আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -২৫৮: যে ফরজ নামাজের পর সুন্নাত রয়েছে, তখন কি লম্বা তাসবিহ পড়া ঠিক হবে?

No Comments

 












জিজ্ঞাসা-২৫৮: 

السلام عليكم ورحمه الله بركاته

মুহতারাম, যে ফরয নামাযের পর সুন্নাত নামাজ আছে, সে ফরয সালাতের পর বেশীক্ষন বসে না থেকে সুন্নাত সালাত আদায় করতে হবে, সঠিক মতামত জানতে চাই। মাওলানা সাইফুল ইসলাম ত্রিশাল,ময়মনসিংহ -----


জবাব:

وعليكم السلام ورحمه الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم. نحمده ونصلي على رسوله الكريم اما بعد

তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, ইদানিং অনেক মসজিদে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কিছু ভাই ফরজ নামাজের পরে দীর্ঘক্ষণ তাসবিহ- তাহলিল পড়ার পর সুন্নত পড়েন।


উল্লেখ্য যে, তাসবিহ তাহলিল শুধু ফরজ নামাজের পরে নয়, বরং সুন্নত বা নফল নামাজে পড়ো পাঠ করার কথা হাদিস শরীফে এসেছে। যেমন, ইমাম বায রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন,


يقول ثوبان t: «كان النبي ﷺ إذا انصرف من صلاته استغفر الله ثلاثًا وقال: اللهم أنت السلام، ومنك السلام، تباركت يا ذا الجلال والإكرام رواه مسلم وغيره، ولم يقل: المكتوبة؛ فدل على أنه من كل صلاة يستغفر في النافلة والفرض.

অর্থাৎ একথা প্রমান হয় না যে শুধু ফরজ নামাজের পরেই ইস্তেগফার করেছেন বরং ফরজ নফল সব নামাজের পরই। সূত্র: ইমাম ইবনে বায রহ. ফতোয়া থেকে


তাই হোক, এ বিষয়ে আলবানি রহ এবং তার অনুসারী আহলে হাদিস ভাইয়েরা ফরজ নামাজের পরপরই তাসবীহ-তাহলিল পড়া উত্তম মনে করেন। সূত্র: সিলসিলাতুল সহিহা-১০২ পৃষ্ঠা


পক্ষান্তরে ফোকাহায়ে আহনাফ ফরজ নামাজের পর বেশিক্ষণ দোয়া -মোনাজাত, তাসবিহ-তাহলিল পাঠ করা মাকরুহ তানজিহ বলেছেন। ওলামায়ে আহনাফের দলিল নিম্নরূপ:

হাদিস থেকে দলিল:

عَنْ عَاءِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا سَلّمَ لَمْ يَقْعُدْ اِلَّا مِقْدَار مَايَقُوْلُ اَللّٰهُمَّ اَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَام تَبَارَكْتَ يَاذَالْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ -

تخريج الحديث وتحقيقه:

صحيح: أخرجه مسلم (592)، وأبو داود (1512)، والترمذي (298، 299)، والنسائي في ((المجتبى)) (3/ 69)، وفي ((الكبرى)) (1261، 7717، 9924، 9925)، وفي ((عمل اليوم والليلة)) (94-97و367)، وأبو يعلى (4721)، والبغوي (714) في ((شرح السنة))، وفي ((الشمائل)) (554)، وابن منده في ((التوحيد)) (208، 264، 358)، والطوسي في ((مختصر الأحكام)) (2/ 173، 174) رقم (282)، والدارمي (1347)، وابن ماجه (924

অর্থঃ মা আয়েশা (রাঃ)বলেন নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাম ফিরাইবার পর এই দোয়া পড়া পরিমান সময়ের অধিক বসতেন না। “আল্লাহ্হুমা আনতাম সালামু ওয়া মিনকাছ সালাম তাবারাকতা ইয়া জালজালালী ওয়াল ইকরাম (হে আল্লাহ তুমি শান্তিময় এবং তোমার নিকট হইতেই যাবতীয় শান্তি আসে তুমি বরকতময় হে প্রতাপ সম্মানের অধিকারী)”। তাখরিজ: মুসলিম-৫৯২,আবু দাউদ-১৫১২ তিরমিজি-২৯৮ ইবনে মাজাহ-৯২৪


উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় আল্লামা মানাবী (রঃ) বলেন-

لَمْ يَقْعُدْ اِلَّا مِقْدَار مَايَقُوْلُ – الخ اَيْ بَيْنَ الْفَرضِ وَالسُّنَّةِ

অর্থঃ এই পরিমাণ দোয়া পড়া পর্যন্ত বসতেন অর্থাৎ এই দোয়া পড়তেন ফরজের পর এবং সুন্নতে মুয়াক্কাদার পূর্বে। সূত্র: এলাউস্ সুন্নান, আজীজী


কিয়াস দ্বারা দলিল:

যে সকল ফরজের পর সুন্নত নামাজ থাকে (যথা জোহর, জুম্মা, মাগরিব, এশা) এসব হলো সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ এবং ফরজ নামাজের পরে ও সুন্নাতে মুয়াক্কাদার আগে এ উভয়ের মাঝে মুনাজাত হলো মুস্তাহাব; এই মুস্তাহাব মুনাজাত লম্বা করার কারণে দেরীতে সুন্নত আদায় করা মাকরুহ হবে। সুন্নাতে মুয়াক্কাদার উপর মুস্তাহাব কাজকে প্রাধান্য দেওয়া বেদাত ও মাকরুহ । সূত্র: মাজাহেরে হক পৃষ্ঠা- ৩০৮; প্রশ্নোত্তরে দোয়ার আহ্‌কাম (লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম, এম, এম)


হযরত মুজাদ্দিদ আলফে সানী (রাঃ)বলেছেন, একটি মাকরুহ তানজিহ হতে (ছোট মাকরুহ কাজ হতে) আত্মরক্ষা করাও বছরের পর বছর ধরে নফল নামাজ, যিকির এবাদত, দোয়া, মোনাজাত হতে শত শত গুণে শ্রেষ্ঠ ফজিলতপূর্ণ । তাই ফরজ নামাজের পর সুন্নত নামাজ থাকলে দেরীতে সুন্নাত আদায় করা এমন মাকরুহ্ কাজ হতে বিরত থাকা উল্লেখিত ফজিলতের অধিকারী এবং বড়ই সৌভাগ্যের শামীল ।


ফোকাহায়ে কেরামের অভিমত:

০১ নং

সমস্ত ফরজ নামাজের পরই দোয়া করা নবী (সাঃ) এর তরীকা ও সুন্নত। কিন্তু ফরজ নামাজের পর সুন্নাত নামাজ থাকলে সেই স্থলে যথা- জোহর, মাগরিব, এশা ও জুমা নামাজের পর মুনাজাত সংক্ষিপ্ত করা উচিত। সূত্র: জখিরাতুজ জাফর ৫০ পৃষ্ঠা


০২ নং

উক্ত নামাজ সমূহের পরে লম্বা মুনাজাত করা মাকরুহ তানজিহী। সূত্র: মুনিয়া এবং গায়াতুল আওতার


০৩ নং

আর যে সকল ফরজ নামাজের পরে সুন্নাত নামাজ নাই যথাঃ ফজর, এবং আছরের নামাজ- এ স্থলে যতটুকু ইচ্ছা মুনাজাত লম্বা করা যাবে।

وَفِي الْحُجّةِ الْاِمَامُ اِذَا فَرِغَ مِنَ الظُهْرِ وَالْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ يَشْرَعُ فِيْ الْسُنَّةِ وَلَايَشْغِلُ بِاَدْعِيَةٍ طَوِيْلَةٍ – (كذافي التاتارخانيه – عالمغيري جلداول)

অর্থঃ কিতাবুল হুজ্জাতে উল্লেখ আছে, ইমাম সাহেব যখন জোহর, মাগরিব এবং এশার নামাজ শেষ করবেন, তখন সংক্ষিপ্ত মুনাজাত করে সুন্নাত নামাজ শুরু করবেন। মুনাজাত দীর্ঘ/লম্বা করবেন না। সূত্র: অনুরূপ তাতার খানিয়া, ফতওয়ারে আলগিরী ১ম জিঃ পৃঃ ৭৭


০৪ নং

جن فراءض كى بعد سنتين هين انكي بعد دعاء مختصر كرنا هين زياده تاخير كرنا مكروه هين (كذافي الدرالمختار- شامي- تاتارخانيه –منيةالمصلي )

অর্থঃ যে সকল ফরজ নামাজের পর সুন্নাত নামাজ রয়েছে (যেমন- জোহর, মাগরিব, এশা)- যেগুলোর পর সংক্ষিপ্ত দোয়া করতে হয়। দীর্ঘ সময় কাটানো মাকরুহ্।

সূত্র: দুররুল মুখতার, মুখতার, শামী, তাতার খানিয়া, মুনিয়াতুল মুসল্লীতে;বেহেস্তী জেওর উর্দ্দু কেতাব পৃষ্টা- ২৩


০৫ নং

جن فراءض كي بعد سنتين هين ان كي بعد دعاء مختصر هونا منا سب اور افضل هين زياده تاخير كرنا مكروه هين (كذافي الدر المختار – شامي – تاتارخانيه – منية المصلي –احسن الفتاوي

অর্থঃ যে সকল ফরজ নামাজের পর সুন্নাত নামাজ আছে (জোহর, মাগরিব, এশা) তাদের পর সংক্ষিপ্ত মুনাজাত করা উচিত এবং উত্তম। (সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাজ আদায় করতে) বেশী বিলম্ব করা মাকরুহ । সূত্র: অনুরূপ দুররুল মুখতার, শামী তাতার খানিয়াহ, মুনিয়া, আলমগিরী কিতাবে আছে; আহসানুল ফতওয়া ১ম জিঃ পৃঃ ৩৪৬


০৬ নং

কোন কিতাবে দেখা যায় প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তিনবার (যেমন হাদিস শরীফে এসেছে,

ثوبان رضي الله عنه قَالَ : ( كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا انْصَرَفَ مِنْ صَلَاتِهِ اسْتَغْفَرَ ثَلَاثًا وَقَالَ : اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ ، وَمِنْكَ السَّلَامُ ، تَبَارَكْتَ ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ ) رواه مسلم (591)


وكذلك حديث كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ رضي الله عنه عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : ( مُعَقِّبَاتٌ لَا يَخِيبُ قَائِلُهُنَّ - أَوْ فَاعِلُهُنَّ - دُبُرَ كُلِّ صَلَاةٍ مَكْتُوبَةٍ : ثَلَاثٌ وَثَلَاثُونَ تَسْبِيحَةً ، وَثَلَاثٌ وَثَلَاثُونَ تَحْمِيدَةً ، وَأَرْبَعٌ وَثَلَاثُونَ تَكْبِيرَةً )رواه مسلم (

 আসতাগফিরুল্লাহাল্লাজি লাইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম ওয়া আতুবু ইলাইহে, আয়াতুলকুর্ছি, এখলাছ, ফালাক, নাছ এক একবার এবং ৩৩ বারসুব্হানাল্লাহ ৩৪ বার আলহামদুল্লিলাহ, ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়া মোস্তাহাব। তবে যে ফরজ নামাজের পর সুন্নাত নামাজ আছে এগুলো সুন্নাতের পরে পড়াই মোস্তাহাব এবং উত্তম । সূত্র:মারাকি, বেহেস্তিজিওর-পৃঃ ১৫৩


যে সকল ফরজ নামাজের পর সুন্নাত নামাজ আছে, সেক্ষেত্রে আমল, অজীফা, তাছবীহ, তাহ্লীল সমূহ সুন্নাত নামাজ আদায় করার পর পড়তে হবে। এটাই উত্তম

সূত্র: মারাকী, বেহেস্তি জেওয়র ২য় খন্ড পৃঃ ১৫৩


جن فراءض كي بعد سنتين هين انكي بعد امام اور مقتد يان مختصر دعاء كر سنتين ادا كري (فتاوي دار العلوم ديو بند جلد سوم )

অর্থঃ যে সকল ফরজ নামাজের পর সুন্নত নামাজ আছে সে সকল নামাজের পরে ইমাম এবং মুক্তাদীগণ সংক্ষিপ্ত মুনাজাত করে সুন্নাত আদায় করবে। সূত্র: ফতওয়ায়ে দারুল উলুমদেওবন্দ ২য় জিঃ পৃঃ ১৯৭


০৭ নং

عَنْ اَبِيْ اُمَامَةَ قَالَ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ اَيُّ الدُّعَاءِ اَسْمَعٌ قَالَ جَوْفُ الَّيْلِ الْاٰخِرِ وَدُبُرَ الصَّلَوَاتِ الْمَكْتُوْبَاتِ ترمذي شريف-مشكوة شريف-

আবু উমাম (রঃ) বলেন একদিন নবীজিকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রাসুলাল্লাহ্ কোন্ দোয়া দ্রুত কবুল হয়? নবীজি বলেন শেষ রাতের এবং ফরজ নামাজের পরের দোয়া এ হাদীসের ব্যাখ্যা মা আয়শার হাদীসে উল্লেখ হয়েছে যে, ফরজের পর সংক্ষেপ মুনাজাত করে সুন্নাতের পর মুনাজাত লম্বা করার কথা। তবে যে ফরজ নামাজের পর সূন্নাত নেই সেক্ষেত্রে দীর্ঘ মুনাজাত করতে দোষ নেই। আবি উমামারহাদীস মতে। ফরজ নামাজের পর দোয়া কবুল হওয়ার অর্থ ফরজ - সূন্নাত নামাজের পর। অর্থাৎ ফরজের পর সুন্নতে মোয়াকদাহ নামাজ থাকলে সেক্ষেত্রে সংক্ষেপ মুনাজত করে সুন্নাত নামাজ আদায়ের পর যত ইচ্ছা মুনাজাত করা যাবে। বেহেস্তি জিওর


মূল কথা হলো, ফোকাহায়ে আহনাফ ফরজ নামাজের পরে মাসনুন দোয়া পড়াকে নিষেধ করেন না; বরং লম্বা দোয়া-মোনাজাত ও তাসবিহ তাহলিল নিষেধ করেন। কারণ ফরজ নামাজের পরে সুন্নতে মুয়াক্কাদা থাকে, সেই সুন্নত ওই ফরজের অধীন। দলিল হলো, কোন কারণে যদি সময়ের মধ্যে ফরজ নামাজকে দোহরায়তে (পুনরায় পড়তে হয়) হয়, তখন সুন্নতসহ পড়তে হয়।


সুতরাং যে ফরজ নামাজের পরে সুন্নত রয়েছে, সেই নামাজের পরই তাসবিহ তাহলিল সংক্ষেপ করে সুন্নত আদায় করে বাকি আমল করা উচিত।


উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আবদুর রাজ্জাক