০৭। পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ ও মহান আসলাফ-আকাবিরের আমল বনাম আমাদের জিন্দেগি
(আল্লাহ তাআলার মহব্বত ও ভয়ে কান্নার প্রসঙ্গে)
v পবিত্র কুরআনের বাণী-
আয়াত নং-০১
ثُمَّ قَسَتۡ قُلُوۡبُکُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ ذٰلِکَ فَهِیَ کَالۡحِجَارَۃِ اَوۡ اَشَدُّ قَسۡوَۃً ؕ وَ اِنَّ مِنَ الۡحِجَارَۃِ لَمَا یَتَفَجَّرُ مِنۡهُ الۡاَنۡهٰرُ ؕ وَ اِنَّ مِنۡهَا لَمَا یَشَّقَّقُ فَیَخۡرُجُ مِنۡهُ الۡمَآءُ ؕ وَ اِنَّ مِنۡهَا لَمَا یَهۡبِطُ مِنۡ خَشۡیَۃِ اللّٰهِ ؕوَ مَا اللّٰهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعۡمَلُوۡنَ
এরপরও তোমাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গেল, তা পাথর কিংবা তদপেক্ষা কঠিন। কতক পাথরও এমন আছে যে তা হতে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয় এবং কতক এরূপ যে, ফেটে যাওয়ার পর তা হতে পানি নির্গত হয়। আবার কতক এমন যা আল্লাহর ভয়ে ধ্বসে পড়ে এবং তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্বন্ধে বেখেয়াল নন। সূরা বাকারা-৭৪
আয়াত নং-০২
وَالَّذِينَ يُؤْتُونَ مَا آتَوا وَّقُلُوبُهُمْ وَجِلَةٌ أَنَّهُمْ إِلَىٰ رَبِّهِمْ رَاجِعُونَ
অর্থ: যারা তাদের রবের কাছে ফিরে যাবে এই বিশ্বাসে তাদের যা দান করার তা দান করে ভীত কম্পিত হৃদয়ে, তারাই দ্রুত সম্পাদন করে কল্যাণকর কাজ এবং তারা তাতে অগ্রগামী থাকে। সূরা মুমিনূন,৬০-৬১
তাফসির: এই আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আয়েশা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, এই আমলগুলো করে লেকেরা ভীত কম্পিত হবে কেন? তারা কি মদ পান করে কিংবা চুরি করে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে সিদ্দীক তনয়া, এরূপ নয় বরং এরা তারা, যারা রোযা রাখে, নামায পড়ে এবং দান খয়রাত করে। এতদসত্ত্বেও তারা শঙ্কিত থাকে যে, সম্ভবত : (কোনো ত্রুটির কারণে) এ আমল কবুল হয়নি। এ ধরনের (লোকই সৎকাজ দ্রুত সম্পাদন করে এবং তাতে অগ্রগামী থাকে) সূত্র: তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৩৯৭; তিরমিযী ৩১৭৫
আয়াত নং-০৩
وَ یَخِرُّوۡنَ لِلۡاَذۡقَانِ یَبۡکُوۡنَ وَ یَزِیۡدُهُمۡ خُشُوۡعًا
আর তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে। সুরাবনি ইসরাঈল-১০৯
v হাদিসে নববি:
হাদিস নং-০১
لاَ يَلِجُ النَّارَ رَجُلٌ بَكَى مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ حَتَّى يَعُودَ اللَّبَنُ فِي الضَّرْعِ، وَلَا يَجْتَمِعُ غُبَارٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ
অর্থ: আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারীর জাহান্নামে যাওয়া এরূপ অসম্ভব যেরূপ দোহনকৃত দুধ পুনরায় পালানে ফিরে যাওয়া অসম্ভব। আর আল্লাহর পথের ধুলা ও জাহান্নামের ধোঁয়া কখনও না। একত্রিত হবে। তাখরিজ: তিরমিজি-১৬৩৩; মিশকাত-৩৮২৮
হাদিস নং-০২
, عَيْنَانِ لاَ تَمَسُّهُمَا النَّارُ: عَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ، وَعَيْنٌ بَاتَتْ تَحْرُسُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ،
অর্থ: জাহান্নামের আগুন দু’টি চোখকে স্পর্শ করবে না। এক- আল্লাহর ভয়ে যে চোখ ক্রন্দন করে এবং দুই- আল্লাহর রাস্তায় যে চোখ পাহারা দিয়ে বিনিদ্র রাত অতিবাহিত করে’। তাখরিজ: তিরমিযী-১৬৩৯; মিশকাতুল মাছাবিহ-৩৮২৯
হাদিস নং-০৩
সাত শ্রেণী লোক আরশের নিচে ছায়া পাবে তাদের মধ্যে এক শ্রেণী হলো, وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاه ‘ঐ ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণকালে তার দু’চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বইতে থাকে’। তাখরিজ: বুখারি-৬৬০; মুসলিম-৭১১; তিরমিজি-২৩৯১; মিশকাত-৭০১
হাদিস নং-০৪
আবূ উমামা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত নবী করীম (ﷺ) বলেন,
لَيْسَ شَيْءٌ أَحَبَّ إِلَى اللهِ مِنْ قَطْرَتَيْنِ وَأَثَرَيْنِ، قَطْرَةٌ مِنْ دُمُوْعٍ فِيْ خَشْيَةِ اللهِ، وَقَطْرَةُ دَمٍ تُهَرَاقُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ،
‘দু’টি ফোঁটা ও দু’টি চিহ্নের চেয়ে অধিক প্রিয় আল্লাহর নিকট অন্য কিছু নেই। আল্লাহর পথে (জিহাদে) নির্গত রক্তের ফোঁটা’। তাখরিজ: তিরমিজ-১৬৬৯
হাদিস নং-০৫
لَوْ تَعْلَمُوْنَ مَا أَعْلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيْلاً، وَلَبَكَيْتُمْ كَثِيْرًا- অর্থ: আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে, তবে খুব কম হাসতে এবং অধিক কাঁদতে’।তাখরিজ; বুখারি-৬৪৮৫; তিরমিজি-২৩১৩; ইবনে মাজাহ-,
হাদিস নং-০৬
إِنِّي أَرَى مَا لَا تَرَوْنَ، وَأَسْمَعُ مَا لاَ تَسْمَعُوْنَ، إِنَّ السَّمَاءَ أَطَّتْ، وَحَقَّ لَهَا أَنْ تَئِطَّ، مَا فِيْهَا مَوْضِعُ أَرْبَعِ أَصَابِعَ إِلَّا وَمَلَكٌ وَاضِعٌ جَبْهَتَهُ سَاجِدًا لِلَّهِ، وَاللهِ لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أَعْلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيْلاً، وَلَبَكَيْتُمْ كَثِيْرًا، وَمَا تَلَذَّذْتُمْ بِالنِّسَاءِ عَلَى الْفُرُشَاتِ، وَلَخَرَجْتُمْ إِلَى الصُّعُدَاتِ، تَجْأَرُونَ إِلَى اللهِ، وَاللهِ لَوَدِدْتُ أَنِّي كُنْتُ شَجَرَةً تُعْضَدُ-
অর্থ: আমি যা দেখি তোমরা তা দেখ না, আর আমি যা শুনতে পাই তোমরা তা শুনতে পাও না। আসমান তো চড়চড় শব্দ করছে, আর সে এই শব্দ করার যোগ্য। তাতে এমন চার আঙ্গুল পরিমাণ জায়গাও নেই যেখানে কোন ফিরিশতা আল্লাহর জন্য সিজদারত নেই। আল্লাহর শপথ! আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তাহ’লে তোমরা খুব কম হাসতে, বেশী কাঁদতে এবং বিছানায় স্ত্রীদের উপভোগ করতে না, বাড়ী-ঘর ছেড়ে পথে-প্রান্তরে বেরিয়ে পড়তে এবং চিৎকার করে আল্লাহর কাছে দো‘আ করতে যে, আল্লাহর শপথ! হায়, আমি যদি একটি গাছ হ’তাম এবং তা কেটে ফেলা হত’। তাখরিজ: ইবনে মাজাহ-৪১৯০; মিশকাত-৫৩৪৭
হাদিস নং-০৭
عن عُقْبَة بن عامر -رضي الله عنه- قال: قلت: يا رسول الله ما النَّجَاة؟ قال: «أَمْسِكْ عليك لِسَانَكَ، وَلْيَسَعْكَ بَيتُك، وابْكِ على خَطِيئَتِكَ».
অর্থ: উকবা ইবন আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! নাজাত কিসের মধ্যে নিহিত? তিনি বললেন, “তুমি তোমার যবানকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখো, তোমার ঘর যেন তোমার জন্যে যথেষ্ট হয় আর স্বীয় গুনাহের জন্য ক্রন্দন কর।”
হাদিস নং-০৮
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اقْرَأْ عَلَيَّ سُورَةَ النِّسَاءِ قَالَ: قُلْتُ: أَقْرَأُ عَلَيْكَ وَعَلَيْكَ أُنْزِلَ، قَالَ: إِنِّي أُحِبُّ أَنْ أَسْمَعَهُ مِنْ غَيْرِي، قَالَ: فَقَرَأْتُ عَلَيْهِ حَتَّى إِذَا انْتَهَيْتُ إِلَى قَوْلِهِ (فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ) [النساء: ٤١] الْآيَةَ، فَرَفَعْتُ رَأْسِي فَإِذَا عَيْنَاهُ تَهْمِلَانِ
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ) আমাকে বলেছেন, আমাকে তুমি তিলাওয়াত করে শোনাও। বললাম, আমি আপনাকে তিলাওয়াত শোনাব, অথচ আপনার ওপরই এটি অবতীর্ণ হয়েছে? তিনি বলেন, আমি অন্যের তিলাওয়াত শুনতে পছন্দ করি। অতঃপর আমি তাঁকে সুরা নিসা পড়ে শোনাতে লাগলাম। যখন আমি সুরা নিসার ৪১ নম্বর আয়াত তিলাওয়াত করলাম, তিনি বললেন, ব্যস, যথেষ্ট হয়েছে। আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম তাঁর চোখ থেকে অঝোর ধারায় অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে। বুখারি, হাদিস : ৫০৫০; মুসলিম, হাদিস : ১৯০৩
আয়াতটি হলো, فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيْدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلاَءِ شَهِيْدًا যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং তোমাকে উপস্থিত করব তাদের ওপর সাক্ষীরূপে, তখন কী অবস্থা হবে? সূরা নিসা-৪১
*আসলাফ-আকাবেরদের আমল:
আমল নং-০১
ইরবায বিন সারিয়াহ (রহঃ) বলেন,
صَلَّى بِنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ، ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَيْنَا فَوَعَظَنَا مَوْعِظَةً بَلِيغَةً ذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُوْنُ وَوَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوْبُ، فَقَالَ قَائِلٌ: يَا رَسُوْلَ اللهِ كَأَنَّ هَذِهِ مَوْعِظَةُ مُوَدِّعٍ، فَمَاذَا تَعْهَدُ إِلَيْنَا؟ فَقَالَ أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَة...
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একদিন ফজরের ছালাতের পর আমাদেরকে মর্মস্পর্শী ওয়ায শুনালেন, যাতে (আমাদের) সকলের চোখে পানি এল এবং অন্তর কেঁপে উঠল। কোন একজন বলল, এটা তো বিদায়ী ব্যক্তির নছীহতের মত। হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! এখন আপনি আমাদেরকে কি উপদেশ দিচ্ছেন? তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতির ----। তাখরিজ: তিরমিজি-২৬৭৬; আবু দাঊদ-৪৬০৭; আহমাদ-১৭১৪৪
আমল নং-০২
كَانَ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ إِذَا وَقَفَ عَلَى قَبْرٍ يَبْكِيْ حَتَّى يَبُلَّ لِحْيَتَهُ، فَقِيلَ لَهُ: تَذْكُرُ الْجَنَّةَ وَالنَّارَ، وَلاَ تَبْكِي، وَتَبْكِيْ مِنْ هَذَا؟ قَالَ: إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: إِنَّ الْقَبْرَ أَوَّلُ مَنَازِلِ الْآخِرَةِ، فَإِنْ نَجَا مِنْهُ، فَمَا بَعْدَهُ أَيْسَرُ مِنْهُ، وَإِنْ لَمْ يَنْجُ مِنْهُ، فَمَا بَعْدَهُ أَشَدُّ مِنْهُ قَالَ: وَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا رَأَيْتُ مَنْظَرًا قَطُّ إِلاَّ وَالْقَبْرُ أَفْظَعُ مِنْهُ-
ওছমান (রাঃ)-এর মুক্ত দাস হানী বলেন,ওছমান (রাঃ) কোন কবরের পাশে দাঁড়িয়ে এত বেশী কাঁদতেন যে, তাঁর দাঁড়ি ভিজে যেত। তাঁকে প্রশ্ন করা হ’ল, জান্নাত-জাহান্নামের আলোচনা করলে তো আপনি কাঁদেন না, অথচ কবর দর্শনে এত বেশী কাঁদেন কেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আখেরাতের মনযিলগুলোর মধ্যে কবর হল প্রথম মনযিল। এখান থেকে কেউ মুক্তি পেয়ে গেলে তার জন্য পরবর্তী মনযিলগুলোতে মুক্তি পাওয়া খুব সহজ হয়ে যাবে। আর এখান থেকে মুক্তি না পেলে তার জন্য পরবর্তী মনযিলগুলো আরো বেশী কঠিন হবে। ওছমান (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরো বলেছেন, ‘আমি কবরের দৃশ্যের চাইতে অধিক ভয়ংকর দৃশ্য আর কখনো দেখিনি। ইবনু মাজাহ হা/৪২৬৭; তিরমিযী হা/২৩০৮; মিশকাত হা/১৩২
আমল নং-০৩
কায়েস বিন আবু হাযেম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা রা. স্বীয় স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে হঠাৎ কাঁদতে লাগলেন, তার সাথে তার স্ত্রীও কাঁদতে লাগলেন। আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেন কাঁদছ? স্ত্রী বললেন, তোমাকে কাঁদতে দেখে আমারও কান্না চলে এসেছে। স্বামী বললেন, (কান্নার কারণ হল) আমার আল্লাহর এ বাণীটি স্মরণ হল যে, (অর্থ) ‘তোমাদের মধ্যে কেউ এমন নেই, যে জাহান্নামের উপর দিয়ে অতিক্রম করবে না (মারইয়াম : ৭১) আর আমার জানা নেই যে, জাহান্নামের উপর স্থাপন করা পুলসিরাত অতিক্রম করার সময় আমি (দোযখ থেকে) রক্ষা পাব না পাব না।’-মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদীস ৮৭৮৬
আমল নং-০৪
আসহাবে সুফফার কান্না :
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন যখন এই আয়াত নাজিল হলো, ‘তবে কী তোমরা এ কথায় বিস্ময়বোধ করছ? এবং (একে উপহাসের বিষয় বানিয়ে) হাসি-ঠাট্টা করছ? এবং কান্নাকাটি করছ না? অথচ তোমরা অহমিকার সাথে খেলাধুলায় লিপ্ত রয়েছ?।’ (সুরা নাজম, আয়াত-৫৯, ৬০, ৬১) তখন আসহাবে সুফফা বলল, আমরা আল্লাহর তরে এবং আল্লাহর কাছেই আমরা ফিরে যাবো। তারপর তারা এত কান্না করলেন যে, চোখের অশ্রুতে তাদের গণ্ডদেশ সিক্ত হয়েছে। রাসুল (ﷺ) তাদের কান্নার আওয়াজ শুনে কাঁদলেন। রাসুল (সা.)-এর কান্নার কারণে উপস্থিত সকলে কান্না করেছি। তারপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, যারা আল্লাহর ভয়ে কাঁদে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে না এবং কোনো জনপদের অধিবাসী আল্লাহর নাফরমানি করে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। যদি তোমরা গুনাহ না করতে আল্লাহ তোমাদের সরিয়ে এমন এক জাতি নিয়ে আসতেন যারা গুনাহ করে আল্লাহর নিকট তাওবা করবে ফলে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেবেন। তাদের প্রতি দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, দয়ালু।
হজরত আবু হাজেম রহিমাহুল্লাহ বলেন, জিবরাইল আলাইহিস সালাম নবীজির নিকট এসে একজনকে ক্রন্দনরত দেখলেন। জিবরাইল রাসুল (ﷺ)কে জিজ্ঞেস করলেন, সে কে? রাসুল (ﷺ) উত্তর দিলেন সে অমুক। তারপর জিবরাইল আলাইহিস সালাম বলেন, ‘আমরা ফেরেশতাকুল আদম সন্তানের সকল আমল পরিমাপ করতে পারি কান্না ব্যতীত। কারণ আল্লাহতায়ালা একফোঁটা অশ্রুর কারণে জাহান্নামের আগুনের সাগর নিভিয়ে দেন।’ (তাফসিরে কুরতুবী)
আমল নং-০৫
আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ ছিলেন অত্যন্ত দ্বীনদার-পরহেযগার, খুব বেশী ইবাদতগুজার। তিনি দিনে রোজা রাখতেন, রাতে তাহাজ্জুদ পড়তেন এবং প্রচুর কুরআন তেলাওয়াত করতেন। তিনি ছিলেন আল্লাহ্র ভয়ে কম্পিত ব্যক্তি। (একদিন সূরা ইয়াসিনের এ আয়াত-
وَامْتَازُوا الْيَوْمَ أَيُّهَا الْمُجْرِمُونَ
হে অপরাধীরা! আজ তোমরা আলাদা হয়ে যাও। সূরা ইয়াসিন-৫৯
পড়ে কাদতে কাদতে সারারাত কাটিয়ে দেন।) সূত্র: মুহাম্মদ আবু যাহরার ইমাম আবু হানীফা হায়াতুহু ওয়া আসরুহু আ-রাউহু ওয়া ফিক্হুহু
চোখের পানির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা:
চোখের পানি নিয়ে বিজ্ঞানী উইলিয়াম ফ্রের গবেষণা : চোখের পানি নিয়ে উইলিয়াম ফ্রে নামে একজন বিজ্ঞানী প্রায় ১৫ বছর গবেষণা করেছেন। গবেষণা শেষে তিনি বলেছেন, ‘চোখের পানি কোনো সাধারণ কিছু নয়। এটি পানি, শ্লেষ্মা, তেল, ইলেক্ট্রোলাইট-এর এক জটিল মিশ্রণ। এটি ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী, যা চোখকে ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে। এটি কর্নিয়াকে মসৃণ করে, যা পরিষ্কার দৃষ্টির জন্য অত্যাবশ্যকীয়। এটি কর্নিয়াকে যথেষ্ট আর্দ্র রাখে এবং অক্সিজেন সরবরাহ করে দেয়। এটি চোখের জন্য ওয়াইপার হিসেবে কাজ করে, যা চোখকে ধুয়ে ধুলোবালি থেকে পরিষ্কার করে। চোখের পানি যদি শুধুই পানি হতো, তাহলে তা ঘর্ষণের কারণে চোখ শুকিয়ে জ্বালাপোড়া করত। শীতকালে তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি হলে পানি শুকিয়ে জমে বরফ হয়ে যেত!
আবার চোখের পানি যদি শুধুই এক ধরনের তেল হতো, তাহলে তা চোখের ধুলাবালি পরিষ্কার না করে উল্টো আরো ঘোলা করে দিত। চোখের পানির মধ্যে প্রকৃতির লক্ষ উপাদান থেকে এমন বিশেষ কিছু উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে, যার এক বিশেষ মিশ্রণ একই সাথে পরিষ্কার, মসৃণ এবং জীবাণুমুক্ত করতে পারে এবং অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে। সূত্র: দৈনিক সোনালি নিউজ; আগস্ট ২৩, ২০২১
নিরীক্ষণ:
প্রিয় বন্ধুগণ! পবিত্র কুরআন- হাদিস ও আমাদের মহান পূর্বসূরীদের আমলের সাথে সাথে একটু আমাদের আমল যাচাই-বাছাই, ওজন ও নিরক্ষণ করি।
আল্লাহর ভয় ও মহব্বতে আজকে কি আমার চোখের পানি পড়েছে?
গত সপ্তাহে কি চোখের পানি পড়েছে?
গত একমাসে কি চোখের পানি পড়েছে?
বিগত এক বছরে কি চোখের পানি পড়েছে?
বিগত দশ বছরেও কি চোখের পানি পড়েছে?
হযরত আবু বকর রা. বলেন, মানুষের অন্তর শক্ত হলে চোখ অশ্রুহীন হয়ে যায় আর অন্তর শক্ত হয় অধিক পরিমাণে গোনাহ করার কারণে।
প্রিয় দোস্ত আমার হিসেব তো মিলায়? হজরত আবু বকর (রা.) কথাই তোমার-আমার জন্য প্রযোজ্য । তোমার অন্তর কি পাথরের চেয়েও শক্ত হয়ে গেল? এই যদি তোমার অবস্থা, তাহলে বল, তোমার এ করুণ অবস্থার জন্যই কান্না করা উচিত কিনা?
আবেদন/পরামর্শ:
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, আল্লাহ তায়ালা’র ভয়ে কান্না করা আমার নিকট এক হাজার দিরহাম সদকা করার চেয়েও অতি প্রিয়। হযরত মোহাম্মদ বিন মুনকাদির যখন ক্রন্দন করতেন , তখন চোখের পানি চেহারা ও দাড়িতে মুছতেন।তিনি বলতেন, আমি জানতে পেরেছি যে, যে জায়গায় চোখের পানি লাগবে সেখানে দোজখের আগুন স্পর্শ করবে না। কয়েকটি নিবেদন,
(১) ইচ্ছাকৃত কবিরা গোনাহ থেকে সম্পূর্ণ বেঁচে থাকুন। ভুলক্রমে হয়ে গেলে সময় না নিয়ে দ্রুত তাওবাহ করুন।
(২) প্রতিদিন একটি সময় নির্জনে ১০-২০ মিনিট খাছ মুনাজাত করুন।
(৩) অধিক পরিমাণ অপয়োজনীয় হাসি বর্জন করুন। কেননা,. এ জন্যই আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেছেন, ‘তোমরা অধিক পরিমাণে হাসাহাসি কর না। কেননা অধিক হাসি অন্তরের মৃত্যু ঘটায়। তাখরিজ: ইবনে মাজাহ-৪১৯৩
(৪) কান্না না আসলে কান্নার ভান করুন। যেমন,
عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ " ابْكُوا فَإِنْ لَمْ تَبْكُوا فَتَبَاكَوْا " .
সা’দ ইবনে আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা কান্নাকাটি করো, যদি কাঁদতে না পারো তবে কান্নার ভান করো বা কাঁদতে চেষ্টা করো। তাখরিজ: ইবনে মাজাহ-৪১৯৬
দেখুন একটি লোকের দুটি ছেলে একজন ছোট আরেকজন একটু বড়। যখন ছোট বাবুটি কিছু পাওয়ার জন্য কাঁদে, তখন তাকে পিতা-মাতা তা দেয়। কিন্তু বড়জন কাঁদতে একটু শরম পায় একটু কান্নার ভান করে, তবুও তাকে পিতা-মাতা আবদার পূর্ণ করে। যদিও সে পূরিপূর্ণ কাঁদে না।
(৫) পরীক্ষামূলক কয়েকদিন সমস্ত গুনাহ থেকে বেঁচে থাকুন, তারপর ইবাদতে-মুনাজতে মজা-স্বাদ না লাগলে এই অধমকে গালি দিন।
(৬) বিস্তারিত দেখুন কান্না সংক্রান্ত তিনটি কিতাব> মাওলানা রফিকুল ইসলাম রচিত, “প্রিয় নবির অশ্রু”; “সাহাবিদের কান্না”, “আওলিয়াদের কান্না” ।