জিজ্ঞাসা-১২৭১৮:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আচ্ছালামু আলাইকুম, মুহতারাম "এর যাবতীয় সওয়াব রাসূল সাঃ এর রওজা মোবারক পৌঁছে দিন" এই ধরনের বাক্য বলা সঠিক কিনা জানতে চাই। আচ্ছালামু আলাইকুম।
তারিখ: ১২/০৮/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা সাইফুল ইসলাম, ভোলা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
হ্যাঁ, এভাবে বলা জায়েয আছে। ফুকাহায়ে কেরাম এটা জায়েয বলেছেন। যেমন,
(১) ইমাম ইবনে কুদামা রাহ. বলেন,
فصل : وأي قربة فعلها ، وجعل ثوابها للميت المسلم ، نفعه ذلك ، إن شاء الله ، أما الدعاء ، والاستغفار ، والصدقة ، وأداء الواجبات ، فلا أعلم فيه خلافا ، إذا كانت الواجبات مما يدخله النيابة ، وقد قال الله تعالى : { والذين جاءوا من بعدهم يقولون ربنا اغفر لنا ولإخواننا الذين سبقونا بالإيمان } . وقال الله تعالى : { واستغفر لذنبك وللمؤمنين والمؤمنات } .
অর্থাৎ মুসলিম মৃত্যু ব্যক্তির জন্য ঈসালে সওয়াব, যা তার জন্য উপকারী, যদি আল্লাহ চায়। ঈসালে সওয়াবের মাধ্যম হলো, দুআ, ইসতেগফার, সদকা ও ওয়াজিব আমলসমূহ আদায় করা। দলিল:
Surah Al-Hashr, Verse 10:
وَالَّذِينَ جَاءُوا مِن بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ
আর এই সম্পদ তাদের জন্যে, যারা তাদের পরে আগমন করেছে। তারা বলেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে এবং ঈমানে আগ্রহী আমাদের ভ্রাতাগণকে ক্ষমা কর। সূরা হাশর-১০
তিনি আরও বলেন,
إجماع المسلمين، فإنهم في كل عصر ومصر يجتمعون ويقرؤون القرآن، ويهدون ثوابه إلى موتاهم، من غير نكير.
এতে মুসলমানদের ইজমা আছে। প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক শহরে তারা সমবেত হয়ে কুরআন তিলাওয়াত করে সওয়াব রেসানি করেছে। এতে কেউ কোনো আপত্তি করেনি। -আলমুগনী ৩/৫২২
(২) শাফেয়ী ফকীহদের মধ্যেও ফকীহের মত এটাই যে, কুরআন তিলাওয়াতের ঈসালে সওয়াব করা জায়েয। বিশেষত যদি আল্লাহর কাছে এই দুআ করা হয় যে, তিনি যেন এই সওয়াব মাইয়িতের কাছে পৌঁছে দেন। যাদের মধ্যে ইবনে আবী আসরূন রাহ. (৫৮৫হি.), ইবনে আবিদ দাম রাহ. (৬৪২হি.), ইবনুস সালাহ রাহ. (৬৪৩হি.), তাকীউদ্দীন সুবকী রাহ. (৭৫৬হি.), ইবনুল মুলাক্কীন রাহ. (৮০৪হি.), যাকারিয়া আনসারী রাহ. (৯২৬হি.) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
(৩) ইমাম ইবনুস সালাহ রাহ.-এর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কুরআন পড়ে পিতা-মাতা বা আত্মীয়-স্বজন কিংবা সাধারণ মুসলমানকে সওয়াব পৌঁছানো যাবে কি না? উত্তরে তিনি বলেছেন, এতে ফকীহদের মতভেদ আছে। তবে অধিকাংশ মানুষ তা জায়েয মনে করে। এক্ষেত্রে এই দুআ করা উচিত যে, হে আল্লাহ, আপনি এর সওয়াব অমুককে পৌঁছে দিন। -ফাতাওয়া ইবনুস সালাহ ১/১৯৩
বোঝা গেল যে, সকল ইবাদতের হুকুম একই এবং এখানে প্রশস্ততা আছে। -মাজমূউ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েলে ইবনে উসায়মীন ১৭/২৬২
(৪) আল্লামা মনজুর নুমানি (রহ.) –এর সংকলিত ‘আলফিয়াতু হাদিস’ গ্রন্থে শেষের দিকে তিনি একটি হাদিস উদ্ধৃতি দিয়েছেন , তা হলো এই,
للطبراني بإسناد حسن عن عُبادة بن الصامت رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: " مَن استغفر للمؤمنين والمؤمنات، كتب الله له بكلِّ مؤمنٍ ومؤمنَة حسنةً "١.
হজরত উবাদাহ বিন সামেত রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে বান্দা সাধারণ মুমিন নারী পুরুষের জন্য আল্লাহর দরবারে মাগফিরাতের দুআ করবে, তার জন্য প্রত্যেক মুমিন ও মুমিনার পক্ষে একটি নেকী লেখা হবে। তাখরিজ: তাবারানি- ৩/২৩৪; মাজমাউল জাওয়ায়েদ-১০/২১০
এ ব্যাপারে অপর একটি হাদিস উল্লেখ করা হলো:
مَن قال كلَّ يومٍ اللهمَّ اغفِرْ لي وللمؤمنين والمؤمناتِ أُتْحِفَ به مِن كلِّ مؤمنٍ حسنةً
الراوي : أم سلمة أم المؤمنين | المحدث : الهيثمي | المصدر : مجمع الزوائد
الصفحة أو الرقم : 10/213
অর্থাৎ উম্মুল মুমিনিন উম্মে সালমা রা হতে বর্ণিত। যে ব্যক্তি প্রতিদিন
সারকথা হলো, উপরোক্ত সব আলোচনার দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, আমরা বলি হে আল্লাহ! এর সাওয়াব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রওজা মোবারক এ পৌঁছে দিন। সকল মুমিন মুমিনাতের রূহে এর সাওয়াব পৌঁছে দিন। এভাবে বলা জায়েজ। মুমিনদের জন্য দুআর ব্যাপারে উৎসাহিত করতে মহান আল্লাহ নবিদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, ( নবী কারীম ﷺ- কে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে)
فَاعْلَمْ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَ اسْتَغْفِرْ لِذَنْۢبِكَ وَ لِلْمُؤْمِنِیْنَ وَ الْمُؤْمِنٰتِ وَ اللهُ یَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَ مَثْوٰىكُمْ.
জেনে রেখো, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই এবং ক্ষমা প্রার্থনা কর নিজ ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য এবং মুসলিম নর-নারীদের জন্যও। সূরা মুহাম্মদ-১৯
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক