالعة، قد صرف أوقاته كُلَّها في أنواع العلم والعمل، فبعضُها للتصنيف، وبعضُها للتعليم وبعضُها للصلاة، وبعضُها للتلاوة، وبعضُها للأمر بالمعروف والنهي عن المنكر.

ইমাম নববি রহ. তিনি তাঁর দিন বা রাতের সময় নষ্ট করেননি, জ্ঞানের ব্যস্ততার কাজ ছাড়া, এমনকি যখন তিনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং রাস্তায় চলাকালীন মুখস্থ অথবা অধ্যায়নগুলো পুনরাবৃত্তি করতেন। তার পূর্ণ সময়টা ইলম বা আমলের কোনো একটিতে অতিবাহিত হতো।

তার মধ্যে কিছু সময় কিতাবাদি রচনায়, কিছু সময় লোকদেরকে শিক্ষাদানে, কিছু সময় সালাতের জন্য, কিছু সময় তেলাওয়াতের জন্য, এবং কিছু ভাল কাজের আদেশ এবং খারাপ কাজ থেকে নিষেধ করার জন্য। সূত্র: মিন আকওয়ালিস সালাফ ফিল ইসতিফাদাতি মিনাল ওয়াকতি-১২/২২, শায়েখ ফাহাদ বিন আব্দুল আজিজ


০৬.

الإمام يوسف بن حسن بن أحمد بن عبدالهادي الشهير بابن المبرد رحمه الله، أفنى عمره بين علم، وعبادة، وتصنيف، وإفادة.

ইমাম ইউসুফ ইবনে হাসান রহ. তার জীবন ইলেম, ইবাদাত, গ্রন্থ রচনা ও মানব কল্যাণে উৎসর্গ করেছেন। সূত্র: মিন আকওয়ালিস সালাফ ফিল ইসতিফাদাতি মিনাল ওয়াকতি-১২/২২, শায়েখ ফাহাদ বিন আব্দুল আজিজ


০৭. 

الشيخ عبدالله بن عبدالرحمن بن غديان رحمه الله، سافر من مدينة الرياض إلى الطائف بالسيارة، فلما خرج من البنيان بدأ بقراءة الفاتحة، وعند دخول الطائف كان في آخر الخَتْمَة قرابة سبع أو ثماني ساعات وهو يقرأ.

শায়েখ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান রহ. তিনি গাড়িতে করে রিয়াদ শহর থেকে আল-তায়েফ পর্যন্ত যান এবং বাসা থেকে বের হয়ে তিনি সূরা ফাতিহা পড়তে শুরু করেন এবং আল-তায়েফে প্রবেশের পর তিনি প্রায় সাত বা আট পারার শেষের দিকে ছিলেন। ঘন্টার পর ঘন্টা তিনি আবৃত্তি/তেলাওয়াত করছিলেন। সূত্র: মিন আকওয়ালিস সালাফ ফিল ইসতিফাদাতি মিনাল ওয়াকতি-১২/২২, শায়েখ ফাহাদ বিন আব্দুল আজিজ


০৮

قال العلامة السعدي رحمه الله: كان خواصُّ المؤمنين يتعرضون في هذا الوقت الجليل لألطاف ربِّهم ومواهبه، فيقومون بعبوديته خاضعين خاشعين داعين متضرعين، يرجون منه حصول مطالبهم التي وعدهم إياها على لسان رسوله صلى الله عليه وسلم، ويعلمون أن وعده حق

আল্লামা আল-সাদি রহ. বলেছেন: মুমিনদের মধ্যে বিশিষ্ট বান্দারা এই মহান সময়ে তাদের প্রভুর দয়া এবং প্রতিভার কাছে উন্মোচিত হয়েছিল, তাই তারা বিনয়ীভাবে, অনুগতভাবে, প্রার্থনা করে, তাঁর কাছ থেকে পূর্ণ হওয়ার আশায় তাঁর ইবাদত করেছিল। তাদের দাবি যে তিনি তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথার মাধ্যমে, এবং তারা জানত যে তাঁর প্রতিশ্রুতি সত্য। সূত্র: মিন আকওয়ালিস সালাফ ফিল ইসতিফাদাতি মিনাল ওয়াকতি-১২/২২, শায়েখ ফাহাদ বিন আব্দুল আজিজ


০৯.

আল্লামা উসাইমিন রহ. বলেন,

قال العلامة العثيمين رحمه الله: أما الوقت فأحسن ما يكون في أول النهار إذا صليت الفجر أن تقرأ القرآن لتحفظه.

সময়ের হিসাবে, দিনের শুরুতে সর্বোত্তম জিনিস, যদি আপনি ফজরের নামাজ পড়েন, এটি মুখস্থ করার জন্য কুরআন পাঠ করা। সূত্র: মিন আকওয়ালিস সালাফ ফিল ইসতিফাদাতি মিনাল ওয়াকতি-১২/২২, শায়েখ ফাহাদ বিন আব্দুল আজিজ


১০. হাকিমুল উম্মত মুজাদ্দিদুল মিল্লাত শাহ আশরাফ আলী থানভী রহ. চব্বিশ ঘণ্টা রুটিন মাফিক অতিবাহিত করতেন। তার ফলে আল্লাহ তাআলা তাকে সময়ের এত বরকত দান করেছেন যে, তার রচিত কিতাব, মালফুজাত ও মাওয়ায়েজ প্রায় ২৫০০ রেখে গিয়েছেন।  

সময়ের এত মূল্যয়ন করতেন যে, ফরজ নামাজের পর সুন্নাতের আগে দাঁড়াতে দাঁড়াতে আয়াতুল কুরসি পাঠ করে ফেলতেন। সূত্র: আশরাফ চরিত, মাকতাবাতুল আশরাফ বাংলা বাজার ঢাকা


১১. তাফসিরে মাআরেফুল কুরআনের মুফতি আজম পাকিস্তান মুফতি শফি রহ. এর জীবনীতে আছে, আল্লামা তাকি ওসমানি দা বা বলেন,

আমি একটি গোপন কথা আমাদেরকে বলি, যখন আমি প্রাকৃতিক প্রয়োজনে টয়লেটে প্রবেশ করি, তখন বদনা পরিস্কার করি, যাতে সময়টা কাজে লাগাই। সূত্র: আমার আব্বা আমার মুর্শিদ - মুফতি তাকি ওসমানি হাফিজাহুল্লাহু

১২.

হাফেজ ইবনে হাজার রাহ.-এর ঘটনা

হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম ইবনে হাজার আসকালানীর একটি ঘটনা শুনিয়েছিলেন। আগের যুগে তো কলম বাশের কঞ্চির হত। তো বার বার তা চিকন করার প্রয়োজন হতো। হাফেজ ইবনে হাজার রাহ.-এর অবস্থা ছিল যে, যখন কলম কাটতেন তখন যবান দ্বারা আল্লাহ আল্লাহ যিকির করতেন।

এই যে অল্প সময়ে কলম কাটতেন এটুকু সময়ও নষ্ট হতে দিতেন না। হাত তো কলম কাটার কাজে লিপ্ত, চোখ দেখার কাজে সুতরাং যবান কেন আল্লাহর যিকিরে মশগুল হবে না। আল্লাহ তাআলা যাকে বিবেক দান করেছেন, আখেরাতের ফিকির দান করেছেন সে এভাবে সময় বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে আখেরাতের কাজে ব্যয় করে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরও তাওফীক দান করুন। সূত্র: মাসিক আল -কাউসার, সেপ্টেম্বর-২০১৭


১৩.

ইমাম দাউদ তায়ীকে কেউ রুটির পরিবর্তে ছাতু পানিতে মিশিয়ে খেতে দেখে কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, আমি হিসাব করে দেখেছি, রুটি খেতে যে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয় সে সময়ে অন্তত পঞ্চাশটি আয়াত তেলাওয়াত করা যায়। সূত্র: ফাজায়েলে আমাল - শায়খুল হাদিস জাকারিয়া কান্ধলভি রহ.

১৪. 

قال الإمام ابن الجوزي رحمه الله: رأيت عموم الخلائق يدفعون الزمان دفعًا عجيبًا! إن طال الليل فبحديث لا ينفع...وإن طال النهار فبالنوم، فعلمت أن الله تعالى لم يُطلِع على شرف العمر ومعرفة قدر أوقات العافية إلَّا مَن وفَّقه وألهمه اغتنام ذلك ﴿ وَمَا يُلَقَّاهَا إِلَّا ذُو حَظٍّ عَظِيمٍ ﴾ [فصلت: 35].

অর্থাৎ, প্রখ্যাত ইমাম ইবনুল জাওযী (রাহি.) বলেন, অধিকাংশ মানুষকে দেখা যায়, আশ্চর্যজনকহারে তারা সময়ের বেশ অপচয় করছে! ঋতুমৌসুমের পালাবদলে রাত্রী যখন দীর্ঘ হয়, তখন নিরর্থক আড্ডা, হাস্যরসিকতা, গল্প-গুজবে সারাটা রাত পার করে দিচ্ছে। আবার যখন দিন লম্বা হয়, তখন তারা দিবসের সিংহভাগই অলসনিদ্রা যাপন করছে।

তখনই আমার হৃদয়পটে এই ভাবাবেগের উদয় হলো যে, বয়সের মর্যাদা এবং স্বাচ্ছন্দপূর্ণ মুহুর্তগুলোর গুরুত্ব অনুধাবনের সৌভাগ্য সবার তাক্বদীরে জোটেনা। একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকে যিনি তাওফিকপ্রাপ্ত হোন এবং সুপথ প্রাপ্তির দিশা লাভ করেন, তিনিই সময়ের যথাযথ সদ্ব্যবহার করে অবসরকালীন মুহূর্তগুলোকে পরম আগ্রহে গনীমত (যুদ্ধলব্ধ সম্পত্তি) ভেবে লুফে নেন। 

এজন্যই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- 

" একমাত্র মহাসৌভাগ্যবান ব্যক্তিই এই ইতিবাচক গুণটি অর্জন করতে পারবে।" ( সূরা ফুসসিলাত -৩৫) সূত্র: মিন আকওয়ালিস সালাফ ফিল ইসতিফাদাতি মিনাল ওয়াকতি-১২/২২, শায়েখ ফাহাদ বিন আব্দুল আজিজ


১৫.

عمارة وقت غفلة الناس بالطاعة:

قال الحافظ ابن رجب رحمه الله: قوله صلى الله عليه وسلم: ((يغفل عنه الناس بين رجب ورمضان)) فيه دليل على استحباب عمارة أوقات غفلة الناس بالطاعة.

অর্থাৎ, মানুষের উদাসীনতার মুহুর্তগুলো আল্লাহর আনুগত্যে অতিবাহিত করাঃ 

হাফেজ ইবনু রজব (রাহি.) বলেন, হিজরী রজব ও রমাদান মাসের মধ্যবর্তী সময় (শাবান মাসে) মানুষ সবচাইতে বেশী ঔদাসিন্য প্রদর্শন করে। সে সময়কালটা তারা দেদারসে হেলায়-ফেলায় বিনষ্ট করে।

উপরিউক্ত আলোচনা এ কথারই প্রমাণ বহন করে যে, যে সময়টুকুতে মানুষের সময়জ্ঞানের ব্যাপারে নির্লিপ্ততা প্রকট আকার ধারণ করবে, সেই সময়ে গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে না দিয়ে স্রোতের বিপরীতে অবস্থান করে প্রতিটি মুহূর্তকে যথাযথ কাজে লাগানোটা ভূয়সী প্রশংসার দাবীদার, এবং আল্লাহর নিকট অত্যন্ত পছন্দীয় (মুস্তাহাব) কর্মও বটে। সূত্র: মিন আকওয়ালিস সালাফ ফিল ইসতিফাদাতি মিনাল ওয়াকতি-১২/২২, শায়েখ ফাহাদ বিন আব্দুল আজিজ


। কবিদের দৃষ্টিতে সময়ের মূল্য:

০১.

وإنا لفي الدنيا كركب سفينة * نظن وقوفا، والزمان بنا يجري

আমরা দুনিয়ার বুকে যেন নৌকার যাত্রী। মনে হয়, ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। অথচ সময় আমাদের নিয়ে বয়ে চলেছে।


০২.

الوقت أنفس ما عُنِيت بحفظه * وأراه أسهل ما عليك يضيع

সংরক্ষণ করা যায় এমন বস্তুর মধ্যে সময় সবচেয়ে মূল্যবান/অথচ দেখছি, এটিই সবচেয়ে সহজে তোমার কাছে নষ্ট হচ্ছে।


০৩.

‘অদৃষ্টের হাতে সেই জাতি তরবারীসদৃশ, যারা প্রতি মুহূর্তে নিজেদের কাজ-কর্মের হিসাব কষে।’


০৪. কবি বলেন,

الوقت هي الحياة فلا تقلوه

আরে সময় সে তো জীবন, সুতরাং তাকে তুমি হত্যা করো না।


। সময়টাকে আখিরাতমুখী করতে চার কাজ:


এখন আমরা আমাদের জীবন কীভাবে আখেরাতের কাজে ব্যবহার করব? এজন্য চার কাজের ইহতেমাম করব। এর দ্বারা আমরা অনর্থক কাজ-কর্ম থেকে বেঁচে জীবনের সময়কে কাজে লাগাতে পারব।


১. গুনাহ থেকে বাঁচা

প্রথম কাজ হল যাবতীয় গুনাহ থেকে খাঁটি তওবা করা এবং ভবিষ্যতে তা থেকে বাঁচার পাক্কা ইরাদা করা। হিম্মত করব আর আল্লাহ তাআলার তাওফীকও চাইব।


২. সবকাজ আল্লাহর জন্য করা

দ্বিতীয় হল, ঐ কাজ যাতে দুনিয়া-আখেরাতের ফায়দা রয়েছে তাতে আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়ত করব। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমরা যত কাজ করি, এর মধ্যে কিছু রয়েছে ইবাদত এবং কিছু রয়েছে দুনিয়ার বৈধ কাজ। সকল কাজে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির নিয়ত করব। তাহলে সবকিছুই কাজে আসবে- ইনশাআল্লাহ।


৩. যিকিরের অভ্যাস

তৃতীয় কাজ হল, বেশি বেশি যিকিরের অভ্যাস করা। এটা অনেক বড় দৌলত। এ দৌলত তো ইবনে হাজারের নসীব হয়েছিল। হাতে কলম কাটছেন যবানে الله الله যিকির করছেন। যখন কারো যিকিরের আদত হয়ে যায় তখন শুয়ে-বসে, চলতে-ফিরতেও তার যবান আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকে। ফলে সে   الَّذِينَ إِذَا رُؤُوا ذُكِرَ اللَّهُ (যাদেরকে দেখলে আল্লাহ্র কথা স্মরণ হয়)-হাদীসের মেসদাক হয়ে যায়।


তো আল্লাহর অধিক জিকির ঐ নিআমত, ঐ দৌলত যার আজর-সওয়াবও সীমাহীন।


এর জন্য সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হল, উঠতে-বসতে, চলতে-ফিরতে সারাদিনের মাসনূন দুআগুলোর ইহতিমাম করা। এর দ্বারা আমরা জীবনের মুহূর্তগুলো আল্লাহর স্মরণে কাটাতে পারব।


৪.  অনর্থক কাজ ছেড়ে দেয়া

চতুর্থ কাজ হল, যাবতীয় অনর্থক কাজ, কথা-বার্তা, আলোচনা, মজলিশ, প্রোগ্রাম থেকে নিজেকে বাঁচানো। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই চার কাজের মুহাসাবা করা।


আমি সকালে ইরাদা করেছি, আমি ফরয-ওয়াজিব-সুন্নত যথাযথ আদায় করব, গুনাহ থেকে বাঁচব। অনর্থক কাজ থেকে বাঁচব, বেশি বেশি জিকির করব। সব কাজ আল্লাহর জন্য করব। এখন আমি ভেবে দেখব যে, সারাদিন কীভাবে কাটালাম। শোয়ার পূর্বে পাঁচ মিনিট বের করে মুহাসাবাহ করব। যদি তাতে কোনো কমতি হয় তাহলে ইসতিগফার করা- আল্লাহ যে ত্রুটি হয়েছে মাফ করে দাও আগামীর জন্য তাওফীক দাও। দুআ করা-

اللَّهُمّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ

এভাবে বিগত দিনের জন্য ইসতিগফার করা আর আগামীর জন্য দৃঢ় সংকল্প করা ও আল্লাহর তাওফীক চাওয়া।


মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তো সকল ত্রুটির সংশোধন ও ক্ষতিপূরণ খুব সহজ। মৃত্যুর পর শত চাইলেও এক বিন্দু ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়। শত আফসোস করেও একটি নেক আমলের, তাওবার সুযোগ পাওয়া যাবে না। আমাদের কি জানা আছে, আগামীর সুযোগ আমার নসীব হবে কি না? এজন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যে কমতি হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত পেছনের জীবনে যত লোকসান হয়েছে সবকিছুর ক্ষতিপূরণ শোয়ার পূর্বে করে নাও। এবার দুআ করো, ইয়া আল্লাহ! আগামী দিন আমাকে আপনার মর্জি মোতাবেক কাটানোর তাওফীক দান করুন। প্রতিদিন আমরা এ কাজ করতে থাকলে ইনশাআল্লাহ সফল হব।


আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এসব কথার উপর আমল করার তাওফীক দান করুন- আমীন।

(মাওলানা আব্দুর রউফ সাখখারবী দা. বা.-এর বয়ানের আলোকে প্রস্তুতকৃত) সূত্র: মাসিক আল-কাউসার, সেপ্টেম্বর-২০১৭


জ। একটি ঘটনা ও তার শিক্ষা:

উপরের বক্তব্যের একটি সুন্দর দৃষ্টান্ত রয়েছে। এক ব্যক্তি অনেক গরীব, অভাব-অনটনে জর্জরিত। ঘটনাক্রমে সে একটি দ্বীপে পৌঁছল। সেখানে একটি স্বর্ণের পাহাড় রয়েছে। আর পাহাড়ের মালিক তাকে বলল, তুমি তো গরীব মানুষ। অভাব-অনটনে দিন কাটাও। আমার এই স্বর্ণের পাহাড় থেকে তুমি যত স্বর্ণ বের করতে পারবে সব তোমার। আর জেনে রেখ, আমি যখন চাইব নিষেধ করে দেব। কিন্তু আমি একথা বলব না যে, কোন্ সময় নিষেধ করব। যতক্ষণ পর্যন্ত আমি নিষেধ না করব ততক্ষণ যত ইচ্ছে নিতে পার। আর যখন নিষেধ করব তখন এক রত্তিও নেওয়ার অনুমতি থাকবে না। নিতে চাইলেও নিতে পারবে না। শুধু তাই নয় তুমি যদি দ্বীপ হতেও বের হতে না চাও তাহলে তোমাকে জোর করে বের করে দেব।


বিবেকের দাবি, সে এক মুহূর্তও গাফলতে কাটাবে না। রাত-দিন স্বর্ণ সংগ্রহের কাজেই লেগে থাকবে। যতটুকু সুযোগ পাওয়া যায় এর মধ্যে সে চেষ্টা করবে কত বেশির থেকে বেশি স্বর্ণ সংগ্রহ করা যায়।


এখন যদি কেউ তাকে বলে, এ দ্বীপ অনেক বড়, অনেক সুন্দর। অনেক বিনোদনের ব্যবস্থা আছে এখানে; চল, ঘুরে দেখে আসি। তাহলে সে কী উত্তর দিবে? বলবে, রাখ তোমার সুন্দর দ্বীপ আর বিনোদন। আমার এগুলোর সময় নেই। আমার এখন একই ব্যস্ততা। সে যতটুকু সময় পাবে নিজের থলেতে স্বর্ণ জমা করবে। রাত-দিন এ ফিকিরেই থাকবে।


কিন্তু লোকটি যদি ঐ ব্যক্তির কথা শুনে ঐ দ্বীপ ঘুরে দেখা আর বিনোদনে লেগে যায় তো বাহ্যত এতে তার কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু বাস্তবে কত বড় ক্ষতি! ঘুরে ঘুরে সময় শেষ করল আর একসময় মালিক বলল, যাও এ দ্বীপ থেকে বের হয়ে যাও। আর সে চাইল আমাকে এক মিনিট সময় দিন। তা তো মালিক আর দিবে না। তখন তার আফসোসের আর সীমা থাকবে না। এটাই হল অনর্থক কাজে লিপ্ত হওয়ার ক্ষতি।


। ইমাম গাজালি রহ. এর নসিহত:

ইমাম গাযালী রাহ. বলেন, মানুষের যাবতীয় কাজ তিন প্রকার। এক. এমন কাজ যাতে দ্বীন-দুনিয়ার কোনো ফায়েদা আছে। অর্থাৎ দুনিয়ার কোনো বৈধ ফায়দা রয়েছে কিংবা দ্বীনের বা আখেরাতের কোনো ফায়দা রয়েছে। যেমন তাতে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি, ক্ষমা ও অনুগ্রহ রয়েছে। এর পাশাপাশি দুনিয়ারও উপকারিতা রয়েছে।


দ্বিতীয় প্রকার কাজ হল, যাতে দুনিয়া-আখিরাতের কোনো না কোনো লোকসান রয়েছে। দ্বীনের লোকসান- যেমন কোনো গুনাহের কাজ। চাই তা ছোট হোক বা বড়, হাতের গুনাহ হোক বা চোখের, কানের গুনাহ হোক বা অন্তরের। 

বাকি রইল ঐ কাজ, যাতে কোনো লোকসান নেই, উপকারও নেই। নেকী নেই, বদীও নেই। কোনো আজর ও প্রতিদানও নেই, কোনো শাস্তিও নেই। তো ইমাম গাযালী রাহ. বলেন, যদি মানুষ চিন্তা করে, তাহলে বুঝবে যে, তৃতীয় প্রকার কাজেও লোকসান রয়েছে। কেননা, সে যতটুকু সময় অনর্থক কাজে ব্যয় করল, যদি তা ভালো কাজে ব্যয় করত তাহলে না জানি কত ফায়দা অর্জিত হত। সূত্র: মাসিক আল-কাউসার, সেপ্টেম্বর-২০১৭



। উপসংহার: 

আমরা যদি সামান্য সময়ও চিন্তা করি তাহলে আমাদের বুঝে আসবে যে, জীবনের মূহূর্তগুলো কত মূল্যবান। এর সঠিক মূল্য তো বুঝে আসবে আখেরাতে গিয়ে, যখন আমাদের ইখতিয়ারে কিছু থাকবে না; চাইলেও একটি নেকী অর্জন করা সম্ভব হবে না। দুই রাকাত নামাযের কী মূল্য- তা সেদিন বুঝে আসবে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের তা বুঝিয়েছেন। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-


مَرّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ عَلَى قَبْرٍ دُفِنَ حَدِيثًا فَقَالَ: رَكْعَتَانِ خَفِيفَتَانِ مِمّا تَحْقِرُونَ وَتَنْفِلُونَ يَزِيدُهُمَا هَذَا فِي عَمَلِهِ أَحَبّ إِلَيْهِ مِنْ بَقِيّةِ دُنْيَاكُمْ.

قَالَ ابْنُ صَاعِدٍ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ حَسَنٌ

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সদ্য দাফনকৃত একটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন সাহাবীদের লক্ষ করে বললেন, দুই রাকাত নামায, তোমরা যেটাকে সামান্য মনে কর, এই ব্যক্তির কাছে এই দুই রাকাত নামায -যা তার আমলনামাকে সমৃদ্ধ করবে- সারা দুনিয়া থেকে উত্তম। -আযযুহদু ওয়ার রাকাইক, ইবনুল মুবারাক, হাদীস ৩১; আলমুজামুল আওসাত, তবারানী, হাদীস ৯২০; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস ৩৫০৬


 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক