আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

০৭। পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ ও মহান আসলাফ-আকাবিরের আমল বনাম আমাদের জিন্দেগি (আল্লাহ তাআলার মহব্বত ও ভয়ে কান্নার প্রসঙ্গে)

No Comments

 




 ০৭।  পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ ও মহান আসলাফ-আকাবিরের আমল  বনাম আমাদের জিন্দেগি 

(আল্লাহ তাআলার মহব্বত ও ভয়ে কান্নার প্রসঙ্গে)


v  পবিত্র কুরআনের বাণী-

আয়াত নং-০১

ثُمَّ قَسَتۡ قُلُوۡبُکُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ ذٰلِکَ فَهِیَ کَالۡحِجَارَۃِ اَوۡ اَشَدُّ قَسۡوَۃً ؕ وَ اِنَّ مِنَ الۡحِجَارَۃِ لَمَا یَتَفَجَّرُ مِنۡهُ الۡاَنۡهٰرُ ؕ وَ اِنَّ مِنۡهَا لَمَا یَشَّقَّقُ فَیَخۡرُجُ مِنۡهُ الۡمَآءُ ؕ وَ اِنَّ مِنۡهَا لَمَا یَهۡبِطُ مِنۡ خَشۡیَۃِ اللّٰهِ ؕوَ مَا اللّٰهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعۡمَلُوۡنَ

এরপরও তোমাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গেলতা পাথর কিংবা তদপেক্ষা কঠিন। কতক পাথরও এমন আছে যে তা হতে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয় এবং কতক এরূপ যেফেটে যাওয়ার পর তা হতে পানি নির্গত হয়। আবার কতক এমন যা আল্লাহর ভয়ে ধ্বসে পড়ে এবং তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্বন্ধে বেখেয়াল নন। সূরা বাকারা-৭৪

আয়াত নং-০২

وَالَّذِينَ يُؤْتُونَ مَا آتَوا وَّقُلُوبُهُمْ وَجِلَةٌ أَنَّهُمْ إِلَىٰ رَبِّهِمْ رَاجِعُونَ

অর্থ: যারা তাদের রবের কাছে ফিরে যাবে এই বিশ্বাসে তাদের যা দান করার তা দান করে ভীত কম্পিত হৃদয়েতারাই দ্রুত সম্পাদন করে কল্যাণকর কাজ এবং তারা তাতে অগ্রগামী থাকে। সূরা মুমিনূন,৬০-৬১

তাফসির: এই আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আয়েশা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যেএই আমলগুলো করে লেকেরা ভীত কম্পিত হবে কেনতারা কি মদ পান করে কিংবা চুরি করেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বললেনহে সিদ্দীক তনয়াএরূপ নয় বরং এরা তারাযারা রোযা রাখেনামায পড়ে এবং দান খয়রাত করে। এতদসত্ত্বেও তারা শঙ্কিত  থাকে যেসম্ভবত : (কোনো ত্রুটির কারণে) এ আমল কবুল হয়নি। এ ধরনের (লোকই  সৎকাজ দ্রুত সম্পাদন করে এবং তাতে অগ্রগামী থাকে)  সূত্র: তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৩৯৭; তিরমিযী ৩১৭৫


আয়াত নং-০৩


 
وَ یَخِرُّوۡنَ لِلۡاَذۡقَانِ یَبۡکُوۡنَ وَ یَزِیۡدُهُمۡ خُشُوۡعًا 

আর তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে। সুরাবনি ইসরাঈল-১০৯


v  হাদিসে নববি:

হাদিস নং-০১

لاَ يَلِجُ النَّارَ رَجُلٌ بَكَى مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ حَتَّى يَعُودَ اللَّبَنُ فِي الضَّرْعِ، وَلَا يَجْتَمِعُ غُبَارٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ  

অর্থ: আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারীর জাহান্নামে যাওয়া এরূপ অসম্ভব যেরূপ দোহনকৃত দুধ পুনরায় পালানে ফিরে যাওয়া অসম্ভব। আর আল্লাহর পথের ধুলা ও জাহান্নামের ধোঁয়া কখনও না। একত্রিত হবে। তাখরিজ:  তিরমিজি-১৬৩৩মিশকাত-৩৮২৮

হাদিস নং-০২

عَيْنَانِ لاَ تَمَسُّهُمَا النَّارُ: عَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ، وَعَيْنٌ بَاتَتْ تَحْرُسُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ،  

অর্থ: জাহান্নামের আগুন দুটি চোখকে স্পর্শ করবে না। এক- আল্লাহর ভয়ে যে চোখ ক্রন্দন করে এবং দুই- আল্লাহর রাস্তায় যে চোখ পাহারা দিয়ে বিনিদ্র রাত অতিবাহিত করে তাখরিজ:  তিরমিযী-১৬৩৯মিশকাতুল মাছাবিহ-৩৮২৯

হাদিস নং-০৩

সাত শ্রেণী লোক আরশের নিচে ছায়া পাবে  তাদের  মধ্যে এক শ্রেণী হলোوَرَجُلٌ ذَكَرَ اللهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاه ঐ ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণকালে তার দুচোখ দিয়ে অশ্রুধারা বইতে থাকে তাখরিজ: বুখারি-৬৬০মুসলিম-৭১১তিরমিজি-২৩৯১মিশকাত-৭০১

হাদিস নং-০৪

আবূ উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত নবী করীম () বলেন,

لَيْسَ شَيْءٌ أَحَبَّ إِلَى اللهِ مِنْ قَطْرَتَيْنِ وَأَثَرَيْنِ، قَطْرَةٌ مِنْ دُمُوْعٍ فِيْ خَشْيَةِ اللهِ، وَقَطْرَةُ دَمٍ تُهَرَاقُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ،

দুটি ফোঁটা ও দুটি চিহ্নের চেয়ে অধিক প্রিয় আল্লাহর নিকট অন্য কিছু নেই। আল্লাহর পথে (জিহাদে) নির্গত রক্তের ফোঁটা তাখরিজ: তিরমিজ-১৬৬৯

হাদিস নং-০৫

 لَوْ تَعْلَمُوْنَ مَا أَعْلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيْلاً، وَلَبَكَيْتُمْ كَثِيْرًا-  অর্থ: আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতেতবে খুব কম হাসতে এবং অধিক কাঁদতেতাখরিজবুখারি-৬৪৮৫তিরমিজি-২৩১৩ইবনে মাজাহ-,

হাদিস নং-০৬

إِنِّي أَرَى مَا لَا تَرَوْنَ، وَأَسْمَعُ مَا لاَ تَسْمَعُوْنَ، إِنَّ السَّمَاءَ أَطَّتْ، وَحَقَّ لَهَا أَنْ تَئِطَّ، مَا فِيْهَا مَوْضِعُ أَرْبَعِ أَصَابِعَ إِلَّا وَمَلَكٌ وَاضِعٌ جَبْهَتَهُ سَاجِدًا لِلَّهِ، وَاللهِ لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أَعْلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيْلاً، وَلَبَكَيْتُمْ كَثِيْرًا، وَمَا تَلَذَّذْتُمْ بِالنِّسَاءِ عَلَى الْفُرُشَاتِ، وَلَخَرَجْتُمْ إِلَى الصُّعُدَاتِ، تَجْأَرُونَ إِلَى اللهِ، وَاللهِ لَوَدِدْتُ أَنِّي كُنْتُ شَجَرَةً تُعْضَدُ-

অর্থ: আমি যা দেখি তোমরা তা দেখ নাআর আমি যা শুনতে পাই তোমরা তা শুনতে পাও না। আসমান তো চড়চড় শব্দ করছেআর সে এই শব্দ করার যোগ্য। তাতে এমন চার আঙ্গুল পরিমাণ জায়গাও নেই যেখানে কোন ফিরিশতা আল্লাহর জন্য সিজদারত নেই। আল্লাহর শপথ! আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তাহলে তোমরা খুব কম হাসতেবেশী কাঁদতে এবং বিছানায় স্ত্রীদের উপভোগ করতে নাবাড়ী-ঘর ছেড়ে পথে-প্রান্তরে বেরিয়ে পড়তে এবং চিৎকার করে আল্লাহর কাছে দোআ করতে যেআল্লাহর শপথ! হায়আমি যদি একটি গাছ হতাম এবং তা কেটে ফেলা হত তাখরিজ: ইবনে মাজাহ-৪১৯০মিশকাত-৫৩৪৭

হাদিস নং-০৭

عن عُقْبَة بن عامر -رضي الله عنه- قال: قلت: يا رسول الله ما النَّجَاة؟ قال: «أَمْسِكْ عليك لِسَانَكَ، وَلْيَسَعْكَ بَيتُك، وابْكِ على خَطِيئَتِكَ». 

অর্থ: উকবা ইবন আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি বললামহে আল্লাহর রাসূল! নাজাত কিসের মধ্যে নিহিততিনি বললেনতুমি তোমার যবানকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখোতোমার ঘর যেন তোমার জন্যে যথেষ্ট হয় আর স্বীয় গুনাহের জন্য ক্রন্দন কর।  

হাদিস নং-০৮

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اقْرَأْ عَلَيَّ سُورَةَ النِّسَاءِ قَالَ: قُلْتُ: أَقْرَأُ عَلَيْكَ وَعَلَيْكَ أُنْزِلَ، قَالَ: إِنِّي أُحِبُّ أَنْ أَسْمَعَهُ مِنْ غَيْرِي، قَالَ: فَقَرَأْتُ عَلَيْهِ حَتَّى إِذَا انْتَهَيْتُ إِلَى قَوْلِهِ (فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ) [النساء: ٤١] الْآيَةَ، فَرَفَعْتُ رَأْسِي فَإِذَا عَيْنَاهُ تَهْمِلَانِ

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিততিনি বলেননবী করিম () আমাকে বলেছেনআমাকে তুমি তিলাওয়াত করে শোনাও। বললামআমি আপনাকে তিলাওয়াত শোনাবঅথচ আপনার ওপরই এটি অবতীর্ণ হয়েছেতিনি বলেনআমি অন্যের তিলাওয়াত শুনতে পছন্দ করি। অতঃপর আমি তাঁকে সুরা নিসা পড়ে শোনাতে লাগলাম। যখন আমি সুরা নিসার ৪১ নম্বর আয়াত তিলাওয়াত করলামতিনি বললেনব্যসযথেষ্ট হয়েছে। আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম তাঁর চোখ থেকে অঝোর ধারায় অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে। বুখারিহাদিস : ৫০৫০মুসলিমহাদিস : ১৯০৩

আয়াতটি হলো,  فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيْدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلاَءِ شَهِيْدًا যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং তোমাকে উপস্থিত করব তাদের ওপর সাক্ষীরূপেতখন কী অবস্থা হবেসূরা নিসা-৪১

 

*আসলাফ-আকাবেরদের আমল:

আমল নং-০১

ইরবায বিন সারিয়াহ (রহঃ) বলেন,

صَلَّى بِنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ، ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَيْنَا فَوَعَظَنَا مَوْعِظَةً بَلِيغَةً ذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُوْنُ وَوَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوْبُ، فَقَالَ قَائِلٌيَا رَسُوْلَ اللهِ كَأَنَّ هَذِهِ مَوْعِظَةُ مُوَدِّعٍ، فَمَاذَا تَعْهَدُ إِلَيْنَا؟ فَقَالَ أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَة... 

রাসূলুল্লাহ ()  একদিন ফজরের ছালাতের পর আমাদেরকে মর্মস্পর্শী ওয়ায শুনালেনযাতে (আমাদের) সকলের চোখে পানি এল এবং অন্তর কেঁপে উঠল। কোন একজন বললএটা তো বিদায়ী ব্যক্তির নছীহতের মত। হে আল্লাহর রাসূল ()! এখন আপনি আমাদেরকে কি উপদেশ দিচ্ছেনতিনি বললেনআমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতির ----  তাখরিজ: তিরমিজি-২৬৭৬আবু দাঊদ-৪৬০৭আহমাদ-১৭১৪৪

আমল নং-০২

كَانَ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ إِذَا وَقَفَ عَلَى قَبْرٍ يَبْكِيْ حَتَّى يَبُلَّ لِحْيَتَهُ، فَقِيلَ لَهُتَذْكُرُ الْجَنَّةَ وَالنَّارَ، وَلاَ تَبْكِي، وَتَبْكِيْ مِنْ هَذَا؟ قَالَإِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَإِنَّ الْقَبْرَ أَوَّلُ مَنَازِلِ الْآخِرَةِ، فَإِنْ نَجَا مِنْهُ، فَمَا بَعْدَهُ أَيْسَرُ مِنْهُ، وَإِنْ لَمْ يَنْجُ مِنْهُ، فَمَا بَعْدَهُ أَشَدُّ مِنْهُ قَالَوَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَمَا رَأَيْتُ مَنْظَرًا قَطُّ إِلاَّ وَالْقَبْرُ أَفْظَعُ مِنْهُ-

ওছমান (রাঃ)-এর মুক্ত দাস হানী বলেন,ওছমান (রাঃ) কোন কবরের পাশে দাঁড়িয়ে এত বেশী কাঁদতেন যেতাঁর দাঁড়ি ভিজে যেত। তাঁকে প্রশ্ন করা হজান্নাত-জাহান্নামের আলোচনা করলে তো আপনি কাঁদেন নাঅথচ কবর দর্শনে এত বেশী কাঁদেন কেনতিনি বললেনরাসূলুল্লাহ () বলেছেনআখেরাতের মনযিলগুলোর মধ্যে কবর হল প্রথম মনযিল। এখান থেকে কেউ মুক্তি পেয়ে গেলে তার জন্য পরবর্তী মনযিলগুলোতে মুক্তি পাওয়া খুব সহজ হয়ে যাবে। আর এখান থেকে মুক্তি না পেলে তার জন্য পরবর্তী মনযিলগুলো আরো বেশী কঠিন হবে ওছমান (রাঃ) বলেনরাসূলুল্লাহ () আরো বলেছেনআমি কবরের দৃশ্যের চাইতে অধিক ভয়ংকর দৃশ্য আর কখনো দেখিনি।  ইবনু মাজাহ হা/৪২৬৭তিরমিযী হা/২৩০৮মিশকাত হা/১৩২

আমল নং-০৩

কায়েস বিন আবু হাযেম থেকে বর্ণিততিনি বলেনএকদা আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা রা. স্বীয় স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে হঠাৎ কাঁদতে লাগলেনতার সাথে তার স্ত্রীও কাঁদতে লাগলেন। আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা জিজ্ঞেস করলেনতুমি কেন কাঁদছস্ত্রী বললেনতোমাকে কাঁদতে দেখে আমারও কান্না চলে এসেছে। স্বামী বললেন, (কান্নার কারণ হল) আমার আল্লাহর এ বাণীটি স্মরণ হল যে, (অর্থ) তোমাদের মধ্যে কেউ এমন নেইযে জাহান্নামের উপর দিয়ে অতিক্রম করবে না (মারইয়াম : ৭১) আর আমার জানা নেই যেজাহান্নামের উপর স্থাপন করা পুলসিরাত অতিক্রম করার সময় আমি (দোযখ থেকে) রক্ষা পাব না পাব না।-মুস্তাদরাকে হাকিমহাদীস ৮৭৮৬

আমল নং-০৪


আসহাবে সুফফার কান্না : 

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন যখন এই আয়াত নাজিল হলোতবে কী তোমরা এ কথায় বিস্ময়বোধ করছএবং (একে উপহাসের বিষয় বানিয়ে) হাসি-ঠাট্টা করছএবং কান্নাকাটি করছ নাঅথচ তোমরা অহমিকার সাথে খেলাধুলায় লিপ্ত রয়েছ? (সুরা নাজমআয়াত-৫৯৬০৬১) তখন আসহাবে সুফফা বললআমরা আল্লাহর তরে এবং আল্লাহর কাছেই আমরা ফিরে যাবো। তারপর তারা এত কান্না করলেন যেচোখের অশ্রুতে তাদের গণ্ডদেশ সিক্ত হয়েছে। রাসুল () তাদের কান্নার আওয়াজ শুনে কাঁদলেন। রাসুল (সা.)-এর কান্নার কারণে উপস্থিত সকলে কান্না করেছি। তারপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেনযারা আল্লাহর ভয়ে কাঁদে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে না এবং কোনো জনপদের অধিবাসী আল্লাহর নাফরমানি করে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। যদি তোমরা গুনাহ না করতে আল্লাহ তোমাদের সরিয়ে এমন এক জাতি নিয়ে আসতেন যারা গুনাহ করে আল্লাহর নিকট তাওবা করবে  ফলে আল্লাহ  তাদের ক্ষমা করে  দেবেন। তাদের প্রতি দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীলদয়ালু।

হজরত আবু হাজেম রহিমাহুল্লাহ বলেনজিবরাইল আলাইহিস সালাম নবীজির নিকট এসে একজনকে ক্রন্দনরত দেখলেন। জিবরাইল রাসুল ()কে জিজ্ঞেস করলেনসে কেরাসুল () উত্তর দিলেন সে অমুক। তারপর জিবরাইল আলাইহিস সালাম বলেনআমরা ফেরেশতাকুল আদম সন্তানের সকল আমল পরিমাপ করতে পারি কান্না ব্যতীত। কারণ আল্লাহতায়ালা একফোঁটা অশ্রুর কারণে জাহান্নামের আগুনের সাগর নিভিয়ে দেন। (তাফসিরে কুরতুবী)

আমল নং-০৫

আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ ছিলেন অত্যন্ত দ্বীনদার-পরহেযগারখুব বেশী ইবাদতগুজার। তিনি দিনে রোজা রাখতেনরাতে তাহাজ্জুদ পড়তেন এবং প্রচুর কুরআন তেলাওয়াত করতেন। তিনি ছিলেন আল্লাহ্‌র ভয়ে কম্পিত ব্যক্তি। (একদিন  সূরা ইয়াসিনের এ আয়াত-
وَامْتَازُوا الْيَوْمَ أَيُّهَا الْمُجْرِمُونَ

হে অপরাধীরা! আজ তোমরা আলাদা হয়ে যাও। সূরা ইয়াসিন-৫৯

পড়ে কাদতে কাদতে সারারাত কাটিয়ে দেন।সূত্র:  মুহাম্মদ আবু যাহরার ইমাম আবু হানীফা হায়াতুহু ওয়া আসরুহু আ-রাউহু ওয়া ফিক্‌হুহু


চোখের পানির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা:

 চোখের পানি নিয়ে বিজ্ঞানী উইলিয়াম ফ্রের গবেষণা : চোখের পানি নিয়ে উইলিয়াম ফ্রে নামে একজন বিজ্ঞানী প্রায় ১৫ বছর গবেষণা করেছেন। গবেষণা শেষে তিনি বলেছেনচোখের পানি কোনো সাধারণ কিছু নয়। এটি পানিশ্লেষ্মাতেলইলেক্ট্রোলাইট-এর এক জটিল মিশ্রণ। এটি ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধীযা চোখকে ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে। এটি কর্নিয়াকে মসৃণ করেযা পরিষ্কার দৃষ্টির জন্য অত্যাবশ্যকীয়। এটি কর্নিয়াকে যথেষ্ট আর্দ্র রাখে এবং অক্সিজেন সরবরাহ করে দেয়। এটি চোখের জন্য ওয়াইপার হিসেবে কাজ করেযা চোখকে ধুয়ে ধুলোবালি থেকে পরিষ্কার করে। চোখের পানি যদি শুধুই পানি হতোতাহলে তা ঘর্ষণের কারণে চোখ শুকিয়ে জ্বালাপোড়া করত। শীতকালে তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি হলে পানি শুকিয়ে জমে বরফ হয়ে যেত!

আবার চোখের পানি যদি শুধুই এক ধরনের তেল হতোতাহলে তা চোখের ধুলাবালি পরিষ্কার না করে উল্টো আরো ঘোলা করে দিত। চোখের পানির মধ্যে প্রকৃতির লক্ষ উপাদান থেকে এমন বিশেষ কিছু উপাদান ব্যবহার করা হয়েছেযার এক বিশেষ মিশ্রণ একই সাথে পরিষ্কারমসৃণ এবং জীবাণুমুক্ত করতে পারে এবং অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে। সূত্র: দৈনিক সোনালি নিউজ; আগস্ট ২৩২০২১


নিরীক্ষণ: 

প্রিয় বন্ধুগণ!  পবিত্র কুরআন- হাদিস ও আমাদের মহান পূর্বসূরীদের আমলের সাথে সাথে একটু আমাদের আমল যাচাই-বাছাইওজন ও নিরক্ষণ করি। 

আল্লাহর ভয় ও মহব্বতে আজকে কি আমার চোখের পানি পড়েছে?

গত সপ্তাহে কি চোখের পানি পড়েছে?

গত একমাসে কি চোখের পানি পড়েছে?

বিগত এক বছরে কি চোখের পানি পড়েছে?

বিগত দশ বছরেও কি চোখের পানি পড়েছে?

হযরত আবু বকর রা. বলেনমানুষের অন্তর শক্ত হলে চোখ অশ্রুহীন হয়ে যায় আর অন্তর শক্ত হয় অধিক পরিমাণে গোনাহ করার কারণে। 

প্রিয় দোস্ত আমার হিসেব তো মিলায়?  হজরত আবু বকর (রা.) কথাই তোমার-আমার জন্য প্রযোজ্য । তোমার অন্তর কি পাথরের চেয়েও শক্ত হয়ে গেল?  এই যদি তোমার অবস্থাতাহলে বলতোমার এ করুণ অবস্থার জন্যই কান্না করা উচিত কিনা?


আবেদন/পরামর্শ:   

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেনআল্লাহ তায়ালার ভয়ে কান্না করা আমার নিকট এক হাজার দিরহাম সদকা করার চেয়েও অতি প্রিয়। হযরত মোহাম্মদ বিন মুনকাদির যখন ক্রন্দন করতেন তখন চোখের পানি চেহারা ও দাড়িতে মুছতেন।তিনি বলতেনআমি জানতে পেরেছি যেযে জায়গায় চোখের পানি লাগবে সেখানে দোজখের আগুন স্পর্শ করবে না।   কয়েকটি নিবেদন,

(১) ইচ্ছাকৃত কবিরা গোনাহ থেকে সম্পূর্ণ বেঁচে থাকুন। ভুলক্রমে হয়ে গেলে সময় না নিয়ে দ্রুত তাওবাহ করুন।

(২) প্রতিদিন একটি সময় নির্জনে ১০-২০ মিনিট খাছ মুনাজাত করুন।

(৩)  অধিক পরিমাণ অপয়োজনীয় হাসি বর্জন করুন। কেননা,. এ জন্যই আল্লাহর রাসুল () বলেছেনতোমরা অধিক পরিমাণে হাসাহাসি কর না। কেননা অধিক হাসি অন্তরের মৃত্যু ঘটায়। তাখরিজ: ইবনে মাজাহ-৪১৯৩

(৪)  কান্না না আসলে কান্নার ভান করুন। যেমন,

 عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ ابْكُوا فَإِنْ لَمْ تَبْكُوا فَتَبَاكَوْا ‏"‏ ‏.‏

সাদ ইবনে আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ () বলেছেনঃ তোমরা কান্নাকাটি করোযদি কাঁদতে না পারো তবে কান্নার ভান করো বা কাঁদতে চেষ্টা করো। তাখরিজ: ইবনে মাজাহ-৪১৯৬

 দেখুন একটি লোকের দুটি ছেলে একজন ছোট আরেকজন একটু বড়। যখন ছোট বাবুটি কিছু পাওয়ার জন্য কাঁদেতখন তাকে পিতা-মাতা তা দেয়। কিন্তু বড়জন কাঁদতে একটু শরম পায় একটু কান্নার ভান করেতবুও তাকে পিতা-মাতা আবদার পূর্ণ করে। যদিও সে পূরিপূর্ণ কাঁদে না।

(৫) পরীক্ষামূলক কয়েকদিন সমস্ত গুনাহ থেকে বেঁচে থাকুনতারপর ইবাদতে-মুনাজতে মজা-স্বাদ না লাগলে এই অধমকে গালি দিন।

(৬) বিস্তারিত দেখুন কান্না সংক্রান্ত তিনটি কিতাবমাওলানা রফিকুল ইসলাম রচিতপ্রিয় নবির অশ্রুসাহাবিদের কান্নাআওলিয়াদের কান্না