জিজ্ঞাসা-১২৭৪০:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
আমার বিনীত অনুরোধ "ইসলামের আলোকে দেশপ্রেম ও সামরিক জীবন" বিষয়টি প্রদান করে আমাকে বিষয়টি সম্পর্কে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে সহযোগিতা করবেন। আল্লাহ তায়ালা আপনাকে ভালো রাখুন।
তারিখ: ৩০/০৮/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোহাঃ শামছুল হুদা আনছারী, চট্টগ্রাম থেকে।
জবাব:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
দেশপ্রেম (patriotism)
দেশপ্রেম একটি মহৎ গুণ। দেশের প্রতি ভালোবাসা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। যে মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম নেই, সে মানুষ হলেও কিন্তু প্রকৃত মানুষ নয়। প্রকৃত মানুষ তো সেই, যার স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা, আবেগ ও অনুভূতি রয়েছে। সর্বদাই দেশের কল্যাণা ভূমিকা রাখার চিন্তা-চেতনা রয়েছে।
দেশপ্রেম কাকে বলে: স্বদেশের আলো-বাতাস, ফল-ফুল, মাটি-পানি, প্রকৃতি-পরিবেশ, জাতি ও ভাষার প্রতি গভীর অনুরাগ, নিবিড় ভালোবাসা ও যথার্থ আনুগত্য, দেশের কল্যাণে/রক্ষার্থে নিজেকে উৎসর্গ করাকে দেশপ্রেম বলা হয়।
ইসলামের দৃষ্টিতে দেশপ্রেম:
মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা ইসলামি মূল্যবোধের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যার সমর্থনে কোরআন, হাদিস, আসার ও মুসলিম মনীষীদের জীবনে বহু বর্ণনা পাওয়া যায়। নিম্নে তার বর্ণনা দেওয়া হলো,
ক. মাতৃভূমির প্রতি নবিদের ভালোবাসা:
১. হজরতে ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম:
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَٰذَا الْبَلَدَ آمِنًا وَاجْنُبْنِي وَبَنِيَّ أَن نَّعْبُدَ الْأَصْنَامَ
যখন ইব্রাহীম বললেন, হে পালনকর্তা, এ শহরকে শান্তিময় করে দিন এবং আমাকে ও আমার সন্তান সন্ততিকে মূর্তি পূজা থেকে দূরে রাখুন। সূরা ইব্রাহিম-৩৫
২. হজরত শোয়ায়েব আলাইহিস সালাম: পবিত্র কুরআনে এ বিষয়ে ইঙ্গিত এসেছে-
قَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا مِن قَوْمِهِ لَنُخْرِجَنَّكَ يَا شُعَيْبُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَكَ مِن قَرْيَتِنَا أَوْ لَتَعُودُنَّ فِي مِلَّتِنَا قَالَ أَوَلَوْ كُنَّا كَارِهِينَ
অর্থ: তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক সর্দাররা বলল, হে শোয়ায়েব, আমরা অবশ্যই তোমাকে এবং তোমার সাথে বিশ্বাস স্থাপনকারীদেরকে শহর থেকে বের করে দেব অথবা তোমরা আমাদের ধর্মে প্রত্যাবর্তন করবে। শোয়ায়েব বলল, আমরা অপছন্দ করলেও কি? সূরা আরাফ-৮৬
ব্যাখ্যা: এভাবে একাধিক নবীকে শাস্তি হিসেবে দেশ থেকে বহিষ্কার করার হুমকি দিতে দেখা যায়। যা থেকে প্রমাণিত হয় নবী-রাসুল (আ.) দেশকে ভালোবাসতেন।
হজরত মুসা আলাইহিস সালাম:
فَلَمَّا قَضَىٰ مُوسَى الْأَجَلَ وَسَارَ بِأَهْلِهِ آنَسَ مِن جَانِبِ الطُّورِ نَارًا قَالَ لِأَهْلِهِ امْكُثُوا إِنِّي آنَسْتُ نَارًا لَّعَلِّي آتِيكُم مِّنْهَا بِخَبَرٍ أَوْ جَذْوَةٍ مِّنَ النَّارِ لَعَلَّكُمْ تَصْطَلُونَ
অতঃপর মূসা (আঃ) যখন সেই মেয়াদ পূর্ণ করল এবং সপরিবারে যাত্রা করল, তখন সে তুর পর্বতের দিক থেকে আগুন দেখতে পেল। সূরা কসাস-২৯
তাফসির: আর হজরত মুসা আ. স্বীয় পরিবারসহ মিসরের দিকে যাত্রা করলেন। দীর্ঘকাল জন্মভূমি ছেড়ে মাদাইয়ানে অবস্থান করার পর তাঁর অন্তর মাতৃভূমি মিসরের প্রতি প্রবল আকর্ষণ হল। তিনি তার গোত্রীয় লোকজন ও আত্মীয় স্বজনের সাক্ষাতের জন্য নিজ পরিবার ও বকরী নিয়ে এমনভাবে যাত্রা করলেন, যেন ফেরআউন ও তার লোকজন জানতে না পারে। সূত্র: তাফসিরে ইবনে কাসির- ৮ম খন্ড. ৪৬১ পৃ.
৩. হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম:
قَالَ لَا تَثْرِيبَ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ يَغْفِرُ اللَّهُ لَكُمْ وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ
ইউসুফ আ. বললেন, আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন। তিনি সব মেহেরবানদের চাইতে অধিক মেহেরবান। সূরা ইউসুফ -৯২
৪. মহানবি হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম:
ক. রাসুলকে জন্মভূমিতে ফেরানোর অঙ্গীকার : মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের সময় মহানবী (ﷺ) যখন গারে সুর থেকে বের হয়ে মদিনার পথ ধরেন, তখন বারবার অশ্রুসিক্ত হয়ে মক্কার দিকে তাকাচ্ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর হৃদয়ের ব্যাকুলতা দেখে তাঁকে মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করেন।
إِنَّ الَّذِي فَرَضَ عَلَيْكَ الْقُرْآنَ لَرَادُّكَ إِلَىٰ مَعَادٍ
যিনি আপনার প্রতি কোরআনের বিধান পাঠিয়েছেন, তিনি অবশ্যই আপনাকে স্বদেশে ফিরিয়ে আনবেন। সূরা কসাস-৮৫
খ. মাতৃভূমির জন্য রাসুলের কান্না : মক্কা আল-মুকাররামাকে দুঃখিত এবং আকাঙ্ক্ষার সাথে সম্বোধন করে এবং তিনি বলেছেন:
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِمَكَّةَ : " " مَا أَطْيَبَكِ مِنْ بَلَدٍ ، وَأَحَبَّكِ إِلَيَّ ، وَلَوْلَا أَنَّ قَوْمِي أَخْرَجُونِي مِنْكِ مَا سَكَنْتُ غَيْرَكِ " "
অর্থ: কি ভাল দেশ তুমি ! আছে, এবং আমি তোমাকে আমার কাছে যা ভালবাসি, এবং যদি তোমার লোকেরা আমাকে তোমার থেকে বহিষ্কার না করত, তবে আমি আর কাউকে বসতি করতাম না। তাখরিজ: তিরমিজি-৩৬২৯; সহিহ ইবনে হিব্বান-৩৭০৯; তাবারানি-১০৬৩৩
মহানবী (ﷺ) মাতৃভূমিতে শত অত্যাচার ও অবিচারের শিকার হওয়ার পরও দেশত্যাগের সময় অশ্রু বিসর্জন করেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! তুমি (মক্কা) আল্লাহর গোটা জমিনের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং দুনিয়ার সব ভূমির মধ্যে তুমি আমার কাছে সর্বাধিক প্রিয়। আল্লাহর শপথ! তোমার থেকে আমাকে উচ্ছেদ করা না হলে আমি চলে যেতাম না। ’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩১০৮)
গ. নির্বাসনকারীদের প্রতি অভিশাপ : মহানবী (ﷺ) মক্কার মুশরিক নেতাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে বদদোয়া করেন এবং তার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন দেশান্তরকে। মহানবী (ﷺ )বলেন,
حَدَّثَنَا عُبَيْدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ ، حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ ، عَنْ هِشَامٍ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ : لَمَّا قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ وُعِكَ أَبُو بَكْرٍ وَبِلَالٌ، فَكَانَ أَبُو بَكْرٍ إِذَا أَخَذَتْهُ الْحُمَّى يَقُولُ :
كُلُّ امْرِئٍ مُصَبَّحٌ فِي أَهْلِهِ وَالْمَوْتُ أَدْنَى مِنْ شِرَاكِ نَعْلِهِ
وَكَانَ بِلَالٌ إِذَا أُقْلِعَ عَنْهُ الْحُمَّى يَرْفَعُ عَقِيرَتَهُ يَقُولُ :
أَلَا لَيْتَ شِعْرِي هَلْ أَبِيتَنَّ لَيْلَةً بِوَادٍ وَحَوْلِي إِذْخِرٌ وَجَلِيلُ
وَهَلْ أَرِدَنْ يَوْمًا مِيَاهَ مَجَنَّةٍ وَهَلْ يَبْدُوَنْ لِي شَامَةٌ وَطَفِيلُ
قَالَ : " اللَّهُمَّ الْعَنْ شَيْبَةَ بْنَ رَبِيعَةَ وَعُتْبَةَ بْنَ رَبِيعَةَ وَأُمَيَّةَ بْنَ خَلَفٍ ؛ كَمَا أَخْرَجُونَا مِنْ أَرْضِنَا إِلَى أَرْضِ الْوَبَاءِ ". ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " اللَّهُمَّ حَبِّبْ إِلَيْنَا الْمَدِينَةَ كَحُبِّنَا مَكَّةَ أَوْ أَشَدَّ، اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي صَاعِنَا، وَفِي مُدِّنَا، وَصَحِّحْهَا لَنَا، وَانْقُلْ حُمَّاهَا إِلَى الْجُحْفَةِ ". قَالَتْ : وَقَدِمْنَا الْمَدِينَةَ وَهِيَ أَوْبَأُ أَرْضِ اللَّهِ. قَالَتْ : فَكَانَ بُطْحَانُ يَجْرِي نَجْلًا . تَعْنِي مَاءً آجِنًا
‘হে আল্লাহ! আপনি শায়বা ইবনু রাবিআ, উতবা ইবনু রাবিআ এবং উমাইয়া ইবনু খালফের প্রতি অভিশাপ বর্ষণ করুন; যেমনিভাবে তারা আমাদের মাতৃভূমি হতে বের করে মহামারির দেশে ঠেলে দিয়েছে। তাখরিজ: সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৮৯
ঘ. স্বদেশকে ভোলেননি মহানবী (ﷺ ): মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করতে বাধ্য হলেও মাতৃভূমিকে কখনো ভোলেননি তিনি। ইবনে শিহাব থেকে বর্ণিত, মক্কা থেকে উসাইল গিফারি (রা.) মদিনায় এলে তিনি মক্কার অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান। তিনি মক্কার অধঃপতিত অবস্থার বর্ণনা শুরু করলে মহানবী (ﷺ) তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, আমাদের ব্যথিত কোরো না উসাইল এবং তাঁর দুই চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছিল। (জামিউল আসার, পৃষ্ঠা ২২১২)
ঙ. মাতৃভূমির প্রতিটি ইঞ্চির প্রতি ভালোবাসা : মহানবী (ﷺ ) মক্কার পাহাড়-পর্বত ও প্রকৃতির সঙ্গেও অন্তপ্রাণ ভালোবাসা পোষণ করতেন। তিনি বলেছেন,
وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ أَبِي بُكَيْرٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ طَهْمَانَ، حَدَّثَنِي سِمَاكُ بْنُ حَرْبٍ، عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنِّي لأَعْرِفُ حَجَرًا بِمَكَّةَ كَانَ يُسَلِّمُ عَلَىَّ قَبْلَ أَنْ أُبْعَثَ إِنِّي لأَعْرِفُهُ الآنَ
‘নিশ্চয়ই আমি মক্কার একটি পাথরকে চিনি, যেটি নবুয়ত লাভের আগেই আমাকে সালাম দিত। আমি সেটাকে এখনো চিনি। তাখরিজ: মুসলিম-২২৭৭
চ. মদিনার প্রতি ভালবাসা: মানুষ যে এলাকায়/শহরে বসবাস করে, তাকেও সে ভালবাসে এবং তার কল্যাণ কামনা করে। নিম্নের হাদিস শরিফ দ্বারা মদিনার কল্যাণকামিতা সুস্পষ্ট ফুটে ওঠে।
اللهم حبِّب إلينا المدينةَ كحُبِّنا مكة أو أشد
’আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, এরপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম এবং তাঁকে সংবাদ দিলাম। তখন তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! আমাদের কাছে মদিনাকে প্রিয় করে দাও, যেভাবে আমাদের কাছে প্রিয় ছিল মক্কা এবং মদিনা্কে স্বাস্থ্যকর বানিয়ে দাও। আর মদিনার মুদ্দ ও সা’তে বরকত দাও এবং মদিনার জ্বরকে স্থানান্তরিত কর ’জুহ্ফা’ এলাকায়। [১৮৮৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৬২)
মহানবী (ﷺ) বলেন, ‘লাইলাতুল কদরের চেয়ে আরো একটি পুণ্যময় রাতের খবর তোমাদের দেব কি?’ সাহাবারা জবাব দেন, ‘বলুন ইয়া রাসুলাল্লাহ!’ তিনি (ﷺ) বললেল, ‘কোনো সৈনিক রাতে এমন কোনো কঠিন ভীতিপ্রদ চৌকিতে দাঁড়িয়ে সীমান্ত পাহারা দিচ্ছে; যে কোনো মুহূর্তে শত্রু উদ্ধত অস্ত্রের আঘাতে তার বক্ষ বিদীর্ণ হতে পারে এবং জীবনে আর স্ত্রী-সন্তানের মুখ দেখার সুযোগ নাও আসতে পারে, সে রজনী লাইলাতুল কদরের চেয়েও বেশি বরকতপূর্ণ।’
اللهم حبِّب إلينا المدينةَ كحُبِّنا مكة أو أشد"(رواه البخاري)
৫. মাতৃভমির প্রতি সাহাবায়ে কেরামের ভালবাসা: মক্কার সাহাবা কেরাম দ্বীনের খাতিরে মাতৃভূমি ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। যেমন, আবিসিনিয়া, মদিনা ইত্যাদি। মাতৃভূমির বিরহে নানান কথা মনের অজান্তে বের বের হয়ে আসে। যেমন,
، عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ أَنَّهَا قَالَتْ لَمَّا قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وُعِكَ أَبُو بَكْرٍ وَبِلاَلٌ قَالَتْ فَدَخَلْتُ عَلَيْهِمَا فَقُلْتُ يَا أَبَتِ كَيْفَ تَجِدُكَ وَيَا بِلاَلُ كَيْفَ تَجِدُكَ قَالَتْ وَكَانَ أَبُو بَكْرٍ إِذَا أَخَذَتْهُ الْحُمَّى يَقُولُ كُلُّ امْرِئٍ مُصَبَّحٌ فِي أَهْلِهِ وَالْمَوْتُ أَدْنَى مِنْ شِرَاكِ نَعْلِهِ وَكَانَ بِلاَلٌ إِذَا أُقْلِعَ عَنْهُ يَرْفَعُ عَقِيرَتَهُ فَيَقُولُ أَلاَ لَيْتَ شِعْرِي هَلْ أَبِيتَنَّ لَيْلَةً بِوَادٍ وَحَوْلِي إِذْخِرٌ وَجَلِيلُ وَهَلْ أَرِدَنْ يَوْمًا مِيَاهَ مِجَنَّةٍ وَهَلْ تَبْدُوَنْ لِي شَامَةٌ وَطَفِيلُ قَالَ قَالَتْ عَائِشَةُ فَجِئْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ " اللَّهُمَّ حَبِّبْ إِلَيْنَا الْمَدِينَةَ كَحُبِّنَا مَكَّةَ أَوْ أَشَدَّ وَصَحِّحْهَا وَبَارِكْ لَنَا فِي صَاعِهَا وَمُدِّهَا وَانْقُلْ حُمَّاهَا فَاجْعَلْهَا بِالْجُحْفَةِ ".
অর্থ: আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নবী (ﷺ) (মদিনা) আসলেন, তখন আবূ বকর (রাঃ) ও বিলাল (রাঃ) জ্বরে আক্রান্ত হলেন। তিনি বলেনঃ আমি তাঁদের নিকট বললামঃ আব্বাজান, আপনি কেমন অনুভব করছেন? হে বিলাল! আপনি কেমন অনুভব করছেন? তিনি বলেনঃ আবূ বকর (রাঃ) যখন জ্বরে আক্রান্ত হতেন তখন তিনি আবৃত্তি করতেন,
’’সব মানুষ সুপ্রভাত ভোগ করে আপন পরিবার পরিজন নিয়ে,
আর মৃত্যু অপেক্ষা করে তার জুতার ফিতার চেয়েও নিকটে।’’
আর বিলাল -এর নিয়ম ছিল যখন তাঁর জ্বর ছেড়ে যেত, তিনি তখন উচ্চ আওয়াজে বলতেনঃ
হায়! আমি যদি পেতাম একটি রাত অতিবাহিত করার সুযোগ
এমন উপত্যকায় যেখানে আমার পাশে আছে ইয্খির ও জালীল ঘাস।
যদি আমার অবতরণ হত কোন দিন মাযিন্না এলাকার কূপের কাছে,
যদি আমার চোখে ভেসে উঠত শামা ও তাফীল।
’আয়েশা (রাঃ) বলেন, এরপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম এবং তাঁকে সংবাদ দিলাম। তখন তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! আমাদের কাছে মদিনাকে প্রিয় করে দাও, যেভাবে আমাদের কাছে প্রিয় ছিল মক্কা এবং মদিনা্কে স্বাস্থ্যকর বানিয়ে দাও। আর মদিনার মুদ্দ ও সাতে বরকত দাও এবং মদিনার জ্বরকে স্থানান্তরিত কর ’জুহ্ফা’ এলাকায়। [১৮৮৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৬২)
، عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ أَنَّهَا قَالَتْ لَمَّا قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وُعِكَ أَبُو بَكْرٍ وَبِلاَلٌ قَالَتْ فَدَخَلْتُ عَلَيْهِمَا فَقُلْتُ يَا أَبَتِ كَيْفَ تَجِدُكَ وَيَا بِلاَلُ كَيْفَ تَجِدُكَ قَالَتْ وَكَانَ أَبُو بَكْرٍ إِذَا أَخَذَتْهُ الْحُمَّى يَقُولُ كُلُّ امْرِئٍ مُصَبَّحٌ فِي أَهْلِهِ وَالْمَوْتُ أَدْنَى مِنْ شِرَاكِ نَعْلِهِ وَكَانَ بِلاَلٌ إِذَا أُقْلِعَ عَنْهُ يَرْفَعُ عَقِيرَتَهُ فَيَقُولُ أَلاَ لَيْتَ شِعْرِي هَلْ أَبِيتَنَّ لَيْلَةً بِوَادٍ وَحَوْلِي إِذْخِرٌ وَجَلِيلُ وَهَلْ أَرِدَنْ يَوْمًا مِيَاهَ مِجَنَّةٍ وَهَلْ تَبْدُوَنْ لِي شَامَةٌ وَطَفِيلُ قَالَ قَالَتْ عَائِشَةُ فَجِئْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ " اللَّهُمَّ حَبِّبْ إِلَيْنَا الْمَدِينَةَ كَحُبِّنَا مَكَّةَ أَوْ أَشَدَّ وَصَحِّحْهَا وَبَارِكْ لَنَا فِي صَاعِهَا وَمُدِّهَا وَانْقُلْ حُمَّاهَا فَاجْعَلْهَا بِالْجُحْفَةِ ".
নোট: বিস্তারিত দেখুন "সামরিক জীবনে দৈনন্দিন কার্যকালাপে ইসলাম।" লেখক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক