জিজ্ঞাসা-১২৭১৩:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। তালাকের সময় মেয়ের স্বামী ছিলো না ও বাবা মা অনন্যা মানুষ জন ছিলো ওখানে।তালাকটা মেয়ের পক্ষ থেকে হয়েছিলো।
মেয়েরা স্বামীকে তালাক দিতে পারেনা সেটা মেয়েটি পরে জানতে পারে অর্থাৎ তালাকের পর।
এখন শরীয়ত অনুযায়ী তালাক হয়েছে কি না?
তারিখ: ০৮/০৮/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মুজাহিদুল ইসলাম, বগুড়া থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, ইসলামি শরিয়াহ স্বাভাবিক অবস্থায় নারীদের কে তালাক দেওয়ার অনুমতি দেয়নি। তালাকের অধিকার একমাত্র স্বামীর। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারবে।
দলিল:
ﻓَﻄَﻠِّﻘُﻮﻫُﻦَّ ﻟِﻌِﺪَّﺗِﻬِﻦَّ ﻭَﺃَﺣْﺼُﻮﺍ ﺍﻟْﻌِﺪَّﺓَ
ﻭَﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺭَﺑَّﻜُﻢْ
“তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ো ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং ইদ্দত গণনা করো। তোমরা তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করো।….” সূরা তালাক -০১
এ আয়াত থেকে ইশারাতুন নস দ্বারা প্রমাণিত হয় তালাক দেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র পুরুষের।
দ্বিতীয় কথা হলো, ক্ষেত্র বিশেষে কয়েকটি পদ্ধতিতে স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারবে, তার মধ্যে একটি হলো, খোলা তালাক। দলিল:
খোলা তালাক: খোলা শব্দটি আরবি বাংলা অর্থ হলো, বিচ্ছিন্ন হওয়া, বিচ্ছিন্ন করা, সম্পর্ক ছেদ করা ইত্যাদি। শরিয়তের পরিভাষায় খোলা তালাক বলা হয়, কোন কিছুর বিনিময়ে স্ত্রী বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে স্বামী সে বিনিময়টি গ্রহণ করে স্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে; এ বিনিময়টি স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে প্রদত্ত মোহরানা হোক কিংবা এর চেয়ে বেশি সম্পদ হোক কিংবা এর চেয়ে কম হোক। দলিল:কুরআনের বাণী-
فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ ۗ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَعْتَدُوهَا ۚ وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ [٢:٢٢٩
অতঃপর যদি তোমাদের ভয় হয় যে,তারা উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না,তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নেয়,তবে উভয়ের মধ্যে কারোরই কোন পাপ নেই। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। কাজেই একে অতিক্রম করো না। বস্তুতঃ যারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে, তারাই জালেম। [সূরা বাকারা-২২৯]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ امْرَأَةَ ثَابِتِ بْنِ قَيْسٍ أَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، ثَابِتُ بْنُ قَيْسٍ، مَا أَعْتِبُ عَلَيْهِ فِي خُلُقٍ وَلاَ دِينٍ، وَلَكِنِّي أَكْرَهُ الكُفْرَ فِي الإِسْلاَمِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَتَرُدِّينَ عَلَيْهِ حَدِيقَتَهُ؟» قَالَتْ: نَعَمْ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اقْبَلِ الحَدِيقَةَ وَطَلِّقْهَا تَطْلِيقَةً
ইবনু ‘আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, সাবিত ইবনু কায়স এর স্ত্রী নাবী (ﷺ) -এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) চরিত্রগত বা দ্বীনী বিষয়ে সাবিত ইবনু কায়সের উপর আমি দোষারোপ করছি না। তবে আমি ইসলামের ভিতরে থেকে কুফরী করা অর্থাৎ স্বামীর সঙ্গে অমিল) পছন্দ করছি না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তুমি কি তার বাগানটি ফিরিয়ে দেবে? সে বললঃ হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তুমি বাগানটি গ্রহণ কর এবং মহিলাকে এক তালাক দিয়ে দাও। বুখারী-৫২৭৩
প্রচলিত বাংলাদেশ প্রচলিত মুসলিম পারিবারিক আইন-১৯৬১ নিকাহ ও তালাক নামার ১৮ নং কলামে একটি ধারা রয়েছে। অর্থাৎ স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার অধিকার।
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্ন আলোকে স্বামী যদি সজ্ঞানে কাবিন নামার ১৮ নম্বর কলমে স্বাক্ষর করে থাকেন অর্থাৎ শর্ত মোতাবেক স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার অনুমতি প্রদান করে থাকেন, তাহলে স্ত্রী ডিভোর্স বা তালাক দিলে তালাক পতিত হবে। উল্লেখ কার্যকর হওয়ার জন্য কাউকে উপস্থিত থাকা জরুরি নয়।
আর যদি স্বামী ১৮ নম্বর কলামে সম্মতি না দেন, তাহলে স্ত্রী এক হাজার তালাক দিলেও তার তালাক পতিত হবে না।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক