জিজ্ঞাসা-১২৭১৫:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
গত ২০ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে বিবাহ হয়। বিয়ের পর স্বামী জানতে পারেন তার স্ত্রীর অন্য ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে এবং তার স্ত্রীকে অনেক বুঝানোর পরেও মেয়েটি ছেলের কাছে তালাক চান। পরবর্তীতে বিয়ের ২ মাস পর ছেলে মেয়ে উভয়েই কাজী অফিসে যায় এবং মেয়ে তার স্বামীকে তালাকের প্রথম নোটিশ দেয় এবং ছেলে নোটিশ গ্রহণ করে কিন্তু মৌখিকভাবে কোন তালাক দেয়নি। নোটিশ দেয়ার ৩ দিন পর অর্থাৎ ২০ জুন ২০২৩ মেয়েটি বাসা ছেড়ে চলে যায় এবং ২১ জুন ২০২৩ তার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে ২৫-২৭ জুলাই এর দিকে ঐ ছেলের সাথে মিউচুয়াল তালাক দিয়ে নিজের বাসায় চলে আসে এবং প্রথম স্বামীর সাথে পুনরায় সংসার করতে চায়।
জিজ্ঞাসা:
১। শরীয়ত অনুযায়ী প্রথম স্বামীর সাথে তালাক হয়েছে কিনা?
২। তালাক না হয়ে থাকলে ২য় স্বামী গ্রহণ করা শরীয়ত সম্মত হয়েছে কিনা?
৩। পুনরায় ১ম স্বামীর সাথে সংসার করতে পারবে কিনা?
কুরআন সুন্নাহর আলোকে বিস্তারিত জানতে চায়।
তারিখ: ০৯/০৮/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
জনাব আব্দুল মতিন, ঢাকা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
ইসলামি শরিয়াহ স্বাভাবিক অবস্থায় নারীদেরকে তালাক দেওয়ার অনুমতি দেয়নি। তালাকের অধিকার একমাত্র স্বামীর। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে স্ত্রী নিজের নফসের উপর তালাক দিতে পারবে।
দলিল:
ﻓَﻄَﻠِّﻘُﻮﻫُﻦَّ ﻟِﻌِﺪَّﺗِﻬِﻦَّ ﻭَﺃَﺣْﺼُﻮﺍ ﺍﻟْﻌِﺪَّﺓَ
ﻭَﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺭَﺑَّﻜُﻢْ
“তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ো ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং ইদ্দত গণনা করো। তোমরা তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করো।….” সূরা তালাক -০১
আপনার প্রশ্নের আলোকে তিন ভাগে উত্তর দেওয়া হবে, ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন: ১। শরীয়ত অনুযায়ী প্রথম স্বামীর সাথে তালাক হয়েছে কিনা?
উত্তর: ১। প্রচলিত বাংলাদেশ প্রচলিত মুসলিম পারিবারিক আইন-১৯৬১ নিকাহ ও তালাক নামার ১৮ নং কলামে একটি ধারা রয়েছে। অর্থাৎ স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার অধিকার।
আপনার প্রশ্ন আলোকে স্বামী যদি সজ্ঞানে কাবিন নামার ১৮ নম্বর কলমে স্বাক্ষর করে থাকেন অর্থাৎ স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার অনুমতি প্রদান করে থাকেন, তাহলে স্ত্রী ডিভোর্স বা তালাক দিলে তালাক পতিত হবে।
আর যদি স্বামী ১৮ নম্বর কলামে সম্মতি না দেন, তাহলে স্ত্রী এক হাজার তালাক দিলেও তার তালাক পতিত হবে না।
প্রশ্ন: ২। তালাক না হয়ে থাকলে ২য় স্বামী গ্রহণ করা শরীয়ত সম্মত হয়েছে কিনা?
উত্তর: ২। তালাক না হয়ে থাকলে, ২য় স্বামী গ্রহণ করা শরীয়ত সম্মত হয়নি। স্ত্রীর কবিরা গুনাহ হয়েছে। তাই দ্রুত খাঁটি দিলে তওবা করতে হবে।
প্রশ্ন: ৩। পুনরায় ১ম স্বামীর সাথে সংসার করতে পারবে কিনা?
উত্তর: ৩। হ্যাঁ পারবে, দুটি সুরতে।
প্রথমত: ১ নং উত্তর অনুসারে যদি তালাক না হয়ে থাকে, তাহলে নতুন করে বিবাহ পড়ানোর প্রয়োজন নেই। সরাসরি প্রথম স্বামীর সাথে সংসার করতে পারবে।
দ্বিতীয়ত: যদি প্রথম স্বামীকে তালাক সঠিক হয়, তাহলে দ্বিতীয় স্বামীকে বিবাহ শুদ্ধ হবে।
আপনার প্রশ্নের আলোকে ঐ নারীই আবার দ্বিতীয় স্বামীকে তালাক দিয়েছে, এখন তার তালাক কার্যকর না হলে, সে এখনও দ্বিতীয় স্বামীর স্ত্রী রয়েছে। প্রথম স্বামীর সাথে বিবাহ শুদ্ধ হবে না।
দ্বিতীয় স্বামী থেকে তালাক নিয়ে তিন মাস পর প্রথম স্বামীর সাথে বিবাহ আবদ্ধ হতে পারবে। দলিল:
وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ ثَلَاثَةَ قُرُوءٍ ۚ [٢:٢٢٨]
আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েয পর্যন্ত। সূরা বাকারা-২২৮
সারকথা হলো, স্ত্রী কর্তৃক প্রথম স্বামীকে তালাক যদি না হয়ে থাকে, তাহলে পুনরায় প্রথম স্বামীর কাছে ফিরে আসতে বাধা নেই।
আর যদি তালাক হয়ে থাকে, তাহলে পুনরায় প্রথম স্বামীর কাছে ফিরে আসতে জটিলতা আসে, তা এখানে বোধগম্য না হলে, কোন মুফতির কাছ থেকে জেনে নিবেন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক