আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -২৮৬: দ্বিতীয় বিবাহের জন্য প্রথম স্ত্রীর অনুমতি প্রয়োজন আছে কি?

No Comments

 











জিজ্ঞাসা:২৮৬:

Assalamualaikum wa Rahmatullah. 
জনৈক ভদ্রলোক তাঁর স্ত্রীর প্রচন্ড দূর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে দ্বিতীয় বিবাহ করে দ্বিতীয় বিবির সাথেই বসবাস করেন। প্রথম স্ত্রীর ভরণপোষণের সকল ব্যয় নির্বাহ করেন তবে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক নেই স্ত্রীর আপত্তির কারণে । স্ত্রীর শর্ত যে দ্বিতীয়া কে  তালাক না দিলে তিনি তাকে স্পর্শ করতে দেবেন না। প্রশ্ন হলো এমতাবস্থায়  এহেন জটিলতার জন্য স্বামীর পক্ষে ইনসাফ  বজায় রাখা সম্ভব না হওয়ায় তিনি কি গুনাহগার হবেন?


মাওলানা নুরুল আমিন দিনাজপুর থেকে---


জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ।  আপনার প্রশ্নকে সহজ ভাবে বোঝার জন্য কয়েকটি ভাগে ভাগ করছি। আল্লাহই একমাত্র তাওফিক দাতা।

প্রশ্ন:  ক। দ্বিতীয় বিবাহ করতে হলে কি প্রথম স্ত্রীর অনুমতি প্রয়োজন?

উত্তর: ক।  ইসলামী শরীয়তে দ্বিতীয় বা একাধিক বিবাহ করতে প্রথম স্ত্রীর অনুমতির প্রয়োজন নেই। দলিল:

فَانكِحُوا مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً [٤:٣]

সেসব মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। সূরা নিসা-০৩

তবে জরুরি না হলেও দাম্পত্য জীবনে সুখময় করতে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নেওয়া উচিত। দলিল:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: “أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خلقا، وخياركم خياركم لنسائهم”

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, মুমিনদের মধ্যে পূর্ণতর মুমিন সেই ব্যক্তি, যার আচার আচারণ উত্তম। আর তোমাদের মাঝে উত্তম সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীদের কাছে উত্তম। সহীহ ইবনে হিব্বান-৪১৭৬

সুখময় দাম্পত্য জীবনের জন্য স্ত্রীকে খুশি রাখা জরুরি। হাদিস থেকে বোঝা যায় যে স্ত্রীর অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন যাতে পরবর্তীতে ঝামেলা না হয়।


দ্বিতীয় কথা হলো, বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে,
মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১-এর ৬ ধারামতে, দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে সালিশি পরিষদের কাছে অনুমতি না নিলে বিয়ে নিবন্ধন হবে না। আর তাই প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে অবৈধ বলে গণ্য হবে। এ অবস্থায় প্রতিকার পেতে আপনি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দণ্ডবিধি আইন-১৮৬০-এর ৪৯৪-এর বিধানমতে মামলা করতে পারেন।

প্রশ্ন: খ। একাধিক বিবাহের ক্ষেত্রে শর্ত কি?

উত্তর: খ।  একাধিক বিবাহের ক্ষেত্রে শর্ত হলো স্ত্রীদের মধ্য সমতা বিধান করতে হবে। সেটা ভরণ-পোষণ, বাসস্থান কাপড়-চোপড়,সহবাস সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত।

মহান আল্লাহ তাআলা স্ত্রীদের মধ্য সমতা বিধান না করতে পারলে একজনকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে বলেছেন। যেমন, 

আয়াত নং-০১

فَانكِحُوا مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً [٤:٣]

সেসব মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে, একটিই। সূরা নিসা-০৩

আয়াত নং-০২
"তোমরা যতই আগ্রহ রাখো না কেন, তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করতে কখনো সক্ষম হবে না……”।সুরা নিসা-১২৭

উপরের দুটি আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে ইসলামে চারটি বিবাহ করা বৈধ কিন্তু একটি বিবাহ করতে উপদেশ দেওয়া হয়েছে এবং বহু বিবাহে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। 


হাদিস নং -০১

وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ : «إِذَا كَانَتْ عِنْدَ الرَّجُلِ امْرَأَتَانِ فَلَمْ يَعْدِلْ بَيْنَهُمَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَشِقُّه سَاقِطٌ». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَأَبُوْ دَاودَ وَالنَّسَائِىُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِىُّ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কোনো পুরুষের দু’জন সহধর্মিণী থাকে আর সে তাদের মধ্যে যদি ন্যায়বিচার না করে, তবে সে কিয়ামতের দিন একপাশ ভঙ্গ (অঙ্গহীন) অবস্থায় উঠবে। তাখরিজ: তিরমিজি-১১৭১


হাদিস নং -০২
হাদিসে আছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) স্ত্রীদের মধ্যে পালাবণ্টন করতেন এবং ন্যায়বিচার করতেন। আর বলতেন, হে আল্লাহ! আমি আমার শক্তি-সামর্থ্যানুযায়ী পালাবণ্টন করলাম। সুতরাং যাতে শুধু তোমার ক্ষমতা রয়েছে, তাতে আমার শক্তি নেই। কাজেই তাতে তুমি আমাকে ভর্ৎসনা করো না। তাখরিজ: তিরমিজি : ১১৭০, আবু দাউদ : ২১৩৬

উপরোক্ত আয়াত এবং হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়, যদি আপনার প্রশ্ন বর্ণিত ব্যক্তি যদি ইনসাফ/সমতা বিধান না করে তাহলে অবশ্যই গুনাগার হবে।


প্রশ্ন: ঘ। স্বামী যদি তার স্ত্রীকে একান্ত প্রয়োজনে আহবান করে, কিন্তু  সাড়া না দেয়, তাহলে স্ত্রী কি গুনাহ হবে?

উত্তর: ঘ।  স্বামীর আহবানে স্ত্রীর সাড়া দেওয়া জরুরী। দলিল:

হাদীস নং-০১
إذا دعا الرجل زوجته لحاجته فالتأته، وإن  كانت على التنور

স্বামী যখন নিজ প্রয়োজনে স্ত্রীকে ডাকবে তখন সে যেন তাতে সাড়া দেয়, যদিও সে চুলায় (রান্নার কাজে) থাকে। তাখরিজ: জামে তিরমিযী-১১৬০; সুনানে নাসাঈ-৮৯৭১

হাদিস নং-০২
ثَلاَثَةٌ لاَ يُقبَلُ منهُم صَلاَةٌ وَلاَ تَصعُدُ إلَى السَّمَاءِ وَلاَ تَجَاوزُ رُءُوسُهُم : رَجُلٌ أَمَّ قَوماً وَهُم لَه كَارِهُونَ ، وَرَجُلٌ صَلَّى عَلَى جَنَازَةٍ وَلَمْ يُؤمَر ، وَامرَأَةُ دَعَاهَا زَوجُهَا من اللَّيلِ فَأَبَتْ عَلَيه.
‘‘তিন ব্যক্তির নামায কবুল হয় না, আকাশের দিকে উঠে না; মাথার উপরে যায় না; এমন ইমাম যার ইমামতি (অধিকাংশ) লোকে অপছন্দ করে, বিনা আদেশে যে কারো জানাযা পড়ায় এবং রাত্রে সঙ্গমের উদ্দেশ্যে স্বামী ডাকলে যে স্ত্রী তাতে অসম্মত হয়। তাখরিজ: সহিহ তারগিব-১৬৫৫

হাদিস নং-০৩
إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهِ فَأَبَتْ أَنْ تَجِيءَ لَعَنَتْهَا الْمَلَائِكَةُ حَتَّى تُصْبِحَ.
‘‘ স্বামী যখন তার স্ত্রীকে নিজ বিছানার দিকে (সঙ্গম করতে) আহ্ববান করে তখন যদি স্ত্রী না আসে, অতঃপর সে তার উপর রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রি কাটায়, তবে সকাল পর্যন্ত ফিরিশ্তাবর্গ তার উপর অভিশাপ করতে থাকেন।’’ অন্য এক বর্ণনায় ‘‘যতক্ষণ পর্যন্ত না স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ফিরিশ্তা তার উপর অভিশাপ করতে থাকেন।’’ তাখরিজ: বুখারি-৫১৯৩


উপরোক্ত হাদিসের আলোকে ফোকাহায়ে কেরাম বলেছেন, যদি স্ত্রী শারীরিক অক্ষম ছাড়া স্বামীকে সহবাস করতে বাধা দেয়, তাহলে সে গুনাগার হবে। সূত্র: দুররুল মুখতার-৪/৩৮০; ফাতহুল মুলহিম-৬/৫৯৯


সারকথা হল, স্বামী যদি দুই স্ত্রীর মাঝে সমতা বিধানে ত্রুটি করেন, তাহলে স্বামী অবশ্যই গুনাগার হবে। বাকি স্ত্রী যে তার স্বামীকে সহবাস করতে দিচ্ছে না শর্ত আরোপ করেছেন এক্ষেত্রে স্ত্রী গুনাহগার হবে।

আর দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা এতেও প্রথমে স্ত্রী গুনাগার হবেন। 

আর সবচেয়ে বড় ভুল হলো তিনি প্রথম স্ত্রীর অনুমতি দেননি। সুতরাং এমন অবস্থায় তাকে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে এবং প্রথম স্ত্রীকে বোঝাতে হবে যাতে দ্বিতীয় স্ত্রীকে মেনে নেয়।


والله اعلم بالصواب 
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক