জিজ্ঞাসা-১২৭১৪:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আসসালামুয়ালাইকুম। লোভ সম্পর্কে ইসলাম। লেশনপ্লান প্রয়োজন।
তারিখ: ০৯/০৮/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আসাদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
০১. ভূমিকা: বিজ্ঞ ওলামায়ে দ্বীন ও মাশায়েখগণ মানুষের নেতিবাচক চরিত্র গুলির দুইটি দিক মূল বিবেচনা করেছেন। অর্থাৎ সমস্ত মন্দ চরিত্রের মূল হল দুইটি জিনিস, এক লোভ দুই অহংকার। বাকিগুলো হলো এ দুটির শাখা। তাই তাই নিচে লোভের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, ক্ষতিসমূহ, বাঁচার উপায় উল্লেখ করা হবে, ইনশাল্লাহ।
০২. লোভের আভিধানিক অর্থ:
লোভ শব্দটি বাংলা। আরবিতে প্রতিশব্দ হলো الحرص (হিরস)। সমর্থবোধক শব্দ হচ্ছে -
إمْساك , إمْسَاك , إمْسَاكٌ , بُخْل , بُخْلٌ , تقتيرٌ , تَقْتِير , تَقْتِيرٌ , جَشَع , جَشَعٌ , شَرَه , شُحّ , شُحٌّ , ضِيق , طَمَع , مُسْكَة , نَهَم ، جَشَع ، طَمَع , شَرَه ، تَمَسُّك ، بُخْل , شِحّ ، بُخْل
مرادفات حَرَص (فعل):
جَشِعَ , رَغِبَ , شَرِهَ , طَمِعَ ،جَشِعَ ، طَمَعَ , شَرِهَ ، تَمَسَّكَ ، بَخِلَ , شَحَّ ، بَخِلَ
অর্থাৎ লোভ, আগ্রহী, ইচ্ছা, বিরত থাকা,কৃপণ,পেটুক, অভাব ইত্যাদি।
০৩. লোভের পারিভাষিক সংজ্ঞা:
লোভ হ'ল লিপ্সা বা কাম্য বস্ত্ত লাভের প্রবল ইচ্ছা।
شدّةُ الإِرادة والشَّرَه إِلى المطلوب . وقال الجوهري : الحِرْصُ الجَشَعُ ، وقد حَرَصَ عليه يَحْرِصُ ويَحْرُصُ حِرْصاً وحَرْصاً وحَرِصَ حَرَصاً ؛ وقول أَبي ذؤيب : ولقد حَرَِِصْت بأَن أُدافعَ عنهمُ ، فإِذا المَنيّةُ أَقْبَلَتْ لا تُدْفَعُ عدَّاه بالباء لأَنه في معنى هَمَمْتُ ، والمعروف حَرَصْتُ عليه .
অর্থাৎ ইচ্ছার তীব্রতা এবং যা কাঙ্খিত তার জন্য লোভ। আল-জাওহারী বলেছেন: লোভী আগ্রহ, এবং তিনি এটির প্রতি আগ্রহী, প্রখর আগ্রহ, তীক্ষ্ণতা এবং প্রখর আগ্রহের প্রতি আগ্রহী।
যেমন, আবী যুইব বলেন: আমি তাদের রক্ষা করতে আগ্রহী ছিলাম, তাই যদি মৃত্যু আসে তবে তাকে বা' দিয়ে ব্যতীত আমি প্রতিহত করতে পারতাম না, কারণ এটি হুম এর অর্থ, এবং আমি যে অনুগ্রহের জন্য আগ্রহী ছিলাম। সূত্র: আলমুজাম কামুসুল মহিত
০৪. লোভের প্রকারভেদ:
হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী লোভ প্রথমত দুই প্রকার।
ক) সম্মান-খ্যাতির লোভ।
খ) সম্পদের লোভ। দলিল:
حَدَّثَنَا سُوَيْدُ بْنُ نَصْرٍ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْمُبَارَكِ، عَنْ زَكَرِيَّا بْنِ أَبِي زَائِدَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَعْدِ بْنِ زُرَارَةَ، عَنِ ابْنِ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ الأَنْصَارِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَا ذِئْبَانِ جَائِعَانِ أُرْسِلاَ فِي غَنَمٍ بِأَفْسَدَ لَهَا مِنْ حِرْصِ الْمَرْءِ عَلَى الْمَالِ وَالشَّرَفِ لِدِينِهِ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . وَيُرْوَى فِي هَذَا الْبَابِ عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَلاَ يَصِحُّ إِسْنَادُهُ .
. সুওয়ায়াদ ইবনে নসর (রাহঃ) ..... ইবনে কা‘ব ইবনে মালিক আনসারী তৎ পিতা কা‘ব ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ দুটো ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে বকরীর পালে ছেড়ে দিলেও তারা এতটুকু ক্ষতি করতে পারে না একজনের অর্থ ও প্রতিপত্তির মোহ তার দ্বীনের যতটুকু ক্ষতি করতে পারে। তাখরিজ: জামে তিরমিজি -২৩৭৬
নোট: এ হাদীসটি হাসান-সহীহ।
০৫. সম্মান-খ্যাতির লোভ। এটা আবার দুই প্রকার। যথা:
الحرص على الشرف، وهو على قسمين:
أحدهما: طلب الشرف بالوِلاية والسلطان والمال ، وهذا خطير جداً، – وهو الغالب – وهو يمنع خير الآخرة وشرفها وكرامتها، لأنه يَحمِل العبد على التكَبّر والجَور.
عن وهب بن منبه رحمه الله أنه قال: «أَعوَن الأخلاق على الدين الزهادة في الدنيا، وأَوشَكُها ردىً اتباع الهوى، ومِن اتباع الهوى الرغبة في الدنيا، ومِن الرغبة في الدنيا حب المال والشرف، ومِن حب المال والشرف استحلال المحارم».
الثاني: طلب الشرف والعُلُوّ على الناس بالأمور الدينية كالعلم والعمل والزهد، وهذا أفحش من الأول وأقبح وأشد فساداً وخطراً، لأنّ العلم زاد الآخرة لم يُجعَل في حظوظ الدنيا، لأجل هذا كان أشد الناس عذاباً يوم القيامة من كانت هذه حاله.
وقد حذّر السلف رحمهم الله من هذا الصنيع أشدّ التحذير، فعن علي رضي الله عنه قال: «يا حَمَلَة العلم اعملوا به، فإنما العالم من عَمِل بما عَلِم، فوافق عَمَلَه عِلمَه، وسيكون أقوام يحملون العلم لا يجاوز تراقيهم، يخالف عَمَلهم عِلمهم، وتخالف سريرتهم علانيتهم، يجلسون حِلَقاً حِلَقاً فيباهُون بعضهم بعضاً، حتى إنّ الرجل ليغضب على جليسه إذا جلس إلى غيره ويَدَعه، أولئك لا تَصعَد أعمالهم في مجالسهم تلك إلى الله تعالى».
وعن سفيان بن عيينة رحمه الله أنه قال : قال مطرف: «إنّ أقبح القُبح: الرغبة في الدنيا أن تُطلَبَ بعمل الآخرة».
০৬. সম্পদের লোভ:
অর্থ-সম্পদের লোভ : লোভ মানুষের স্বভাব জাত একটি বৈশিষ্ট্য। অধিক পাওয়ার আকাংখাকে এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ উপার্জনের আশা ব্যক্ত করা এই বৈশিষ্ট্যের অন্যতম। প্রত্যেক বান্দার জন্য আল্লাহ রিযিক বণ্টন করে দিয়েছেন। যা থেকে কমবেশী করা হবে না। অতএব পরিমিত ও প্রয়োজন পূর্ণ হওয়ার পর আরও বেশী পাওয়ার আকাংখাকে দমন করতে হবে। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন, أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ-حَتَّى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ ‘অধিক পাওয়ার আকাংখা তোমাদের (পরকাল থেকে) গাফেল রাখে, যতক্ষণ না তোমরা কবরস্থানে উপনীত হও’ (তাকাছুর ১০২/১-২)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দো‘আ করতেন, اللَّهُمَّ ارْزُقْ آلَ مُحَمَّدٍ قُوتًا ‘হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদের পরিবারকে পরিমিত রিযিক দান কর’।[1]
অতএব হে লোভী! যখন তুমি মালের পেছনে জীবন শেষ করলে, তখন আখেরাতের জন্য তুমি কখন সময় দিবে? অথচ আল্লাহ বলেন,يَا ابْنَ آدَمَ تَفَرَّغْ لِعِبَادَتِى أَمْلأْ صَدْرَكَ غِنًى وَأَسُدَّ فَقْرَكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ مَلأْتُ صَدْرَكَ شُغْلاً وَلَمْ أَسُدَّ فَقْرَكَ ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য অবসর হও। তাহ’লে আমি তোমার অন্তর প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দিব এবং তোমার অভাব দূর করে দিব। আর যদি তা না কর তাহ’লে তোমার দু’হাত ব্যস্ততা দিয়ে ভরে দিব এবং তোমার অভাব দূর করব না’।[2]
কবি বলেন, وَلاَ تَحْسَبَنَّ الْفَقْرَ مِنْ فَقْرِ الْغِنَى + وَلَكِنْ فَقْرُ الدِّيْنِ مِنْ أَعْظَمِ الْفَقْرِ‘সচ্ছলতা হারানোকে দরিদ্রতা ভেবো না। বরং দ্বীন হারানোই হ’ল সবচেয়ে বড় দরিদ্রতা’।[3] নিঃসন্দেহে মালের লোভ সকল শত্রুর চেয়ে বড় শত্রু। যা মানুষকে সর্বদা ব্যস্ত রাখে। অথচ তা তার নিজের কোন কাজে লাগে না। যা তাকে আখেরাতের কাজ থেকে বিরত রাখে। অথচ যেটা ছিল তার নিজের জন্য। কেননা অতিরিক্ত যে মাল জমা করার জন্য সে দিন-রাত দৌড়ঝাঁপ করছে, তা সবই সে ফেলে যাবে। কিছুই সাথে নিতে পারবে না, তার নিজস্ব নেক আমলটুকু ব্যতীত। অথচ সে আমল করার মত ফুরছত তার নেই। কবি হুসাইন বিন আব্দুর রহমান বলেন, الْمَالُ عِنْدَكَ مَخْزُونً لِوَارِثِهِ + مَا الْمَالُ مَالُكَ اِلاَّ يَوْمَ تُنْفِقُهُ ‘মাল তোমার কাছে জমা থাকে তার ওয়ারিছদের জন্য। আর ঐ মাল তোমার নয়, যতক্ষণ না তুমি তা (আল্লাহর পথে) ব্যয় করবে’।[4] অতএব লোভ হ’ল দু’প্রকারের। ক্ষতিকর লোভ (فاجع حرص) যা তাকে আখেরাত থেকে ফিরিয়ে দুনিয়ার কাজে লিপ্ত রাখে। আর কল্যাণকর লোভ (نافع حرص), যা তাকে আল্লাহর আনুগত্যের কাজে আকৃষ্ট করে ও সেদিকেই ব্যস্ত রাখে।
মালের লোভ হ’ল, যা অবৈধ ও হারাম পথে উপার্জনে প্ররোচিত করে। এটাকে الشُّحُّ বা কৃপণতা বলে। যা নিন্দিত। আল্লাহ বলেন, وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ‘যে ব্যক্তি হৃদয়ের কৃপণতা থেকে বাঁচল, সে সফলকাম হ’ল’ (হাশর ৫৯/৯)। হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, إِيَّاكُمْ وَالشُّحَّ فَإِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بِالشُّحِّ أَمَرَهُمْ بِالْبُخْلِ فَبَخَلُوا وَأَمَرَهُمْ بِالْقَطِيعَةِ فَقَطَعُوا وَأَمَرَهُمْ بِالْفُجُورِ فَفَجَرُوا ‘তোমরা কৃপণতা হ’তে বেঁচে থাক। কেননা কৃপণতা তোমাদের পূর্বেকার লোকদের ধ্বংস করেছে। এ বস্ত্ত তাদের বলেছে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করতে, তখন সে তা করেছে। তাদের বখীলী করার নির্দেশ দিয়েছে, তখন সে তা করেছে। তাদের পাপ করার নির্দেশ দিয়েছে, তখন সে তা করেছে’।[5] জাবের (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে, وَاتَّقُوا الشُّحَّ فَإِنَّ الشُّحَّ أَهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حَمَلَهُمْ عَلَى أَنْ سَفَكُوا دِمَاءَهُمْ وَاسْتَحَلُّوا مَحَارِمَهُمْ...‘এ বস্ত্ত তাদেরকে রক্ত প্রবাহিত করতে প্ররোচিত করে (তখন তারা সেটা করে) এবং তারা হারামকে হালাল করে’।[6] একদল বিদ্বান বলেন, الشُّحُّ বা কৃপণতা হ’ল الشديد الحرص ‘কঠিন লোভ’। যা তাকে বৈধ অধিকার ছাড়াই তা নিতে প্ররোচিত করে। যেমন অন্যের মাল অবৈধ ভাবে নেওয়া, অন্যের অধিকারে অবৈধ হস্তক্ষেপ করা। অন্যের ইযযতের উপর হামলা করা ইত্যাদি।[7]
সারকথা হলো,
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক