আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৭২৯: ঘুষ কাকে বলে? এর ভয়াবহতা এবং কখন ঘুষ দেওয়া জায়েয?

No Comments

 












জিজ্ঞাসা-১২৭২৯: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। 

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহ। ঘুষের সংগা ও এর ভয়াবহতা সম্পর্কে কোরআন ও হাদীসের রেফারেন্সসহ জানতে চাই।

তারিখ:  ২১/০৮/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

মাওলানা   মাহবুব ঢাকা থেকে।


 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 


তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো


প্রশ্ন: ক। ঘুষের আভিধানিক অর্থ কী?

উত্তর: ক। , ঘুস, উপরি, নজরানা, নজর, উত্কোচ, উপহার, দান, ঘুষ, বকশিশ, প্রদত্ত বস্তু, সত্তগাত ইত্যাদি।


প্রশ্ন: খ। ঘুষের পারিভাষিক সংজ্ঞা কী?

উত্তর: খ। ঘুষ শব্দটি বাংলা, দেশি শব্দ। কোনো কাজে সাহায্য লাভের জন্য বা কার্যসিদ্ধির জন্য গোপনে দেওয়া পুরস্কার বা অর্থ, উত্কোচ। সূত্র: সংসদ বাংলা অভিধান


এ ব্যাপারে ‘আল মাউসূআহ আল ফিকহিয়া বা ফিকহ অভিধানে বলা হয়েছে,

الرشوة هي ما يدفعه الإنسان ليأخذ ما ليس من حقه ، أو ليتهرب بها من حق عليه

“মানুষ তার প্রাপ্য নয় এমন জিনিস গ্রহণ করা অথবা তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন থেকে দূরে সরে থাকার উদ্দেশ্যে যা কিছু প্রদান করে তাই ঘুষ।”

সূত্র: আল মাউসূআহ আল ফিকহিয়া-5/362


প্রশ্ন: গ। ঘুষের ভয়াবহতা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?

উত্তর: গ। ঘুষের ভয়াবহতা সম্পর্কে নিম্নে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর মতামত তুলে ধরা হলো: 


আয়াত নং -০১

﴿ فَوَيۡلٞ لِّلَّذِينَ يَكۡتُبُونَ ٱلۡكِتَٰبَ بِأَيۡدِيهِمۡ ثُمَّ يَقُولُونَ هَٰذَا مِنۡ عِندِ ٱللَّهِ لِيَشۡتَرُواْ بِهِۦ ثَمَنٗا قَلِيلٗاۖ فَوَيۡلٞ لَّهُم مِّمَّا كَتَبَتۡ أَيۡدِيهِمۡ وَوَيۡلٞ لَّهُم مِّمَّا يَكۡسِبُونَ ٧٩ ﴾ [البقرة: ٧٩]

সুতরাং দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে এবং তুচ্ছ মূল্য প্রাপ্তির (ঘুষ) জন্য বলে- এটি আল্লাহর নিকট হতে এসেছে। তাদের হাত যা রচনা করেছে তার জন্য শাস্তি তাদের এবং যা তরা উপার্জন করে তার জন্যও শাস্তি তাদের।” সূরা বাকারা-৭৯


আয়াত নং -০২

﴿ سَمَّٰعُونَ لِلۡكَذِبِ أَكَّٰلُونَ لِلسُّحۡتِ ﴾ [المائ‍دة: ٤٢]

“তারা মিথ্যা শ্রবণে অত্যন্ত আগ্রহশীল এবং অবৈধ (ঘুষ) ভক্ষণে অত্যন্ত আসক্ত।” সূরা মায়েদা-৪২


আয়াত নং -০৩

﴿ وَتَرَىٰ كَثِيرٗا مِّنۡهُمۡ يُسَٰرِعُونَ فِي ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِ وَأَكۡلِهِمُ ٱلسُّحۡتَۚ لَبِئۡسَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٦٢ ﴾ [المائ‍دة: ٦٢]

“হে নবী! আপনি (আহলে কিতাবদের) অনেককেই দেখবেন পাপে, সীমালঙ্ঘনে ও অবৈধ ভক্ষণে (ঘুষ খাওয়াতে) তৎপর। তারা যা করে নিশ্চয় তা নিকৃষ্ট।” সূরা মায়েদা-৬২


আয়াত নং -০৪

﴿ وَلَا تَأۡكُلُوٓاْ أَمۡوَٰلَكُم بَيۡنَكُم بِٱلۡبَٰطِلِ وَتُدۡلُواْ بِهَآ إِلَى ٱلۡحُكَّامِ لِتَأۡكُلُواْ فَرِيقٗا مِّنۡ أَمۡوَٰلِ ٱلنَّاسِ بِٱلۡإِثۡمِ وَأَنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ١٨٨ ﴾ [البقرة: ١٨٨]

“তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনেশুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকদের বা প্রশাসকদের কাছে পেশ করো না।” সূরা বাকারা-১৮৮


প্রশ্ন: ঘ। মাজলুম/নিরাপায় হয়ে ঘুষ দেওয়া কি জায়েজ আছে?

উত্তর: ঘ। হ্যাঁ, মাজলুম/নিরাপায় হয়ে ঘুষ দেওয়া কি জায়েজ আছে। অর্থাৎ মাজলুম ব্যক্তি যদি বৈধ কোনো পন্থায় নিজের হক উদ্ধার করার সক্ষমতা রাখে তাহলে সে তাই করবে। আর যদি বৈধ পদ্ধতিতে উদ্ধার করার সক্ষমতা না থাকে; তাহলে অর্থ প্রদানের মাধ্যমেও অধিকার রক্ষা করতে পারে। দলিল:


فقد ورد في الأثر أن ابن مسعود ـ رضي الله عنه: كان بالحبشة فرشا بدينارين، حتى خلي سبيله، وقال: إن الإثم على القابض دون الدافع.

ইবনে মাসঊদ রা. হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি হাবশা (ইথিওপিয়া) গিয়েছিলেন কিন্তু তাকে সেখানে আটকে দেয়া হয়। পরে তিনি দু দিনার প্রদান করলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ বিষয়ে তিনি বলেন,

“গ্রহণকারীর উপর গুনাহ বর্তাবে; প্রদানকারীর উপর নয়।” তাখরিজ: 

সুনান কুবরা-বায়হাকী, ২০৪৮২, শরহুস সুন্নাহ-ইমাম বাগাভী ১০/৮৮, তাফসীর কুরতুবী ৬/১৮৪


আল্লামা মোল্লা আলী কারী রহ. বলেছেন, 

وفي المرقاة شرح المشكاة: قيل الرشوة: ما يعطى لإبطال حق أو لإحقاق باطل، أما إذا أعطى ليتوصل به إلى حق أو ليدفع به عن نفسه فلا بأس به.

 ঘুষ হল যা দেওয়া হয় একটি হককে বাতিল বা একটি মিথ্যা /বাতিলকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। আর যদি ঘুষ দেওয়া হয় নিজের হক/ অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এবং জুলুমকে প্রতিহত করতে, তাহলে এমতাবস্থায় ঘুষ দেওয়াতে কোন দোষ নেই। সূত্র: মিরকাত শরহুল মিশকাত, ফিকহুল মুআআলাত, হিবা-রিশওয়াহ-১৩৮৮০৮ ( ফতোয়া নং)


সারকথা হলো, তবে মুমিন মুসলমানদের জন্য এই অনুমতির বিষয়টা একান্ত অপারগ পরিস্থিতিতে পালন করা উচিত। সূত্র: রদ্দুল মুহতার, খণ্ড-৯, পৃষ্ঠা-৬০৭, ফাতহুল ক্বাদীর,খণ্ড-৭,পৃষ্ঠা-২৫৫, বাহরুর রায়েক,খণ্ড-৬,পৃষ্ঠা-২৬২


 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক