আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

আমল ও দুআ-১৩: ক্রোধ বা রাগ দমনের জন্যে এই দু’আ পড়বে।

No Comments












ক্রোধ বা রাগ দমনের জন্যে এই দু’আ পড়বে


اَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ

আ‘ঊযুবিল্লাাহি মিনাশ শাইতাানির রজীম।

অর্থ: আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।


(বুখারী হাঃ ৬০৪৮, মুসলিম হাঃ ২৬১০)


হাদিস নং -০১

মাহমূহ ইবন গায়লান (রহঃ)... মুআয ইবন জাবাল(রা) তেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মুখে দুই ব্যক্তি পরস্পর গালিগালাজ করছিল। এমনকি একজনের চেহারায় ত্রেুাধের আভাস ফুঠে উঠে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি এমন একটা কালিমা জানি যদি সে পাঠ করে তবে তার ত্রেুাধ প্রশমিত হয়ে যাবে । তা হলঃ

أَعُوذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

সুনান তিরমিজি, হাদীস নং-৩৪৫২


হাদিস নং -০২

6048 - حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ حَفْصٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، قَالَ: حَدَّثَنِي عَدِيُّ بْنُ ثَابِتٍ، قَالَ: سَمِعْتُ سُلَيْمَانَ بْنَ صُرَدٍ، رَجُلًا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ [ص:16] قَالَ: اسْتَبَّ رَجُلاَنِ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَغَضِبَ أَحَدُهُمَا، فَاشْتَدَّ غَضَبُهُ حَتَّى انْتَفَخَ وَجْهُهُ وَتَغَيَّرَ: فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي لَأَعْلَمُ كَلِمَةً، لَوْ قَالَهَا لَذَهَبَ عَنْهُ الَّذِي يَجِدُ» فَانْطَلَقَ إِلَيْهِ الرَّجُلُ فَأَخْبَرَهُ بِقَوْلِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ: «تَعَوَّذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ» فَقَالَ: أَتُرَى بِي بَأْسٌ، أَمَجْنُونٌ أَنَا، اذْهَب

ওমর ইবনে হাফস (রাহঃ) ......... সুলাইমান ইবনে সূরাদ (রাযিঃ) নামক নবী (ﷺ) এর জনৈক সাহাবী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ দু’জন লোক নবী (ﷺ) এর সামনে একে অন্যকে গালি দিচ্ছিল। তাদের একজন এত ক্রুদ্ধ হয়েছিল যে, তার চেহারা ফুলে বিগড়ে গিয়েছিল। তখন নবী (ﷺ) বললেনঃ আমি অবশ্যই একটিই কালেমা জানি। যদি সে ঐ কালেমাটি পড়ত, তা হলে তার ক্রোধ চলে যেত। তখন এক ব্যক্তি তার নিকট গিয়ে নবী (ﷺ) এর ঐ কথাটি তাকে জানাল। আর বলল যে, তুমি শয়তান থেকে পানাহ চাও। তখন সে বললঃ আমার মধ্যে কি কোন রোগ দেখা যাচ্ছে? আমি কি পাগল? তুমি চলে যাও। তাখরিজ: বুখারি -৬০৪৮


হাদীসের ব্যখ্যা:

হাদীছে দুই ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে তারা পরস্পর গালাগালি করছিল, তাদের নাম সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। প্রশ্ন হতে পারে, সাহাবী হয়েও তাঁরা এরকম অসমীচীন কাজ কেন করছিলেন? উত্তর হল, হতে পারে তাঁরা নওমুসলিম ছিলেন ও ইসলামী আদব-কায়দা তাঁরা পুরোপুরি শিখে উঠেননি। হঠাৎ করেই জীবনে আমূল পরিবর্তন হয়ে যাবে, এমনটা সকলের ক্ষেত্রে আশা করা যায় না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্যের বদৌলতে রাতারাতি পরিবর্তন অধিকাংশের জীবনেই ঘটেছিল। তবে স্বভাবগত কাঠিন্যের কারণে কারও কারও পরিবর্তনে কিছুটা সময়ও লেগেছিল, বিশেষত যারা বেদুঈন সাহাবী ছিলেন। কিছুটা সময় লাগলেও একপর্যায়ে তাদের জীবনে যে পরিবর্তন আসে, সে কারণে নিঃসন্দেহে তাঁরা কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত মানুষের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে আছেন। তাঁদের আরও একটা বৈশিষ্ট্য হল প্রথমদিকে কারও কারও দ্বারা ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটে গেলেও সতর্ক করার পর তাওবা করতে ও নিজেদের সংশোধনে মনোযোগী হতে বিলম্ব করতেন না।


যাহোক যে দু'জনের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হচ্ছিল, তাদের একজনের ক্রোধের মাত্রা ছিল খুব বেশি। রাগে চেহারা লাল হয়ে গিয়েছিল এবং গলার রগ ফুলে উঠেছিল। অতিরিক্ত রাগের ক্ষেত্রে অনেকেরই এমন হতে দেখা যায়। এরূপ রাগে মানুষ হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। তখন এমন এমন কাণ্ড করে বসে, যা দ্বারা অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়। সেরকম ক্ষতিকর কাজ থেকে বাঁচার লক্ষ্যে আগেই রাগ সংবরণ করে ফেলা চাই। এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা সংবরণের উপায় শিক্ষা দিয়েছেন। তা হচ্ছে أعوذ بالله من الشيطان বলা।

এর অর্থ 'আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করছি। 

আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করার উপদেশ দেওয়া হয়েছে এ কারণে যে, অন্তরে ক্রোধ সঞ্চারে শয়তানের বিশেষ ভূমিকা থাকে। ক্রুদ্ধ অবস্থায় হিতাহিত জ্ঞান লোপ পাওয়ার কারণে শয়তান তাকে দিয়ে তার কাঙ্ক্ষিত সব কাজ করিয়ে নিতে পারে। তাই শয়তান ক্রোধ সঞ্চারে উস্কানি দেয় এবং তা যাতে বাড়তে থাকে সেই চেষ্টা চালায়। ‘আউযুবিল্লাহ’ পাঠ বা আল্লাহর আশ্রয়গ্রহণ এমনই এক অস্ত্র, যা ধারণ করলে শয়তান পালাতে বাধ্য হয় এবং তার প্রভাব নষ্ট হয়ে যায়।


অপর এক হাদীছে রাগ নিবারণের জন্য ওযু করতে বলা হয়েছে। তার তাৎপর্য এই যে, শয়তান আগুনের সৃষ্টি। তার কারসাজিতেই ব্যক্তির অন্তরে ক্রোধের আগুন জ্বলে ওঠে। ওযূ করলে সে আগুনে পানি ঢালা হয়। ফলে রাগ নিভে যায়। তাছাড়া ওযূ করার দ্বারা ক্রোধের বিষয় থেকে ব্যক্তির সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়, যেহেতু ওযূ করতে কিছুটা সময় খরচ হয় এবং আলাদা আলাদাভাবে একেকটি অঙ্গ ধোওয়ার প্রতি মনোযোগ দিতে হয়। ততক্ষণে রাগ প্রশমিত হয়ে যায়। এছাড়াও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাগের সময় দাঁড়ানো থাকলে বসে পড়। বসা থাকলে শুয়ে পড়। তাতেও রাগ না পড়লে ওযূ করে দু' রাক'আত নামায পড়। এসব ব্যবস্থা অবলম্বনের পর নিতান্ত হতভাগা ছাড়া আর কারও রাগ বাকি থাকতে পারে না।


রাগ দমনের জন্য নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতকিছু শিক্ষা এজন্যই দিয়েছেন যে, পূর্বে যেমনটা বলা হয়েছে ক্রুদ্ধ ব্যক্তি কাণ্ডজ্ঞান শূন্য হয়ে যে-কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করে ফেলতে পারে, যার প্রতিকার সারা জীবনেও সম্ভব হয় না। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে হাদীছের শিক্ষা অনুযায়ী আমল করে ক্রোধ নিয়ন্ত্রণের তাওফীক দান করুন- আমীন।


হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ 


ক. এ হাদীছেও রাগে ধৈর্যধারণের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। 


খ. রাগে যেহেতু শয়তানের ভূমিকা থাকে, তাই রাগ উঠলে ‘আউযুবিল্লাহ’ পড়া উচিত।


গ. ওযূ করাও রাগ নিবারণের পক্ষে সহায়ক।


ঘ. এ হাদীছ দ্বারা ইসলামী শিক্ষার পূর্ণাঙ্গতা উপলব্ধি করা যায়। রাগ প্রশমিত করার জন্যও ইসলাম কী কার্যকরী শিক্ষা দান করেছে! তাখরিজ: বুখারি -৬০৪৮